পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত এবং এই বিষয়টি বিশ্বের সর্বত্র জানান দেওয়ার জন্য যারা উদ্দ্যেগ নিয়েছেন তাদের আমি স্যালূট জানাই। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রসংশনীয় উদ্যেগ। উদ্যেগতা ছিলেন একটিভেট বাংলাদেশ, আয়োজনে ছিলেন মাা কনর্সোটিয়াম, টাইটেল পৃষ্টপোষকতায় ছিলেন গ্রামীনফোন, অন্যান্য পৃষ্টপোষকতায় ছিলেন স্কয়ার, এইচআরসি, টীম (পেপসি), আলমা, মিডিয়ায় ছিলেন চ্যানেল আই, ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো। সকলের প্রতি রইল আমার অবিভাদন। উদ্যেগতা, আয়োজনকারী, পৃষ্টপোষক কিংবা অংশগ্রহকারী সকলেরই একটি উদ্দেশ্য ছিল সেটি হচ্ছে আমাদের সমুদ্র সৈকত বিশ্বের কাছে পরিচিতি পাক যাকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি এবং কঙ্বাজারই হোক বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র।
আমাদের যাত্রা শুরু যেভাবে
একটিভেট বাংলাদেশ যখন থেকে বিভিন্ন জায়গায় সেমিনার এবং সংবাদ সম্মেলন শুরু করে তখন বন্ধুদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অনলাইনে রেজিস্টেশন করলাম। রীতিমত সিলেকশন প্রক্রিয়া শেষ করে টাকা জমা দিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম। অফিস থেকে ছুটি নেওয়ার জন্য ডঃ মুমিতের সাথে কথা বলতেই স্যার রাজি হয়ে গেলেন। আর আমাদের বাধা থাকল না। গুগুল আর্থ বিশেষজ্ঞ মুর্তজা আমাদের টেকনাফ থেকৈ কঙ্বাজার সৈকতটি সমর্্পকে বিষদ ব্যাখা দিলেন। আর ম্যাপ বিশেষজ্ঞ আসাদ ভাই প্রথমের বাংলাদেশের ম্যাপ, কঙ্বাজারের ম্যাপ এবং টেকনাফ থেকে কঙ্বাজারের ম্যাপ রঙ্গিন প্রিন্ট নিয়ে গবেষনা শুরু করলেন। নানা আলোচনা এবং প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে আমরা কঙ্বাজার সি প্যালেস হোটেলে উঠলাম 22 তারিখ সকাল 7 টায়।
হোটেল সি প্যালেস, মাা কনর্সোটিয়াম এবং আমরা
সকাল 8 টা থেকে মা কনসের্াটিয়ামের আয়োজনকারীরা আমাদের সব দায়ীত্ব গ্রহন করার কথা পাবেল ভাইয়ের কথা অনুযায়ী, যার সাথে রেজিস্টেশনের সময় ফোনে কথা বলেছিলাম। কিন্তুু ঐ মুহুর্তে দায়ীত্ববানদের কাউকে দেখা যাচ্ছিল না। আয়োজনকারীদের মধ্য থেকে আরিফ ভাই (সবাই যাকে চিকলু বলতে পছন্দ করতেন) ছিলেন। যাহোক নানা বিশৃঙ্খলার মধ্যে হোটেল রুম বুকিং, এবং ছবি জমা দিয়ে 2য় রেজিষ্টেশনের কাজটি শেষ করলাম। সকালে নাস্তা দেওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়নি মাা কনসের্াটিয়াম আয়োজন করতে পারেনি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে আমরা তিন বন্ধু (আসাদ, হাসনাত এবং আমি ফিরোজ) একত্রে গিয়েছিলাম। তিনজনে বাহিরের হোটেলে নাস্তা সেরে লাবণী পয়েন্টের সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গেলাম। দুপুর 12 টার দিকে আমরা হোটেলে ফিরলাম এবং বেলা 2 টার দিকে