somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজামুল হকের পদত্যাগ, সরকারের বিব্রত না হওয়া আর জনগণের অস্বস্থি

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক এবং বেলজিয়ামপ্রবাসী বাংলাদেশি আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপিতে কথোপকথন নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে স্কাইপি সংলাপের ভিত্তিহীনতার এই বিশ্বাসের পথ বিচারপতি নিজামুল হক সাহেব নিজেই রুদ্ধ করে দিয়েছেন।



ইকোনমিস্টের কাছে তিনি বলেছিলেন ট্রাইবুনালের কার্যক্রমের ব্যাপারগুলো তিনি বউয়ের কাছেও শেয়ার করেননা আর অন্যদের কাছে তো দূরের কথা! তার এই কথার সত্যতার প্রমাণ দেখাতে গিয়ে তিনি সাপ্তাহিকটির প্রতি রুলও জারি করলেন। সবকিছুই ঠিক ছিল কিন্তু পরবর্তীতে পৃথিবীর বড় বড় মিডিয়াতে যখন এই ব্যাপারটি চলে এসেছে ঠিক তখন তিনি নিজের সততার উপর অটল থাকতে পারলেন না। প্রভাবশালী মিডিয়া ইকোনমিস্ট এর প্রতি রুল জারি করে প্রকারান্তরে সারা পৃথিবী শুদ্ধ স্পর্শকাতর এ বিষয়টি ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করলেও আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া অডিও রেকর্ড এর সত্যতা অস্বীকার করে এসবের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যাবস্থা নিতে পারলেননা। এখন পদত্যাগ করে ট্রাইবুনালকে কলঙ্কিত করার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিষ্কার করলেন নিজের অবস্থানের প্রশ্নবিদ্ধ সততাকে। এটা সরকারের জন্য বিব্রতকর না হলেও জাতি হিসাবে আমরা চরম অস্বস্থিতে আছি।

এ পর্যন্ত দেখা যায় সরকারের গৃহীত বড় বড় পদক্ষেপের কোনটিই সফলতার মুখ দেখেনি। সরকার সব জায়গায়ই জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলেছে। ক্রমেই দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সরকারের অস্পষ্ট ও বিতর্কিত অবস্থানের দিকগুলো বিস্তৃত হচ্ছে। এ গুলোর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোঃ

১) শেয়ার বাজারের বড় কেলেংকারীর মাধ্যমে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সর্বস্ব হারিয়ে যখন পথে বসে পড়ার উপক্রম হলো এবং তাদের কেউ কেউ হতাশায় যখন আত্মহত্যার মত পথ বেছে নিতে থাকলো তখন সরকার এর সুষ্ঠ তদন্ত করে কেলেংকারীর মূল হোতাদের ধরে বিচারের কাঠগড়াই দাঁড় করানোর আশ্বাস দিলো।


এজন্য একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে আমাদেরকে আশার আলোও দেখালো। কিন্তু পরবর্তীতে ঐ তদন্ত কমিটিতে ধরা পড়া নিজ দলের কতিপয় রাঘব বোয়ালদের ধরতে অপারগতা জানিয়ে প্রকারন্তরে জাতির সুবিচার প্রাপ্তির আশার প্রদীপটি ধপ করে নিভিয়ে দিল। তারপর জাতিকে নিরাশার অন্ধকারে রেখে চিরকালের জন্য লুকিয়ে ফেলা হলো ঘটনার পেছনের সেইসব মূল নায়ক গুলোকে।

২) বস্তাভর্তি টাকা সহ নিজের ব্যক্তিগত সহকারী ও তার চালক হাতে নাতে ধরা পড়ার কারণে দপ্তর হারালেও মন্ত্রীত্ব হারাতে হয়নি এ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে । এমনকি জনগনের সামনে চালকের স্বীকার উক্তিতে মন্ত্রীর হাত থাকার ব্যাপারটি উঠে আসলেও তার অবস্থান এতটুকুও টলকায়নি।


উপরন্তু তিনি এখন দপ্তর বিহীন বেকার জীবনে দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানে সরকারের মুখপাত্রের নতুন দায়ীত্ব পালন করছেন। দুদকের সৎচরিত্রের সার্টিফিকেট পেয়ে নিজেকে আংশিক পাপমুক্ত দেখাতে পারলেও সরকারের অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে দপ্তর ফেরত পেয়ে পরোপুরি আগের মত নিস্পাপ হতে পারেন নি।

৩) ডেসটিনির হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের কারণে দেশের লাখ লাখ দরিদ্র্যপ মানুষ প্রতারিত হয়েছে। আর এটা করতে সরকারের খুব কাছের লোক হিসাবে খ্যাত সাবেক এক সেনা প্রধানকে সাইনবোর্ড (প্রকৃত অর্থে ঢাল) হিসাবে ব্যবহার করেছে কোম্পানিটি। জনগনের টাকা লুটে পুটে খাওয়ার এই মহোৎসব থেকে সরকারের দৃষ্টি আড়াল রাখার একটা কৌশলের অংশ হিসাবে তিনি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মঞ্চ ছেড়ে ছুটে এসেছিলেন এখানে।

এতে তিনি সফল হলেও প্রথম দিকে সরকারের অস্পষ্ট অবস্থান এবং অনেক দেরীতে নেওয়া পদক্ষেপের মাশুল কিন্তু ঠিকই গুনতে হচ্ছে আমাদের মত খেটে খাওয়া মানুষদেরকে।

৪) কথাই আছে “A picture says thousand words.’’ এটা সব ক্ষেত্রে সত্য নয়। কারণ নীচের ছবিটা কিন্তু একটা শব্দও বলেনা।



