somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রীরামশী ও রাণীগঞ্জ গণহত্যা দিবস: ১৫৬ জন তরুণকে ব্রাশ ফায়ারে মেরে ফেলে পাক হায়েনারা

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিনের ব্যবধানে পাক হায়েনারা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে দুটি স্থানে গণহত্যা চালায়। একাত্তরের ৩১ আগস্ট শ্রীরামসি গ্রামে ও পরদিন একই উপজেলার রানীগঞ্জ বাজারে আরেকটি গণহত্যা চালায়। পাক বাহিনীর এদেশীয় দোসরদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক লুটপাটের পাশাপাশি প্রায় ৫শত ঘরবাড়ি ও দোকানঘর জ্বালিয়ে দেয়। দুৃটি স্থানে হায়েনারা ব্রাশ ফায়ার করে প্রায় ১৫৬জনকে হত্যা করে। এতে আহত হয় আরো শতাধিক। পাক বাহিনীর বর্বরতা দেখে পালিয়ে যায় দুটি গ্রামের হাজার হাজার নারী পুরুষ। এক সপ্তাহ পরে খা খা গ্রামে ফিরে গলে পচনধরা লাশ শেয়াল কুকুর ও কাকের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনে গণ কবর দেয় গ্রামবাসী। সুনামগঞ্জের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এ দুটি গণহত্যার ঘটনা এখনো স্বজনদের পীড়া দেয়। শহীদদের অনেকেই ছিল গ্রামের তরুণ মেধাবী ছাত্র যুবক ও গ্রাম্য বুদ্ধিজীবি। দেখে দেখে যুবকদের ব্রাশ ফায়ারের মুখে ফেলে হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। আর বৃদ্ধরা পাক বাহিনীদের করুনায় পার পেয়ে যান।
১৯৭১ সালের ৩১ আগস্ট বেলা সাড়ে ১০টার সময় ১০/১২টি নৌকাযোগে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা শ্রীরামসী বাজারে নৌকা ভিড়িয়ে এলাকাবাসীকে নির্দেশ দেয় গ্রামের সবাই যেন শান্তি কমিটির সভায় অংশ নেয়। অস্ত্র আর কমান তাক করা আদেশের মুখে অসহায় ও নিরস্ত্র গ্রামবাসী শ্রীরামশী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শান্তি কমিটির সভায় উপস্থিত হতে থাকে। আরো অনেকেই আসার জন্য প্রস্তুতি নেয়। যাদের আসতে দেরী হয় তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়। এর আগে যারা এসেছিল তারা স্কুলের একটি কে জমায়েতে ছিল। তাদের পরে যারা এসেছিল তাদের আলাদা করে ওই কে নিয়ে আসা হয়। তাদের অনেকেই ছিল তরুণ শিত ও গ্রামীণ বুদ্ধিজীবি। এক পর্যায়ে দেরি করে আসা লোকদের হাত পা পিছন দিক থেকে বেধে ফেলা হয়। কিছুণ করে পাক আর্মিরা এদেশীয় দোসরদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে তাদের নৌকায় নিয়ে গিয়ে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলে। এভাবে কয়েকদফা প্রায় ১২৪জনকে ব্রাশ ফায়ারের মুখে ফেলা হয়। এসময় প্রাণ বাচাতে অনেকেই পানিতে ঝাপ দিয়ে পড়ে। পরে তাদেরকে পানি থেকে তোলে পাখির মতো গুলি করে মারা হয়। পাক আর্মিদের নারকীয় পৈশাচিকতায় উপস্থিত লোকজন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তাদের চোখের সামনেই কয়েকজন স্কুল মাস্টার, তহসিলদার, পোস্ট মাস্টার, ইউপি সদস্য, ডাক পিয়ন, ছাত্র, প্রবাসী এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে পশুর মতো মেরে ফেলা হয়। শুধু নারকীয় এই হত্যাকান্ডই নয় হানাদাররা চালায় ব্যাপক লুটপাট ও জ্বালাও পোড়াও। তারা শ্রীরামসী বাজার ও লোকালয়ে আগুন দিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পাক বাহিনীর বর্বরতা দেখে এলাকার মানুষ দলে দলে পালাতে শুরু করে। স্বজন হারানো মানুষ প্রাণে বাচতে স্বজনদের লাশ রেখেও পালিয়ে যায়। গ্রাম জুড়ে দেখা দেয় চরম আতঙ্ক। বিভীষীকাময় এ অবস্থায় সপ্তাহ খানেক গ্রাম ছিল মানুষ শূন্য। মানুষের অবর্তমানে লাশ নিয়ে শেযাল কুকুর আর কাকই ছিল গ্রামে কেবল। সপ্তাহ খানেক পরে যখন প্রাণ নিয়ে পালানো লোকজন ফিরে আসে তখন গ্রামে শুধু লাশের গন্ধ আর হাহাকার। মানুষ গ্রামে এসে দেখে লোকালয়ে মানুষের বদলে শেয়াল কুকুর মানুষের রাশ নিয়ে টানা হিছড়ে করছে। তারপর এলাকাবাসী গর্ত করে এক একটি গর্তে ৪/৫জন করে চোখের জল ফেলতে ফেলতে লাশ কবর দেয়।
৩১ আগস্টের ওইদিন হত্যাকান্ডে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেচে যান অনেকেই। তাদের মধ্যে এখনো সেই ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে বেচে আছেন অনেকে। তাদের মধ্যে জোয়াহের চৌধুরী, আলকাছ মিয়া, কফিল উদ্দিন, তপন চক্রবর্তী, বশির আলী, সুন্দর আলী, আমজাদ আলী, জাফর মিয়া অন্যতম। শ্রীরামসীর নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনা তখন বিবিসির সংবাদে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়।
প্রত্যদর্শী জোয়াহের চৌধুরী বলেন, ‘ যেভাবে তরুণদের ধরে ধরে এনে ব্রাশফায়ারে মেরে ফেলা হয়, মনে হচ্ছিল আমাদেরও মেরে ফেলবে। কিন্তু আল্লার রহমতে আহত হয়েও বেচে যাই। রক্তের বন্যায় ভেসে যায় গ্রাম। সেদিনের সেই ঘটনা এখনো মনে হলে শরিরের লোম খাড়া হয়ে যায়। এখনো সেই ঘটনায় আপনাআপনিই চোখে পানি চলে আসে।’
এদিকে এই নারকীয় ঘটনার পরদিনই একই উপজেলার নৌবন্দর খ্যাত রানীগঞ্জ বাজারে আরেকটি গণহত্যা চালায়। সেখানে প্রায় ৩০জনকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। তাদের অনেকেই ছিল নামকরা ব্যবসায়ী। এদুটি স্থানেই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। স্থানীয়ভাবে গঠিত হয়, বধ্যভূমি সংরণ কমিটি। এই কমিটি প্রতি বছর শহীদদের স্মরণে আলোচনা ও শ্রদ্ধা জানায়। কিন্তু সরকারিভাবে কোন অনুষ্ঠান পালন হয়না। তবে স¤প্রতি জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ রেজুলেশন করে এ দুটি স্থানে শ্রদ্ধা জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×