somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে 'বয়কট ভারত' নীতি যেভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওসমান হাদীকে খুন করে খুনি ফয়সাল ভারতে পালিয়েছে। এই খুনি মিয়ানমারে পালিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু, তা না করে ফয়সাল ভারতে পালিয়েছে। এর অর্থ, ভারত অপরাধীদের আশ্রয়স্থল। তাই, ভারতের সাথে সব ধরণের সম্পর্ক বাংলাদেশের ছিন্ন করা উচিত। এটা যদি সম্ভব হয়, তাহলে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতি কীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে?

আমি বিষয়টি আবেগ নয়, কৌশলগত–অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ধরছি। রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ছিন্নের মতো সিদ্ধান্ত বাস্তবে অত্যন্ত জটিল—কিন্তু ধরা যাক, বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে ভারতের সাথে সম্পর্ক স্থগিত/সীমিত করল, তখন বাণিজ্য ও অর্থনীতি কীভাবে টিকে থাকবে ও এগোতে পারে—এই প্রশ্নের বাস্তবসম্মত উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

১️. প্রথম সত্যটি পরিষ্কার করা জরুরি
ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী বাণিজ্য অংশীদার হলেও একমাত্র নয়। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০%+ যায় ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান–এ, আর, বাংলাদেশের রপ্তানিতে ভারতের অংশ ৫–৭% এর বেশি নয়।

অর্থাৎ, ভারত ছাড়া বাংলাদেশ অচল হয়ে যাবে—এটি একটি মিথ।

২. ভারতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হলে কোথায় চাপ পড়বে?
এক্ষেত্রে, আমাদেরকে বাস্তবতা বুঝে কৌশল নিতে হবে।

সম্ভাব্য চাপ:

ক) স্থলপথ ট্রানজিট
খ) ভারত থেকে কিছু কাঁচামাল আমদানি
গ) বিদ্যুৎ আমদানির একটি অংশ
ঘ) ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বাজারসমূহ

কিন্তু, মনে রাখতে হবে, এগুলো বিকল্পযোগ্য (Substitutable)।


======বিকল্প কৌশল ১: “সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতি” (Ocean-based Trade Shift)======

কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের ভারতের উপর নির্ভরতা মূলত স্থলবন্দর ও ট্রানজিটে।

যা করণীয়:

ক) চট্টগ্রাম–মংলা–পায়রা বন্দরের পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার
গ) সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা হাব হিসেবে ব্যবহার
ঘ) মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সাথে সরাসরি শিপিং রুট

এতে করে, বাংলাদেশকে Land-locked থেকে Ocean-linked অর্থনীতিতে রূপান্তর করা যাবে।


======বিকল্প কৌশল ২: চীন–আসিয়ান–মধ্যপ্রাচ্য ব্লক======

এক্ষেত্রে, বাস্তবতা হচ্ছে, চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমদানি উৎস। এছাড়াও, ASEAN (ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড) দ্রুত বাড়ছে সেই সাথে, আমাদের মনে রাখতে হবে, মধ্যপ্রাচ্য হচ্ছে শক্তিশালী ক্রেতা এবং বিনিয়োগকারী।

বাংলাদেশের যা করণীয়:

ক) China+1 Supply Chain–এ নিজেকে বসানো
খ) ASEAN Free Trade Agreement (FTA)
গ) UAE, KSA, কাতারের সাথে Deep Trade Pact

এক্ষেত্রে, ভারত বাদ পড়লে চীন–আসিয়ান স্বাভাবিকভাবেই জায়গা নেবে


======বিকল্প কৌশল ৩: রপ্তানি বৈচিত্র্য (Export Diversification)======

ভারতের সাথে সমস্যার আসল সমাধান বাংলাদেশের রপ্তানি শক্তি বৃদ্ধি করা ।

সম্ভাবনাময় খাত:

১) IT ও সফটওয়্যার সার্ভিস
২) ফার্মাসিউটিক্যালস
৩) কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য
৪) হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং খাত
৫) ডিফেন্স–নন–লেথাল (ইউনিফর্ম, বুট, ইকুইপমেন্ট)

আর, ভারতনির্ভর আমদানির চাপ রপ্তানি আয় দিয়ে অফসেট করা যাবে


======বিকল্প কৌশল ৪: “Labour Power Diplomacy”======

ভারত নয়, বাংলাদেশের আসল শক্তি হচ্ছে - 'মানবসম্পদ'। এক্ষেত্রে, যা করণীয়:

ক) ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে Skilled Labour Export
খ) Govt-to-Govt লেবার চুক্তি
গ) রেমিট্যান্স চ্যানেল শক্তিশালী করা
ঘ) রেমিট্যান্স হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার সবচেয়ে স্থিতিশীল উৎস
ঙ) বিকল্প কৌশল ৫: SAARC নয়—BIMSTEC + OIC ফোকাস

ভারত যদি রাজনৈতিকভাবে প্রতিকূল হয়, SAARC কার্যত মৃত হয়ে যাবে। তবে, BIMSTEC–এ ভারত থাকলেও মূল শক্তি নয়। আর, OIC দেশগুলোতে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

সেক্ষেত্রে, মুসলিম বিশ্ব + দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া = নতুন কূটনৈতিক ব্যালান্স। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: “Single-country Dependency ভাঙা”।
ভারতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হোক বা না হোক—বাংলাদেশের উচিত কোনো দেশের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা নয়, বরং, Multi-polar Economic Strategy প্রয়োগ করা। এটাই সার্বভৌম অর্থনীতির মূলনীতি।

একটি কঠিন কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে, ভারত যদি অপরাধীদের আশ্রয় দেয়—তাহলে সমাধান কেবল আবেগ নয়, বরং, আন্তর্জাতিক আইন,
ইন্টারপোল, কূটনৈতিক চাপ এবং গ্লোবাল মিডিয়া ন্যারেটিভ দিয়ে সমস্যার সমাধান করা জরুরী। এখানে মনে রাখতে হবে যে, অর্থনীতি শক্তিশালী হলে কূটনৈতিক চাপও কার্যকর হয়।

সংক্ষেপে রোডম্যাপ-

ক) চীন–আসিয়ান–মধ্যপ্রাচ্য ব্লক
খ) রপ্তানি বৈচিত্র্য
গ) রেমিট্যান্স ও মানবসম্পদ
ঘ) মাল্টি-পোলার কূটনীতি
ঘ) ভারতের বিকল্প প্রস্তুত রেখে চাপ প্রয়োগ
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:০৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×