খুব সাধারনভাবে আমাদের সবারই এ তথ্য জানা যে, নারী আর শিশুদের সর্ব অবস্থায় সব বিপদ আপদের বা ঝামেলার বাইরেই রাখার চেষ্টা করা হয়। এমনকি দুটি দেশ যখন যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখনও নারী বা শিশুদের বাঁচানোর ক্ষেত্রে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়। বর্তমান সময়েও আমরা দেখছি, গাজাতে বা সিরিয়াতে যখন নারী এবং শিশুদের উপর নির্যাতন চালানো হয়, তখন জাতিসংঘসহ অন্য সব আন্তর্জাতিক ফোরাম ও মানবাধিকার সংঘঠনগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠে। আবার এভাবেও বলা যায়, যুদ্ধক্ষেত্রে সাধারন সৈন্য বা মানুষ হত্যা করার তুলনায় নারী ও শিশু হত্যাকান্ডকে অনেক বেশী মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নারীকে দুর্বল মনে করে বা নারীকে অসম্মান করার জন্য এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়, বিষয়টি তেমন নয়। প্রকৃতপক্ষে এ বিষয়টি করা হয়, নারীর প্রতি এক গভীর সম্মান বা নিবিড় এক মমতা থেকে। মায়ের জাতকে রক্ষার এ বিধানটিকে প্রকৃতিও বোধ হয় সুরক্ষা করে তার স্বাভাবিক সৃষ্টির ধারাবাহিকতাকে ধরে রাখার জন্য।
এ তো গেল তত্ব কথা। কিন্তু বাস্তবে কি হয়? নারীর কোন আচরনটুকুকে অপরাধ হিসেবে দেখা যায়? নারীকে তার স্বামী বা সন্তানের কৃতকর্মের দায় দেয়াটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় একজন নারী তার স্বামী বা সন্তানের বৈধ বা অবৈধ কর্মকান্ডের খবর কতটুকুই বা জানতে পারে? সাধারনত অনেক স্বামী তার সম্পত্তির পরিমান বাড়াবার জন্য বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজেকে অনাকাংখিত কিছু বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য স্ত্রীর নামে সম্পত্তি বানালেও আদতে এগুলোর বেশীরভাগের ব্যপারেই ব্যক্তি নারী খুব একটা অবহিত থাকেনা।
নারী প্রসংগে এতগুলো কথা বললাম কারন নিজ চোখে আরো একবার নারীকে অপদস্থ আর অপমানিত হতে দেখলাম। গত দুদিনে বেশ কিছু মিডিয়ার খবরে দেখলাম, জামায়াত ঘরানার সংগঠন ছাত্রী সংস্থার বেশ কিছু বোরকা পরিহিত মেয়েদের কোর্টে, হাজতে এবং প্রিজন ভ্যানে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ৫৪ ধারাটি খুব দুর্বল একটি আইনী ধারা। সাধারনত সন্দেহভাজন লোকদেরকে আটক করে এ ধারায় চালান দেয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধারায় আটকদের দু-একদিন কারাগারে আটকে রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভাল আইনজীবি নিয়োগ করতে পারলে এ ধারায় আটকদের তাৎক্ষনিকভাবে মুক্তিও দেয়া হয়। কিন্তু এ ধারায় আটক ব্যক্তিদের রিমান্ডে নেয়ার প্রচলন খুবই কম। অথচ বিম্ময়করভাবে ছাত্রীসংস্থার এই আটককৃত মেয়েদের এ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হলেও তাদের সবাইকেই দুদিনের রিমান্ডে নেয়া হলো। টিভিতে দেখেই এই মেয়েগুলো সম্পর্কে যে ধারনা পাওয়া যায়, তা হলো এরা সবাই বোরকা পড়ে এবং নেকাবসহ। এই মেয়েরা ভাল পরিবারের। টিভি রিপোর্ট থেকেই জানলাম, এদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটসহ শীর্ষস্থানীয় কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।
এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর পিরোজপুরে ৩ জন বোরকাধারী মহিলাকে গ্রেফতার করে মাসের পর মাস জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। ছাত্রী সংস্থার মেয়েরা খারাপ বা ভাল কিনা কিংবা তারা ভাল কাজ করছে কিনা- এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা আমার এ লেখনীর মূল উদ্দেশ্য নয়। আমি বলতে চাই ভিন্ন কিছু। এই গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা যখন অসহায় এই নারীদের অসহায়ত্বকে জিম্মি করে তাদের শরীরে হাত দেয়ার অপচেষ্টা করে কিংবা নারী হিসেবে তাদেরকে নুন্যতম সম্মান জানাতে বা দেখাতে কার্পন্য করে তখন জাতি হিসেবে আমাদের নৈতিক অবস্থান যে কতটা নি¤œগামী তা বিবেচনা করাই আমার মূল আর্জি। আমি রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সব মতের সব লোকদের এই বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার জন্য অনুরোধ করেছি।
জামায়াতের অনেক নারী সমর্থক ও জনশক্তি আছে এই কথা সবার জানা হলেও এখনও পর্যন্ত তাদেরকে জামায়াতের মাঠের কোন কর্মসূচীতে দেখা যায়নি। অথচ এই নারীদেরকে যখন সহিংস কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কিংবা নাশকতার কোন অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়- তখন এই বিষয়টিকে রীতিমতো পাশবিক আর বর্বরোচিতই মনে হয়েছে আমার।
যত অভিযোগ পুলিশ বা আইন শৃংখলা বাহিনী জামায়াতের বিরুদ্ধে উপস্থাপন করছে, তা যদি সত্যই হতো তাহলে তো এ পর্যন্ত জামায়াতের কোন নেতাকর্মীর জামিন হতো না। প্রকৃত চিত্র তো তা নয়। তাছাড়া সকলেই জানে, রাজনৈতিক এ সব মামলার আসলে কোন চুড়ান্ত পরিনতি ঘটে না। শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ যে আইন শৃংখলা বাহিনীর গাফলতি এবং কর্তব্যে অবহেলার সুযোগে বেরিয়ে যায়, তাদের মুখেই আবার কতগুলো নিরীহ মহিলার বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ মোটেও সমর্থনযোগ্য বা গ্রহনযোগ্য নয়।
তথাপি এই সব অভিযোগের ময়না তদন্ত না করে আমি সোজাসুজি চাইবো, এই বন্দী নারীগুলোকে অনতিবিলম্বে সম্মানের সাথে মুক্তি দেয়া হউক। আইনী ভাষায় যদি বলতে হয়, তাহলে বলা যায়, এই সব বন্দীদের জামিনে রেখেও তাদের বিরুদ্ধে আনীত মামলা চালানো যায়। কিন্তু অসহায় ছাত্রী, অবিবাহিত মেয়েদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমি আশা করবো যে, সরকার এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন। এই নারীরা এই প্রজন্মের। সাংবিধানিক অধিকারের ভিত্তিতে যেন তাদেরকে যথাযথ মর্যাদা দেয়া হয়। আর যদি তা না করা হয়, মানবসৃষ্টির এই কারিগরদের অমর্যাদার প্রতিশোধ প্রকৃতি নিজেই নিবে। আর সেই প্রতিশোধ আর অভিশাপের করুন পরিনতি থেকে তখন হয়তো আমরা কেউই মুক্তি পাবো না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





