somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ের পয়লা রাতে বিড়াল মারা বা মার্জার নিধন কাব্য:

২৬ শে মে, ২০০৯ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা থেকে সংগ্রহকৃত-
(পুরাটা না পড়লেও শেষটুকু পইড়েন)
অনেকেই বিয়ের পয়লা রাতে বিড়াল মারার বিষয়টি কি জানতে চায় বিজ্ঞজনের কাছে। বিজ্ঞরাও বেশ ভেব চিন্তে একটা আগোছালো উত্তর দেয়। প্রশ্নকর্তা অবশ্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেই উত্তর শুনে হতাশ হন!
ব্লগের পাঠকদের কেউ কেউ হয়ত জানতে পারেন এর সঠিক উত্তর কিন্তু এ অব্দি আমি এর সত্যিকারের কাহিনীটা শুনিনি। গদ্য সাহিত্য পাঠের সময় আমি সাধারনত প্রমান সাইজের কঠিন কঠিন কবিতাগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাই। কিন্তু সেদিন মুজতবা আলী সমগ্রে ফের চোখ বুলাতে গিয়ে কি ভেবে ‘গরবে কুশ শব-ই আওয়াল’ বা মার্জার নিধন কাব্যটি পড়তে গিয়ে যেন অন্য রকম কিছু একটা আবিস্কার করলাম। আরে এইটেইতো খুজছিলাম মনে মনে বহুদিন ধরে।
অধমের স্পর্ধা হল মুল কাব্যের সাথে গদ্যের মিশেলে আদি গল্পটি না জানা এই কবিতাটি না পড়া পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে।ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে পাঠকেরা ক্ষমাসুন্দর দৃস্টিতে দেখবেন বলে আশা করি।-
কাব্যের শুরুতে বিস্তর দৃস্টি আকর্ষন পূর্বক কবি বলেছেন;
পুরানা যদিও কেচ্ছা তবু হর্বকৎ
সমঝাইয়া দিবে নয়া হাল হকিকত।
গল্পটা ইরানের দুর্দান্ত সুন্দরী দুই যমজ বোনকে নিয়ে। তাদের রুপের বর্ননা কবি এইভাবে করেছেন;
ইরান দেশেতে ছিল যমজ তরুণী।
ইয়া রঙ ইয়া ঠঙ, নানা গুনে গুণী।
কোথায় লায়লী লাগে কোথায় শিরীন
চোখেতে বিজলী খেলে ঠোঁটে বাজে বীণ।
ওড়না দুলায়ে যবে দুই বোন যায়
কলিজা আছাড় খায় জোড়া রাঙা পায়।
তাদের দেখে নাকি রাস্তার ফকিরেরও মনে প্রমের দোলা লাগে। আর সেই রুপের তারিফ করতে গিয়ে সারা দেশের লোকই যেন জ্ঞান হারায়। রুপতো আছেই তার উপরে এতিম সেই কন্যাদ্বয় প্রচুর ধন সম্পদের মালিক।রুপ আর সেই অর্থ প্রাচূর্যের অহংকারে তাদের যেন মাটিতে পা পড়ে না।
তাই দুই নারী চায় থাকিতে আজাদ
কলঙ্কের ভয়ে শুধু বিয়ে হৈল সাধ
তবে বিয়ে করার পরে কিভাবে স্বমীকে তাদের আজ্ঞাবহ দাস করে রাখা যায়?
অনেক ভেবে চিন্তে তার একটা উপায় বের করল। তারা বিয়ে করবে শুধু এই শর্তে যে তাদের স্বামীদ্বয়কে প্রতিদিন সকালে পঞ্চাশ ঘা করে জুতার বাড়ি খেতে হবে!
স্বভাবতই তাদের সেই শর্তের কথা শুনে সবাই হকচকিয়ে গেল!এইটে কোন কথা হল?
