সুইম স্যুটে নিজেকে দেখতে মন্দ লাগছেনা ।
তেমন কোন অস্বস্তি যে হচ্ছে তাও না । কারন আমি যেখানে আছি সেখানে আমাকে দেখতে পাবার মতন বাইরের কেউ নেই । অবশ্য কাউকে দেখিয়ে বেড়ানোর কোন ইচ্ছাও আমার নেই ।
আগামীকাল আমাদের প্রথম ম্যারেজ এনিভার্সারি । অপু গত ছয় মাস ধরে এই দিনটাকে নিয়ে নানা প্ল্যান করে শেষ পর্যন্ত ঠিক করেছিল আমরা কোন একটা লেক সাইড কটেজে এই সময় ভ্যাকেশন কাটাব । জায়গা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা ছিলনা, ইনফ্যাক্ট আমি এটা নিয়ে ভাবিওনি । আমেরিকায় চলে আসার পর থেকেই দুজন লেখাপড়া নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে, ঠিকমত নিজেদেরকেই সময় দেয়া হচ্ছিলোনা । আমি কেবল ভ্যাকেশনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম, তা যেখানেই হবে হউক, দুজন একসাথে কোন ধরনের কাজের চিন্তা ছাড়া থাকব এই ভাবনটাই আমাকে বেশি আলোড়িত করছিল ।
আমেরিকার আর কোন পাহাড় পর্বতের নাম জানুক আর না জানুক, আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা সম্ভবত কলোরাডোর রকি মাউন্টেনটাকে সবাই খুব ভাল ভাবে চিনে । এটার কথা সামনে আসলে তারা এমন ভাব করে যেন এর পরতে পরতে তাদের পদচারনা ছিল । অপু ও তার ব্যতিক্রম নয় । লেক সাইড কটেজে কয়েকদিন থাকা যায় কিনা এই ভাবনা থেকে সে গুগলে সার্চ করছিল আমেরিকার লেক সাইড কটেজ নিয়ে । রকি মাউন্টেনের পশ্চিমে গ্র্যান্ড লেক এ এমন ব্যবস্হা আছে দেখার সাথে সাথে সে ডিসিশান নিয়ে নিল ঐখানকার লেক সাইড কটেজ গুলোতেই আমরা ছুটি কাটাতে যাব । কটেজগুলো কেমন, কি কি ফ্যাসিলিটি আছে, কি কি করা যাবে এই সব বর্ণনা দিয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল মতামতের জন্য । তার চোখ দেখেই আমি বুঝতে পারছিলাম সে কি মতামত চায় আমার কাছে । তাকে উতসাহ দিয়ে সাথে সাথেই বললাম, এখনি বুকিং দিয়ে দাও, পরে যদি পাওয়া না যায় । একটুও দেরি করেনি সে, সিংগেল একটা কটেজ সাথে সাথে বুকিং দিয়ে দেয় । এক বেড রুমের কটেজ লেকের লাগোয়া- লেক ফ্রন্ট এই কেবিনের সাথেই ডক আছে, যেখান থেকে সরাসরি লেকের জলে নেমে যাওয়া যায় । সাঁতার কেটে আবার নিজের কেবিনে ফিরে আসতে অন্য কোথাও যাওয়া লাগবেনা, অপু আমাকে এই সুবিধার নানা গুনাগুন বর্ণনা করার চেস্টা করছে । পাশের কটেজটি থেকে একশ মিটার দূরে, কাজেই প্রাইভেসি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তার কথা লেখাই আছে ।
বুকিং দেয়ার পর থেকেই আমরা একই সাথে অপেক্ষা এবং প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম । সাঁতার জানা আমি মনে মনে ভাবছিলাম একটা সুইম স্যুট কিনব, জীবনেত কোনদিন পড়ে দেখলামনা কেমন লাগবে । আর ঐখানে যেহেতু পুরোপুরি প্রাইভেটলি সাঁতার কাটা যাবে তাই কোন সংকোচ ও কাজ করেনি । শপিং মলে একটা সুইম স্যুট দেখে আমি ট্রায়াল দিতে গেলাম আর অপুকে যখন ট্রায়াল রুমের সামনে ডাকলাম এই পোশাকে আমাকে দেখে তার চোখগুলো হয়েছিল দেখার মত । সে সম্ভবত কখনো কল্পনাও করেনি আমাকে এমন পোশাকে দেখবে , একটা ভ্যাবাচ্যাকা ভাব তার চোখেমুখে, শেষে সম্ভবত কিছুটা মনের জোর সংগ্রহ করে বলেছিল কিনে ফেল, ভালই লাগছে । আমি নিশ্চিত কল্পনায় সে ভাবছিল এই পোশাকে তার বউকে অন্য কেউ দেখলে ব্যাপারটা কি হবে ! অপুর মনের ভাবনা বুঝতে পেরে আমি বলেছিলাম, কিনে রাখি, যদি দেখি যথেস্ট প্রাইভেসি আছে তাহলে একবার শখ করে এটা পড়ে সাঁতার কাটব । কথাটা শুনে সে কি হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল কিনা , সেটা দেখার জন্য আমি আর তার দিকে তাকাইনি, ট্রায়াল রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলাম চেঞ্জ করার জন্য ।