আমাদের দুপুরের খাওয়া দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় বেলা 3 টায়। অনেক বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে খাওয়া শেষ করি। রেস্টুরেন্ট কতৃপক্ষ হয়তো এই প্রথম এতো লোকের আয়োজন করেছে তাই তাদের জন্য এটা পরিচালনা করা কষ্টকর হয়েছে। বলতে হবে এটা তাদের জন্যও এক নতুন অভিজ্ঞতা। রেস্টুরেন্ট কতৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম তাদেরকে দুপুরে খাওয়ার ব্যাপারে আগে থেকে বলা হয়নি। পূর্বের সময় সূচী অনুযায়ী সন্ধ্যায় সেমিনারে অংশগ্রহন করলাম। সেমিনারে বলা হলো দুষনমুক্ত পরিবেশ রক্ষা করার কথা, জানিনা আমরা এবং আয়োজনকারীরা কতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি। আমাদের শ্রদ্ধেয় মেজর জেনারেল আনোয়ার (বীর প্রতিক) এ্যাকটিভেট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বলেছিলেন আমাদের নিরাপত্তার কথা এবং মেডিকেল সুবিধা দেবার কথা। তিনি বলেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীতে থাকবে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, র্যাব, পুলিশ এবং বিডিআর। মেডিকেল টিমে থাকবে এম্বুলেন্স, কম দামের ঔষধ থেকে বেশী দামের ঔষধ পর্যন্ত। তিনি এও জানালেন আমাদের প্রতি অংশগ্রহনকারীদের জন্য খরচ হচ্ছে 14000 টাকা যেখানে আমরা অংশগ্রহনকারীরা দিচ্ছি মাত্র 3500 টাকা এবং বাকি টাকা দিচ্ছে পৃষ্টপোষকরা। সেমিনারের পরবতর্ীতে ছিল আমাদের পরবতর্ী তিন দিনের প্রস্তুতি হিসেবে টি শার্ট, আইডি কার্ড এবং ব্যাগ বিতরনের পালা। বেশ বিশৃঙ্খলার (আরিফ ভাইয়ের ভুল সিন্ধান্তের ফলেই) মধ্য দিয়েই আইডি কার্ড সহ যাবতীয় জিনিসগুলো সংগ্রহ করলাম। তারপর রাতের খাবার শেষে রুমে গিয়ে শুরু করলাম বন্ধুদের সাথে নানারকম আলোচনা কিভাবে হাঁটব, কচ্ছপের মতো নাকি খরগোসের মতো, প্রতিযোগীতায় জিততে হলে কি করতে হবে, অসুস্থ হলে কি করতে হবে আরো নানারকম আলোচনা। পরের দিন সকাল 7 টায় নাস্তার প্যাক নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রেস্টুরেন্টে বসে নাস্তা না খেতে পারার কারণে দুষনমুক্ত পরিবেশ রক্ষা করা গেল না। সবাই গাড়িতে বসে নাস্তা খেয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে প্যাক গুলো ফেলে দিল। আমরা মোটামোটি 10 টার দিকে টেকনাফে গিয়ে পৌঁছলাম।
টেকনাফ থেকে কঙ্বাজার, একটিভেট বাংলাদেশ ও আমরা
100 কিঃমিঃ হাঁটার উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে ক্রিয়া উপদেষ্টা তপন চৌধুরী সহ দেশের বরেণ্য ব্যাক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন গ্রামীন ফোনের হেড অব মার্কেটিং রুবাবা উদ্দোলা, চ্যানেল আই এর ফরিদুর রেজা সাগর, এসিয়াটিকের আফজাল হোসেন সহ আরো অনেকে। চ্যানেল আই, ফারজানা ব্রাউনিয়ার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি সমপ্রচার