কাহিনীর সারসংক্ষেপ এরকমঃ ইবু তার বাবা-মার একমাত্র ছেলে; তারা দিনাজপুর শহরে থাকে। তার এক বিশাল বন্ধুচক্র থাকে স্কুলে – ফজলু, আশরাফ, কাদের প্রমুখ। আর থাকে তার এক প্রিয় প্রতিবেশী বড় বোন অরু আপা। অরু আপার সাথে শফিক নামক এক যুবকের মন দেয়ানেয়া হতে থাকে। ইবু তাদের দুজনের মধ্যে চিঠি চালাচালি করতে থাকে। একদিন শহরে আসে রাশেদ নামের এক ছেলে। ইবুর সাথে তার বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তার বয়সী অন্যসব ছেলেদের থেকে সে একটু আলাদা; সে তার বাবার সাথে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলাপ করে। দেশের অবস্থা তখন আস্তে আস্তে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। শহরে রাতে মশাল মিছিল নামলে সে-ও তাতে অংশ নেয়; আর তার বন্ধুরা তার সাহসে মুগ্ধ হয়। একসময় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়; রাজাকার বাহিনীর উৎপাতও আরম্ভ হয়। আস্তে আস্তে শহরের মানুষেরা (বিশেষ করে হিন্দুরা) গ্রামের দিকে চলে যেতে থাকে। শফিক ভাই মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। এমনকি রাশেদ,ইবুও মুক্তিযোদ্ধাদের একটা অপারেশনে বেশ সাহসের সাথে অংশ নেয়। একসময় ইবু আর অরু আপার পরিবারও শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হয়। থেকে যায় শুধু রাশেদ।
রিকশার চাকা পাংচার হয়ে যাওয়ায় দেরি হয়ে গিয়েছিল; সিনেমার প্রথম ১০-১৫ মিনিট ধরতে পারিনি। কাজেই সিনেমায় নাম ভূমিকার রাশেদের প্রবেশ ধরতে পারিনি। কাজেই যেখান থেকে ধরলাম সেখান থেকেই বর্ণনা চলুক। প্রথমেই আসি কিশোরদের অভিনয়ে। এদের বেশিরভাগই জীবনে প্রথম অভিনয় করেছে, তা-ও সরাসরি চলচ্চিত্রে। [সূত্রঃ প্রথম আলোতে জাফর ইকবাল স্যারের সাক্ষাৎকার]। বিশেষ করে “রাশেদ” চরিত্রে যে ছেলেটা অভিনয় করেছে, এক কথায় অনবদ্য। ফেসবুক মারফত জানলাম সে আমার এক বন্ধুর চাচাত ভাই, ডাকনাম প্রাপ্তি [পুরো নাম চৌধুরী জাওয়াতা আফনান]। ছেলেটার দুর্দান্ত অভিনয়ের একটা উল্লেখযোগ্য ফিচার ছিল তার সুতীক্ষ্ণ চোখজোড়া। পুরো সিনেমাতে ছেলেটা, কথ্য ভাষায়- “বেশ পার্টে ছিল”। অরু আপার চরিত্রে হোমায়রা হিমু বেশ ভালই মানিয়ে গেছেন বলতে হবে [একটা অস্বস্তিকর মুহূর্ত ছাড়া], আমি এতটা আশা করিনি। শফিক ভাইয়ের চরিত্রে মুরাদের পারফর্মেন্স ও চলনসই।
এই উপন্যাসের শেষটা বেশ আবেগময় । ঠিক সেই আবেগটাই তুলে আনার চেষ্টায় পরিচালককে সফলই বলতে হবে।
সিনেমাটোগ্রাফি এবং স্ক্রিনপ্লে (বাংলা জানিনা) দিয়ে বিচার করতে গেলে বলতে হয়, Harry Potter সিরিজের বইগুলো পড়ে তারপর সিনেমা দেখতে গিয়ে প্রচন্ড বিরক্ত এবং হতাশ হয়েছিলাম। একটা ভাল সিনেমা যাতে হয় সেইজন্যে কাহিনীতেও টুকটাক পরিবর্তন আনা হয়েছিল!! ফলাফল - পুরোটাই গুবলেট করে ফেলেছিল। তবে “আমার বন্ধু রাশেদ” এর ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য নয়। বইয়ের কাহিনী প্রায় পুরোটাই অবিকৃত রেখে সিনেমা তৈরির চেষ্টা করেছেন পরিচালক। যেটা কানে লাগতে পারে সেটা হচ্ছে সিনেমার সংলাপ; সরাসরি বইয়ের সংলাপগুলোই ব্যবহার করা হয়েছে। তবে জাফর ইকবাল স্যার যেহেতু ‘চলচ্চিত্র বানানো হবে ‘ এমন কথা চিন্তা করে উপন্যাস লেখেননি, সেহেতু বই পড়া না থাকলে সংলাপ শুনে অনেকের বিরক্তি আসতে পারে। তবে বই যারা পড়েছেন তাদের ব্যাপারটি খারাপ লাগবেনা বলেই আমার বিশ্বাস।
সিনেমার লোকেশন এবং চিত্রায়ন বেশ ভালই লেগেছে; মনেই হয়নি যে এটা এই সময়ে বানানো।
আর যারা কোথায় দেখবেন চিন্তা করছেন,স্টার সিনেপ্লেক্স না অন্য কোথাও,তারা দেরি না করে বলাকা সিনেমা হলে চলে যান। এক টিকেটে দুই ছবি(!!) দেখতে পারবেন। অন্যভাবে নিয়েন না আবার কথাটা, এই সিনেমার দৈর্ঘ্য এক ঘন্টার একটু উপরে হওয়ায় বলাকা কর্তৃপক্ষ এরপর একই পরিচালকের “দূরত্ব” সিনেমাটিও দেখায়, একই টিকেটে। তবে বেশ কয়েকদিন আগের হওয়ায় অনেকেই নিশ্চয়ই সিনেমাটি দেখে ফেলেছেন। আর স্টার সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে আমার এমনিও ভাল্লাগেনা; কেমন জানি সিনেমা হল সিনেমা হল ভাব আসেনা; ভংচং বেশি। পপকর্ন আর পেপসি নিয়ে বসলেই যে ভাল মুভি থিয়েটার হয়ে যাবে, এমন কোন কথা নাই। সাউন্ড সিস্টেমও খুব একটা সুবিধার না, “মনপুরা” দেখতে গিয়ে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
আরেকটা অনুরোধঃ দয়া করে হলে গিয়ে পরিবার-পরিজনসহ, বিশেষ করে কম বয়সী সদস্যদের নিয়ে গিয়ে দেখুন; ভালো লাগবে। কত হাবিজাবি বিতর্কিত সিনেমা নিয়ে আমরা চায়ের কাপে ঝড় তুলি, সেই তুলনায় একদমই নির্মল এই সিনেমা এবং এর কাহিনী।
শুভ হোক মুভি দেখা
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:৩৫