মাছ ধরার যাবতীয় সরঞ্জাম, নানা রকম চিপস চকলেট থেকে শুরু করে কত কি যে আমরা কিনেছি । এর বাইরে অপু বেশ দাম দিয়ে এক বোতল ভদকা কিনেছে । এমন না যে আমরা নিয়মিত ড্রিংক করি । হঠাৎ খুব শখ হলে দেখা যেত সে একটা বোতল নিয়ে এসেছে সুপারশপ থেকে । সেটা আবার দুজনে মিলে একটু আধটু করে কয়েকদিন লাগিয়ে খেতাম । কাউন্টারে দাঁড়িয়ে সে আমাকে বলছে এনিভার্সারি সেলিব্রেশনে একটা ভাল ভদকা না থাকলে ব্যাপারটা ঠিক মানাবেনা । ভাবখানা এমন এর আগে সে অনেকবার এনিভার্সারি সেলিব্রেট করে এসেছে, সেখান থেকে এই তার উপলব্ধি । অবশ্য পথে আসতে আসতে তার মনে হয়েছে একটা শ্যাম্পেন ও আনলে ভাল হত , ফলাফল পথে এক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে সেটাও সে কিনেছে ।
নিজেকে দেখা শেষ । অপু এখনো এই পোশাকে এমন খোলা জায়গায় আমাকে দেখেনি । তাই এখনি এটা চেঞ্জ করতে ইচ্ছা করছেনা । একটা টাওয়েল কোমড়ের উপর পেচিয়ে নিয়ে ওপেন ডেকটাতে থাকা বিচ বেড গুলোতে নিজেকে এলিয়ে দিলাম । আমি শুতে না শুতেই অপু উঠে এল ঘুম থেকে । গতকাল সন্ধ্যায় চেকইন করেছি আমরা । রাতে ডিনার শেষে টিভি দেখতে দেখতে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল । লম্বা পথ ড্রাইভ করে বেচারা এমনিতেই ক্লান্ত । তাই সকালে তাকে না ডেকে আমি একলাই সাঁতার কাটতে নেমে গিয়েছিলাম ।
আমার দিকে একনজর তাকিয়ে, ভাল করে দেখেছে বলে মনে হয়না, বলে বসল বাহ তোমাকে সুইম স্যুটে বেশ ভাল লাগছেত ! আমি তাই নাকি বলে হালকা হাসি দিলাম । এরপর সে বলল তুমি থাক, আমি দুই পেগ করে ভদকা বানিয়ে নিয়ে আসে । অপু একটা কাজ খুব ভাল পারে, আমিত মাঝে মাঝে বলি তুমি বারটেন্ডার হলে বেশ নাম করতে । লেবু , বিট লবণ আরো কি কি দিয়ে সে খুব চমৎকার ভাবে ভদকা সার্ভ করতে পারে ।
আহ ভদকা ! জীবনে কোনদিন এইসব ছাইপাশ খাবো , কল্পনাও করিনি । আফিসের এক ওয়ার্কশপে সবাই মিলে কক্সবাজার গিয়ে উঠলাম হোটেল সাইমনে । লাঞ্চের সময়ই সবাই কানাঘুষা করছে ড্রিং করবে কে কে এই নিয়ে, সবাই আসলে পার্টনার খুজছে, এইসব জিনিস একা একা খাওয়া যায়না । সাথে একজন থাকলে সম্ভবত খাওয়াটা জমে, তাই সবাই পার্টনার খুজছে । মেয়ে কলিগদের ও অনেককেই দেখলাম উসখুশ করছে, সায়মন হোটেলের বার চোখের সামনে থাকাতে এই উসখুশ সম্ভবত আরো বেশী হচ্ছে । লুকিয়েচুড়িয়ে যেহেতু খাবে তাই সবাই নিজের মত কমফোর্ট জোন তৈরি করে নিতে চাচ্ছে, কে বা কারা এক সাথে গ্রুপ করে খাবে । আমার কোন গ্রুপেই যোগ দিতে ইচ্ছা হলোনা । আরেকজন মানুষকে দেখলাম নিবিড় মনে লাঞ্চ করে যাচ্ছে, এই রিলেটেড কোন কথা বলতে তাকে দেখলামনা , যদিও এমনিতে খুবই মিশুক মানুষ , ফারহান ভাই ! তাকে দেখেই আমার মনে হল তিনি অবশ্যই মাঝে মাঝে ড্রিংক করেন, তবে সেটা অনেক কে নিয়ে নয় সম্ভবত । লাঞ্চ শেষে সবাই যারযার রুমে চলে গেলাম, আমি যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই । রুম মেট সম্ভবত আমাকে ডেকে সাড়া না পাওয়াতে একাকি অন্যদের সাথে বের হয়ে গিয়েছিল । আমার যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন শেষ বিকেলের আলো পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে যাচ্ছে । হিল সাইড রুম, তাই ভাবলাম যাই সাগর পাড়ে গিয়ে বসে বসে একাকি সূর্য ডোবা দেখি ।