করেন। জাগো বাংলাদেশের গান এবং জাতীয় পতাকা নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করি। সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের সূর যেন আমাদের সাথে গাইছে জাগো, জাগো, জাগো বাংলাদেশ, জাগো, জাগো, জাগো। সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের সুরের সাথে আমরাও যেন হারিয়ে যাই। আর সমুদ্র সৈকতের পাশের সবুজ শ্যামল দৃশ্যে মন যেন পুলকিত হয়। প্রতি 1 কিঃমিঃ পর পর ছিল রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক। এবং প্রতি 5 কিঃমিঃ পর পর ছিল রিফ্রেসমেন্ট সেন্টার যেখানে আমাদের জন্য ছিল বিস্কুট এবং পানিয়। আমাদের জন্য মেডিকেল টিম থাকার কথা ছিল কিন্তু প্রথম ক্যাম্পের আগ পর্যন্ত কোন মেডিকেল টিম চোখে পড়েনি। এম্বুলেন্স কিংবা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাগাল পাওয়া যায়নি। আমি যথারীতি দ্রুত হাঁটি বলে আমার বাকি দুই বন্ধুকে ছেড়ে আগে চলে আসলাম। যখনই সমুদ্রের উত্তল তরঙ্গের দিকে তাকাই তখনই হাটাঁর সব কষ্টই যেন মিলীন হয়ে যায়। সমুদ্র সৈকতের পাশের দৃশ্যে হৃদয় পুলকিত হয়ে যায়। প্রথম ক্যাম্প থেকে গো কাড নিয়ে 2য় ক্যাম্পে বেলা 1ঃ45 মিনিটে পেঁৗছলাম এবং অতিক্রম করলাম 22 কিঃমিঃ। আমার অবস্থান ছিল 15 তম। রেডক্রিসেন্ট কমর্ীদের কাছ থেকে কোন খাবার স্যালাইন পাওয়া যায়নি। প্রথম দিনের এই ক্যাম্পগুলোর অবস্থান ছিল শামলাপুর গ্রামের কাছাকাছি। ক্যাম্পের চারদিকে বালি আর বালি যে আমরা মরুভূমিতে আছি। খালি পায়ে উতপ্ত বালির উপর পা দিতেই যেন আগুনের মধ্যে পা দিচ্ছি।
মেডিকেল সুবিধায় সেফ
2য় ক্যাম্পে পৌঁছার বেশ কিছুক্ষন পর জানতে পারলাম সেফ অরগেনাইজেশন মেডিকেল সহায়তা দিচ্ছে। তাদের কাছে যখন খাবার স্যালাইন চাইতে গেলাম তারা জানাল তারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এসেছে আয়োজনকারীদের পক্ষ থেকে নয়, মেডিকেল সহায়তার জন্য আয়োজনকারীদের বলার জন্য কিন্তু সেই মুহুর্তে বলার মতো আয়োজনকারীদের কাউকে চোখে পড়েনি। অংশগ্রহনকারীরা বললেন সেফ এসেছেন তাদের নামের জন্য তারা সেবা দিতে আসেননি। ইতিমধ্যে ব্যাগের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। বেলা 3ঃ30 টার দিকে আমার বন্ধুরা এসে পৌছাঁল। তাদেরকে নিয়ে দুপুরের খাওয়াটা শেষ করলাম। যাহোক বেলা 4 টার দিকেও ব্যাগের কোন সন্ধান পেলাম না। 5 টার দিকে ব্যাগ এসে পৌঁছাল। জামা কাপড় পরিবর্তন করে খানিকটা বিশ্রাম নেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। ইতিমধ্যে আমার বন্ধুদের পায়ের ব্যাথা চরম আকার দেখা দিয়েছে। সেফের একজন কর্মী আমার বন্ধুকে ধরিয়ে দিলেন ডিস্পিরিন। আমি ব্যাপারটা দেখে একটু অবাকই হলাম আমাদের দরকার ডাইক্লোপেনাক+রেনিটিডিন জাতীয় ঔষধ যেহেতু পরবতর্ী দুইদিন আমাদের হাটতে হবে। তাদেরকে ব্যাপারটা বলতে