somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“আমার বন্ধু রাশেদ”- একটি কাঁচা হাতে লেখা রিভিউ :)

০৭ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে মুক্তি পেল মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত চলচ্চিত্র “আমার বন্ধু রাশেদ”। বন্ধুদের সাথে দেখতে গিয়েছিলাম বলাকা সিনেমা হলে। ছোটবেলায় (কিশোর বয়সে) পাগলের মত পড়তাম জাফর ইকবাল স্যারের উপন্যাস আর সায়েন্স ফিকশন। বেশ মনোযোগ দিয়েই যে পড়তাম তা এখন বুঝতে পারি, কারণ এতদিন পরেও দেখি চরিত্রগুলোর নাম, কাহিনী বেশিরভাগই মনে আছে। এর আগে একই পরিচালকের “দীপু নাম্বার টু” তো আমার কাছাকাছি বয়সের অনেকেরই ভীষণ প্রিয় সিনেমা হয়ে আছে। কাজেই ভালো কিছুর প্রত্যাশা তো ছিলই।
কাহিনীর সারসংক্ষেপ এরকমঃ ইবু তার বাবা-মার একমাত্র ছেলে; তারা দিনাজপুর শহরে থাকে। তার এক বিশাল বন্ধুচক্র থাকে স্কুলে – ফজলু, আশরাফ, কাদের প্রমুখ। আর থাকে তার এক প্রিয় প্রতিবেশী বড় বোন অরু আপা। অরু আপার সাথে শফিক নামক এক যুবকের মন দেয়ানেয়া হতে থাকে। ইবু তাদের দুজনের মধ্যে চিঠি চালাচালি করতে থাকে। একদিন শহরে আসে রাশেদ নামের এক ছেলে। ইবুর সাথে তার বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তার বয়সী অন্যসব ছেলেদের থেকে সে একটু আলাদা; সে তার বাবার সাথে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলাপ করে। দেশের অবস্থা তখন আস্তে আস্তে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। শহরে রাতে মশাল মিছিল নামলে সে-ও তাতে অংশ নেয়; আর তার বন্ধুরা তার সাহসে মুগ্ধ হয়। একসময় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়; রাজাকার বাহিনীর উৎপাতও আরম্ভ হয়। আস্তে আস্তে শহরের মানুষেরা (বিশেষ করে হিন্দুরা) গ্রামের দিকে চলে যেতে থাকে। শফিক ভাই মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। এমনকি রাশেদ,ইবুও মুক্তিযোদ্ধাদের একটা অপারেশনে বেশ সাহসের সাথে অংশ নেয়। একসময় ইবু আর অরু আপার পরিবারও শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হয়। থেকে যায় শুধু রাশেদ।
রিকশার চাকা পাংচার হয়ে যাওয়ায় দেরি হয়ে গিয়েছিল; সিনেমার প্রথম ১০-১৫ মিনিট ধরতে পারিনি। :|| কাজেই সিনেমায় নাম ভূমিকার রাশেদের প্রবেশ ধরতে পারিনি। কাজেই যেখান থেকে ধরলাম সেখান থেকেই বর্ণনা চলুক। প্রথমেই আসি কিশোরদের অভিনয়ে। এদের বেশিরভাগই জীবনে প্রথম অভিনয় করেছে, তা-ও সরাসরি চলচ্চিত্রে। [সূত্রঃ প্রথম আলোতে জাফর ইকবাল স্যারের সাক্ষাৎকার]। বিশেষ করে “রাশেদ” চরিত্রে যে ছেলেটা অভিনয় করেছে, এক কথায় অনবদ্য। ফেসবুক মারফত জানলাম সে আমার এক বন্ধুর চাচাত ভাই, ডাকনাম প্রাপ্তি [পুরো নাম চৌধুরী জাওয়াতা আফনান]। ছেলেটার দুর্দান্ত অভিনয়ের একটা উল্লেখযোগ্য ফিচার ছিল তার সুতীক্ষ্ণ চোখজোড়া। পুরো সিনেমাতে ছেলেটা, কথ্য ভাষায়- “বেশ পার্টে ছিল”। অরু আপার চরিত্রে হোমায়রা হিমু বেশ ভালই মানিয়ে গেছেন বলতে হবে [একটা অস্বস্তিকর মুহূর্ত ছাড়া], আমি এতটা আশা করিনি। শফিক ভাইয়ের চরিত্রে মুরাদের পারফর্মেন্স ও চলনসই।