কোন পুরুষের সাধ হবে আপন স্ত্রীর হাতে পঞ্চাশ ঘা করে জুতার বাড়ি খাওয়ার।সেই শহরে শত সহস্র বিবাহযোগ্য সুদশর্ন পুরুষ থাকা সত্বেও এমন অপমান জনক শর্তের কারনে কেউ এগিয়ে এলনা।এভাবেই কেটে গেল মাস বছর কিন্তু তারা থেকে গেল অনুঢ়া।
সেই শহরেরই দুই আপন ভাই ফিরোজ আর মতিন। ভীষন দরিদ্র ছিল তারা।সারাদিন পেটের ধান্দায় ঘুরে বেড়ায়।খেটে খুটে চেয়ে চিন্তে কোনমতে অন্ন সংস্থায় হয়। এত কষ্ট যেন তাদের আর সহ্য হয়না।
অবশেষে মতিন একদিন ফিরোজের কাছে প্রস্তার রাখল সেই দুই কন্যাকে বিয়ে করার। না হয় চোখ মুখ বুজে পঞ্চাশ ঘা জুতার বাড়িই সহ্য করলাম কিন্তু থাকতে পারবতো আরাম আয়েসে। ফিরোজের মনে দ্বীধা ছিল একটু তবুও ভাইয়ের প্ররোচনায় সে রাজী হল।
বিশাল আয়োজন করে তাদের বিয়ে হল-তারপর…
চলি গেল দুই ভাই ভিন্ন হাবেলিতে
মগ্ন হইল মত্ত হইল রস কেলিতে।
….
তিন মাস পরে বিঝ খুদার কুদ্রতে
আচম্বিতে দু ভায়ের দেখা হল পথে।
কোলাকুলি গলাগলি সিনা কলিজায়
মরি মরি মেলা মেলি করে দুজনায়।
ফিরোজের মাথায় বিশাল এক টাক দেখে তাজ্জব বনে গেল মতিন-একি অবস্থা মতিন?
-কেন এইটেই তো হওয়া স্বাভাবিক আমি আশ্চর্য হচ্ছি এই দেখে তোমার মাথার চুল দেখি আগের মতই আছে একটাও পড়েনি বা পাকেনি। তোমার সাস্হ্য দেখি আগের থেকে অনেক ভাল হয়েছে,চেহারায়ও এসেছে চিকনাই। ব্যাপারকি বলতো ভাই?
-আগে বল ব্যাপার কি তোর এই দুরবস্থা কেন?দেখেতো মনে হচ্ছে আগের থেকে খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই। তাহলে এই সাদি করে লাভ কি হল?
প্রতিউত্তরে বেশ কাচুমাচু হয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফিরোজ বলল,
-প্রতিদিন সকালে জুতার মার খেতে হবে এই চিন্তায় রাতে ঘুম হয়না। খাবারেও রুচী নেই খেতে মন চায়না।কিন্তু তুমিতো দেখছি মার ধোর খেয় বেশ বহাল তবিয়তে আছ।
-কি বলিস-কে মারবে আমায়! হায় হায় তোকে বুঝি এখনো জুতার বাড়ি খেতে হয়।
ভীষন অবাক হল ফিরোজ, তার মানে?
-আমার তো চুল ধরে পেটাতে পেটাতে মাথায় টাক পড়ে গেছে!
-তাই নাকি? আমাকে পেটানোর দুঃসাহস ওর আছে নাকি! প্রথম রাতেই যে ধ্যাতানি দিয়েছি।
-তাই নাকি ক্যামনে-ক্যামনে?
-শোন তাহলে বলছি। আমি আগে থেকেই জানতাম আমার বিবির খুব পেয়ারের একটা বেড়াল আছে- তাই নতুন একটা বুদ্ধি করে বাসর ঘরে ঢোকার আগেই সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম একখানা ধারালো তলোয়ার।
বিবি যখন নিজ হাতে করে পোলাও কোর্মা মুর্গী কালিয়া তুন্দুরী বাখরখানি নিয়ে যখন আমার কামরায় ঢুকল তার পেছন পেছন আসল সেই অতি আদরের বেড়াল। রসালো খাবারের গন্ধ পেয়ে যেই বিড়ালটা 'মিয়াউ' করেছে অমনি খাপ থেকে তলোয়ার বের করে দিলাম এক কোপ!