লিফটে উঠতেই দেখি ফারহান ভাই ও উপর থেকে নামছেন । তিনি বললেন সঙ্গী সাথীরা কই । ঘুমে থাকায় তারা চলে গেছে বলে একটা হাসি দিলাম । বললাম আপনি কই যাচ্ছেন । কোন ধরনের সংকোচ কিংবা রাখঢাক না রেখে তিনি বললেন বারে যাচ্ছি । ওনার সাথে আমার অফিসে কাজের কথা অনেক হয়, টিম মেট হিসেবে খুবই ভাল, সিনিয়র ভাব না ধরে সবার সাথেই মিশেন । সবাই কমবেশি উনাকে পছন্দ ও করে । বয়সে আমার চেয়ে দশ বারো বছরের সিনিয়র তো হবেনই । আমিও কেন জানি কোন কিছু না ভেবেই বলে বসলাম এই অবেলায় মদ খাবেন । বলে নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। ভাবখানা এমন আমি খুব মদ খাওয়ার সময় জ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ! ফারহান ভাই হাসি দিয়ে বললেন এটাই সবচেয়ে ভাল সময় । একাকি বারের সামনের ব্যালকনিতে বসে আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে ভদকা খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখার মত অপার্থিব আর কোন কিছু নেই ।
কোন কিছু না ভেবেই আমি বলে বসলাম আপনার সাথে আমি যেতে পারি , আমি কোনদিন বারে যাইনি । হাসি দিয়ে বললেন অবশ্যই যেতে পার। কিছুটা সভয়ে আমি ওনার সাথে বারে ঢুকলাম । হাহা যেমনটা ভেবেছিলাম এটা আসলে তেমন নয়, আমিত ভেবেছিলাম সিনেমায় যেমন পরিবেশ দেখায় এখানেও তেমন কিছু হবে । ফারহান ভাই এর পিছু পিছু আমি বার ডিংগিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম । সূর্যাস্ত দেখার জন্য এটা খুবই ভাল জায়গা, বসেই মনে হল । পড়ন্ত বিকেলের আলোতে সম্ভবত আমাদের দুজনকেই সুন্দর লাগছিল । মাঝে মাঝে সানসেট দেখার ফাঁকে আমরা একজন আরেকজনের দিকেও তাকাচ্ছিলাম। ওয়েটারকে নিজের জন্য এক পেগ ভদকা আর একটা জুস অর্ডার দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন তুমি নিশ্চয় মদ খাবেনা ! আমিও পাল্টা বলে বসলাম কেন খাবোনা ! তখন তিনি বললেন কই দুপুরে সবাই যখন পরিকল্পনা করছিল তখনতো দেখলামানা কোন দলে যোগ দিতে ! বাহ, আমি ভেবেছিলাম এই লোক নিবিড় মনে লাঞ্চ করছে, এখন দেখছি সে চারপাশের সবকিছুই অবলোকন করেছে ।
আমি জুস খাচ্ছি আর তিনি মাঝে মাঝে একটু করে চুমুক দিয়ে ভদকা খাচ্ছেন । কেন জানিনা আমার ও তখন খুব ইচ্ছা হল খেতে । বললাম ভাইয়া এটা খেলে কি আমি সাথে সাথে টাল হয়ে যাব । হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি । মেজাজ কিছুটা খারাপ হচ্ছিল এমন অট্ট হাসি দেখে, আমি একটা জিনিস জানিনা বলে এভাবে এমন করে হাসতে হবে নাকি । মদখোরদের মনে হয় আসলেই হুস জ্ঞান কাজ করেনা, আমি ভাবতে লাগলাম । সম্ভবত আমার বিরক্তিটা টের পেয়ে তিনি সাথে সাথে থেমে গেলেন । খুব সিরিয়াস ভঙ্গীতে বললেন, এটা ডিপেন্ড করে তোমার সহ্য ক্ষমতার উপর । নরমালি এক দুই পেগে কিছু হবার কথা না, আবার হতেও পারে । পুরা ব্যাপারটা তোমার উপর, তুমি কিভাবে নিতে চাচ্ছ । আমি জানতে চাইলাম আসলেই কি তা, নাকি খেলেই টাল হয়ে যাব। তিনি মুচকি হেসে বললেন আরে না , তবে ভয় পেলে খাবার দরকার নেই ।
