ড: আহমেদ জিয়াউদ্দিন। বাংলাদেশের সাধারন মানুষের কাছে এই ব্যক্তি খুব একটা পরিচিত না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় তার সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের কথোপকথন প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি এখন খুবই আলোচিত সমালোচিত ব্যক্তিত্বে পরিনত হয়েছেন। ড: আহমেদ জিয়াউদ্দিনের পরিচয় হলো তিনি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অবস্থানকারী একজন বাংলাদেশী আইনজীবি। যুদ্ধাপরাধ এবং এ সংক্রান্তে নানা আইন বিষয়ে তার রয়েছে বিস্তর পড়াশোনা। তিনি বিগত দুই যুগ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে তথা জামায়াতের নেতাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের বিচার করার ব্যপারে সোচ্চার ভুমিকা পালন করেছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াত নেতাদের রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর যে মহা পরিকল্পনা নিয়ে বর্তমান সরকার এগুচ্ছে, তিনি তার মাস্টারমাইন্ড।
তবে ড: আহমেদ জিয়াউদ্দিন আওয়ামী লীগের কোন একনিষ্ঠ কর্মী নন। তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার ভান করলেও মূলত তিনি জাসদ কর্মী এবং আদর্শিকভাবে বাম ঘরানার। একারনেই ট্রাইবুনালের জাসদপন্থী চেয়ারম্যান বিচারপতি নাসিম এবং বর্তমান কেবিনেটের জাসদপন্থী আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সাথেও রয়েছে তার বাড়তি সখ্যতা।
আওয়ামী লীগের থিংকট্যাংক হিসেবে পরিচিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও তাকে বিশেষ চোখে দেখতেন। যেহেতু আওয়ামী লীগে আরও বহু জাসদপন্থী নেতাই বর্তমানে ভাল অবস্থানে রয়েছেন এমনকি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন, তাকেও মেনে নিতে আপত্তি ছিলনা হাসিনার। শুধু তাই নয়, ব্এিনপি জামায়াত সরকারের মেয়াদ পরবর্তী নির্বাচনে এই জিয়াউদ্দিনকে এমপি এবং পরবর্তীতে মন্ত্রী বানানোর খায়েসও ছিল শেখ হাসিনার।
কিন্তু বিধি বাম। ওয়ান এলিভেনের চক্করে পড়ে যখন আওয়ামী লীগ হাসিনাপন্থী-সংস্কারপন্থী এই দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়লো, তখন অন্য সব জাসদপন্থী নেতার মত এই জিয়াউদ্দিনও সংস্কারপন্থীর খাতায় নাম লেখান। ব্রাসেলসে বসেও তৎকালীন মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের পক্ষে প্রচারনা চালান তিনি।
শেখ হাসিনা মুক্ত হওয়ার পর তার সংস্কারপন্থী ভুমিকার কথা জানতে পেরে জিয়াউদ্দিনকে আর নমিনেশন দেননি। আর ব্রাসেলস সফরে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা নেত্রীকে জিয়াউদ্দিনের সংস্কারমূলক ভুমিকা ও প্রস্তাবনার যাবতীয় তথ্য হাতে তুলে দিলে এই সুবিধাবাদীকে মন্ত্রী বানানোর ইচ্ছাও জলাঞ্জলি দেন শেখ হাসিনা।
এই অবহেলা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভের তৈরী করে জিয়াউদ্দিনের মনে। তক্কে তক্কে থাকা এই লোক পুরনো সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে জাসদপন্থি বিচারপতি নাসিম আর আইনমন্ত্রীকে নানাভাবে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সেমিনারে যোগ দিয়ে মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যপারে সরকারের ভুমিকাকেই তুলে ধরছিলেন তিনি। ফলে আবারও আওয়ামী লীগ আর এর নেত্রী শেখ হাসিনা ড: জিয়ার ব্যপারে আস্থা ফিরে পান। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সমর্থন পেয়ে ড: জিয়াউদ্দিন রীতিমত যুদ্ধাপরাধ বিচারের নাটের গুরু বনে যান। পুরনো সহকর্মী নাসিমের সাথে নিরন্তর আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে বিচারের ছক তৈরী করে ফেলেন, যে গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু এরপরের গল্প আরো বড় এক প্রতিশোধের। সর্বশেষ মন্ত্রীসভার রদবদলেও যখন ড: জিয়াউদ্দিনের কপালে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর তিলক লাগলো না; তখন সেই প্রতিশোধ নিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদের শেষ বছর এসে এই সরকারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর ইস্যু যুদ্ধাপরাধের ট্রাইবুনালের বিচারক তথা গোটা বিচার প্রক্রিয়াটিকেই বিতর্কের মুখে ফেলে দিয়ে তিনি নিরাপদে সটকে পড়লেন। বিচারপতি নাসিমের সাথে ড: জিয়াউদ্দিনের দীর্ঘদিনের নিয়মিত কথাবার্তা সময়মত ফাঁস হয়ে যায় ব্রাসেলস থেকেই। এখন হাসিনা, বিচারপতি নাসিম আর ট্রাইবুনালের প্রান ওষ্ঠাগত, আর সুবিধাবাদী জিয়াউদ্দিন সব তথ্য ফাঁস করে নিজে ঠিকানা গড়ে নিলেন সুদূর প্রবাসে। একেই বলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জাসদের নিবেদিত কর্মীর মধুর প্রতিশোধ।।।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





