.
এই রকম আরো অনেকের স্ত্রীকে শাহজাহান তার ক্ষমতা জোরে নিজের করে নিয়েছিলেন । পরস্ত্রীর প্রতি তার দুর্বলতা নিয়ে দিল্লীর গলিতে গলিতে কানাঘুষা চলতো । বিষয়টা এতটাই অপেন সিক্রেট হয়ে পড়েছিল যে সেই পরস্ত্রীরা যখন নিজের সম্ভ্রম বিকিয়ে দিতে শাহজাহানের প্রসাদে যেত তখন রাস্তার ভিক্ষুকরা চেঁচিয়ে বলতো - ওগো শাহাজানের প্রাতঃরাশ/ মধ্যাহ্নভোজ , কিছু দান করে যাও আমাদের । এই মহিলারা এইসব শুনেও গায়ে কোন অপমান মাখতেন না । তাদের যথারীতি ভিক্ষা দিতে বলতেন কর্মচারীদের। ১ টাকায় ৭ মন চালের কিংবদন্তীর কারণে বাংলার মানুষ খুব স্বাভাবিকভাবে শায়েস্তা খানের নাম স্মরণে রেখেছে । শায়েস্তা খান ছিল মমতাজ মহলের ছোট ভাই । তাঁর স্ত্রীও শাহাজাহানের শ্যন দৃষ্টি থেকে রক্ষা পাননি । তবে অন্যান্য রাজকর্মচারীদের থেকে শায়েস্তা খানকে কাবু করা অপেক্ষাকৃত ঝামেলার ছিল বিধায় শাহাজাহান বিভিন্ন ছলাকলার আশ্রয় নিয়েও শায়েস্তা খানের স্ত্রীর মন জয় করতে ব্যর্থ হন । এই অবস্থায় শাহাজাহানের সাহায্যে এগিয়ে আসে নিজ কন্যা স্বয়ং জাহানারা । হ্যাঁ , সেই বিখ্যাত জাহানারা ওরফে বেগম সাহেব । যার ব্যক্তিগত ইতিহাসও তার পিতার মতই যথেষ্ট কলংকময় । অফ টপিক- শাহজাহান থেকে আমল থেকে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জটিলতা এড়াতে নিজ কন্যা সন্তানদের বিয়ে দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অর্ন্তপুরে হাবসী গোলামদের সাথে তাদের অসামাজিক কার্যকালাপে প্রসাদ কুলষিত হয়ে পড়ে। শাহজাদা দারা একবার জাহানারার বিয়ের উদ্যোগ নিয়েছেন । যার কারণে ভ্রাতৃ যুদ্ধে জাহানারা দারার পক্ষ নেন। যাইহোক। জাহানারা পিতা শাহাজাহানকে খুশি রাখতে সদা তৎপর ছিলেন । জাহানারা শায়েস্তা খানের স্ত্রীকে এক ভোজ সভায় আমন্ত্রণ জানালেন । এক নারী কর্তৃক আমন্ত্রিত হওয়ায় তিনি শংকামুক্ত ছিলেন এবং ফলে যথারীতি সেই ফাঁদে ধরা পড়লেন । তারপর সেই প্রাচীন রোম সম্রাটদের কায়দায় খুব নিষ্ঠুরতার সাথে শাহজাহান তাকে ধর্ষণ করেন । সেই দুঃসহ অপমান মেনে নিতে পারেননি শায়েস্তা খানের স্ত্রী । তিনি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেন। এমনকি ধর্ষণের সময়ের পরিধেয় বস্ত্রও তিনি বদলাননি । এইভাবেই তিনি মারা যান । পরবর্তীতে শায়েস্তা খান তার স্ত্রীর আত্মহত্যার প্রতিশোধ নিয়েছিলেন শাহজাহানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আওরঙ্গজেবের সহযোগী হয়ে । শাহজাহানের শেষ দিনগুলো সম্পর্ক কিছু কথা না বলে পারছি না । লম্পট শাহজাহানকে ক্ষমতাচ্যুত করেন আওরঙ্গজেব । শাহজাহানকে গৃহবন্দী/ প্রাসাদবন্দী করে রাখা হয় আরো ১৫ বছর । তবে শাহজাহান কষ্টে ছিলেন না । তার ভোগ বিলাসের সবকিছু তাকে নিয়মিত সরবরাহ করা হত । তার কাম বাসনা ছিল খুব উগ্র । ৬৫ বছর বয়সেও তিনি নানারকম যৌনবর্ধক ঔষধ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন । তার প্রধান দুই সুন্দরী দাসী ছিল আফতাব (সূর্য) ও মাহতাব (চন্দ্র) । একদিন আয়নার সামনে গোঁফে তা দিচ্ছিলেন শাহজাহান । শাহজাহান খেয়াল করলেন দুই দাসী একে অন্যকে দৃষ্টি বিনিময় করছে । শাহজাহান সেই দৃষ্টিতে তার প্রতি তাচ্ছিল্য দেখতে পান । শাহজাহানের আত্মসম্মানে ঘা লাগে । শাহজাহান ঠিক করলেন কয়েক ধরণের যৌনবর্ধক ঔষুধ সেবন করে দাসীদের সমুচিত শিক্ষা দিবেন । তাদের শিক্ষা কতটুকু দিতে পেরেছিলেন তা ইতিহাস বলে না । তবে অতিরিক্ত ঔষুধ সেবন করায় তার মুত্রনালী বন্ধ থাকে ৩দিন । যা তাকে মৃত্যুর দারগোড়ায় নিয়ে যায় । . একদিন শাহজাহান হাতে একটি আপেল নিলেন । সাথে সাথে এক পুরানো ভবিষৎবাণী মনে পড়ে গেলো । শাহজাহান তখন শাহাজাদা হিসেবে বিজাপুরে অবস্থান করছিলেন । জুন্নার এক ফকিরকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন - তিনি কখন বুঝবেন তার মৃত্যু আসন্ন ? ফকিরটি উত্তর দিয়েছিল - 'যেদিন থেকে আপনি হাতের আপেলের ঘ্রাণ পাবেন না' । শাহজাহান তার হাতের আপেলটির ঘ্রাণ পাচ্ছিলেন না । এর কিছুদিন পরই শাহজাহানের মৃত্যু হয় । এ যুগ আর ঐ যুগের মাঝের পার্থক্য কেবল সময়ের । এই অন্যায়গুলো আজো সমাজে চলছে । কেবল ভিন্ন রূপে ।
.
.
শান্তনু চৌধুরী শান্তু
তথ্যসুত্র- হারেমের কাহিনী সাযযাদ কাদির
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৩