কই থেকে জানি আমার মাথায় সাহস ভর করলো , বললাম আমিও খাবো । তিনি দ্বিতীয় কোন কথা না বলে ওয়েটারকে ডাক দিলেন, আমার জন্য এক পেগ ভদকা দিতে বললেন, আর সাথে লেবু টেবু আরো কি কি যেন । আমাকে বললেন, ধুম করে খেয়ে ফেলবানা । আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে ব্যাপারটা ফিল করে খেতে হবে । সাগর দেখ, সূর্যাস্ত দেখো আর একটু একটু করে চুমুক দিবা । মনে হচ্ছে শিক্ষক ছাত্রকে শেখাচ্ছেন । আমিও ওনার কথামত খুব আস্তে আস্তে একটু একটু করে চুমুক দিচ্ছি । আমার খেতে সামহাউ কোন খারাপ লাগছিলনা, আর মনে ও হচ্ছিলনা যে প্রথম খাচ্ছি । আমার খাওয়া দেখে ফারহান ভাই তো বলেই ফেলেছিলেন দেখেতো মনে হচ্ছে তোমার ভালোই অভ্যাস আছে । আমি বললাম আজকেই প্রথম জীবনে । ওনার কথামত ওয়েটার লেবু আর স্প্রাইট এমন ভাবে মিশিয়েছে আমার মনে হচ্ছিল আমি লেবু মিশিয়ে স্প্রাইট খাচ্ছি ! অনেকক্ষন লাগিয়ে এক পেগ খাবার পর বলেছিলাম আরেক পেগ খাব । ওয়েটার দিয়ে গেল । আমরা খাওয়ার চেয়ে গল্পই করছি বেশি । উনি ইতিমধ্যে তিন পেগ খেয়েছেন , এবং দেখলাম খুবই নরমাল ভাবেই কথাবার্তা বলে চলেছেন ।
আমরা যে কত রকমের গল্প করছিলাম তার কোন কিছু এখন আর মনে পড়ছেনা । শিল্প সাহিত্য, গল্প-কবিতা , দর্শন - কত কি ! ফারহান ভাই যে এত বিষয়ে খোজ খবর রাখেন আর পড়েন সেটা ওনার সাথে আলাপ না করলে কখনোই জানা হতোনা । আমি নিজেও একসময় প্রচুর পড়তাম, তখনো ইনফ্যাক্ট কোন বই ই বলা চলে বাদ দিতামনা ! গল্পের আসর চমতকারভাবে জমে উঠেছিল ব্যালকনিতে লেবু পানি খেয়ে সাগরের মাতাল হাওয়াই । আমিও ওনাকে বলেই ফেলেছিলাম, আপনি ওয়েটারকে আসলে কি দিতে বলেছিলেন, আমারতো মনে হচ্ছে লেবু মিশিয়ে স্প্রাইট খাচ্ছি ! উনি কি যেন একটা ভদকার নাম বলেছিলেন , এখন আর মনে পড়ছেনা ।
এরপর উনি বললেন সাগড় পাড়ে হাঁটতে যাবেন । আমাদের আলাপ এত জমে উঠেছিল আর আমার মাঝে কেমন একটা ঘোর লাগা ভাব কাজ করছিল, কাজেই ওনার সাথে না যাওয়ার কোন কারন ছিলনা । আমিও যাব বলাতে উনিও বললেন চল । আমার রুমমেট ফোন দেয়াতে জানলাম তারা সবাই নাকি জীপ ভাড়া করে ইনানি গিয়েছে,আস্তে ধীরে আসবে তারা । বললাম আমিও সাগড় পাড়ে , তাদের সাথে না যাওয়া নিয়ে আমার মাঝে কোন ভাবনাই কাজ করে নাই । বরং না যাওয়াতেই ভাল হয়েছে মনে হয়েছিল ।
আন্ধকার নেমেছে অনেকক্ষন, দূর থেকে স্ট্রিট লাইটের আলোয় বিচ হালকা আলোকিত । আমি পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটছি, সম্ভবত আমার কারনে বাধ্য হয়ে কিংবা আমি কি না কি করি এই ভয়ে তিনি আমার কাছাকাছিই ছিলেন । হালকা ঘোর লাগা ভর করেছিল আমার মাঝে । হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে আমি বলেছিলাম ফারহান ভাই আমার এখন আপনার হাত ধরে হাঁটতে ইচ্ছা করছে । ওনার উত্তরের অপেক্ষা না করেই আমি হাত ধরে নিয়েছিলাম , ফলে তিনিও আমার সাথে পানিতে পা ডুবাতে বাধ্য হলেন । হাত ধরাতে ওনার ও কোন সংকোচ হয়েছিল কিনা সেটা ঘোর লাগা ভাব নিয়ে আমার বোঝার সাধ্য ছিলনা । আর আমিও ফিরিয়ে দেয়ার মতোন মেয়েত না, নিজের ব্যাপারে ঐ কনফিডেন্সের ঘাটতি আমার কখনোই ছিলনা ! আমি নিশ্চিত সেদিনের এই আনএক্সপেক্টেড সময় কাটানো আমার দুজনেই উপভোগ করেছিলাম, হুশে হউক আর বেহুশে ! যদিও কখনো আর এটা নিয়ে ওনার কাছে কিছুই জানতে চাইনি যে তার কেমন লেগেছিল । রুমে ফিরে শাওয়ার নিতে নিতে মনে হচ্ছিল আমরা দুজন জড়িয়ে যাচ্ছি নিয়তির ভিন্ন কোন চক্রে !
