somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যি ভালবাসতাম

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এইমাত্র আজান দিল । ভোরের আজান । বালিশের পাশে রাখা সেল ফোনটা নিলাম । ৫ টা ৪০ বাজে ।
গতকালের ঘটনার পর থেকে একটু আপ সেট আমি । এমনিতে আমি খুব চঞ্চল আর আমুদে । যেখানেই যাই না কেন সবাইকে মাতিয়ে রাখি । এটা আমার ছোটবেলার অভ্যাস ।
কিন্তু কাল তোমাকে দেখার পর পুরনো ক্ষতগুলো নতুন করে বুকে জেগে উঠছে কেন ?
প্রায় ৩ বছর পর তোমার সাথে দেখা ।
সেই জাতীয় জাদুঘরের সামনে ।
আমি তোমাকে দেখি নি । তুমিই আমাকে দেখে ডাক দিলে.........শ্রাবন ।
আমি চোখ ফিরে তাকালাম......। সেই তুমি ! যাকে একনজর দেখার জন্য প্রতিদিন ধানমণ্ডি থেকে ছুটে যেতাম মালিবাগ । সেই তুমি...। যার বুকে না ঘুমালে আমার ঘুম আসত না ।

মুখে মৃদু হাসি নিয়ে বললাম,তমা কেমন আছ? বিদেশ থেকে কবে এসেছ ?
এইতো ৫ দিন হল । তুমি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললে ।

কাকাবাবু কেমন আছে ?
বাবা নেই । মারও শরীরটা খারাপ । মাকে দেখতেই দেশে আসা ।
আর তোমার ছোটো ভাইটা ?
ও এখন আমার সাথে কানাডা থাকে । তোমার কি খবর ? এখনও সেই আগের মতই নাদুস নুদুস । তুমি হা হা করে হেসে উঠলে ।

আমি জোর করে বুকের ভেতরের কান্নাটাকে গিলে ফেলি । বলি, তুমিও আগের মত আছ ? সেই হাসি । সেই চোখ ।
শ্রাবণ, চাইলেই সব কি বদলান যায় ?
কি জানি ! আমি উদাস হয়ে বললাম ।
এখন কি করছ? জব?
হুম । একটা টি ভি স্টেশন এ কাজ করি ।
বাহ! তোমার স্বপ্ন ছিল, স্বপ্ন পূরণ হল ।
হয়ত ।
হয়তো কেন বলছ ? মিডিয়াতে কাজ করা নিয়েই আমাদের মাঝে ব্রেক আপ হল ।

আমার চোখের সামনে তখন একে একে সব ভেসে উঠতে লাগলো ।

আমি আর তুমি একটা মঞ্চ নাটকের দলে কাজ করতাম । একটা সময় ভালো লাগে তোমায় । প্রতিদিন কথা, টি এস সি তে আড্ডা । দুষ্টামি । একদিন তোমাকে বলেই ফেললাম ভালবাসি ।
কিভাবে যে কি হয়ে গিয়েছিল সে প্রশ্নের উত্তর আজো পাইনি ।
কত রাত দুজন কথা বলে পার করে দিয়েছি তার ঠিক নেই । যেদিন তোমায় প্রথম প্রপোজ করি সেদিন আমার পরনে ছিল লাল টি শার্ট । বুকে লেখা ছিল...dont break my heart
সেদিন তোমাকে ২০ টা লাল গোলাপ দিয়ে বলেছিলাম, ভালবাসি ।
তুমি কিছু বললে না । আমাকে জড়িয়ে গাছের আড়ালে নিয়ে ঠোঁটে আলতো চুমু খেলে । ভাগ্যিস রাত ছিল ।
এরপর দুটো টোনা টুনির একসাথে পথ চলা, স্বপ্ন দেখা শুরু ।

কিন্তু বাধ সাধল আমার একগুয়েমি । অহংকার । আসলেই কি আমার দোষ বেশী ছিল ?
তোমার কি দোষ ছিল না ? যখন একা হই নিজেকে জিজ্ঞেস করি । উত্তর পাই না ।