এই উপন্যাসের শেষটা বেশ আবেগময় । ঠিক সেই আবেগটাই তুলে আনার চেষ্টায় পরিচালককে সফলই বলতে হবে।
সিনেমাটোগ্রাফি এবং স্ক্রিনপ্লে (বাংলা জানিনা) দিয়ে বিচার করতে গেলে বলতে হয়, Harry Potter সিরিজের বইগুলো পড়ে তারপর সিনেমা দেখতে গিয়ে প্রচন্ড বিরক্ত এবং হতাশ হয়েছিলাম। একটা ভাল সিনেমা যাতে হয় সেইজন্যে কাহিনীতেও টুকটাক পরিবর্তন আনা হয়েছিল!! ফলাফল - পুরোটাই গুবলেট করে ফেলেছিল। তবে “আমার বন্ধু রাশেদ” এর ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য নয়। বইয়ের কাহিনী প্রায় পুরোটাই অবিকৃত রেখে সিনেমা তৈরির চেষ্টা করেছেন পরিচালক। যেটা কানে লাগতে পারে সেটা হচ্ছে সিনেমার সংলাপ; সরাসরি বইয়ের সংলাপগুলোই ব্যবহার করা হয়েছে। তবে জাফর ইকবাল স্যার যেহেতু ‘চলচ্চিত্র বানানো হবে ‘ এমন কথা চিন্তা করে উপন্যাস লেখেননি, সেহেতু বই পড়া না থাকলে সংলাপ শুনে অনেকের বিরক্তি আসতে পারে। তবে বই যারা পড়েছেন তাদের ব্যাপারটি খারাপ লাগবেনা বলেই আমার বিশ্বাস।
সিনেমার লোকেশন এবং চিত্রায়ন বেশ ভালই লেগেছে; মনেই হয়নি যে এটা এই সময়ে বানানো।
আর যারা কোথায় দেখবেন চিন্তা করছেন,স্টার সিনেপ্লেক্স না অন্য কোথাও,তারা দেরি না করে বলাকা সিনেমা হলে চলে যান। এক টিকেটে দুই ছবি(!!) দেখতে পারবেন। অন্যভাবে নিয়েন না আবার কথাটা, এই সিনেমার দৈর্ঘ্য এক ঘন্টার একটু উপরে হওয়ায় বলাকা কর্তৃপক্ষ এরপর একই পরিচালকের “দূরত্ব” সিনেমাটিও দেখায়, একই টিকেটে। তবে বেশ কয়েকদিন আগের হওয়ায় অনেকেই নিশ্চয়ই সিনেমাটি দেখে ফেলেছেন। আর স্টার সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে আমার এমনিও ভাল্লাগেনা; কেমন জানি সিনেমা হল সিনেমা হল ভাব আসেনা; ভংচং বেশি। পপকর্ন আর পেপসি নিয়ে বসলেই যে ভাল মুভি থিয়েটার হয়ে যাবে, এমন কোন কথা নাই। সাউন্ড সিস্টেমও খুব একটা সুবিধার না, “মনপুরা” দেখতে গিয়ে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। X(( X((

আরেকটা অনুরোধঃ দয়া করে হলে গিয়ে পরিবার-পরিজনসহ, বিশেষ করে কম বয়সী সদস্যদের নিয়ে গিয়ে দেখুন; ভালো লাগবে। কত হাবিজাবি বিতর্কিত সিনেমা নিয়ে আমরা চায়ের কাপে ঝড় তুলি, সেই তুলনায় একদমই নির্মল এই সিনেমা এবং এর কাহিনী।

শুভ হোক মুভি দেখা :)

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:৩৫
২৪টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×