ইনানি পাটুয়ার টেক ঘুরে সবাই যখন ফিরে আসল তখন আমি রুমে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছি । রুমমেট কলিগ ফ্রেশ হবার পর নিচে নামলাম সবাই মিলে একসাথে ডিনার করার জন্য । হালকা ঘোর লাগা ভাব তখনো থাকলেও আমি বেশ স্বাভাবিক ই ছিলাম মনে হয়, কারন কেউ কিছু জানতে চাইনি বলেনি কিছু খেয়েছি কিনা ! ফারহান ভাই ও খুব নরলাম সময় কাটালেন সবার সাথে । ডিনার শেষে এক গ্রুপ গেল বারে ড্রিংক করার জন্য । দেখলাম ফারহান ভাই বলছেন তিনি যাবেন না, তার যেতে ইচ্ছা করছেনা, তিনি সাগড় পাড়ে বেডে গিয়ে কিছু সময় শুয়ে কাটাবেন বলে ঘোষনা দিলেন । সবাইকে অবাক করে আমিও স্বাভাবিকের চেয়ে সম্ভবত একটু জোরেই বলে ফেললাম আমিও সাগড় পাড়ে যেতে চাই । মনে মনে চাইছিলাম আর কেউ যেন না যায়, কিন্তু আমি যেতে চাওয়াই আরো কয়েকজন মেয়ে কলিগ ও বলল ফারহান ভাই গেলে তারা ও যেতে চায়, সঙ্গে পুরুষ মানুষ থাকলে নিরাপদ এই ভেবে । কয়েকজন ছেলে কলিগ ও যোগ দিল । সাত আটজনের গ্রুপ হয়ে গেলাম আমরা । দারুন সময় কাটল , আর খেয়াল করলাম ফারহান ভাই আমার সাথে অতিরিক্ত একটা কথাও বললেননা, সবার সাথে তাল মিলিয়ে যতটুকু হলো, ঠিক ততটুকুই ।
পরদিন সকালের ওয়ার্কশপে আমি যেন অন্য ফারহান ভাইকে আবিষ্কার করলাম । কি চমতকার প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন তিনি, কত রকমের উদাহরন, মাঝে মাঝে গল্প কবিতার লাইন । মজার ব্যাপার হল তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে একসময় আমি ভাবতে লাগলাম আবার কখন যে ভাইয়ার সাথে বসে মদ খেতে পারব , ভাবতে ভাবতে নিজেই হেসে উঠেছিলাম জোরে, আর তিনি জানতে চাইলেন কি হয়েছে । আমি হেসে দিয়ে চুপ করে রইলাম, তিনিও আর কিছু বলেননি । ঐ ট্যুরে অবশ্য আর ড্রিংক করার সুযোগ মেলেনি, কিন্তু জিনিসটার প্রতি আমার হালকা আগ্রহ তৈরি হল ।
ঢাকায় ফিরে ধীরে ধীরে ফারহান ভাইয়ের সাথে আমার অন্যরকম একটা সম্পর্ক গড়ে উঠতে লাগল । লাঞ্চে, অফিস শেষে দেখা গেল আমরা আড্ডা দেয়া শুরু করলাম, কখনো কখন অন্য কলিগরাও যোগ দিত । আমরা সমসাময়িক সাহিত্য থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, কোন কিছুই বাদ রাখিনি আলোচনার টেবিলে । আমি যেমন মন্ত্রমুগ্ধের মত তার কথা শুনতাম, তেমনি খেয়াল করেছি তিনিও গভীর আগ্রহ নিয়ে আমার কথা শুনতেন । আমাদের এই পথ চলা আরো বাড়তে লাগল, বলতে গেলে যতক্ষন জেগে থাকতাম ততক্ষনই আমরা কানেকটেড থাকতাম । কেউ একটা ভাল লেখা পড়লে, ভাল ছবি দেখলে সাথে সাথে অন্যকে ফরোয়ার্ড করে দিতাম । কোন গান শুনে ভাল লাগলে সেটার লিংক পাঠিয়ে দিতাম । মাঝে মাঝে শখ করে এরই মাঝে কয়েক দফা ভদকা খাওয়ার জন্য রেডিসনের বারে যাওয়া হয়ে গিয়েছিল ততদিনে । ভালই লাগত আমার। ফারহান ভাই আমাকে কি এক উপলক্ষ্যে এক বোতল গিফট ই করে বসলেন একদিন ।
মাঝে মাঝে আমি কিছুটা ধন্দে পড়ে যাওয়া শুরু করলাম নিজেকে নিয়ে । আমি কি ফারহান ভাইয়ের সাথে অতিরিক্ত জড়িয়ে যাচ্ছে ! সারাক্ষন সব বিষয়ে আমার তার সাথে যোগাযোগ করা চাই ই চাই । অবশ্য সেইম জিনিস তিনিও করে চলেছিলেন । একদিন আমি নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে বসেছিলাম, আমি কি ফারহান ভাইকে ভালবেসে ফেলেছি । সত্যি বলতে কি নিজের ভেতর থেকে উত্তর এসেছিল হ্যাঁ । মনে মনে ভাবলাম, ভালবাসলে বেসেছি, এইটা নিয়ে আলাপ করার কিছু নেই ।
