কবি আবু হাসান শাহরিয়ার হয়তো ইতিবাচক অর্থেই 'পাখি-বৃষ্টি' প্রত্যাশা করেন। কেবল মেঘের মতো আকাশে ভেসে বেড়ানো নয়, পাখির ঝাঁক বেঁধে নেমে আসা কতটা নান্দনিক হতে পারে, তা কবির চেয়ে আর কে বেশি বুঝবে? কিন্তু পাখি যখন সত্যিকার বৃষ্টির মতোই আকাশের মায়া ত্যাগ করে মাটির পৃথিবীতে ঝরে পড়তে থাকে, সেটার ভয়াবহতা গত সপ্তাহে খানিকটা টের পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসের বীবি শহরের বাসিন্দারা। নতুন বছর শুরুর আধঘণ্টা আগে, শুক্রবার রাতে ওই শহরের এক বর্গমাইল এলাকায় আকাশ থেকে শত শত পাখির মৃতদেহ মাটিতে পড়তে থাকে। জীবিত অবস্থায় পড়া সামান্য কিছু পাখিও ছিল 'ঢুলুঢুলু'। রাস্তার কোনো কোনো অংশে এত মৃতপাখি জমে যায় যে অগত্যা সেগুলোর ওপর দিয়েই গাড়ি চালাতে হয়েছে। পরে মোটাদাগের একটি হিসেবে দেখা গেছে, মাত্র কয়েক মিনিটে সেখানে তিন হাজারের বেশি মরা পাখি পড়েছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ ঘটনাকে প্রথমে বাংলাদেশের কবির মতোই 'পাখি-বৃষ্টি' বলে আখ্যা দিয়েছে। তারপর নেমে পড়েছে এই অঘটনের কারণ বিশ্লেষণে। বাংলাদেশেও পাখির এমন বেদনাদায়ক বর্ষণ বিরল নয়। বিশেষ করে ক্ষেত থেকে পাখি তাড়াতে বিষ মেশানো শস্য ছিটিয়ে রাখা এবং এর কুফলে শত শত পাখি মারা যাওয়ার ঘটনা মাঝে মধ্যেই সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়। হাওরাঞ্চলে স্বল্পমাত্রার বিষটোপ দিয়ে অতিথি পাখিকে আধমরা করে বাজারে তোলার ঘটনাও বিরল নয়। আরকানসাস কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, বিষ প্রয়োগের এমন ঘটনা সেখানে ঘটেনি। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, শিল্পায়ন উপদ্রুত আমেরিকায় কোনো বিষাক্ত গ্যাস উদ্গিরণের কারণে এমনটি ঘটেছে কি-না। কিন্তু আরকানসাস গেইম অ্যান্ড ফিশ কমিশনের পক্ষে জানানো হয়েছে, সম্ভবত বজ্রপাত বা অতি-উচ্চতায় শিলাবৃষ্টির আঘাতে পাখির বড় কোনো ঝাঁকের মৃত্যু হয়েছে।
এখন, ঝাঁকে ঝাঁকে মৃত্যুকে যদি 'পাখি-বৃষ্টি' বলা হয়, একটি-দুটি করে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াকে কী বলা হবে? বাষ্পীভবন? গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে যে সচরাচর চোখে পড়া অনেক পাখিই বিরল হয়ে গেছে, তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষ করে ঢাকার মতো নগর থেকে দোয়েলের শিস যেন উধাও হয়ে গেছে। ক'টা বাড়ির ঘুলঘুলিতে আজকাল চড়ূইয়ের বাসা চোখে পড়ে? প্রকৃতিতে পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার অনেক কারণ, বহুল আলোচিত- খাদ্য সংকট, আবাস ও বিচরণক্ষেত্র সংকোচন ইত্যাদি। এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন প্রপঞ্চটি বোধহয় বিভিন্ন বেতার সংযোগ। বেশ কয়েক বছর আগে দেশ পত্রিকায় পড়েছিলাম, মোবাইল ফোনের অদৃশ্য নেটওয়ার্কের কারণে কলকাতা থেকে নাগরিক পাখি চড়ূই কীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। জেনেছিলাম, মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছুরিত তড়িৎ-চুম্বকীয় রশ্মির প্রভাবে কীভাবে চড়ূই, ঘুঘু, শালিকসহ বিভিন্ন পাখি এমনকি মৌমাছির চলাফেরা ও যোগাযোগ প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। অতি সম্প্রতি জানা গেল, প্রাযুক্তিক এ বিড়ম্বনা থেকে পাখিদের রক্ষায় ভারতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অস্বীকার করা যাবে না যে, বিলম্বে হলেও অতিথি কিংবা বাস্তুপাখি নিয়ে নানা তৎপরতা আমাদের দেশেও চোখে পড়ে। এসবের সুফলও হয়তো অদূর ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে। কিন্তু মোবাইল ফোন টাওয়ারের সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়েই পাখির জন্য অদৃশ্য বিড়ম্বনা ক্রমেই বাড়ছে। পাখির সাম্প্রতিক বাষ্পীভবনে গ্রামের দিগন্ত রেখা বদলে দেওয়া এসব টাওয়ারের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা বা সমীক্ষা জাতীয় কিছু হয়েছে কি? উদ্যোগ যে দূর অস্ত, বলাই বাহুল্য।
আলোচিত ব্লগ
জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?
অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।

১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।