খালেদুর রহমান শাকিল, ঢাকা, বাংলাদেশ।
শুরু থেকে শুরু করে যদি আমি বলি নব বর্ষ বাংলা শুরু হল কোথেকে? তবে আমাদের ফিরে যেতে হবে শত শত বছর আগে; মুঘল সম্রাজ্যের মহান অধিপতি আকবর দি গ্রেট (১৫৫৬-১৬০৯) এর সময়কালে। যখন বাংলার অর্থনীতি পুরোপুরি নির্ভর করত কৃষি কাজের উপর আর রাজা-বাদশারা প্রজাদের নিকট থেকে ট্যাক্স বা শুল্ক আদায় করত। আর প্রজাদের অধিকাংশই কৃষি কার্যে নিয়জিত ছিল। মুঘলরা এ শুল্ক আদায় করত আরবী বা হিজরি বছর হিসাব করে। কিন্ত বাংলায় কৃষি কাজ নির্ভর করে এর ষড় ঋতুর উপর। তাই সঠিক সময়ে শুল্ক ঘরে তুলতে পারতনা মুঘল সম্রাট। আর এতে বিভিন্ন অসুবিধাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয় মুঘল বাদশাকে; আর তাই অঞ্চলের সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তি ফতেল্লাহ্ সিরাজিকে দিয়ে নতুন দিনপুন্জি তৈরির কাজটি করানো হয়। তিনি অতি গুরুত্ব সহ কারে বাংলার ষড় ঋতুর সমন্বয়ে একটি দিন পুন্জি তৈরি করেন। আর এখান থেকে বাংলা বছর শুরু হল ভারতের পশ্চিম বাংলা আর বর্তমান বাংলাদেশের। চৈত্রের ফসল ঘরে তোলার পর বৈশাখ হয়ে উঠে নানা উৎসবের কারন আর তাই নতুন বাংলা বছর হিসাবে পহেলা বৈশাখকে ঘোষনা দিলেন বাদশা আকবর। আর বাংলা বছরের এই দিনটিকে বরন করে নেওয়া হয় নানা রঙ্গের মাধুরী উৎসব মিশিয়ে যার নাম করন করা হয় “ বর্ষ বরন উৎসব ” অথবা “ বৈশাখী উৎসব ” আর যা এখন “ নব বর্ষ “ হিসাবে পরিচিত। যা পশ্চিম বাংলায় ব্যাপক পরিচিতি পেলেও বাংলাদেশে ১৯৬৫ এর আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক বিভিন্ন কারনে সাড়া পায়নি।
বাঙ্গালী সংস্কৃতির এক মহা উৎসব পহেলা বৈশাখ আর এর বর্ষ বরণের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন রবি ঠাকুর। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এই বর্ষ বরণের মাতাল নোবেল বিজয়ী কবির কবিতাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে দেয় পরবর্তিতে পহেলা বৈশাখের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ছায়ানট গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করলেও কিন্ত তাও বাধার মুখে পড়ে। এর পরে বৈশাখ স্থান পায় ঢাকার রমনা বটমূলে রবি ঠাকুরের বৈশাখী সংগীত দিয়ে শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে। বাঙ্গালী জাতির ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য ১৯৮০’র শেষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে বৈশাখী শোভা যাত্রা শুরু হয়। আজ এই উৎসব কোন নির্বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এক জতীয় উৎসবে পরিনত হয়েছে।
মনে রং লাগানো এক আয়োজন যা বঙ্গালীর বর্ষ বরণ। রমনীরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, খোপায় ফুলের মালা হাতে কাচেঁর রং বে-রং এর চুড়ি আর সাথে পুরুষেরা পাজ্ঞাবী-পায়জামা বা লুঙ্গি-ধুতি পড়ে প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করে যাত্রা করে বর্ষকে বরণ করার।
মহা আনন্দে বৈশাখী শোভা যাত্রা ভোরের আকাশে বাতাসে পাখির কলকলালিতে নর-নারীর রোমাঞ্চকর পথ চলার মধ্যদিয়ে মুখরিত হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারু কলা। সাথে বৈশাখী মেলা তো থাকছেই। বাঙ্গালী ঐতিহ্যের শিল্প-সামগ্রীতে ভরপুর হয়ে উঠে এই মেলা। শুধু কি মেলা ? পানতা-ইলিশ খাবেকে? ও আলপনার দিকে তাকাবে কে? বিশাল বড় বড় সেই সব চিত্র-পনাকে দেখে শুধু কি মন জুড়িয়ে যায়। মনে হয় তাকিয়ে থাকি আলপনার গভীরতার দিকে। পিছিয়ে নেই ব্যবসায়ীরাও “হালখাতা” দিয়ে উজ্জাপিত হয় পুরানো বনিকদের সাথে আনন্দ বিনিময়। এই বৈশাখে বাঙ্গালী ঐতিহ্যের সেই প্রাচীন খেলাও বাদ পড়ে নেই। নৌকা বাইচ, ঢাউস ঘুড়ি, ষাড় লড়াই সহ আরো কত খেলা চলছে খেলার মাঠে। সকল আনন্দ যেন আজ এই বর্ষ বরণে। মঞ্চে চলছে গান; পালা গান, কাভি গান, জারি গান, গম্ভিরা গান, গাজির গান, বাউল, মারফতি, মুর্শিদি, ভাটিয়ালি আর সাথে থাকছে যাত্রাপালা।
আজ এ আনন্দ শুধু বাংলার মাটিতেই নয় বিদেশের মাটিতেও খুব জম-পেশ ভাবে পালিত হচ্ছে। সেই সব আত্নপ্রাণ বাঙ্গালীকে জানাই অভিনন্দন যারা জীবিকার তাগিদে নির্বাসিত হয়েও আজও তাদের রক্তে বাহিত হওয়া সেই আনন্দের আকুল বেদনাকে বিশ্ব বাসীকে জানান দিচ্ছে।
Email: [email protected]
পহেলা বৈশাখ - নব বর্ষের এক ছটা আনন্দের দর্পন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।
আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন
"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন
টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।