somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবাই মিলে ব্যাংক থেকে টাকা তোলা শুরু করলে কি হতে পারে?

১৮ ই মে, ২০২০ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাঙ্গালীদের কাছে গুজব ও গজব দুটো যে একই জিনিস তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম । টাকা তোলার জন্য ব্যাংকের সামনে বিশাল সর্প সদৃশ লাইনে কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই বিরক্ত হয়ে আশেপাশে মানুষের সাথে কথা বলা শুরু করেছি । কিছুক্ষণ পর অবাক হয়ে গেলাম । একাধিক লোকের ধারণা সামনে দুর্ভিক্ষ আসতেছে । কিছুদিন পর ব্যাংক নাও থাকতে পারে বা ব্যাংকের টাকা শেষ হয়ে যেতে পারে । তাই টাকা তুলে ফেলতে শুরু করেছে। এখন সবাই মিলে ব্যাংক থেকে টাকা তোলা শুরু করলে কি হতে পারে তা তাদের ফার্স্ট পার্সন এর সুরে বুঝানোর চেষ্টা করলাম -

এই আধুনিক অর্থনীতি পুরোটাই বিশ্বাসে উপর দাড়িয়ে । আমি বিশ্বাস করি বলে 'সে' আছে । আমি বিশ্বাস না করলে 'সে' নাই । বিষয়টা গল্পের ছলে ব্যাখ্যা করছি ।
.
ধরেন চট্টগ্রাম মহানগরীতে 'আদার ব্যাপারী'র একটি ব্যাংক আছে । এই মহানগরীতে এক ইঞ্জিনিয়ারের বসবাস । যিনি সদ্য গত হওয়া পিতার সম্পত্তি হতে উত্তরাধিকার সুত্রে ১ কোটি টাকা পেয়েছেন । যা তিনি 'আদার ব্যাপারী'র ব্যাংকে জমা রেখেছেন । এমন সময় নোয়াখালী হতে 'বদরুল' নামে এক লোক চট্টগ্রাম এলেন ফেসবুকীয় ভালোবাসার টানে । মেয়ে চৌধুরী সাহেবের একমাত্র কন্যা । কন্যাকে পেতে চৌধুরী সাহেব শর্ত দিলেন তাকে বছর খানিকের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এখন বেচারা 'বদরুল' ভালোবাসার টানে ব্যবসা করতে বসলেন । ঠিক করলেন দ্রুত সাফল্য পেতে জাহাজের ব্যবসায় নামবেন ।
.
সমস্যা হল তার টাকা নেই । বদরুল গেলো 'আদার ব্যাপারী'র ব্যাংকের কাছে জাহাজের খবর দিয়ে লোন নিতে । সে বহু কষ্টে ভুকচুক দিয়ে ব্যাংককে বুঝালো যে এই জাহাজ থেকে বহু টাকা লাভ আসবে । ব্যাংক বদরুলকে ১ কোটি টাকা লোন দিলো ।
.
বদরুল এই টাকাটা এক ইঞ্জিনিয়ারকে দিলেন জাহাজ বানানোর জন্য । কোন ইঞ্জিনিয়ার ? সেই ইঞ্জিনিয়ার যে 'আদার ব্যাপারী'র ব্যাংকে ১ কোটি টাকা জমা দিয়েছিল । এখন সে ইঞ্জিনিয়ার ১ কোটি টাকা তার একাউন্টে জমা দিলো পরবর্তীতে লোহা সহ আনুসাঙ্গিক জিনিস কেনার জন্য ।
.
খেয়াল করে দেখেন ইঞ্জিনিয়ারের জমা দেওয়া টাকাই আবার তার কাছে ফেরত এসেছে । ব্যাংক তার হিসাবে দেখাচ্ছে তার একাউন্টে জমা আছে ২ কোটি টাকা । কিন্তু মূল ক্যাশ টাকা কিন্তু ঐ ১ কোটি টাকাই রয়ে গেছে । খেলা এখানে শেষ না । ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তার কাজের মাঝামাঝি এসে বদরুলকে আরো ১ কোটি টাকার বিল ধরিয়ে বললেন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরো কাজ শেষ হতে আরো ১ কোটি টাকা লাগবে । এখন কি আর করা বদরুলকে আবার দৌড়াতে হলো ব্যাংকের কাছে । ব্যাংক আবার আরো ১ কোটি টাকা লোন দিলো । যা বদরুল ইঞ্জিনিয়ারকে দিলেন । ইঞ্জিনিয়ার তা আবার সেই ব্যাংকে জমা রাখলেন ।
.

