somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষামূলক গল্পঃ 'ওটা কি?'

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শীতের সকাল। মেঘলা আকাশের ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে উকি-ঝুকি মারা সূর্যের আলো কুয়াশা জড়ানো মাটি স্পর্শ করছে। চারদিকে এক নিবিড় ভালোবাসাময় পরিবেশ। তারই মাঝে সাজিদ তার বুড়ো বাবাকে নিয়ে বাড়ির সামনের বাগানে বসে আছে। হাতে আজকের খবরের কাগজ। বাবা'র দিকে খুব একটা খেয়াল নেই। অফিসের ছুটি উপভোগ করছে সে।

এরই মাঝে ছোট্ট একটি চড়ুই সামনের বাগানের একটি গাছে এসে বসলো। বাবার চোখ সেদিকে যেতেই বলে উঠলেন- ''ওটা কি?''

সাজিদের অনুসন্ধানী চোখ এদিক-সেদিক তাকিয়ে খুজতে লাগলো কিসে বাবা'র চোখ পড়েছে। সে দেখতে পেলো বাবা একদৃষ্টে একটি চড়ুই-এর দিকে তাকিয়ে আছেন। তার ছোট্ট উত্তর- ''ওটা একটা চড়ুই, বাবা।''

বাবা তবু চড়ুটি'র দিকে তাকিয়ে রইলেন। আবারো আনমনে জিজ্ঞাসা করলেন- ''ওটা কি?''

ছেলে এবারে একটু বিরক্ত হয়ে বললো- ''বললাম তো, বাবা। এটা একটা চড়ুই।''

বাবা বললেন- ''ও, আচ্ছা!''

চড়ুইটি উড়ে গেলো। বুড়ো বাবা এদিক-সেদিক তাকায়ে কি যেন খুজতে লাগলেন। এবারেও তার চোখে পড়লো আর একটি পাখি। এটাও একটি চড়ুই।

বাবা অবাক হয়ে বললেন- ''তি নাফ তো? (ওটা কি?)''

চড়ুইটি'র দিকে চোখ পড়তেই চরম বিরক্ত হলো ছেলে। চিৎকার করে উঠলো- ''চড়ুই, এটা একটা চড়ুই......চ---ড়ু----ই।''

তারপরও বাবা আবার আরেকটি চড়ুই দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে বসলেন- ''ওটা কি?''

''এমন করছো কেন, বাবা! তোমাকে হাজার বার বলেছি এটা একটি চড়ুই। তুমি কি এটা বুঝতে পারছো না!'' প্রচন্ড রেগে বললো ছেলেটি।

বাবা উঠে পড়লেন। হাঁটা দিলেন বাড়ির দিকে।

''কই যাও?''

বাবা বললেন- ''একটু বসো। আমি আসছি।''

কিছুক্ষণ পরেই তিনি ফিরলেন। হাতে একটি ডায়েরী ধরা। তা থেকে একটি বিশেষ দিনের নোট খুজে বের করে জলদ গম্ভীর স্বরে ছেলেকে বললেন, ‘’পড়ো, জোরে।‘’

বাবা লিখেছেন, ছেলে পড়ছে- ‘’আজ আমার বড় ছেলে তিন বছরে পা দিলো। তাকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সবুজ-শ্যামল সেই পরিবেশে চারদিকে শীতের পাখির মেলা বসেছে। সেগুলোর দিকে না তাকিয়ে তার কিনা নজর পড়লো ছোট্ট একটি চড়ুই পাখির দিকে!

আমার ছেলে আমাকে ২১ বার জিজ্ঞেস করলো- ‘’ওটা কি?’’
আমি প্রতিবার আমার ছোট্ট অবুঝ ছেলেকে আদরের সাথে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিলাম, ‘’ওটা একটি চড়ুই, ছোট সোনা।‘’

বাবা হাসলেন। বুড়ো বয়সের ধূসর হয়ে আসা স্মৃতি’র ভান্ডারে এ যেন এক অমূল্য মণী-মানিক্য!

চোখ ছলছল করে উঠলো কোন কোম্পানীর বড় চাকুরে করা সাজিদের। এক হাতে জড়িয়ে ধরলো বাবাকে। গালে চুমু দিয়ে তাঁর মাথা নিজ মাথায় ঠেকিয়ে বসে থাকলো। কান্নার দমকে বুজে আসা গলা দিয়ে কোন স্বর বেরোলো না।

চড়ুইটি উড়ে কোথায় যেন চলে গেলো। কিন্তু, পেছনে রেখে গেলো স্বর্গীয় এক পরিবেশ।

[বিদেশী একটি শর্ট ফিল্ম 'তি নাফ তো'] অবলম্বনে
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৭
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×