তারা "ঔষধটি দিয়ে দিন আপনাদেরকে ঔষধ দিতে হবে না"। তাদের ব্যবহার দেখে ভাবলাম তারা গরীব অসহায় মানুষদের সাথে কি-রকম ব্যবহার করে। এরকম দু-একটা ঔষধের জন্য তাদের কাছে আমাদের এভাবে হাত পাত্তে হবে ভেবে খুবই খারাপ লাগল। অবশ্য একটিভেট বাংলাদেশ যদি আমাদের আগে বলে দিত তাহলে আমরা নিজেরাই নিজেদের ঔষধ নিয়ে যেতাম। আমার মনে হয় এটি সেফের জন্যও এক নতুন অভিজ্ঞতা। তারা কখনও উচ্চ কিংবা মধ্যবিত্ত মানুষদের সেবা দেয়নি সেজন্য এই শ্রেনীর মানুষের সাথে কিরকম ব্যবহার করতে হয় তা তারা জানে না।
এরই মধ্যে অংশগ্রহনকারীদের সাথে আয়োজনকারীদের তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে দুপুরের খাবার পরিবেশন নিয়ে, কেউ খাবার পেয়েছেন আবার কেউবা পাননি। রাত 10 টার দিকে রাতের খাবার পরিবেশন করা হলো। মঝার ব্যাপার ছিল তারা সামান্য টিসু্য পেপারের ব্যবস্থা করতে পারেনি। আমরা যখন ঢাকা থেকে রওনা হই তখন আমি আমার বন্ধুদের বলেছিলাম টিসু্য পেপার নেওয়ার কথা কিন্তু আমার বন্ধুরা বলেছিল একটিভেট বাংলাদেশ সব ব্যবস্থা করবে সুতারাং আমাদের এসব বহন করার দরকার নেই। এরই মাঝে চ্যানেল আই দুপুর 2.30 টা এবং বিকাল 4.30 এ তাদের সরাসরি সমপ্রচার পরিবেশন করেছে। পরদিন সকালে 24 মার্চ একই নিয়মে লাইনে দাঁড়িয়ে নাস্তা নিয়ে নাস্তা খাওয়ার পর্ব শেষ করলাম। তবে রাতের খাবার কিংবা সকালের নাস্তার মান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। এই খাবার আমাদের কতটুকু পুষ্টিমান রক্ষা করে? অনেকেই বলেছেন "ডাঃ অনুপম পুষ্টিবিজ্ঞানী তিনি কী খাবারে পুষ্টিমান রেখে মেনু তৈরী করেছেন নাকি টাকা সেভ করছেন"। এরই মধ্যে শুনতে পেলাম অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে থেকে দুই-একজন রাতেই রওনা দিয়েছে। মনে মনে ভাবলাম এ হলো প্রতিযোগীতার ফল। আমাদের শুধরাতে অনেক সময় লাগবে। সবচেয়ে মঝার ব্যাপার ছিল আয়োজনকারীদের কেউই রাতে আমাদের সাথে ছিল না এবং তারা এসব তদারকির কোন প্রয়োজন মনে করেনি। রেড ক্রিসেন্ট কর্মীদের উপর দায়ীত্ব দিয়ে তারা চলে গেছে। ঐদিকে রেডক্রিসেন্ট কর্মীরা বলছেন, "আয়োজকরা আমাদের যা কিছু দেওয়া দরকার তার কোন কিছুই দেয়নি আমরা কিভাবে আপনাদের সেবা দিব?" সবাই যখন হাটাঁর প্রস্তুতি নিলেন এমন সময় ড: অনুপম আসলেন, রাগে ক্ষোভে অংশগ্রহনকারীরা স্লোগান শুরু করলেন "অনুপম"-"ভুয়া" "অনুপম"-"ভুয়া"। যেহেতু প্রতিযোগীদের নিয়ন্ত্রনের জন্য কোন তদারকী ছিল না সেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সবাই হাঁটা শুরু করল। প্রথম রিফ্রেসমেন্ট সেন্টারে উপস্থিত হয়েছি একটি গ্রাম অতিক্রম করে। কিছুদুর গিয়ে দেখি দুইজন মোটরসাইকেলে চড়ে মাঝখানে এসে যোগ দিয়েছে। একই কাহিনী "এ হলো প্রতিযোগীতার ফল" তদারকীর জন্য কেউ নেই। গ্রামের ভিতর দিয়ে হাঁটার ফলে পাঁয়ে ফোস্কা পড়ে গেছে। প্রতিটি