প্রতিবছর ভারতে হাজার হাজার মেয়েকে মন্দিরের দেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়, এরপর তাদের তাদের পেশা হিসেবে বেছে নেয় পতিতাবৃত্তিকে, সারাজীবনের জন্য।
উলিগাম্মা মন্দিরের শুভ্র খিলানগুলোর মধ্যদিয়ে ভারতের থুঙ্গাবাদ্রা নদীর দিকে এগোচ্ছিল দুরগাম্মা নামের মেয়েটি, কি যেন এক আশ্চর্য গর্বের সাথে! আজকে মেয়েটির বিয়ের দিন। তার আত্মীয়স্বজন পাড়াপ্রতিবেশীর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল ১২ বছর বয়সী এই মেয়েটির দিকে।
থুঙ্গাবাদ্রা নদীটির সেতুর নীচে একজন পুরোহিত দুরাগাম্মার পরিবারের অর্ঘ্য হিসেবে আনা ছাগলটি গ্রহণ করল। খড়গের দ্রুত আঘাতে সে পাঁঠাটি মন্দিরের দেবী উলিগাম্মার উদ্দেশ্যে বলি দিল। বলির রক্ত মিশে যেতে লাগল থুঙ্গাবাদ্রায়, যেখানে স্নান করছিল শত শত ভক্তরা।
দুরগাম্মার আত্মীয়ারা তার শরীরে চন্দন মেখে নদীতে গোসল করাল। এরপর যখন তাকে একটি সাদা শাড়ি পরিয়ে আনা হল, সে শুনছিল উঁচুশ্রেণীর পুরোহিতের কন্ঠস্বর, যার সংস্কৃত মন্ত্রপাঠ উপস্থিত কারোর বোধগম্য ছিল না। যখন তার মন্ত্রপাঠ শেষ হল, মন্দিরের পুরোহিত দুরাগাম্মার মাথায় হলুদবাটা মিশ্রিত পানি ঢেলে দিল।
দুরগাম্মা এরপর মন্দিরের ভেতরে গেল যেখানে একজন পুরোহিত তার গলায় একটি লালসাদা পুতিঁগাথা গেরুয়া রঙের সুতা পরিয়ে দিল। নির্দিষ্ট কোন পুরুষ আসেনি সেই অনুষ্ঠানে, দুরাগাম্মাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে। এর বদলে দুরাগাম্মাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে মন্দিরের দেবীর সাথে, এবং তার গোটা জীবন এরপর অতিবাহিত হবে দেবদাসী হিসেবে, সে হবে একজন মন্দিরগণিকা। মন্দিরের পুরোহিতের মতে আজকে দেবী উলিগাম্মার আত্মা দুরাগাম্মার ভেতরে প্রবেশ করেছে। এবং তার পরবর্তী জীবনে, যখন মন্দিরের পুরোহিত কিংবা অন্যান্য পুরুষরা তার সাথে রাত কাটাবে, তারা তো দুরাগাম্মা নয় বরং দেবীটির সাথেই যেন রাত্রিযাপন করবে। দেবীর নির্দেশ এই যেন তার সাথে রাত্রিযাপন করা পুরুষটি সন্তুষ্ট হয়।
শুদ্র পরিবারের কমবয়সী বালিকাদের দেবদাসী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এক কর্ণাটকেই রয়েছে এক লক্ষ দেবদাসী, যেখানে দেবদাসীদের এই রীতিটি পালিত হয় ভারতের ছয়টি শহরে। ভারতে শুদ্রদের নেই কোন সম্মান। দেবদাসী হিসেবে নিজের কচি মেয়েটিকে শুদ্র পরিবার মন্দিরের লোলচর্ম ব্রাহ্মণটির নিকট সমর্পিত করে, তার এই কথায় আশ্বস্ত হয়ে যে তার খাহেশ মেটালে শুদ্রটি পরজন্মে ব্রাহ্মণ হয়ে জন্মাবে।
আগের ঘটনায় ফিরে আসি।
অনুষ্ঠানের পর দুরগাম্মার জন্য একজন শয্যাসঙ্গী অপেক্ষমান ছিল। তার বাবা হুলিগাপ্পা যখন তার ছোট মেয়েটিকে নির্দেশনা দিচ্ছিল সে ভয় পেয়েছিল। তার বাবা তাকে বকা দিয়েছিল এই বলে যে লোকটি দুরগাম্মাকে উপহার হিসেবে দিয়েছে রূপার আংটি, নাকের নোলক, হাতের বালা, কানের দুল, এবং পরনের শাড়িকাপড়। সে লোকটিই হাতে যাচ্ছে দুরগাম্মার সাথে প্রথম রাত্রিযাপন করা ব্যক্তি। এর বদলে মন্দিরের পুরোহিতকে উক্ত শয্যাসঙ্গীর তরফ থেকে কিছু অর্থ প্রদান করা হয়েছে, এবং দুরগাম্মার পরিবারকে দেয়া হয়েছে যাতায়াতের খরচ।
পরের দুইটি বছর দুরগাম্মার সাথে রাত কাটাল লোকটি। তারপর একদিন কিছু না বলে, দুরগাম্মার বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নিল সে। এরপর দুরগাম্মার বাবা তার মেয়ের জন্য ২০টির মত শয্যাসঙ্গী যোগাড় করেছে। তাদের স্থায়িত্ব ছিল এক সপ্তাহ থেকে দুই বছর।
যখন আমি দেখি বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কোন মেয়ে তার স্বামীর সাথে হেঁটে যাচ্ছে, তখনি আমার মনে পড়ে নিজের অভিশপ্ত জীবন, নিজের ভবিষ্যৎ। যখন আমার মনের ভিতরে বিষয়গুলো আঘাত হানতে থাকে, তখন কেন জানি, আমার কান্না পায়! বলছিল দুরগাম্মা। ২৫ বছর বয়স হওয়ার কারণে যাকে বিবেচনা করা হতো দেবদাসী হিসেবে অনুপযুক্ত।
দক্ষিণ ভারতে অতীতে যখন বর্বর হিন্দুরাজত্ব কায়েম ছিল, তখন দেবদাসীদের খরচ বহন করতো রাজারা। কিন্তু পরবর্তীতে মুসলিমরা দক্ষিণভারতে সভ্যতার আলো নিয়ে আসলে বন্ধ হয়ে যায় দেবদাসীদের দেয়া রাজকীয় ভাতা। তারপরও ব্রাহ্মণরা এই জঘন্য রীতিটি টিকিয়ে রাখল। কিন্তু দেবদাসীদের উপার্জনের জন্য তখন গ্রহণ করতে হলো মন্দিরের পুরোহিত বাদে অন্যদের দেহ।
তাই যে লেখাটি থেকে আমি এটি অনুবাদ করেছি , তাতে দেবদাসীদের পতিতাবৃত্তি গ্রহণের জন্য দায়ী করা হয়েছে মুসলমানদের। সব মুসলমানদের দোষ! ভারতীয় ইতিহাসবিদদের নিকট চরিত্রহীন ব্রাহ্মণদের কোন দোষ থাকতে পারে না।
(লেখাটি সংগৃহীত । যদি কারো মনে কোন বিষয়ে আঘাত লাগে তার জন্য দুঃখিত)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




