somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“Saving Private Ryan” – এর পিছনের এক অজানা ইতিহাসের কাহিনী

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকাঃ কেউ যদি বলে আপনার সবচেয়ে প্রিয় মুভি কোনটি ? আসলে এই প্রশ্নের আসলে উত্তর হয় না । যে কোন মানুষের একগুচ্ছ প্রিয় মুভি থাকতে পারে কিন্তু একটি মাত্র প্রিয় মুভি থাকা অসম্ভব । যদি প্রশ্ন করা হয় যুদ্ধ সম্পর্কিত সবচেয়ে প্রিয় মুভি কোনটি? সে ক্ষেত্রে আমি চোখ বন্ধ করে উত্তর দিতে পারবো- স্টিভেন স্পিলবার্গের “Saving Private Ryan” । শুধু আমার কাছে নয় এই মুভিটি অল টাইম গ্রেট ওয়্যার মুভির তালিকায় একদম প্রথমেই আছে । মুভিটি নিয়ে বহু জনে বহু রিভিউ লিখেছে । তাই নতুন করে কিছু বলার নেই । তবে কোথাও যে কথাটি বলা হয়নি সে কথাটি লিখতেই বসেছি । মুভিটি মূলত একটি সত্য ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৈরি ।

মুভির মূল কাহিনীঃ ইউএসএ অবশেষে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে । মিত্রবাহিনীর ফ্রান্সের নরম্যান্ডি আক্রমণের দিন ঠিক করা হলো ১৯৪৪ সালে ০৬ জুন । বহু ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও অবশেষে ওমাহা বীচ দখল করতে সমর্থ হয় মার্কিন সৈন্যরা । সেই মার্কিন সেনাদের মধ্যে একজন হল টম হ্যাঙ্কস তথা সেকেন্ড রেঞ্জার ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেন মিলার । এদিকে ইউএসএ-তে ওয়ার ডিপার্টমেন্ট জানতে পারে, যুদ্ধে রায়ান বংশের চার ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই নিহত হয়েছে। ওয়ার ডিপার্টমেন্ট থেকে সিদ্ধান্ত হয় রায়ান বংশের শেষ আলোকবর্তিকা জেমস ফ্রান্সিস রায়ানকে যেভাবেই হোক যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে । দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় ক্যাপ্টেন জন মিলারের কাঁধে । মুভির বাকি অংশ জেমসকে খোঁজার মিশন ।

মূল সত্য ঘটনাঃ এই কাহিনী চার সদস্যের নিল্যান্ড ব্রাদার্স-এর । সবার বড় ভাই পাইলট টেকনিক্যাল সার্জেন্ট এডওয়ার্ড নিল্যান্ড । মেঝ ভাই সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট প্রিস্টন ২২ তম ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্ট – এর সদস্য । সেজ ভাই টেকনিক্যাল সার্জেন্ট রবার্ট নিল্যান্ড ও ছোট ভাই সার্জেন্ট ফ্রেডরিক নিল্যান্ড ছিলেন প্যারাট্রুপার । ফ্রেডরিক হলো মুভির সেই জেমস ফ্রান্সিস রায়ান, যাকে কেন্দ্র করে মুভিটি আবর্তিত । পূর্বে তারা এক সাথে থাকলেও পরবর্তীতে বিখ্যাত পাঁচ সলেভান ব্রাদার্সের (এদের নিয়েও মুভি ও ডকুমেন্টারি আছে) করুণ মৃত্যুতে কর্তৃপক্ষ চার নিল্যান্ড ভাইকে আলাদা করে বিভিন্ন ডিভিশনে পাঠিয়ে দেয় ।

(সলেভান ব্রাদার্স)


এত কিছু করেও শেষ রক্ষা হয়নি । গুলিতে বড় ভাই এডওয়ার্ড –এর বিমান বার্মার জঙ্গলে ভূপাতিত হয় । তার নাম 'মিসিং ইন একশন'-এ লিপিবদ্ধ হয় । এদিকে বাকি তিন ভাইকে ইউরোপের মূল ভূখন্ডে আক্রমণের জন্য পাঠানো হয় । ছোট ভাই ফ্রেডরিক নিল্যান্ডের- এর ইউনিটকে রিজার্ভ রাখার কথা থাকলেও মিস ড্রপ হয় তথা ভুল জায়গায় তাদের নামিয়ে দেওয়া হয় । অন্যদিকে রবার্ট নিল্যান্ড-এর কোম্পানি জার্মানদের শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়ে । তার কোম্পানি নিউভিলা নামক গ্রামে আশ্রয় নেয় । জার্মানদের আক্রমণে কোম্পানি বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে রবার্ট ও আর দুইজন প্যারাট্রুপার ভলেন্টিয়ার হয়ে নিজ প্ল্যাটুনকে রক্ষায় থেকে যান এবং শহীদ হন । ভাইদের মধ্যে রবার্ট ছিল সব সাহসী । তাঁর নাম লিপি হয় ‘কিলড ইন একশন’-এ ।