রিফ্রেসমেন্ট সেন্টারে ব্যান্ডেজ খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়েছি। কেউ বলে সামনে পাবেন আবার কেউ বলে পিছনে পাবেন। মনে মনে রাগ হলো 1 টাকা দামের ব্যান্ডেজ এরা দিতে পারে না যেখানে এ্যাম্বুলেন্স টিম থাকার কথা। জুতা খুলে খালি পায়ে হাটা শুরু করলাম, কিন্তু 1ঃ30 হাঁটার পর দেখি পাঁয়ের পাতায় ফোস্কা পড়তেছে। উপায়ান্তর না দেখে দুই পায়ে দুটি রুমাল বেঁধে হাটাঁ শুরু করলাম। এভাবে প্রথম ক্যাম্প তারপর দ্বিতীয় ক্যাম্প। বেলা 12ঃ15 মিনিটে দ্বিতীয় ক্যাম্প পেঁৗছলাম। দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় ক্যাম্প ছিল ইনানী সৈকতের কাছে। এই সৈকতের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হচ্ছে বিশাল বিশাল প্রবাল।
যাহোক প্রথম দিনের চিৎকার চেচাঁমেচিতে মনে হয় স্যালাইনের ব্যবস্থা হয়েছে। দ্বিতীয় ক্যাম্প পৌঁছার পর স্যালাইনের পানি পাওয়া গেছে রেড ক্রিসেন্ট কমর্ীদের কাছে। তারা পর্যাপ্ত সেবা দিতে না পেরে তারা নিজেরাই অনুতপ্ত এবং আয়োজনকারীদের উপর তাদের ক্ষোভের অন্ত নেই। বেলা 2ঃ30 মিনিটেও দুপুরের খাবারের খবর নেই। আমার বন্ধুদের ফোন করে বললাম প্রথম ক্যাম্প থেকে খাবার সেরে আসতে। কিন্তু তারা 3 টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও খাবার পায়নি অতঃপর দ্বিতীয় ক্যাম্পের দিকে রওনা দিয়ে 4ঃ15 তে এসে দ্বিতীয় ক্যাম্পে উপস্থিত হলো। 4ঃ20 মিনিটে কয়েক প্যাকেট খাবার এসে পেঁৗছাল। বেলা 5.00 খাওয়া শেষে খালি চটের উপর বিশ্রাম নিলাম। কম্বল বালিশ বিচানার চাদর এসে পৌঁছাল সন্ধা 7 টার দিকে। এগুলো বিতরণ নিয়ে মোটামোটি মারামারির অবস্থা যেমনটি হয় উত্তরাঞ্চলের মঙ্গাক্রান্ত মানুষদের মধ্যে। কিছুক্ষন পর দেখা গেল মাা কনসোর্টিয়াম এবং গ্রামীন ফোনের লোকজনদের এবং জানা গেল টেকনাফ থেকে কঙ্বাজার পর্যন্ত আমাদের তদারকীর দায়ীত্ব পালন করছেন এ্যাকটিভেট বাংলাদেশ অরগেনাইজেশনের লোকজন। মাা কনসোর্টিয়ামের লোকজনের কল্যাণে আমাদের জন্য আয়োজন করা হলো তরমুজ, কলা এবং বিস্কুটের। ইতিমধ্যে মেডিকেল টিমের কার্যক্রম ও হয়তো বাড়ানো হয়েছে। রাত 10 টার পর ছিল রাতের খাবার, মেনুতে ভাতের সাথে ছিল রুপচাঁদা মাছ, ডাল এবং সবজি। পরদিন সকালে নাস্তার মেনুও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যাহোক 8টার দিকে আমরা হাঁটার প্রস্তুতি নিলাম। যেহেতু অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে সততা কাজ করেনা এবং আয়োজনকারীদের মধ্যে থেকে তদারকীর জনবল কম তাই প্রতিযোগীতা বাদ দেওয়া হলো। এবার সবাই হাটবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমুদ্রের উত্তার তরঙ্গের সুরের মূর্চনায়। ঠিক যেন তাই কারো মধ্যে যে তেমন তড়িঘড়ি নেই। 