"গালিবের গজল থেকে" -শেষ পর্ব
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
'' চাঁদের কলঙ্ক থাকা সত্ত্বেও যখন সে অপার্থিব জ্যোতস্না ছড়ায় তা দেখে মানুষ ভুলে যায় সে ত্রুটি বিচ্যুতি ''- এই শের এর মাধ্যমে গালিব যেন তার নিজেকেই প্রবোধ দিচ্ছেন। মদ্যপ, ঋনগ্রস্ততা সহ তার নানাবিধ কার্যকলাপের জন্য লোকমনে তাকে নিয়ে নেতিবাচক যে ধারনা ছিল তা তারা ভুলে যাবে গালিবের কবিতার গুনে। কোন কোন শের এ গালিব তাই লিখে গেছেন- বহু কাল পরে লোকে মনে করবে গালিব নামে কেউ একজন ছিল, নিজের সৃষ্টির উপর এমনই ছিল তার বিশ্বাস। ২৭শে ডিসেম্বর ১৭৯৭ সালে জন্ম গ্রহন করেন এবং মারা যান ১৫ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৬৯ ইংরেজী। অনুপম সৃষ্টি দিয়েই গালিব আজ স্বীকৃত উর্দু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে, কালোত্তীর্ন কবি হিসেবে। গালিব পাঠকের মনে বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে.......
৬২
কিছুমাত্র যোগাযোগ থাকলে নিজেকে বোঝাতাম হৃদয়ের যোগ আছে তলায়,
যেখানে কিছুই নেই, প্রতারনাও অসম্ভব সেখানে । ।
৬৩
ভালোবাসা চায় ধৈর্য , বাসনা অধীর ।
আঘাতে আঘাতে হৃদয় আরও কঠিন হবে;
ততোদিনে কি দিয়ে ভোলাবো তাকে ?
৬৪
হে অপরিনামদর্শী হৃদয় আমার, অভিলাষ সম্বৃত করো;
বন্ধুর রুপের ঔজ্জ্বল্য সহ্য করবার শক্তি তুমি পাবে কোথায় । ।
৬৫
অর্থ বুঝবার যোগ্যতা যদি না ও হয় কোন দিন,
তবু রুপের বর্ণবৈচিত্র দেখার শক্তিটুকু বেঁচে থাক । ।
৬৬
প্রেমের কৃচ্ছসাধকদের খবর আর কী শুনবে,
তারা ক্রমশ আপাদমস্তক দুঃখের মূর্তি হয়ে গেলো । ।
৬৭
ঘরে ছিলো কী যা তোমার দেওয়া দুখহ ধ্বংশ করতো ?
ছিল কিছু গড়ে তুলবার বিষন্ন বাসনা, এখনো আছে তা । ।
৬৮
মন্দির নয়, কাবা নয়, কারো দরজা নয়, আস্তানা নয়;
বসে আছি পথের ধারে, সেখান থেকেও আমায় উঠিয়ে দেয় কেন ?
৬৯
ঈর্ষা বলে, অন্যের সঙ্গে তার হৃদ্যতা হায়;
বুদ্ধী বলে, সে নির্দয়- কারো সুহৃদ হতে পারেনা । ।
৭০
খেলা ভেবেছে, কোনদিন খেলা ভেঙে দেবে, ভুলে যাবে;
হে ঈশ্বর, এমনই যেন হয় যে আমাকে না জ্বালিয়ে সে থাকতে না পারে । ।
৭১
আসবে বলে কথা দিয়েছো, কথা রাখো, এ কেমন রীতি তোমার;
আমাকে আমারই দরজায় দারোয়ানির কাজ দিয়েছো কেন ?
৭২
প্রেম ছাড়া জীবন কাটেনা, অথচ
প্রেমের যন্ত্রনায় যে স্বাদ আছে, তা গ্রহন করার শক্তিও আমার নেই । ।
৭৩
এখানে যাবজ্জীবন বন্দী হয়ে আছে লক্ষ কামনা-বাসনা
আমার রক্তাক্ত বক্ষকে কারাগার বলেই জানি । ।
৭৪
আমার অফুরন্ত হৃদয় সাধ অনুযোগ করছে- হৃদয়ে বড়ো স্হানভাব;
সমুদ্রের উত্তালতা যেন মোতির মধ্য আবদ্ধ । ।
৭৫
বাসনার নিত্য নব রঙের দর্শক আমি;
আমার বাসনা কোনদিন পূর্ণ হবে কিনা , অবান্তর সে কথা । ।
৭৬
সব সম্পর্ক ছিন্ন করোনা , বন্ধু
আর যদি কিচ্ছু না থাকে তো শত্রুতাই থাক । ।
৭৭
কেমন করে তোমাকে বলি তুমিই করেছো সর্বনাশ,
এতে ভাগ্যের দক্ষ হাতের খেলাও ছিলো কিছু । ।
৭৮
হৃদয় যন্ত্রনার পাঠশালায় শিক্ষানবীসী করছি এখনো,
দুটি মাত্র পাঠ রপ্ত হয়েছে- ছিলো আর গেলো । ।
৭৯
আমি ব্যাকুল আর তিনি বিরক্ত
হায় ঈশ্বর, এ কী ব্যাপার।
৮০
মন তার পেয়েই যেতে
আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলে পারতে । ।
৮১
বন্ধুর সাথে মিলন ভাগ্যে ছিলনা;
যদি আরও বাঁচতাম, এই প্রতীক্ষাই চলতো । ।
৮২
হে ঈশ্বর , কাল আমাকে মুছে ফেলছে কেন ?
পৃথিবীর পৃষ্ঠার উপর আমি বাড়তি হরফ তো নই ।।
৮৩
চলে যাচ্ছি জীবনের অপূর্ণ বাসনার ক্ষতচিহ্ন বুকে নিয়ে,
আমি এক নির্বাপিত প্রদীপ, মাহফিলে রাখার যোগ্য নই আর । ।
৮৪
কতোকাল হলো গালিব মারা গেছে, তবু মনে পড়ে
কথায় কথায় তার বলা- "এমন যদি হত তাহলে কী হতো" ।।
তৃতীয় পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
প্রথম পর্ব
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প
তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন