somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর উৎকণ্ঠা তিন পাহাড়ের ঢল

২৫ শে মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েক বছর ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়, খাসিয়া ও জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল সুনামগঞ্জের হাওরের কৃষকের চরম উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই তিনটি পাহাড় এক সময় সংরতি বনভূমি থাকায় তখন পৃথিবীর বৃষ্টিবহুল এই এলাকায় বৃষ্টির পানি ভাটিতে ছাকনি পদ্দতিতে নামতো। কিন্তু এখন বনভূমি না থাকায় এবং আবহাওয়াগত ও জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে ঢলের পানি ধেয়ে এসে অকাল বন্যার সৃষ্টি করে ফসলহানিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
চলতি বোরো মওসুম শুরুতেই সুরমা নদীসহ সুনামগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরে বয়ে যাওয়া ৮টি সীমান্ত নদী খাসিয়ামারা, বৌলাই, রক্তি, যাদুকাটা, চলতিসহ অন্যান্য নদী হয়ে ধেয়ে নামছে পাহাড়ি ঢল। কৃষকরা জানিয়েছেন ঢলের সঙ্গে নেমে আসা বালু ও পলিতে নদী খাল বিল ভরাটসহ ফসলি জমিও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে ফতুর হয়ে পড়ছে কৃষক। গতবার আগাম পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের হাওরের প্রায় ৯০ ভাগ ফসল তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক য়তি হয়। এবারও বোরো মওসুম শুরু হওয়ার আগেই পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি হাওরের জমি তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে অধিকাংশ হাওরের ফসলরা বাঁধ। তবে পাহাড়ি ঢলে পাশপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফসলরা বাঁধের কাজে বিলম্ব ও দুর্নীতির কারণেও ফসলহানি ঘটছে। গত মঙ্গলবার কয়েকটি হাওরে পানি প্রবেশ করায় এবং বাকি গুলো ঝূকির মুখে পড়ায় গতকাল খরচার হাওরপাড়ের লোকজন শহরে বিােভ মিছিল করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ছোট বড় মিলিয়ে সুনামগঞ্জের ১৩৩ টি হাওর পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসনের কবলে পড়ে প্রতি বছর। যার ফলে ঢলে ফসলহানির ঘটনা বাড়ছে। বেসরকারি হিসেবে ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জের হাওরবাসী অর্ধেকেরও বেশি ফসল ঘরে তোলতে পারেনি এই কারণে। ঢলে গেলবার সরকারি হিসেবেই সুনামগঞ্জে ৬০ ভাগ ফসলের তি হয়। এবার মওসুমের শুরুতেই পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদী ও সীমান্ত নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটি হাওরে পানি প্রবেশ করছে। অন্য গুলোও রয়েছে হুমকির মুখে। এতে গতবারের মত ফসলহানির আশংকা করছেন কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি ক্রমাগত বাড়ছে। গত ১৯ মার্চ সুরমা নদীর পানি ছিল ৩.১৪ মিটার। গতকাল বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬ মিটার। যার ফলে মঙ্গলবার তাহিরপুরের ঘনিয়াকুড়ি হাওর, ধরমপাশার চন্দ্রসোনারথাল হাওর ও সদর-বিশ্বম্ভলপুরের খরচার হাওরের ফসলরা বাধ ভেঙ্গে পানি ঢুকছে। জামালগঞ্জের পাকনার হাওর, হালির হাওর, সদর উপজেলার কানলার হাওরসহ বড় হাওরগুলো রয়েছে ঝুকির মুখে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শৈলেনচন্দ্র পাল বলেন, পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে যে কয়টি হাওরে পানি প্রবেশ করছে তার মধ্যে চন্দ্রসোনারথাল ব্যতিত অন্য হাওরগুলো পাউবোর বাঁধের আওতাধীন নয় এবং পাউবো আফরমারা বাঁধ বাদে মাত্র ২২১ কি.মি বাধ মেরামত করে।
সুনামগঞ্জের কানলার হাওরপাড়ের গ্রাম বিরামপুরের কৃষক কালা মিয়া বলেন, পাহাড়ি ঢলে কানলার হাওরের অবস্থা যায় যায়। তাছাড়া সময় চলে যাওয়ার পরও হাওরের ফসলরা বাধের কাজ না হওয়ায় হাওরটি সম্পূর্ণ হুমকির সম্মুখিন। ধরমপাশা সেলবরষ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন শাহ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে মনে হচ্ছে পাহাড়ি ঢল আর আমাদের হাওরে বোরো ফসল ফলাতে দেবেনা। আমরা কষ্ঠ করে ঋণ করে বোরো ধান লাগাব আর তা তলিয়ে নিবে পাহাড়ি ঢল। পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসন থেকে হাওর রার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন মহলকে উদ্যোগ নিতে হবে। নাহলে সুনামগঞ্জের কৃষি ও কৃষি সংস্কৃতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
হাওর ও কৃষিপ্রাণ বৈচিত্র গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়, জৈন্তিয়া ও খাসিয়া পাহার এক সময় সংরতি বনভূমি ছিল। কিন্তু এখন আর এই এলাকা সংরতি নেই। পৃথিবীর বৃষ্টিবহুল এই তিনটি পাহাড়ি এলাকায় এক সময় সংরতি বনভূমির কারণে আগে বৃষ্টি হলে ছাকনি পদ্দতি পানি নামতো। কিন্তু এখন জলবায়ু ও আবহাওয়াগত কারণে সেই ছাকনি পদ্দতিতে পানি না নেমে দ্রুত নেমে আসায় বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যার সৃষ্টি হয়ে ফসলহানিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে।



৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×