somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার যত নাম

৩০ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম কিছু একটা লিখব।সামহোয়ার এ এ্যাকাউন্ট ও খুলেছিলাম অনেকদিন আগে।কিন্তু যখনি কিছু লিখতে বসি শুধু মনে হয় “কি লিখব?”কারণ লেখালেখির অভ্যাস আমার কখোনোই ছিল না।মনে হতো কিছু একটা লিখে পোস্ট করলে পড়ার পর সবাই বলবে “এইগুলা কি লিখছে?ব্যাটা একটা ফাউল!!”সম্প্রতি আমার সহপাঠী অনেকেই ব্লগ লিখা শুরু করলেও আমার মনে হতো লেখালেখি আমার কাজ নয়।আমার এই কাজ থেকে দূরে থাকাই ভাল।কিন্তু গত ২-১ দিনে আমার এক বন্ধু (সে নিজেও একজন ব্লগ লেখক) আমাকে ব্লগ লিখার জন্য উৎসাহিত করে।তার সাথে কথা বলার পর মনে হয় “আচ্ছা একটা লেখা পোস্ট করে দেখিই না কি হয়।”তাই আজকে আমার ব্লগ লিখার এই প্রয়াস।
যাই হোক,সবার আগে আমার পরিচয় দিই।আমি এ,এস,এম,শামসুর রউফ।ডাকনাম
সুমন।বুয়েটে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক বিভাগে ৩য় বর্ষে পড়ছি।আমার নামের আদ্যক্ষরগুলো
ব্যাখ্যা করলে হয় আব্দুস সালাম মোহাম্মদ শামসুর রউফ।এই লম্বা নামের পিছনে একটি
গল্প আছে।সেই গল্পটিই আজ বলব।গল্পটি অবশ্য আমার আম্মা এবং খালার কাছ থেকে
শোনা।
আমার জন্মের ২ মাস আগে আমার দাদার আব্বা মারা যান।তাই আমার জন্মের পর
দাদা ঠিক করলেন যে তিনি তার বর নাতিনের নাম তার বাবার নামে রাখবেন।তাই
তিনি আমার নাম রাখলেন আব্দুস সালাম।কিন্তু এতে বাদ সাধলেন আমার আব্বা।তিনি
তার বড় সন্তানের এরকম নাম দিতে রাজি হলেন না।তার ইচ্ছা যে তার ছেলের নামের
সাথে তার নামের একটা অংশও থাকবে।সে নিয়ে আমার বাবা আর দাদার মান-অভিমান
শুরু।আমার দাদা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিলেন।আব্বাও কম যান না।তিনি বাড়ি ছেড়ে
আমাকে আর আম্মাকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করে দিলেন।আমার চাচারা অনেক
বোঝানোর পরেও এক বিন্দু বরফ গলল না।শেষ পর্যন্ত বাড়ির অন্যদের হস্তক্ষেপে দুই
পক্ষের মাঝে একটা সমঝোতা হয়।নাম ঠিক হয় আব্দুস সালাম মোহাম্মদ রউফ।তখন
আমার নানী অসুস্থ ছিলেন।বেশ কিছুদিন পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠার পর ঘটে আরেক
বিপত্তি।তার ইচ্ছা তিনি তার নাতিনের নাম রাখবেন শামস।শুরু হয় আরেক নাটক।৩-৪
বছর পর্যন্ত আমাকে দাদাবাড়িতে ডাকা হয় রউফ নামে আর নানাবাড়িতে ডাকা হয় শামস
নামে।২ পক্ষের কেউ একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি নয়।শেষ পর্যন্ত নাম ঠিক হয় আব্দুস
সালাম মোহাম্মদ শামসুর রউফ।আমার খালা আবার ছোট থেকেই আমাকে সুমন নামে
ডাকেন।এই নামটাও ঢোকানোর প্রচেষ্টা চলল।কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাকি সবার আপত্তির মুখে
নামটা আর লম্বা হয় না।সুমন হয় আমার ডাকনাম।তাই “আব্দুস সালাম মোহাম্মদ শামসুর