মেঝ ভাই প্রিস্টন নিল্যান্ড ৭ জুন ১৯৪৪ সালে তার সৈন্যদের নেতৃত্ব দেন এবং মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন । খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিল্যান্ড দম্পতি তাদের তিন সন্তান হারানোর সংবাদ পান । এত দুঃখের সংবাদের মধ্যে তাদের একমাত্র ভালো সংবাদ ছিল ফ্রেডরিকের কয়েক লাইনের চিঠি যেখানে লিখা ছিল – “Dad’s Spanish-American War stories are going to have to take a backseat when I get home.” । বিষয়টি সংবাদপত্রে খুব গুরুত্বের সাথে ছাপে । যা দৃষ্টিতে আসে ওয়্যার ডিপার্টমেন্টের এবং তারা দ্রুত ফ্রেডরিককে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য তদবীর শুরু করে ।



এই দায়িত্বভার বর্তায় রেজিমেন্টাল চ্যাপলিন ‘ফ্রান্সিস এল সাম্পসন’– এর কাঁধে । মুভির ক্যাপ্টেন মিলার উনিই । যিনি ফ্রেডরিককে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনেন । এখানে 'ফ্রান্সিস এল সাম্পসন' সম্পর্কে কিছু না বললেই নয় ।

উনার এন্ডিং মুভির মত বেদনাদায়ক হয়নি । উনি একজন ক্যাথলিক প্রিস্ট ছিলেন এবং পরবর্তীতে মেজর জেনারেল পর্যন্ত হয়েছিলেন । বীরত্বের জন্য পেয়েছিলেন ২য় সর্বোচ্চ সামরিক পুরস্কার পেয়েছিলেন । ২য় বিশ্বযুদ্ধে তার অনেক বড় বড় কর্মের মধ্যে ফ্রেডরিককে উদ্ধার করা নিতান্ত সামান্য কর্ম মাত্র ।

(ফ্রেডরিককে ফিরিয়ে আনার পর ছবিটি তোলা হয়)

যাইহোক, ফ্রেডরিক নিল্যান্ড নিজ পরিবারে ফিরে আসেন এবং যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত নিউ ইয়র্কে মিলিটারী পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন । এত কিছুর মধ্যে এই কাহিনীর একটি হ্যাপী এন্ডিং আছে । ১৯৪৫ এ মে মাসে নিল্যান্ড পরিবার একটি অপ্রত্যাশিত সংবাদ পান । বড় ভাই এডওয়ার্ড নিল্যান্ডকে ব্রিট্রিশ আর্মি বার্মা পিওডব্লিউ ক্যাম্পে উদ্ধার করে । এডওয়ার্ড এর প্লেন ভূপাতিত হওয়ার পূর্বে তিনি কোনমতে বেরিয়ে আসেন এবং বহুদিন জঙ্গলে পালিয়ে থাকেন । পরবর্তীতে জাপানীদের হাতে ধরা পড়েন । প্রায় ১ বছর পিওডব্লিউ ক্যাম্পে থাকেন । জাপানীদের অমানুষিক অত্যাচারে তার শরীর ভেঙ্গে পড়ে । ৪০ কেজির নিচে নেমে আসে ওজন । এতকিছুর মাঝে অবশেষে এডওয়ার্ড ফিরে আসে প্রিয় মানুষদের মাঝে । যুদ্ধ পরবর্তীতে জীবিত দুই ভাই প্রায়শ ফ্র্যান্সের Colleville-sur-Mer নামক সমাধিতে প্রায়শ যান । তাঁদের শহীদ দুই ভাই প্রিস্টন ও রবার্টের কবর হয়েছে পাশাপাশি ।



উপসংহারঃ মুভি কেবল দেখার জন্য নয় । প্রতিটা মুভির পেছনের কাহিনী জানাও একজন প্রকৃত মুভি ভক্তের দায়িত্ব ।

#ঘরে_থাকুন_মুভি_দেখুন
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×