১.
সবার সাথে ভীড় ঠেলে যতোটা তাড়াতাড়ি সম্ভব ট্রেনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো মাহিন। পায়ের নীচে কোন কিছু একটা মট করে ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দ। ধাক্কা সামলে নীচে তাকাতেই হীম হয়ে গেল মাহিন, একটা বাচ্চার হাতের ওপর ওর পা পরেছিলো। কে জানে ছয় কিংবা সাত মাসের বাচ্চা। বোঝা যায় মৃত, তবে খুব বেশী সময় হয়নি, মাহিনের পায়ের চাপে হাতের হাড়টা মট করে ভেঙ্গে গেছে। ট্রেইনের হুইসেল বাজার শব্দ। দিশেহারা অনুভব করছে মাহিন, কি করবে সে? ট্রেনের দিকে দৌড়াবে না বাচ্চার দেহটাকে তুলে আনবে প্ল্যাটফরম থেকে? কে জানে কার বুকের মানিক হাত ছিটকে পরে গেছে প্ল্যাটফরমে এবং ঘরফেরা হাজারো মানুষের ধাক্কায় হয়তো বাচ্চাটির মা বাবা দূরে সরে গেছে। যত চেষ্টাই করুক মানুষের ভীড়ের ধাক্কায় ফিরে আসতে পারছে না। এই সময় বাচ্চাটা চোখ মেলে তাকালো, বলল মা।
ধরমড়িয়ে বিছানায় বসে পড়লো মাহিন। একটানা তিন রাত একই স্বপ্ন, গলা শুকিয়ে কাঠ। একটু পানি না খেলে যেনো এখনই মরে যাবে। বিছানার বা পাশে নীথর ঘুমিয়ে আছে হিমেল। হিমেল একবার ঘুমিয়ে গেলে তাকে তোলা অসম্ভব একটা কাজ। বিছানা থেকে উঠে অন-স্যুইটে গেলো, আয়নায় তাকিয়ে দেখলো কপাল, মুখ ঘামে ভিজে গেছে। রাত তিনটা বাজে এখন, ঘুম আসবে না তাই মুখে একটু পানি দিয়ে বসার রুমে গেলো মাহিন। টেলিভিশন অন করে নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলো।
২.
ওরা দুজনেই জাহাঙ্গীর নগরে পড়তো তখন, সেখা্নেই পরিচয় তবে পরিচয়টা হয়েছিলো একটু অদ্ভুদ ভাবে। প্রথম বার দেখা হবার পর দুজনের মধ্যে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়েছিল। ইউনিভার্সিটির বাসে হিমেল উঠেই এদিক ওদিক তাকাতাকি করছিলো সীটের জন্য। বাসের ঠিক মাঝামাঝি একটা মেয়ে একা বসে আছে।
এক্সকিউজ মি, হাত ইশারা করে মেয়েটাকে সড়তে বলল হিমেল।
দুঃখিত আমি পাশের সীটটা আমার বান্ধবীর জন্য রেখেছি।
মানে, আপনার বান্ধবী কোথা থেকে উঠবে।
এইতো সামনের স্টপেই ও উঠবে।
হাতল ধরে দাড়িয়ে রইলো হিমেল। যথারিতী পরের স্টপে অনেকেই উঠলো কিন্তু কেউ বসেনি মেয়েটা পাশে।
ওকে, বলেই হিমেল সীটের দিকে এগিয়ে গেলো।
প্লীজ থামুন আপনি, আমার বান্ধবী পরে স্টপে উঠবে, স্যরি আমি ভুল বলেছিলাম।
পরের স্টপেও কেউ মেয়েটার পাশে বসলো না।
চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




