
বঙ্গবন্ধু, ১৫ আগস্ট ও ৩২ নাম্বার বাড়ির প্রতি এত কটাক্ষের কারণ নিয়ে নিরপেক্ষতাকে সাথী করে সংবিধিবদ্ধ সতর্কতার সাথে কিছু বলা প্রয়োজন।
ঐতিহ্যবাহী যেকোনো দলের ক্ষেত্রে একজন কাল্ট ফিগার লাগে যাকে আদর্শ রেখে দলের কার্যক্রম চালানো যায় । ভারতে মহাত্মা গান্ধীর কংগ্রেস পার্টি বা পাকিস্তানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মুসলিম লীগ এটা একটা সহজ উদাহরণ। একই পথে আওয়ামী লীগও হেঁটেছে। বিএনপিও হেঁটেছে। যেমন বিএনপি জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর কাউন্টার পার্ট হিসেবে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সময় পায়নি। পেলে আরো বড় আকারে বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করে ফেলতো। তবে আওয়ামী লীগ যা করেছে বিএনপি তা তার সাত জন্মেও করতে পারবে কিনা সন্দেহ।

২০০৮ পর পর আওয়ামী লীগ তার দলের স্থায়িত্বকে নৈতিক-অনৈতিক উপায়ে টিকিয়ে রাখতে বঙ্গবন্ধুকে ক্রমে এক্সট্রিমিনিস্ট ওয়েতে কাল্ট ফিগারে পরিণত করা শুরু করলো। (বিষয়টা ২০০৮ আগে এতটা ছিল না)।
দলের সব কার্যক্রম মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর নামে পরিচালনা শুরু হল । প্রথমে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে একটা ধর্মের রূপ দিলো । বঙ্গবন্ধুকে বানালেন এই ধর্মের প্রবর্তক । তার বাণীকে (যেমন এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম) বানানো হলো ধর্মগ্রন্থ। ধর্মের প্রতিটি বাণী যেমন অলঙ্ঘনীয়। তেমনি এই ধর্মের প্রতিটি বাণীও অলঙ্ঘনীয় । ধর্মের প্রতিটি বাণী-উপদেশ-নিষেধ অবমাননা যেমন ব্লাসফেমি। তেমনই এই ধর্মগ্রন্থের অবমাননাও ব্লাসফেমি (যেমন যেকোন বিরুদ্ধাচারণকে স্বাধীনতা বিরোধী তাকমা দেওয়া)। আওয়ামী লীগের কার্যালয় হলো এই ধর্মের চার্চ, ৩২ নাম্বার বাড়িকে বানানো হল তীর্থস্থান তথা ভ্যাটিকান সিটি, ১৫ আগস্ট হলো ১০ই মহরম এবং এই ধর্মের প্রধান পোপ হলো প্রবর্তকের কন্যা। আর আওয়ামী লীগ/ চার্চের অনুসারীরা হল দেশের সবচেয়ে বড় ধর্ম সম্প্রদায়।এই ধর্মে বিরুদ্ধে যেই গিয়েছে সেই অবিশ্বাসী, সেই নাস্তিক, সেই কাফের, সেই স্বাধীনতা বিরোধী । সেই থেকে এই ধর্ম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো সমালোচনা ব্লাসফেমি বিধায় যে কোন অত্যাচার নিপীড়ন এই ধর্মের শরীয়ত মতে জায়েজ।

এভাবে মুক্তিযুদ্ধকে বানানো হলো একটা ট্যাবুতে। জনসাধারণের উপর অত্যাচারের শাণিত বুলেটের প্রতিটা আঘাত করা মুক্তিযুদ্ধের নামে, বঙ্গবন্ধুর নামে। বিপ্লবের মাধ্যমে এই ধর্ম সম্প্রদায়ের হাত থেকে রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে। বিনিময়ে শোষিত ও অত্যাচারিতদের হাতে পুড়েছে এই ধর্ম, এই ধর্ম সম্প্রদায়, এই ধর্মের তীর্থস্থান তথা ভ্যাটিকান সিটি। অপমানিত হয়েছে এ ধর্মের আদর্শ ও প্রবর্তক। কারণ একবার লোকালয় পোড়া শুরু হলে ধর্মালয়ও রক্ষা পায় না। অথচ এর পিছে মুক্তিযুদ্ধ বা বঙ্গবন্ধুর কোন দোষ আছে কি? দোষটা তাদের যারা একে ধর্মের নামে অত্যাচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে । ইতিহাস তাদের কাউকে ক্ষমা করবে না।
শান্তনু চৌধুরী শান্তু. এডভোকেট

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