3য় দিনে রেডক্রিসেন্ট কমর্ীদের আতিথেয়তা উল্লেখ করার মতো তবে তা প্রথম 10 কিঃমিঃ এর মধ্যে। স্যালাইনের পানি কিংবা গ্লুকোজের পানি যা চেয়েছি তাই পেয়েছি গ্রামের ভিতর দিয়ে মেরিন ড্রাইবিং অতিক্রম করাটা একটু যন্ত্রনারই ছিল। তবে মঝার ব্যাপার ছিল গ্রামের মানুষ কিংবা পথচারিদের সাথে জাগো বাংলাদেশের স্লোগান। সবাই যে একত্রে বলি "জাগো জাগো জাগো বাংলাদেশ জাগো জাগো জাগো"। ইতিমধ্যে আমরা হিমছড়ি পেরিয়ে কলাতলি এসে পেঁৗছলাম। দুপুর 2ঃ30 মিনিটে দুপুরের খাওয়া শেষে অপেক্ষা করতে লাগলাম বন্ধুদের জন্য তারা এসে পৌঁছাল 3ঃ30 মিনিটে। বেলা 4 টার দিকে আমরা সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাবনি পয়েন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম যেখানে চ্যানেল আই লাইভ সমপ্রচার করার জন্য আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা পেঁৗছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। পাড়ি দিলাম 100 কিঃমিঃ। পৃথিবীকে জানিয়ে দিলাম আমারা বাঙ্গালি, আমরা পারি, আমাদেরই রয়েছে সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত যেটা আমরা পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছে। আমরা পারব বিশ্বকে জয় করতে।
হোটেল সি প্যালেস, মাা কনর্সোটিয়াম এবং আমরা
25 মার্চ বিকেলে আমাদের হাঁটার সমাপনী অনুষ্ঠান চ্যানেলই সরাসরি সমপ্রচার করেন যেখানে উপস্থিত ছিলেন আমাদের আয়োজনকারীরা পৃষ্টপোষকগণ এবং দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে আমরা পৌঁছলাম হোটেল সী প্যালেসে। রাতে আমাদের জন্য ছিল অফিসিয়ার ডিনার। উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী আয়ুব বাচ্চু সহ আরো অনেকে। বাংলাদেশ এবং বারমুডা খেলা দেখার জন্য হোটেল সী প্যালেসের বলরুমে আয়োজন করা হয়েছে বড় পর্দা। পরের দিন 26 মার্চ ছিল ফান ওয়াক সহ বিভিন্ন ধরনের খেলার আয়োজন। শরীর ক্লান্ত থাকার কারণে কোন খেলায় অংশগ্রহন করিনি। সকলে মিলে বিকালের সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করলাম। গান গাইলেন আয়ুব বাচ্চুসহ ক্লোজআপ ওয়ান তারকারা। রাত 9 টায় হোটেলে ফিরে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করলাম এবং রাতের খাবার শেষে 10.15 মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম।
আয়োজকদের প্রতি আমার মতামত
এই উদ্যেগ এবং এর সাথে অংশগ্রহনকারীদের আগ্রহ একটি-ই তা হচ্ছে বিশ্বের কাছে আমাদের এই বিশাল সমুদ্রসৈকতকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। আমি মনে করি এর সাথে কোন ব্যবসা জড়িত থাকা উচিত নয়। অংশগ্রহনকারীদের অনেকেই একটিভেট বাংলাদেশের আয়োজনকারীদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলেছেন তারা কিভাবে আমাদের জন্য 14000 টাকা করে খরচ করেছেন? আয়োজনকারীদের পরিচায়নায় অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমি এই উদ্যেগকে শ্রদ্ধা জানাই্ এবং আয়োজনকারীদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত লোকজন দিয়ে পরবতর্ীতে এধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করে। সেনাবাহিনী কিংবা বিডিআর এর কমান্ড দিয়ে এধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করলে চলবে না। সাধারণ মানুষদের সাথে সাধারণভাবে ব্যবহার করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তবে আমরা মনে করি অংশগ্রহনকারীদের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহীনি বিডিআর সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে। আয়োজকরা এই অভিজ্ঞতা থেকে হাঁটাযোগ নিয়ে একটি গবেষনাপত্র ও প্রকাশ করতে পারেন যা থেকে পৃথিবী অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এবং পরবর্তীতে এই ধরনের আয়োজনের আগে পৃথিবীর বিভিন্ন ম্যারথন আয়োজনকারীদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন এই 100 কিঃমিঃ হাঁটাযোগকে সফল করার জন্য।
বাংলা উইকি
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতে হাঁটাযোগ
সূচনা
এ্যাকটিভেট বাংলাদেশের উদ্যেগে বাংলাদেশে অবস্থিত (টেকনাফ থেকে কঙ্বাজার) বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত হাঁটাযোগ হয়েছে 23 মার্চ 2007 থেকে 25 মার্চ পর্যন্ত। প্রায় 500 প্রতিযোগী এই হাঁটাযোগে অংশগ্রহন করে। দেশ-বিদেশের প্রায় 12000 প্রতিযোগীদের মধ্যে থেকে 500 জনকে হাঁটার জন্য নির্বাচন করা হয়। 22 মার্চ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অংশগ্রহনকারীরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কঙ্বাজারের হোটেল সী প্যালেসে এসে অবস্থান নেয়। 23 মার্চ সকালে 16 টি বাসে সকল অংশগ্রহনকারী সকাল 10 টায় টেকনাফে পেঁৗছায়। ক্রিয়া উপদেষ্টা তপন চৌধুরী সহ দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন। উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন গ্রামীন ফোনের হেড অব মার্কেটিং রুবাবা উদ্দোলা, চ্যানেল আই এর ফরিদুর রেজা সাগর, এসিয়াটিকের আফজাল হোসেন সহ আরো অনেকে। চ্যানেল আই, ফারজানা ব্রাউনিয়ার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি সমপ্রচার করেন। জাগো বাংলাদেশের গান এবং জাতীয় পতাকা নিয়ে অংশগ্রহনকারীরা 100 কিঃমিঃ হাঁটার যাত্রা শুরু করে। 23, 24 এবং 25 মার্চ প্রায় 14 ঘন্টা হাঁটার পর অংশগ্রহনকারীরা কঙ্বাজার লাবনী পয়েন্টে এসে 100 কিঃমিঃ হাঁটা শেষ করে। চ্যানেল আইয়ের সরাসরি সম্পচার সহ জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাপনি অনুষ্ঠান শেষ হয়।
আয়োজনকারী, সেচ্ছাসেবক, নিরাপত্তারক্ষী এবং পৃষ্টপোষকগণ