এই দেখে বিবি আমার প্রায় মূর্ছা যায় আরকি! ভয়ে তা আতঙ্কে তার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
আমি সাহস পেয়ে হুঙ্কার দিলাম- দ্যাখ বিবি এমনিতেই আমার মেজাজ বহুৎ কড়া। কোন রকম টু ফ্যা করবাতো তোমারও দশা হবে এই বিড়ালের মতন।
-এর পর সব জলের মত পরিস্কার। এখন বিবি আমার স্বামী অন্ত প্রান! স্বামীর মুখের উপর কথা বলবে সেই দুঃসাহস তার নাই।বাঘিনীরে একবার বেড়ি পরায় দিলে কই যায় তার তেজ!
এর পরের অংশ আর গদ্যে নয় শুনুন কবির জবানীতে;
ক্যাবাৎ” (ক্যায়া বাত)ক্যাবাৎ” বলি হাওয়া করি ভর
চলিলা ফিরোজ মিঞা পৌছি গেল ঘর।
মিলেছে দাওয়াই আর আন্দেশা তো নাই
খুদার কুদ্রতে ছিল তালেবর ভাই।
তারপর শোন কেচ্ছা শোন সাধুজন
ঠাস্যা দিল সেই দাওয়া পুলকিত মন।
সে রাতে খানার ওক্তে খুল্যা তলোয়ার
কাইট্যা না ফ্যালাইলো মিঞা কল্লা বিল্লিডার
চক্ষু দুটি রাঙ্গা কইরা হুঙ্কারিয়া কয়
“তবিয়ৎ আমার বুরা গর্বড়(গড়বড়) না সয়।
হুঁশিয়ার হয়ে থেকো নয় সর্বনাশ।“
সিতু মিয়া শুনে কয় সাবাশ শাবাশ!
হায়রে বিধির লেখা, হায়রে কিস্মৎ
জহর হইয়া গেল যা ছিল শর্বৎ।
ভোর না হইতেই বিবি লইয়ে পয়জার
মিঞার বুকেতে চড়ি কানে ধরি তার।
দমাদম মারে জুতা দাড়ি ছিঁড়ে কয়
তবিয়ৎ তুমার বুরা বরদাস্ত না হয়?
মেজাজ চড়েছে তব হয়েছ বজ্জাৎ?
শাবুদ করিব তোমা শুনে লও বাৎ
আজ হইতে বেড়ে গেল রেশন তোমার
পঞ্চাশ হইতে হৈল একশ’ পয়জার
এত বলি মারে কিল মারে কানে টান
ইয়াল্লা ফুকারে সিতু,ভাগ্যে পুন্যবান।
কোথায় পাগড়ী গেল কোথায় পজামা
হোঁচট খাইয়া পড়ে কভু দেয় হামা।
খুন ঝরে সর্ব অঙ্গে ছিড়ে গেছে দাড়ি
ফিরোজ পৌছিল শেষে মতিনের বাড়ি।
কাদিয়া কহিল’ ভাইয়া কি দিলি দাওয়াই
লাগানু কামে এবে জান যায় তাই।‘
বর্ণিল তাবৎ বাৎ, মতিন শুনিল
আদর করিয়অ ভায়ে কোলে তুলি নিল।
বুলাইয়া হাত মাথে বুলাইয়া দেহ
‘বিড়াল মেরেছ’ কয় নাই সন্দেহ।
ব্যাকারনে তবু দাদা, কৈরলা ভুল খাটি।
বিলকুল বরবাদ সব গুড় মাটি।
আসলে এলেমে তুমি করনি খেয়াল
শাদির পয়লা রাতে বধিবে বিড়াল।

শেষ কথা:
সাতচল্লিশ কিংবা একাত্তর সব সময়ের জন্য এ কাব্য;
স্বরাজ লাভের সাথে কালোবাজারীরে (কিংবা রাজাকারীরে)
মারনি এখন তাই হাত হানো শিরে।
শাদীর পয়লা রাতে মারিবে বিড়াল
না হলে বর্বাদ সব, তাবৎ পয়মাল।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০০৯ রাত ৮:৪৪
৩৬টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×