তোমার কথায় বাস্তবে ফিরে আসি । চল চা খাই। আমি পাশ থেকে লুকিয়ে দেখি তোমায় । তোমার থুতনির তিল । তোমার কালো ফ্রেমের চশমা । তোমার বাম চোখের ভুরু ।
তুমি আমায় বললে, তোমার গার্ল ফ্রেন্ড কি করে ?
নেই ।
কি বল ? তুমি মিডিয়া তে কাজ করো । আরর গার্ল ফ্রেন্ড নেই ?
না নাই । এখন শরীর খুঁড়ে খুঁড়ে সুখ খুজি । মন খুজি না ।
বাহ ! ভালই বললে .........।
মামা দুইটা চা দেন, চা ওয়ালাকে বললে তুমি ।
একটা চিনি ছাড়া .........আমি বললাম ।
এখনও চিনি খাও না ? তুমি অবাক হয়ে বললে ।
হুম ।

আমার বয় ফ্রেন্ড আছে । আসলে ও কানাডিয়ান । আমার সাথেই আসছে বাংলাদেশে । ও এখন গুলশান থেকে এখানে আসছে । ওর জন্যই অপেক্ষা । ওর নাম ইভান । আমায় আনেক ভালবাসে ।
ও । তাই । ভালত । তুমি যেমন চেয়েছিলে ।
তুমি কি সুখি হয়েছ ? চা এ চুমুক দিয়ে বললে ।
আমিতো সুখ খুজি নি । এখনও খুজি না । জীবন যাপনের জন্য জীবন কে উপভোগ করি ।
সেই আগের মত বেখেয়ালি কথা বার্তা । তুমি হাসলে ।
তা বলতে পার । আমি বোধয় এমনই ।
যেদিন তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে চলে গেলে , আমি সেদিন আনেক কেঁদেছিলাম ।
আমি জানি । অপরাধির মত বললাম।
এত কষ্ট কেন দিলে আমায় ? শ্রাবণ ।
আমি দাঁতে ঠোঁট কামড়ে বলি, আমি খুব খারাপ হয়ত ।
কি জানি ? আজ ভালো খারাপ এর হিসেব করেও লাভ নেই ।
তা ঠিক বলেছ । তুমিত সুখি ! তাই না !

তমার সেল ফোন বেজে উঠলো । রিসিভ করে তমা বলল, evan, plz wait in front of national museum gate…I am coming honey .
তমার দিকে তাকিয়ে বললাম, ইভান চলে এসেছে বোধয় । তাই না ?
হুম । তুমি করুন চোখে আমার দিকে তাকালে ।

ঠিক আছে । যাও ।
তোমার সেল নম্বরটা দেবে ?
আমি বললাম, না ।
ওকে তুমি যা ভালো মনে করো ।
আমার দিকে ডান হাত বাড়িয়ে আমার ডান হাত ধরলে তুমি । সেই হাত......। যে হাত ছোঁয়ার জন্য পাগল ছিলাম আমি ।
আসি । ভালো থেক । নিজেকে কষ্ট দিও না । আমি জানি তুমি অনেক অভিমানি । কষ্ট দাও নিজেকে , অন্যকেও । পারলে কাওকে খুজে নাও । তুমি এক নিশ্বাসে বলে চুপ করলে ।

আমি চুপ ।
তুমি চলে যাচ্ছ । আস্তে আস্তে মানুষের ভিড়ে মিশে যাচ্ছে তোমার অবয়ব । তোমার নীল রঙের শাড়ি । তোমার ভীষণ আদুরে মুখ ।
আমি বুঝতে পারলাম, আমি কাঁদছি । আমি সত্যি এত বছর পর কাঁদছি । তোমার জন্য । আমি বোধয় সত্যি তোমায় ভালবাসতাম । সত্যি ভালবাসতাম ।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×