এখন কাগজের কলমে হিসেবে দেখা যাচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ৩ কোটি টাকা জমা আছে । শুরু তার জমা দেওয়া ১ কোটি ও পরবর্তীতে বদরুলের জমা দেওয়া ২ কোটি । এই কাজ আমেরিকার ব্যাংকিং সিস্টেমে ১০ বার করা যায় তবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেমে কতবার করা যায় তা আমার জানা নেই। মোট কথা ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের একাউন্টে ৩ কোটি , ৪ কোটি বা ১০ কোটি টাকা দেখানো জন্য ব্যাংকের ভোল্টে ১০ কোটি টাকা ক্যাশ থাকার দরকার নেই । ঐ ১ কোটি টাকা ক্যাশ থাকলেই হবে ।
.
সমস্যাটা কখন লাগবে জানেন ? ধরেন গুজব উঠলো মায়ানমারের সাথে যুদ্ধ লাগবে বা দুর্ভিক্ষের কারণে ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে ইত্যাদি । তাই ব্যাংকে যার যত টাকা আছে দ্রুত তুলে নিতে হবে। ব্যাস । সবাই এই গুজবে বিশ্বাস করে টাকা তুলতে ব্যাংকে গেলো । কিন্তু ব্যাংক সবার টাকা ফেরত দিতে পারবে না । আরে ভাই থাকলে তো দিবো ।
.

অনেককে 'ইটস এ ওয়ান্ডারফুল লাইফ' নামে বিখ্যাত মুভিটা দেখেছেন । ওখানে দেখায় নায়কের ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে শুনে সবাই টাকা তুলতে চলে এসেছে । কিন্তু টাকা তো নেই । সে তার ক্লাইন্টকে বুঝাতে পারে না সে টাকা ছাপানোর মেশিন না । সে একটা সিস্টেম মাত্র ।
.
বিশ্ব অর্থনীতিতে এই সিস্টেমটা গড়ে উঠেছে বিশ্বাসের উপর । 'আদার ব্যাপারী'র ব্যাংক বিশ্বাস করেন , বদরুলের জাহাজ চালু হলে সেখান থেকে লাখ লাখ টাকা আসবে এবং আস্তে আস্তে সুদে আসলে টাকা শোধ হবে । বদরুল তার চৌধুরী সাহেবের মেয়েকে বিয়ে করবে । অথচ এই জাহাজ এখনো পানির স্পর্শও পায়নি। তার আগেই সবাই ঝুঁকি নিতে রাজি হয়েছে ।
.

এই ব্যাপারটাকে আমরা বলি 'CREDIT' যা ল্যাটিন শব্দ 'CREDO' থেকে এসেছে । যার অর্থ - I TRUST YOU । এই বিশ্বাসটা যতটা না একজন মানুষের উপর আরেকজনের । তার বেশি একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের উপর । দুই পক্ষই এই ভবিষ্যতের উপর বিশ্বাস করে বলেই এই গোটা সিস্টেমটা কাজ করতেছে । এই বিশ্বাসটুকু না থাকলে পুরো সিস্টেম ধ্বসে পড়বে । আমাদের আধুনিক সভ্যতা ফিরে যাবে সেই মধ্যযুগে।
.
প্রকৃতপক্ষে ব্যাংক আমাদের টাকা ধার দেয় না বা টাকা জমা নেয় না। আমরা লেনদেন করি স্বপ্নের । আর আমরা এই স্বপ্ন বেচাকেনা করেই আধুনিক সভ্যতা গড়ে তুলি । :-)
.

আর হ্যাঁ। লাইনে বহুক্ষণ দাড়ানোর পর বহু ফ্রি লেকচার শেষে জানা গেলো ব্যাংকের টাকা শেষ । তাই যারা টাকা জমা দিতে এসেছে তাদের এগিয়ে আসতে বললো । এ মাথা থেকে ও মাথা দেখলাম । কোথাও কেউ নেই । অতএব খালিহাতে ব্যাংক থেকে ফেরত আসতে হলো ‌। আব্বু জানালো আমি কোন কাজের না । আব্বুকে আবার বুঝাতে বসলাম ।
.
শান্তনু চৌধুরী শান্তু
.
কৃতজ্ঞতায় - Brief History of Humankind
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২০ রাত ১১:২৪
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×