তবে ছবি কথা না বললেও ঐদিনের সমাবেশের হাজার হাজার মানুষ কিন্তু ঠিকই শুনেছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোদাচ্ছের সাহেবের কথা গুলো। সেদিন তিনি জনতার সামনে পরিচয় করিয়ে দেন এক অখ্যাত মুদি দোকানি তানভির ও তার স্ত্রী জেসমিনকে। দেশের উন্নয়নে তাদের প্রতিষ্ঠিত হলমার্ক কোম্পানির অবদানের কথা স্বরণ করে উচ্ছ্বাসের সাথে মেডেল পরিয়ে স্বীকৃতি দেন তাদেরকে। পরবর্তীতে যে আলাউদ্দীনের চেরাগ পেয়ে তানভীরের হলমার্কের উদ্ভব হয়েছিল সেই অবৈধ চেরাগ সরবরাহকারীদের নামের তালিকায় অনেকের সাথে পত্র পত্রিকায় তার নাম আসলেও জেল খাটছে শুধু তানভির জেসমিনরাই।

৫) পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারের পুলিশ চোর খেলা এখন আন্তর্জাতিক রূপ পেয়েছে। বিশ্বব্যাংকের চাপে পড়ে দূর্ণীতির অভিযোগে একদিকে আবুলের মন্ত্রীত্ব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে আরেক দিকে চাপ একটু হালকা হলেই তাকে দেশপ্রেমিক উপাধি দেওয়া হচ্ছে।

একই চাপে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আরেক উপদেষ্টা ছুটিতে যাচ্ছেন আবার ছুটির মাঝেই হঠাৎ অফিসে আবিষ্কার হচ্ছেন। স্বাধীন দুদক শুরুতে সেতুতে দুর্ণীতির কোন গন্ধ না পেলেও বিশ্বব্যংকের উপস্থিতে এখন তা পাচ্ছেন। সর্বশেষ দুদক এখন আগের দেওয়া সততার সার্টিফিকেট গুলো বাতিল করে নতুন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত দুর্ণীতির গন্ধ লেগে থাকা ব্যাক্তি গুলোর বিরুদ্ধে মামলা করবেন কি করবেননা এসবের মধ্যে ঝুলে আছে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

উপরোক্ত কোন ক্ষেত্রেই সরকারকে বিব্রত হতে দেখা যায়নি। এমন কি নুন্যতম উদ্বিগ্ন হতেও দেখা যায়নি। জাতি হিসাবে আমরাও উদ্বিগ্ন নই।



এখন আইন শৃংখলার ক্রমাবনতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা, বেকারত্ব এসব যেনো আমাদের জন্য কোন সমস্যা নয়। পবিত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আবেগকে ব্যবহার করে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে জনগনকে এমভাবে সম্মোহন করে ফেলেছে যে এই সম্মোহিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে কেউ আর জীবনে বেঁচে থাকার এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির মৌলিক দাবীগুলো নিয়ে ভাবছে না। যেনো সরকারের সকল ব্যর্থতা এবং আমাদের দুরাবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপাই হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিচারের ব্যাপারটি।

হতে পারে আমাদের দেশে জিইয়ে থাকা অসংখ্য সমস্যার মধ্যে যুদ্ধাপরাধীর বিচার না হওয়াটা একটা সমস্যা। বিতর্কের মধ্যে না গিয়ে ধরে নিলাম এটা এই মুহুর্তের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা। কিন্তু একমাত্র সমস্যা নয়।


ব্যাপারটি এরকমও নয় যে এটির সমাধান আরো দশটি সমস্যার সমাধান করে দিবে। আবার এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আমাদের দৃষ্টি অন্যান্য সকল ক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে রাখা প্রয়োজন তাও নয়। অথচ আজ পেপার পত্রিকা, রেডিও টেলিভিশন, ব্লগ ফেসবুক সব জায়গাতেই প্রাধান্য পাচ্ছে শুধু এই একটি বিষয়। আর এ সবের পেছনে রয়েছে সরকারের বিচারের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার চেয়ে রাজনৈতিক সম্মোহনী শক্তি।

কিন্তু এটা দেশের জন্য মোটেই কল্যানকর নয়। বিচার তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে। সরকারের কাজ হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার না করে সেটাকে ত্রুটিমুক্ত ও যথাসম্ভব সবার কাছে গ্রহনযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা চালানো। কিন্তু এখান থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে মরিয়া হয়ে যদি বিচারকের উপর এভাবে প্রভাব বিস্তার করে তাহলে সরকারের উপরোক্ত ব্যর্থতার সাথে সাথে আরো একটা ব্যর্থতা যুক্ত হবে। সরকার যেভাবে অন্য সকল ব্যর্থতাকে ঢাকতে এটিকে তুরুপের তাস হিসাবে ব্যবহৃত করার চেষ্টা করছে ঠিক তেমনি স্বচ্ছ বিচারে ব্যর্থ হলে তার পরিণতিও হবে ভয়াবহ।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের এই পর্যায়ে এসে নিজামুল হক পদত্যাগ করে নিজের অসততার কাছে পরাজিত হয়েই শুধু ট্রাইবুনাল ছাড়েননি ট্রাইবুনালের গায়ে এঁকে গেছেন সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের কলঙ্কচিহ্ন।


যে চিহ্নের ছাপ আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অংগনের অধিবাসীদের কাছেও দৃশ্যমান হচ্ছে। এমতবস্থায়ও যদি সরকার বিব্রত না হয়, রাজনৈতিক লাভ ক্ষতির উর্ধ্বে উঠে বিচারের নিরপেক্ষতা বজায় না রাখে তাহলে জনগন ঠিকই একদিন তাদেরকে বিব্রত করবে। ইতিহাস কিন্তু সেটিই বলে।




ছবি সূত্রঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৩:০২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×