এই কার্যক্রমের উদ্যেগতা ছিলেন একটিভেট বাংলাদেশ। আয়োজনে ছিলেন মাা কনর্সোটিয়াম, টাইটেল পৃষ্টপোষকতায় ছিলেন গ্রামীনফোন, অন্যান্য পৃষ্টপোষকতায় ছিলেন স্কয়ার, এইচআরসি, টীম (পেপসি), আলমা, মিডিয়ায় ছিলেন চ্যানেল আই, ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো। সেচ্ছাসেবকের দায়ীত্ব পালন করেছেন রেডক্রিসেন্ট এবং মেডিকেল সহযোগীতা দিয়েছেন সেফ অরগেনাইজেশন। অংশগ্রহনকারীদের নিরাপত্তায় ছিলেন সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিআর, আনসার, র্যাব এবং পুলিশ।
অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা
500 জন।
সমুদ্র সৈকতে হাঁটাযোগের তিন দিন
23 মার্চ যাত্রা শুরু হয় বেলা 10ঃ45 মিনিট। 100 কিঃমিঃ হাঁটা শুরু হওয়ার পর অংশগ্রহনকারীদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রতি 1 কিঃমিঃ পর পর ছিলো একজন করে সেচ্ছাসেবক। প্রতি 5 কিঃমিঃ পর পর ছিলো একটি করে রিফ্রেশমেন্ট সেন্টার, যেখানে অংশগ্রহনকারীদের জন্য ছিল বিস্কুট এবং পানীয়। অংশগ্রকারীদের উৎসাহ দিতে গ্রামবাসীরা সর্বদাই তৎপর ছিলেন। 23 মার্চ হাঁটার প্রথম দিন 15 কিঃমিঃ পর 1ম ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয় এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পটি ছিল 22 কিঃমিঃ পর। প্রতিটি ক্যাম্পেই অংশগ্রহনকারীদের জন্য ছিল বাথরুম কিংবা টয়লেটের ব্যবস্থা। অংশগ্রহনকারীদের প্রতি মুহূর্তের ক্লান্তি দুর করার জন্য সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের মিষ্টি সূরই ছিল যথেষ্ট। 24 মার্চে যাত্রা শুরু হয় যাত্রা শুরু 7ঃ15 মিনিটে। সমুদ্র সৈকতের মাঝে মাঝে খাল থাকায় অংশগ্রহনকারীদের মেরিন ড্রাইব অতিক্রম করতে হয়। অতিক্রম করতে হয় শামলাপুর গ্রাম সহ বিভিন্ন গ্রাম। শামলাপুর স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা সৈকতে এসে উপস্থিত হয় অংশগ্রহনকারীদের অভ্যর্থনা দেওয়ার জন্য। প্রায় 40 কিঃমিঃ হেঁটে অংশগ্রহনকারীরা এসে উপস্থিত হয় ইনানী বীচের কাছে, যেখানে ছিল 2য় ক্যাম্প। তার 5 কিঃ মিঃ পূর্বে ছিল 1ম ক্যাম্প। অংশগ্রহনকারীদের কয়েকজন বেলা 12 টার মধ্যেই 40 কিঃমিঃ অতিক্রম করে। 25 মার্চ বেলা 8 টায় শুরু হয় তৃতীয় দিনের যাত্রা। সকলের সম্মতিক্রমে প্রতিযোগীতা বাদ দেওয়া হয়। এবং সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটা শুরু করে। হিমছড়ী পার হয়ে কলাতলীতে এসে অংশগ্রহনকারীরা দুপুরের খাওয়া শেষে করে। অতঃপর বেলা 4 টার দিকে অংশগ্রহনকারীরা কলাতলী থেকে কঙ্বাজারের লাবণী পয়েন্টে এসে আয়োজনকারীদের উঞ্চ অভ্যর্থনায় 100 কিঃমিঃ হাঁটা শেষ করে।
সমাপ্তী
উদ্যেগতা, আয়োজনকারী, পৃষ্টপোষক এবং অংশগ্রহনকারী সকলেই প্রত্যাশা করেন এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর কাছে পরিচিতি পাক এবং কঙ্বাজার হোক সবচেয়ে বড় পর্যটন স্থান।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০০৭ সকাল ৯:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




