somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরম শ্রদ্ধায় ও স্মরণে ড. সলিম আলি !

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকে আমি পাখি প্রেমিক। তখন অবুঝ মনের এই পাখি প্রেম ছিল অনেকটাই পাখির প্রতি অমানবিক এবং ক্ষতিকর। কারণ তখন আমরা গ্রামের দস্যি ছেলেরা মিলে পাখির বাসা খুঁজতাম, পাখির বাচ্চা চুরি করতাম, পাখি ধরতাম, খাঁচায় পাখি পালতাম। কিন্তু জ্ঞান হওয়ার পর জেনেছি এগুলি সব ছিলো অন্যায় এবং গুরুতর অপরাধ। এখনো আমি পাখিপ্রেমি। তবে ধরণটা ভিন্ন এবং সুন্দর। এখন পাখি দেখি, পাখির ছবি তুলি, পাখির জীবন ও জীবিকা রক্ষায় কাজ করি। পাখি শিকার, খাঁচায় পাখি পালন নিরুৎসাহিত করি।

এই পাখি নিয়ে কাজ করতে গিয়েই জেনেছি পাখি মানব সলিম মঈজুদ্দীন আবদুল আলি সাহেবের কথা। উপমহাদেশ তথা বিশ্বের প্রকৃতিপ্রেমী ও পাখিবিশারদদের আইকন ছিলেন তিনি। আজ এই তাঁর জন্মদিন। ১৮৯৬ সালের ১২ অকটোবর তিনি ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইতে জন্মগ্রহন করেন। শৈশবে মা-বাবা হারানো সলিম আলি তার মামা দক্ষ শিকারী ও প্রকৃতিপ্রেমী আমির উদ্দিনের কাছেই বেড়ে উঠেন। মামার সাথে চলতে গিয়েই তার কোমল মননে ছোটবেলা থেকেই চারপাশের প্রকৃতি বিষয়ক প্রেম ও সচেতনতা গড়ে ওঠে।

একসময় সলিম আলি তদানিন্তন Bombay Natural History Society (BNHS) -এর সেক্রেটারি WS Millard-এর সংস্পর্শে আসেন। মিঃ মিলার্ড জনাব সলিম আলিকে পাখির প্রতি মনযোগী ও পাখি গবেষনায় উৎসাহী করে তোলেন। এরপর পাখি নিয়েই লেগে পড়েন সলিম আলি। হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর পাখি বিশারদ। পাখি নিয়ে তার অসংখ্য কাজ দেশে বিদেশে সমাদৃত হয়ে ওঠে। তিনি ১৯৩০ সালে প্রকৃতি ও বাবুই পাখির কর্মযজ্ঞ নিয়ে একটা গবেষনা পত্র প্রকাশ করেন যা তাকে মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয় করে তোলে। পক্ষীতত্ত্বের উন্নয়ন ও বিস্তৃয়ায়নে তার গবেষনা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ভারতে এবং ভারতের বাহিরে পদ্ধতিগত পাখি সমীক্ষা উদ্ভাবনকারীদের মধ্যে তিনি অগ্রগণ্যদের একজন ছিলেন। জনাব আলি শুধু পাখি বিশারদই ছিলেন না পাখি ও অন্যান্য বণ্যপ্রাণী সংরক্ষনের ব্যপারেও তিনি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। পাখি নিয়ে তিনি কয়েকটি বই রচনা করেন, যার মধ্যে Indian Birds, Pictorial Guide to the Birds of the Indian Subcontinent and Handbook of the Birds of India and Pakistan (8 volumes), co-authored by Salim Ali and S. Dillon Ripley উল্লেখযোগ্য। তার পাখি বিষয়ক বইগুলো বর্তমান প্রজন্মের বার্ডার ও পক্ষীবিজ্ঞানের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তিনি ভরতপুর পক্ষী অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তারই উদ্যোগে বর্তমান সাইলেন্ট ভ্যালি জাতীয় উদ্যান নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়। ভারত সরকার তাকে ১৯৫৮ এবং ১৯৭৬ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক উপাধি পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে। পাখি বিষয়ে অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি ‘ভারতের পক্ষীমানব’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
দুবাই সাফারী'র প্রধান বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের কৃতি সন্তান সন্তান ড. রেজা খান তাঁর পিএইচডি গবেষণা করেছেন পাখি বিশারদ ড. সালিম আলী'র অধীনে।

দীর্ঘদিন প্রস্টেট ক্যান্সারে ভোগার পর ১৯৮৭ সালে ৯১ বছর বয়সে বর্ণিল জীবনের অধিকারী এই পাখি মানব ইন্তেকাল করেন।

গতকাল ছিল তাঁর জন্মদিন। জন্মতিথিতে ড. সলিম আলিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। এবং আমার তোলা দু'টি পাখির ছবি তাঁকে উৎসর্গ করলাম।



আমার তোলা ছবি।
পাখির নামঃ কালো ঘাড় রাজন।
ইংরেজীঃ Black Naped Monarch



আমার তোলা ছবি
পাখির নামঃ শঙ্খচিল ( অপ্রাপ্ত বয়স্ক)
English: Brahminy Kite




( পাখি প্রকৃতির অনন্য উপহার। আল্লাহ অসাধারণ সৃষ্টি। আমাদের পরিবেশ ও জীবধারণে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। আসুন পাখি শীকার, পাখির মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকি এবং এসব কর্মকাণ্ডকে নিরুৎসাহীত করি। পাখির অভয়ারণ্য হোক সমগ্র বাংলাদেশ। পাখি ও মানুষের বন্ধুত্বে সুন্দর হোক আমাদের ধরিত্রি)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৬
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×