একদিন উইকেন্ডের সকালে ফারহান ভাই মেসেজ পাঠালেন জরুরি দেখা করতে চান । আমাদের দুজনেরই খুব পছন্দের জায়গা ছিল ছিলান্ট্রো , ধানমন্ডির এই শপটার কফি আর স্ন্যাক্স এর ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম আমরা । লম্বা আড্ডার জন্য এটা বেছে নিতাম আমরা, একটা জায়গাও আমাদের খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিল সেখানে । ছাদের খোলা অংশের এক পাশে, বলতে গেলে সেটা বেশ আড়ালেই থাকত সবার সামনে থেকে, আমরা মুখোমুখি বসে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দিতাম সেখানে ।
আগে পৌঁছে আমি সেখানেই গিয়ে বসলাম । একটু পরেই ফারহান ভাই ও এসে হাজির হলেন । আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি আজকে আমার পাশে এসে বসলেন , এই প্রথম ! আবাক হলেও আমি কিছু জানতে চাইলামনা । কফির অর্ডার দিলাম, সাথে তিরামিসু । দুজনই সামনের দিকে তাকিয়ে আছি । কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছিনা, কিছু বলছিও না । হঠাত তিনি বলে উঠলেন, আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কোন কিছুই এখন আর ভাবতে পারছিনা । আমি যেন কিছুটা স্বস্তি পেলাম এই কথা শুনে । নিজের ভেতর মাঝে মাঝে চাংগা হতে চাওয়া অপরাধবোধ নিমিষেই উবে গেল । আমি যেন বাস্তবে ফিরে এলাম । ওয়েটার অর্ডার ডেলিভারি করে চলে গেল ।
কারো মুখে কোন কথা নেই । দুজনেই কফিতে চুমুক দিলাম । আমিই বলা শুরু করলাম, ফারহান ভাই আমাদের এখন পাগলামির বয়স আর নেই । যদিও আমি এখনো পাগলামি করলে সবাই মেনে নিবে, কিন্তু আপনার টা মেনে নেয়ার জন্য কাউকে পাবেন না । ফারহান ভাই সামনের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন, তোমাকেও পাবোনা ?
আমি হাসতে হাসতে বললাম, না ! আমাকেও পাবেন না ।
চাইলেই আমি আমার অনুভূতি টুকু লুকিয়ে রাখতে পারতাম । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে কোন একজন হবেনা এমন সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে এই কাজটাই করে , আর ফলে তাদের দুরত্ব বাড়তেই থাকে । কিন্তু আমার এই মানুষটিকে হারাতে একদমই ইচ্ছে করছিল না । তাই আমার মনে হয়েছে আমার ও অবস্হা যে ওনার মতোন, সেটা ওনাকে জানিয়ে দেয়া দরকার। তাহলে তিনি স্বাভাবিক হতে পারবেন খুব সহজেই । আমিও সহজে ওনাকে হারাবোনা ।
আমি ফারহান ভাইয়ের দিকে তাকালাম । ওনি এখনো সামনের দিকেই তাকিয়ে আছেন । কফিতে চুমুক দিচ্ছেন । আমিও একটা চুমুক দিলাম । তারপর বলা শুরু করলাম, জানি আমি হাত বাড়ালেই আপনিও সে হাত ধরে নিবেন । বেশ কিছু সময় আমরা হাওয়ায় উড়ে কাটিয়ে দিতে পারব । কিন্তু একাকি সময়ে, আনমনে আপনি হয়ত এখনকার আপনাকে আর খুজে পাবেন না । আদর্শ পিতা, স্বামী, সন্তান এর পজিশন গুলো যখন হারিয়ে ফেলবেন, আপনার নিজের প্রতি সেলফরেস্পেক্ট ও কমে যাবে । একসময় পর আমরা যে অসুখী হয়ে যাবোনা এইসব ভাবনার কারনে সে গ্যারান্টি আসলে কেউ দিতে পারবেনা । তারচেয়ে ভালবাসা ভালবাসার জায়গাতে থাক, আমরা আমাদের মত ভালবেসে যাই । কঠিন পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেতে খেতে বয়ে যাওয়া পানি এক সময় নদী হয়ে উঠে । তেমনি কঠিন এই ভালবাসার ধাক্কা সমলাতে সামলাতে আমরাও জীবনে পথ চলা শিখে যাব ।
দুজনের কফি শেষ । আমি ফারহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললাম আমার দিকে তাকান । ফারহান ভাই তাকালেন । চোখ হালকা ছলছল । দুহাতে ফারহান ভাইকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলাম, অনেকক্ষন সময় নিয়ে । একসময় এই চুমু খাওয়াই হয়ে গেল আমাদের ভালবাসার পরিনতি । আমরা প্রায়ই গভীর আবেগ নিয়ে একে অন্যকে চুমু খেতাম । এমন না যে এর বেশি কিছু করার ইচ্ছা আমাদের জাগতোনা, কেন জানি সে ইচ্ছা কন্ট্রোল করার শক্তিটা গভীরভাবে আমার ছিল । ফারহান ভাই মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যেতেন , ওনাকে বুঝিয়ে অনেক অনেক চুমুর বিনিময়ে ফিরিয়ে দিতে হত আমাকে । বলতাম, একবার যদি আমার শরীরের ছোয়া আপনি পেয়ে যান, আপনার জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠবে । আপনি আর কোনদিন ঘরে শান্তি খুজে পাবেন না । এরপর ফারহান ভাই ও আর জোর করতোনা ।
