somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়িওয়ালির অশরীরি মেয়ে - ১০ম পর্ব

২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠল সে । অফিস থেকে অনেকগুলো কল এসেছিল ইতিমধ্যে । সে বসকে একটা মেসেজ পাঠাল আমার শরীর খুব খারাপ , তাই অফিসে আসতে পারলামনা । বস ইটস ওকে রিপ্লাই দিয়েছিল । ঘড়ির কাটা তখন বিকালের পথে । হঠাত করে রাতের সব ঘটনা একসাথে তার মাথায় এসে হাজির হল । আবারও সে যেন ঘোরের জগতে প্রবেশ করল। পুরো ঘটনা একবার মনে মনে রিভিউ করল । হিসেব মেলাতে পারছেনা সে, ব্যাপারটা কি স্বপ্ন ছিল না বাস্তব !

হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে শাওয়াল নিল সে । তারপর বাইরে বেরোল খাওয়া দাওয়া করার জন্য । শানু বুঝতে পারছিল সে আসলে নিজের মধ্যে নেই । কালকে রাতের ঘটনার কোন আদ্যোপান্ত সে করতে পারছেনা , এর মনপুতঃ কোন ব্যাখ্যা ও তার কাছে নেই , কাউকে বললেও পাওয়া যাওয়ার কোন কারন নেই । সবাই এক বাক্যে ঘোষনা করবে নিশ্চিত ভাবে কাল রাতে সে নেশা করেছিল । অথচ এমন কোন নেশার আশপাশ দিয়েও সে হাঁটেনি । একা একা উদ্দেশ্যহীন ভাবে সে ঘুরে বেড়াল অনেকক্ষন ।

রাতের খাবার বাইরে থেকে খেয়ে দশটা নাগাদ রুমে ফিরল শানু । বাসার নিচের পরিবেশ এখনও গুমোট । নিচে বসবাস কারি টেইলর এর রুমে আজকে কাউকে আড্ডা দিতে দেখা গেলোনা । বাড়িওয়ালিরও কোন সাড়াশব্দ নেই । সেও সোজা লিফটে উপরে চলে এসেছে । ছাদে এমাথা ওমাথা সে আনমনে হেঁটে চলেছে । আসলে সে অপেক্ষাই করছে কখন আসবে অশরীরি সে মেয়ে । কিছুক্ষন হেঁটে সে রুমে এসে বসল, বিছানায় হেলান দিয়ে বসল দরজা খোলা রেখে ।

বারোটা বেজে গেছে, অথচ তার কোন দেখা নেই । শানুর যেন মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে । অপেক্ষা কিংবা প্রতীক্ষা জিনিসটা যে কি ভয়ংকর সে টের পাচ্ছে । অস্হিরতা এসে ভর করেছে তার মধ্যে । একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে সে । না মেয়েটির কোন দেখা নেই । শানুর মেজাজ খারাপ হতে লাগল তার উপর ।

আবার কিছুক্ষন হাঁটি হাঁটাহাঁটি করে সে বিছানায় গিয়ে হেলান দিল । গতকালকের অনিয়ম, শরীর ও খানিকটা দুর্বল হয়ে ছিল, কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিল সে টেরও পায়নি ।

কারেন্ট চলে যাওয়ায় সকালের ঝকমকে রোদের গরমে শানুর ঘুম ভেঙ্গে গেল । দরজা খোলা রেখেই সে ঘুমিয়ে পড়েছিল । ঘুম ভাংতেই তার মাথায় ঐ মেয়ের কথা এসে ভর করল । কিছুটা হতাশা গ্রাস করেছে তাকে, মেয়েটা কেন আসলোনা, আবার আসবেত, নাকি আর আসবেনা । ভাবতে ভাবতে ফ্ড়েশ হয়ে অফিসের জন্য রেডি হয়ে বের হল সে । খুব ভাল ফ্রেশ ঘুম হবার পরেও মেয়েটির সাথে আর দেখা না হওয়ার কস্ট তার চোখেমুখে । একদিক থেকে ভালই হয়েছে ব্যাপারটা, গতকাল অফিসে যায়নি শরীর খারাপ বলে, এখন তাকে দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে তার শরীর খারাপ ।

অফিসে কাজ কর্ম ঠিকঠাক করলেও তার মাথায় খালি একটাই চিন্তা, ঐ মেয়ে আবার আসবেত । একরাতের গল্পেই সে একটা নেশার মাঝে পড়ে গেছে । আরব্য রজনীর হাজার রাতের গল্পের আকর্ষনের মত ব্যাপার । সে এখন বাস্তবতা থেকেও অনেক দূরে চলে গেছে । শানু নিজে নিজেই ভাবছে যে ঘটনা ঘটল সেটা কি আসলেই সম্ভব । একটা মৃত মানুষ এইভাবে অশরীরি হয়ে কারো সাথে দেখা করতে পারে কিনা, তার চেয়েও বড় কথা শানু স্পষ্ট ভাবে তাকে দেখছে, তার কথা শুনছে । সে জানে এই গল্প অন্য কেউ তার কাছে করলে সে কোনদিনও বিশ্বাস করতোনা , করার কোন কারনও নেই । কিন্তু তার নিজের চোখে দেখা কানে শোনা এই ঘটনার কোন কূল কিনারা সে করতে পারছেনা । সে অসুস্হ কিনা এই ধরনের চিন্তাভাবনাও তার মাঝে কাজ করছে । পরক্ষনে এই চিন্তা সে নিজেই বাদ দিয়ে দিল, তা হলে সে অফিসে মনোযোগ দিয়ে কাজ কর্ম করতে পারার কথা নয় । অফিস শেষ করে আজও সে সোজা বাসায় চলে আসল । অন্যান্য দিনে দু একটা বন্ধুকে ফোন দিত, কেউ আশেপাশে কাছাকাছি থাকলে গিয়ে আড্ডা দিত । আজকে সে মন নেই । তার মন পড়ে আছে ছাদে , আবার কখন মেয়েটির দেখা পাবে ।
পরপর দুইদিন শানু দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করে পরে ঘুমিয়ে গিয়েছে । অশরীরি মেয়ে তার সাথে দেখা করতে আসেনি ।
দেখা হবার পর আজ তৃতীয় রাত । শানু চিলেকোঠার ছাদের উপর উঠে পা দুলিয়ে বসে আছে । সে আসলে ভাল নেই । তার মন এই দেখা না হওয়ার বিষয়টি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেনা । মাঝে মাঝে সে নিজেকে প্রবোধ দেয়ার ও চেস্টা করেছে এই ভেবে যে আসলে পুরো ব্যাপারটিই তার কল্পনা, অশরীরি কোন ব্যাপার সেপার নেই । ঘন্টা খানেক বসে থাকার পরও যখন কোন সাড়াশব্দ নেই সে উঠে যাবে এমন সময় মেয়েটি শানুর পাশে হঠাত কই থেকে যেন উদয় হয়। শানুর মতই পা দুলিয়ে বসে সে ।

কেমন আছেন আপনি ।
প্রথমে হালকা থতমত খেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে শানু হালকা উত্তজিত ভঙ্গীতে বলে এই কয়দিন কই ছিলেন ?
কই ছিলেন মানে কি ? এখানেই ছিলাম, আমারতো আর যাওয়ার মত কোন জায়গা নেই , আমি এখানেই থাকি ।
তাহলে দেখা দাওনি কেন ? আমি প্রতিদিন অপেক্ষা করে বসে থাকি দেখার পরেও ।
দেখা দিইনি কারন দেখা দিলে আপনি আমার গল্প আরও শোনার জন্য চাপাচাপি করবেন, আর শেষে রাত জেগে আপনার আর অফিস যাওয়া হবেনা তাই ।
বাহ আমার ভালর জন্য দেখি অনেক চিন্তা কর তুমি ।
তাত করেছিই , আচ্ছা ভাল কথা, আপনি হঠাত করে আমাকে তুমি করে বলা শুরু করেছেন কেন ? অনেক কথা বলেছি বলে কি আপনার সাহস বেড়ে গেছে মনে হয় ।

