মুভির মূল কাহিনীঃ ইউএসএ অবশেষে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে । মিত্রবাহিনীর ফ্রান্সের নরম্যান্ডি আক্রমণের দিন ঠিক করা হলো ১৯৪৪ সালে ০৬ জুন । বহু ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও অবশেষে ওমাহা বীচ দখল করতে সমর্থ হয় মার্কিন সৈন্যরা । সেই মার্কিন সেনাদের মধ্যে একজন হল টম হ্যাঙ্কস তথা সেকেন্ড রেঞ্জার ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেন মিলার । এদিকে ইউএসএ-তে ওয়ার ডিপার্টমেন্ট জানতে পারে, যুদ্ধে রায়ান বংশের চার ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই নিহত হয়েছে। ওয়ার ডিপার্টমেন্ট থেকে সিদ্ধান্ত হয় রায়ান বংশের শেষ আলোকবর্তিকা জেমস ফ্রান্সিস রায়ানকে যেভাবেই হোক যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে । দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় ক্যাপ্টেন জন মিলারের কাঁধে । মুভির বাকি অংশ জেমসকে খোঁজার মিশন ।
মূল সত্য ঘটনাঃ এই কাহিনী চার সদস্যের নিল্যান্ড ব্রাদার্স-এর । সবার বড় ভাই পাইলট টেকনিক্যাল সার্জেন্ট এডওয়ার্ড নিল্যান্ড । মেঝ ভাই সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট প্রিস্টন ২২ তম ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্ট – এর সদস্য । সেজ ভাই টেকনিক্যাল সার্জেন্ট রবার্ট নিল্যান্ড ও ছোট ভাই সার্জেন্ট ফ্রেডরিক নিল্যান্ড ছিলেন প্যারাট্রুপার । ফ্রেডরিক হলো মুভির সেই জেমস ফ্রান্সিস রায়ান, যাকে কেন্দ্র করে মুভিটি আবর্তিত । পূর্বে তারা এক সাথে থাকলেও পরবর্তীতে বিখ্যাত পাঁচ সলেভান ব্রাদার্সের (এদের নিয়েও মুভি ও ডকুমেন্টারি আছে) করুণ মৃত্যুতে কর্তৃপক্ষ চার নিল্যান্ড ভাইকে আলাদা করে বিভিন্ন ডিভিশনে পাঠিয়ে দেয় । (সলেভান ব্রাদার্স)
এত কিছু করেও শেষ রক্ষা হয়নি । গুলিতে বড় ভাই এডওয়ার্ড –এর বিমান বার্মার জঙ্গলে ভূপাতিত হয় । তার নাম 'মিসিং ইন একশন'-এ লিপিবদ্ধ হয় । এদিকে বাকি তিন ভাইকে ইউরোপের মূল ভূখন্ডে আক্রমণের জন্য পাঠানো হয় । ছোট ভাই ফ্রেডরিক নিল্যান্ডের- এর ইউনিটকে রিজার্ভ রাখার কথা থাকলেও মিস ড্রপ হয় তথা ভুল জায়গায় তাদের নামিয়ে দেওয়া হয় । অন্যদিকে রবার্ট নিল্যান্ড-এর কোম্পানি জার্মানদের শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়ে । তার কোম্পানি নিউভিলা নামক গ্রামে আশ্রয় নেয় । জার্মানদের আক্রমণে কোম্পানি বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে রবার্ট ও আর দুইজন প্যারাট্রুপার ভলেন্টিয়ার হয়ে নিজ প্ল্যাটুনকে রক্ষায় থেকে যান এবং শহীদ হন । ভাইদের মধ্যে রবার্ট ছিল সব সাহসী । তাঁর নাম লিপি হয় ‘কিলড ইন একশন’-এ । মেঝ ভাই প্রিস্টন নিল্যান্ড ৭ জুন ১৯৪৪ সালে তার সৈন্যদের নেতৃত্ব দেন এবং মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন । খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিল্যান্ড দম্পতি তাদের তিন সন্তান হারানোর সংবাদ পান । এত দুঃখের সংবাদের মধ্যে তাদের একমাত্র ভালো সংবাদ ছিল ফ্রেডরিকের কয়েক লাইনের চিঠি যেখানে লিখা ছিল – “Dad’s Spanish-American War stories are going to have to take a backseat when I get home.” । বিষয়টি সংবাদপত্রে খুব গুরুত্বের সাথে ছাপে । যা দৃষ্টিতে আসে ওয়্যার ডিপার্টমেন্টের এবং তারা দ্রুত ফ্রেডরিককে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য তদবীর শুরু করে ।
এই দায়িত্বভার বর্তায় রেজিমেন্টাল চ্যাপলিন ‘ফ্রান্সিস এল সাম্পসন’– এর কাঁধে । মুভির ক্যাপ্টেন মিলার উনিই । যিনি ফ্রেডরিককে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনেন । এখানে 'ফ্রান্সিস এল সাম্পসন' সম্পর্কে কিছু না বললেই নয় । উনার এন্ডিং মুভির মত বেদনাদায়ক হয়নি । উনি একজন ক্যাথলিক প্রিস্ট ছিলেন এবং পরবর্তীতে মেজর জেনারেল পর্যন্ত হয়েছিলেন । বীরত্বের জন্য পেয়েছিলেন ২য় সর্বোচ্চ সামরিক পুরস্কার পেয়েছিলেন । ২য় বিশ্বযুদ্ধে তার অনেক বড় বড় কর্মের মধ্যে ফ্রেডরিককে উদ্ধার করা নিতান্ত সামান্য কর্ম মাত্র । (ফ্রেডরিককে ফিরিয়ে আনার পর ছবিটি তোলা হয়)
যাইহোক, ফ্রেডরিক নিল্যান্ড নিজ পরিবারে ফিরে আসেন এবং যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত নিউ ইয়র্কে মিলিটারী পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন । এত কিছুর মধ্যে এই কাহিনীর একটি হ্যাপী এন্ডিং আছে । ১৯৪৫ এ মে মাসে নিল্যান্ড পরিবার একটি অপ্রত্যাশিত সংবাদ পান । বড় ভাই এডওয়ার্ড নিল্যান্ডকে ব্রিট্রিশ আর্মি বার্মা পিওডব্লিউ ক্যাম্পে উদ্ধার করে । এডওয়ার্ড এর প্লেন ভূপাতিত হওয়ার পূর্বে তিনি কোনমতে বেরিয়ে আসেন এবং বহুদিন জঙ্গলে পালিয়ে থাকেন । পরবর্তীতে জাপানীদের হাতে ধরা পড়েন । প্রায় ১ বছর পিওডব্লিউ ক্যাম্পে থাকেন । জাপানীদের অমানুষিক অত্যাচারে তার শরীর ভেঙ্গে পড়ে । ৪০ কেজির নিচে নেমে আসে ওজন । এতকিছুর মাঝে অবশেষে এডওয়ার্ড ফিরে আসে প্রিয় মানুষদের মাঝে । যুদ্ধ পরবর্তীতে জীবিত দুই ভাই প্রায়শ ফ্র্যান্সের Colleville-sur-Mer নামক সমাধিতে প্রায়শ যান । তাঁদের শহীদ দুই ভাই প্রিস্টন ও রবার্টের কবর হয়েছে পাশাপাশি ।
উপসংহারঃ মুভি কেবল দেখার জন্য নয় । প্রতিটা মুভির পেছনের কাহিনী জানাও একজন প্রকৃত মুভি ভক্তের দায়িত্ব । #ঘরে_থাকুন_মুভি_দেখুন
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০