আমাদের সম্পর্কটার কোন পরিনতি হবেনা সেটা মেনে নিয়েছিলাম আমরা । সময়ের পরিক্রমায় আমরা দুজনই জব সুইচ করি , তাতে যোগাযোগের , কাছে আসার, কফি কাপে চুমুক দেয়া, কোন কিছুর ই ঘাটতি পরেনি । লম্বা সময় পাড়ি দিয়েছি আমরা । এমনি করেই পথ চলার এক ক্ষনে অপুর সাথে আমার পরিচয় । সে ফারহান ভাইয়ের পুরো বিপরীত । কবিতা সে পড়েইনা , প্রচুর গান শোনে, তার মানে এই না যে সে গানের নিগূঢ় অর্থ নিয়ে আলোচনা করে সে রাত কারিয়ে দিবে । অপুর সাথে আমার ভালো একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি হয় । দুজন দুজনের সীমারেখা টা বুঝে যাই খুব সহজে, সেটা মেনে চলার ও চেস্টা করি । ফারহান ভাইকে বললাম , কি করা যায় বলেন, আপু জানতে চেয়েছে আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে আমার কোন আপত্তি আছে কিনা । নিশ্চুপ থেকে কফি শেষ করলেন । আমার দিকে তাকালেন, তারপর বললেন, বলো প্রস্তাব পাঠাতে । এক জীবন এভাবে পার করে ফেলার কোন মানে নেই । জীবনের অন্য দিক ও তোমার দেখা দরকার । কফি শেষে বললাম চলেন পূর্বাচলের দিকে যাই । তিনি বললেন রাত হয়ে যাবে অনেক এখন গেলে । বললাম হলে হউক ।
একসময় গাড়ি থামাতে বললাম , মাঝে মাঝে আমাদেরকে অতিক্রম করে যাওয়া গাড়ির আলোয় আমাদের গাড়ির ভেতরেও আলোকিত হয়ে যাচ্ছে । কেউ তাকলাএ দেখতে পেত ভেতরে পাগলের মত একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে চুমু খেয়ে যাচ্ছে , ঠোঁট, জিহবা মিলে মিশে একাকার । একসময় থামল আমাদের পাগলামি । বললাম, পানি দেন পানি খাব । ফারহান ভাই হাসতে হাসতে বললেন এতগুলো চুমু খেলাম এরপরও পিপাসা রয়ে গেছে ।
পানি খেলাম , তিনি চুপচাপ সামনে তাকিয়ে ছিলেন । আমি কথা শুরু করলাম, আজকের পর থেকে আমরা আর কোন যোগাযোগ করবোনা । এটা আমার জন্যও একটা পরীক্ষা । এই পরীক্ষায় পাস করতে পারলে আমি অপুকে বলবো বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে । ফারহান ভাই গাড়ি স্টার্ট দিলেন । এরপর আমাদের আর একটি কথাও হয়নি । এখন পর্যন্ত না ।
দুমাস পর আমি অপুকে বললাম সে চাইলে বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে পারে । তার ছয়মাস পর আমাদের বিয়ের ডেট ঠিক করা হলো । আর তার মাঝেই আমরা বাইরে পড়তে যাবার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছিলাম দুজনেই ।
বিয়ের ডেট ঠিক হবার পর ফারহান ভাইকে মেসেজ পাঠিয়েছিলাম । শুভকামনা জানালেন । এরপর মাঝে মাঝে আমাদের মেসেজ আদানপ্রদান হত, হাই হ্যালো টাইপ । মেসনজারে বিয়ের কার্ড পাঠালাম । সাথে একটা অনুরোধ করেছিলাম, বিয়ের মঞ্চে বসে আপনাকে একবার দেখতে চাই । আমাদের অনুভূতিগুলো সত্যি হলে আমি নিশ্চিত সেদিন এক মিনিটের জন্য হলেও আপনাকে আমি দেখতে পাবো ।
বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে, আর আমার ভেতরে কেমন জানি লড়াই চলছে । ফারহান- আপু, অপু-ফারহান । আমি কাউকেই ভুলতে পারছিনা , দুজন একসাথে আমার মাঝে বসবাস করে চলেছে । সপ্তাহখানেক আগে ফারহান ভাইকে মেসেজ পাঠালাম, আমাকে কয়েক পেগ ভদকা যোগাড় করে দিবেন, বিয়ের দিন যত আসছে টেনশন ততই বাড়ছে । এক বোতল ভদকা খুব সুন্দর করে একটা বক্সে রেপিং করে আমার অফিসের নিচে এসে পিয়নের হাতে পাঠিয়ে দিলেন ।