শানুও খেয়াল করল, আরে তাই ত, কখন থেকে সে এই মেয়েকে তুমি বলা শুরু করেছে । তার মুখ দিয়ে স্বাভাবিক ভংগীতেই বেরিয়ে এল সরি ।
মেয়েটি জবাবে বলল, অসুবিধা নেই । আমিত আর আপনাদের মত জীবন্ত মানুষ না, আপনি তুমি তুই সব আমার কাছে একসমান । কোনটাতেই কিছু যায় আসেনা ।

শানু আবার একটু সাহস নিয়ে বলল, এই কয়দিন দেখা দিলানা, তো আজ কি মনে করে তোমার দেখা দেয়ার শখ হল।
কালকে আপনার বন্ধ, তাই ভাবলাম আজকে দেখা দেয়া যায়, রাত জাগলেও সমস্যা নেই ।
বাহ , তুমিত দেখি সেইরকম চিন্তাশীল মানুষ , ও সরি মানুষনা, অশরীরি মানুষ ।
হা হা হা এত রাগ করছেন কেন, আমিত আপনার ভালর জন্যই দেখা দিইনি । আর আমার আসলে কারো সাথে দেখা দেয়ার তেমন কোন ইচ্ছাও ছিলনা । চিঠিতে কি লেখা আছে, যার জন্য আম্মা এত ক্ষেপে গিয়েছিল, সেটা জানার জন্যই বেশী আগ্রহের কারনে আপনার সাথে দেখা দিয়েছি । আমার সাথে দেখা হলে বেশীর ভাগ মানুষ ভয়েইত মারা যাবার কথা । আর প্রথমদিন আপনাদের তিন বন্ধুর জ্বীনের গল্প শুনে আপনার সাথে একটু মজা করেছিলাম এই যা ।

আপনার সাথে আর দেখা করব কিনা সেটা নিয়েও আমি আসলে কনফিউজড ছিলাম । কারন দেখা হলেই আপনি আমি কিভাবে মারা গিয়েছি সেটা জানার জন্য সবার আগে পীড়াপিড়ি করবেন, সেটাই হয়ত স্বাভাবিক । আমার আসলে বলতে ইচ্ছা করছিলনা । পরে প্রতিদিন আপনার এইভাবে অপেক্ষা করে বসে থাকাটা দেখতে আমারও ভাল লাগছিলনা ।
ভাবলাম বলি আর না বলি আজকে দেখা দিই । আপনাকে এভাবে কস্ট দেয়াটা ঠিক হচ্ছেনা ।

আমি আসলে তোমার সব কাহিনীই শুনতে চাই । সেটা না শোনা পর্যন্ত মনের মাঝে এক ধরনের অশান্তি কাজ করবে ।
ধুর, সেটা খুবই ফালতু কাহিনী, বোকামির কাহিনী ।
যে কাহিনীই হউক , আমি শুনতে চাই ।
আপনি আসলেই শুনবেন ?
অবশ্যই শুনত , যত লম্বা সময় লাগবে লাগুক ।
তবে একটা শর্ত আছে ! সেটা মানলে আমি পুরা কাহিনী বলব ।
কি শর্ত ?
আপনি কোন মন্তব্য করতে পারবেননা, কেবল শুনবেন । আমার গল্প শেষ হলে এই নিয়ে আর কোন আলোচনা হতে পারবেনা । যে ঘটনা ঘটে গেছে, সেটা শুনতে পারেন, এতই যেহেতু আগ্রহ । কিন্তু সেটা নিয়ে কোন মন্তব্য করা চলবেনা , কারন তাতে এখন কোন কিছুই আর পরিবর্তন হবেনা । এবার বলেন রাজি আছেন কিনা শর্ত মানতে ।
হুমম আছি ।
ওকে, তাহলে আমি পুরো কাহিনীই বলব । আপনি সিগারেট খাবেন আর শুনবেন ।
ওকে...................


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×