শীতের সকাল। মেঘলা আকাশের ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে উকি-ঝুকি মারা সূর্যের আলো কুয়াশা জড়ানো মাটি স্পর্শ করছে। চারদিকে এক নিবিড় ভালোবাসাময় পরিবেশ। তারই মাঝে সাজিদ তার বুড়ো বাবাকে নিয়ে বাড়ির সামনের বাগানে বসে আছে। হাতে আজকের খবরের কাগজ। বাবা'র দিকে খুব একটা খেয়াল নেই। অফিসের ছুটি উপভোগ করছে সে।
এরই মাঝে ছোট্ট একটি চড়ুই সামনের বাগানের একটি গাছে এসে বসলো। বাবার চোখ সেদিকে যেতেই বলে উঠলেন- ''ওটা কি?''
সাজিদের অনুসন্ধানী চোখ এদিক-সেদিক তাকিয়ে খুজতে লাগলো কিসে বাবা'র চোখ পড়েছে। সে দেখতে পেলো বাবা একদৃষ্টে একটি চড়ুই-এর দিকে তাকিয়ে আছেন। তার ছোট্ট উত্তর- ''ওটা একটা চড়ুই, বাবা।''
বাবা তবু চড়ুটি'র দিকে তাকিয়ে রইলেন। আবারো আনমনে জিজ্ঞাসা করলেন- ''ওটা কি?''
ছেলে এবারে একটু বিরক্ত হয়ে বললো- ''বললাম তো, বাবা। এটা একটা চড়ুই।''
বাবা বললেন- ''ও, আচ্ছা!''
চড়ুইটি উড়ে গেলো। বুড়ো বাবা এদিক-সেদিক তাকায়ে কি যেন খুজতে লাগলেন। এবারেও তার চোখে পড়লো আর একটি পাখি। এটাও একটি চড়ুই।
বাবা অবাক হয়ে বললেন- ''তি নাফ তো? (ওটা কি?)''
চড়ুইটি'র দিকে চোখ পড়তেই চরম বিরক্ত হলো ছেলে। চিৎকার করে উঠলো- ''চড়ুই, এটা একটা চড়ুই......চ---ড়ু----ই।''
তারপরও বাবা আবার আরেকটি চড়ুই দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে বসলেন- ''ওটা কি?''
''এমন করছো কেন, বাবা! তোমাকে হাজার বার বলেছি এটা একটি চড়ুই। তুমি কি এটা বুঝতে পারছো না!'' প্রচন্ড রেগে বললো ছেলেটি।
বাবা উঠে পড়লেন। হাঁটা দিলেন বাড়ির দিকে।
''কই যাও?''
বাবা বললেন- ''একটু বসো। আমি আসছি।''
কিছুক্ষণ পরেই তিনি ফিরলেন। হাতে একটি ডায়েরী ধরা। তা থেকে একটি বিশেষ দিনের নোট খুজে বের করে জলদ গম্ভীর স্বরে ছেলেকে বললেন, ‘’পড়ো, জোরে।‘’
বাবা লিখেছেন, ছেলে পড়ছে- ‘’আজ আমার বড় ছেলে তিন বছরে পা দিলো। তাকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সবুজ-শ্যামল সেই পরিবেশে চারদিকে শীতের পাখির মেলা বসেছে। সেগুলোর দিকে না তাকিয়ে তার কিনা নজর পড়লো ছোট্ট একটি চড়ুই পাখির দিকে!
আমার ছেলে আমাকে ২১ বার জিজ্ঞেস করলো- ‘’ওটা কি?’’
আমি প্রতিবার আমার ছোট্ট অবুঝ ছেলেকে আদরের সাথে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিলাম, ‘’ওটা একটি চড়ুই, ছোট সোনা।‘’
বাবা হাসলেন। বুড়ো বয়সের ধূসর হয়ে আসা স্মৃতি’র ভান্ডারে এ যেন এক অমূল্য মণী-মানিক্য!
চোখ ছলছল করে উঠলো কোন কোম্পানীর বড় চাকুরে করা সাজিদের। এক হাতে জড়িয়ে ধরলো বাবাকে। গালে চুমু দিয়ে তাঁর মাথা নিজ মাথায় ঠেকিয়ে বসে থাকলো। কান্নার দমকে বুজে আসা গলা দিয়ে কোন স্বর বেরোলো না।
চড়ুইটি উড়ে কোথায় যেন চলে গেলো। কিন্তু, পেছনে রেখে গেলো স্বর্গীয় এক পরিবেশ।
[বিদেশী একটি শর্ট ফিল্ম 'তি নাফ তো'] অবলম্বনে
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৭