রউফ”—এই নামেই ৬ বছর বয়সে আমার আকিকা হয়।শেষ হয় এক জমজমাট নাটকের।
সামান্য একটা নাম নিয়ে ৬ বছর যাবৎ মান-অভিমানের আর কোনো উদাহরণ আছে কিনা
আমার জানা নেই।X(
এখানেই শেষ নয়।আমার নাম নিয়ে আরো বিপত্তি রয়েছে।আমি কথা বলা শেখার পর থেকে ২ বাসাতেই
আমাকে ডাকা হয় “তুকুম” নামে।এই নামে ডাকার কোনো যুৎসই কারণ আমি খুঁজ়ে পাই নি।
স্কুলে যাওয়া শুরু করবার পর বন্ধুদের আমার নাম বলতাম রউফ।সবাই সে নামেই চিনত।কেউ কেউ শামস নামেও ডাকত।সমস্যা হয় ক্লাস ফাইভ এ পড়ার সময়।রউফ আমার আব্বার নামেরও একটা অংশ।আব্বার বন্ধুরা আব্বাকে এই নামেই চেনে।তখন এখনকার মতো সেলফোন ছিল না।একদিন আমার এক বন্ধু বাসায় ফোন করে আমাকে চাইলে আব্বা ফোন রিসিভ করেন এবং তাতেই জন্ম নেয় এক অপ্রীতিকর ঘটনা।সে নাহয় নাই বললাম।এরপর থেকে বন্ধুদের কাছে নিজের পরিচয় দেই সুমন নামে।বাসাতেও সবাই সুমন নামে ডাকতে শুরু করে।ক্লাস নাইনে এসএসসি ফর্ম পূরণের সময় জায়গার স্বল্পতার কারণে বাধ্য হই নাম সংক্ষেপ করতে।কলেজে উঠলে ডাকনাম নিয়েও সমস্যা হয়।আমাদের কলামে ৩ টা সুমন ছিল,পুরো গ্রুপের কথা নাই বললাম।কাজেই এই নামটাও বন্ধুদের কাছে টিকল না।সবাই আমাকে ডাকত হ্যারী নামে।কারণ আমার চেহারা নাকি অনেকটা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারী কে টমাস জুনিয়রের মতো।প্রসংগক্রমে বলি,আমার গাত্রবর্ণ কালো এবং তখন আমি শারিরীকভাবেও অনেক স্থূলকায় ছিলাম।মনে কিছুটা কষ্ট পেলেও এই নাম মেনে নিলাম।কারণ আমার নাম নিয়ে অতীতে যা হয়েছে তাতে এ আর নতুন কি!এখন স্বাস্থের অনেক অবনতি ঘটলেও ২-১ জন ছাড়া কলেজের সব বন্ধুরা আমাকে হ্যারী নামে ডাকে,সুমন বললে হয়তো চিনতেও পারবে না অনেকে।এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেলাম বুয়েটে আসার পর।এখানে সুমন নামে পরিচয় দিতে কোনো সমস্যা রইল না।তাই বুয়েটে প্রথমে কিছুদিন সবাই আমাকে সুমন নামেই ডাকতো।কিছুদিন পরেই আবারো আমাকে বিভিন্ন নামে ডাকা শুরু হয়।কেউ কেউ আমাকে শামসু নামে ডাকতে শুরু করে।অনেকে আবার কোপা শামসু অথবা শুধু কোপা নামেও ডাকে।বন্ধুদের কাছে আমি সুমন এবং শামসু – দুই নামেই সমানভাবে পরিচিত।
মাত্র ২১ বছরেই নাম নিয়ে এতো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।বাকি জীবনে আরো কতো নাম শুনতে হয় কে জানে।
যাই হোক,প্রথম ব্লগেই অনেক কথা বলে ফেললাম।এই পোস্টটি যদি পাঠকদের ভাল লেগে থাকে তবে আমার এই কষ্ট সার্থক।ভবিষ্যতে ব্লগে আরো কিছু লিখার সাহস পাবো।আর নইলে ধরে নিতে হবে আমার পূর্ব ধারণাই ঠিক।ঘোড়া দিয়ে কখনো হালচাষ হয় না।সকলের ধৈর্যের চরম পরীক্ষা নেয়ার জন্য দুঃখিত।
সবার সময় অনেক অনেক আনন্দে কাটুক।সকলের জন্য ভালবাসা রইল।

৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×