বিয়েরদিন দুপুরে দেখি এখনো চার পাঁচ পেগের কাছাকাছি রয়ে গেছে । স্টেজে বসে লম্বা সময় কাটাতে হবে এটা ভেবেই কেমন অস্হির লাগছে । অপু অনেক ব্যাপারে ট্রাডিশনাল, যা বুঝলাম, বিয়ে খেতে আসা প্রতিটা মানুষের সাথেই বর কনের একটা করে ছবি থাকবে , এবং সে নির্বিকার ভাবে খুশি মনে এই ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করছে । পার্লারে যাবার আগে আমি একটু একটু করে কয়েকবারে পুড়োটুকু খেয়ে ফেললাম । আমি জানি এটার এফেক্ট শুরু হবে অনেক পড়ে , আমার সহ্য ক্ষমতা এই ব্যাপারে বেশ ভাল ।
স্টেজে বসে একের পর এক ছবি তুলছি , সবাই এসে পরিচয় দিচ্ছে , কেউ অপর খালাত বোনের ননদ, কেউ আমার মায়ের মামাত বোনের মেয়ে , এমন আরো কি । কোন কিছুই আমার মাথায় ঢুকছেনা । ঢুকুক এটা আমি চাচ্ছিওনা ।
হঠাত যেন আমার চারপাশে সব স্হির হয়ে গেল । ফটোগ্রাফারের ঠিক পাশে ফারহান ভাই দাঁড়িয়ে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন । আমার চোখ ও যেন ওনার দিকেই স্হির হল । ওনি আমাকে দেখছেন, আমি ওনাকে । আমার ঘোর লাগা ভাব যেন আরো বেড়ে গেল, নিজেকে পুরো নেশাগ্রস্ত মনে হল । মন খুশিতে ভরে উঠল, ফারহান ভাই আমাকে দেখতে এসেছেন এই ভেবে । ওনি ওনার ভালবাসাকে দেখছেন, আমি আমার ভালবাসাকে দেখছি । হঠাত করে মনে হল কি একটা নড়ে উঠল, আমার চারপাশ যেন আবার সচল হয়ে গেল । ফটোগ্রাফার বলে চলেছে সবাই সমানে তাকান ।
ফারহান ভাইকে কোথাও আর দেখছিনা, আমার খুবইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে ওনাকে খুজে দেখতে ।
বাসর ঘরে আপুর কাজিন রা আমাকে বিশাল ঘোমটা দিয়ে বসিয়ে দিল। ক্ষেত মার্কা কাজ হলেও নতুন বউ হিসেবে মেনে নিলাম, আমার জন্য ভালই হয়েছে, তারা আমার ঘোর লাগা ভাবটা বুঝতে পারবেনা । হাসতে হাসতে বলল অপু আসুক, নিজে সরিয়ে বউকে দেখবে । আমি তখন কেমন একটা ঘোরের মাঝে । স্পস্ট মনে পড়ছে, অপু যখন ঘোমটা সরিয়ে আমাকে দেখল, আমি চমকে উঠলাম । আমি বুঝতে আপরছিলাম না, সামনে কি অপু না ফারহান । অপু আলতো করে আমার কপালে , তারপর ঠোঁটে চুমু খেল । আমার মন বলছে , শরীর বলছে ফারহান আমাকে চুমু দিচ্ছে । আমি যেন কোথাও হারিয়ে গেলাম । অপু বলল সে এখন বাংলা সিনেমার নায়কের মত নতুন বউ এর কোলে মাথা রাখবে, আমি হাসতে হাসতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, আর মনে হচ্ছে আমি ফারহান কে দেখতে পাচ্ছি । অপুর প্রতিটা স্পর্শ সেদিন মনে হয়েছিল ফারহান ভাইয়ের স্পর্শ , মনে হচ্ছিল ফারহান ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরছেন, আদর করছেন !
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ক্লান্ত অপু গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । নেশা কেটে গেলেও সেদিনের সব যেন আমার মাথায় গেঁথে ছিল । ঘুমন্ত অপুর দিকে তাকিয়ে বারবার সরি বললাম । জীবনে প্রথম নিজেকে সপে দেয়ার সময় নেশার ঘোরে কেবল ফারহান ভাইকে ভাবার এই অপরাধবোধে আমি ঘুমন্ত অপুর কপালে অনেকগুলো চুমু খেলাম । চোখ মেলে অপু আমাকে নিজের কাছে টেনে নিল ।
দুই গ্লাসে ভদকা নিয়ে অপু হাজির । বলল ভেজা শরীরে বসে আছো কেন । বললাম তুমি সহ আবার সাঁতার কাটব তাই । ভদকার একটা গ্লাস হাতে দিয়ে আমার পেছনে বসল সে । এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে একবার ভদকায় চুমুক দিয়ে কাঁধে আলতো করে চুমু দিল । আমি ভদকার গ্লাসটা হাতে ধরে রেখেছি, আর অপুর ঠোঁট আমার পিঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে । মনে মনে ভাবছি এখন আর ভদকায় চুমুক দিবোনা ।
রকি মাউন্টেনের পাদদেশে হয়ে যাক আমাদের বাসর । ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৪৪