somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেভিস ফল-( ভ্রমন কাহিনী)- ২য় পর্ব

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভ্রমনের পূর্বকথা কিংবা ব্যক্তিগত কথন;
বয়স তখন নেহায়েৎ কম ছিলনা। বেশ ম্যাচিউরড ছিলাম-কচি বয়সের প্রেমের বিচ্ছেদে কি রক্তক্ষরন হয় সেটা খানিকটা ভুলে গেছি তখন। কিন্ত এই বয়সে ছ্যাকা খেলে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে সেটা আমি বহুদিন ধরে অনুভব করছিলাম। ব্যাপারটা হুট করে ঘটেনি এই যা রক্ষে আগে থেকেই মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তবুও যখন সত্যিকারেই ব্যাপারটা ঘটল তখন চিন্তা চেতনা তালগোল পাকিয়ে ফেলল। তবুও মগজের কিছু অংশ সচল ছিল বলেই হয়ত, হোচট খেতে খেতে নিজেকে সামলে নিলাম।
সেই সময়টায়-নিজেকে ব্যাস্ত রাখা বড় বেশী জরুরী ছিল।কোনভাবেই মস্তিস্ককে অলস রাখা যাবে না। একটু সুযোগ পেলেই সে ভাবতে বসবে- আর তখুনি হবে আমার কর্ম সাবাড়!
শুরু করলাম লেখালেখি। দিনরাত লেখালেখি নিয়ে পড়ে থাকি- মনে যা আসে তাই লিখি। কোন ধারাবাহিকতা নেই- লেখাগুলো কারো উদ্দশ্যে নয়- শুধু নিজের জন্য লিখে গেছি। মস্তিস্কের পাশা পাশি শরিরটাকেও ক্লান্ত করতে হবে ভেবে জিম শুরু করলাম। এক বন্ধু উসকালো ফটোগ্রাফি শেখার জন্য- ভাবনা চিন্তা না করেই চ্যালা হয়ে গেলাম 'চঞ্চল মাহমুদের'।
নিজের গানের গলা নেই ।দরদী গলায় কন্ঠ ছাড়লে দিলে মনে হয় চেচাচ্ছি- মিউজিকের প্রতি সখ ছিল ছেলেবেলা থেকেই। গিটারটা বড় বেশী খটমটে লাগত- তাই রুশীয় এক শিক্ষিকার তত্বাবধানে পিয়ানো শেখা শুরু করলাম। তবে আমার অন্য সবকিছুর মত এগুলোও শুরুর কাতারেই রয়ে গেল শেষ করা হলনা কোন কিছুই। যেই বয়সে মানুষ সংসারি হয় আমি সেই বয়সে ছন্নছাড়া হলাম।
ভ্রমনের নেশা আগে থেকেই ছিল।আশি ভাগ বেকার আমি তখন- কিন্তু তবুও ছুটিছাটা ছাড়া বেশ কিছু দিনের জন্য বেড়িয়ে পড়া মুশকিল।
ফের ওই বন্ধুর প্ররোচনায়,এখন আরেকটু সিরিয়াস হলাম। আমাকে অফার করল- চল এবার ঈদে দেশের বাইরে ঘুরে আসি। কি বলে- দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়া মানে বড় খরচের ধাক্কা! এত টাকা আমি কোথায় পাব?
সে আমাকে আস্বস্ত করে বলল, বিদেশ বলতেতো ঘরের পাশ ভারত আর নেপালে যাব। আমি যে হিসাব করেছি তা- বেশ অল্প টাকায় হয়ে যাবে। যাবা কিনা বল? ভিসা টিকেট সহ সবকিছুর দায়িত্ব সে নিয়ে আর আমার আপত্তি করার কিছু রইল না।
ঈদের দু'দিন আগে আমরা চলে গেলাম দার্জিলিং এ- ঈদটা করলাম সেখানে, একটু অন্য আমেজে। সেখান থেকে গেলাম কাঠমুন্ডু হয়ে পোখাড়া। সব মিলিয়ে পাক্কা পনের দিনের ভ্রমন।তখন অন্তর্জালে এত রেফারেন্সের সমাহার ছিলনা। সবকিছুতেই ছিল নতুনত্ব আর ভিন্নস্বাদ! এখন অনেকের কাছেই এই ভ্রমনগুলো এলেবেলে হয়ে গেছে! ভ্রমনটা এখন হলে আর হয়তো লিখতাম না। সময় ছিল বলেই এই ভ্রমনের আদ্যপান্ত তখন লিখে রেখেছিলাম। এখন হয়তো সবকিছু খানিকটা পাল্টে গেছে খানিকটা-সদ্য যারা গিয়েছে তারা হয়তো পরিবর্তনটা ধরতে পারবেন। রাশিয়া ভ্রমনের বাইরে আমি হংকং আর মালয়েশিয়া নিয়ে দু-ছত্র লিখেছিলাম। এর বাইরে এই প্রথম বড় কলেবড়ে আমি হাতের নাগালে দুটো দেশের ভ্রমন কহিনী লিখছি।দুজন মানুষের প্রেমের গল্পে যেমন ভিন্নতা থাকে -তেমনি আমার এ ভ্রমন গল্পেও খানিকটা ভিন্নতা থাকবে এটা আর বলার প্রয়োজন কি!
এত দীর্ঘ প্যা চালের শেষে একটা কথা বলি যেটা শুনে খরুচে ভ্রমনকারীরা একটু চমকে যাবেন-
দু'জনে বেশ আয়েশে ভ্রমন করেও সাকুল্য খরচ হয়েছিল মাত্র চারশ ডলার! জন প্রতি দুশো করে...

ডেভিস ফল-২
শিলিগুরির এ হোটেলটাতেই বাংলাদেশীদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশী। বড় বড় নেতা থেকে শুরু করে বহু শিল্পি সাহিত্যিকের পদচারনায় মুখর হয়েছে এর প্রাঙ্গন। তেমনই নামী-দামী দু -চারজনের নাম করলেন ইনি।
দু-বাংলার বিভক্তিতে বাংগালীদের অর্ন্তজ্বালা,বাংলাদেশের সামাজিক ধর্মীয় ও সাংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা চলল- খাবার শেষে চায়ে চুমুক দিতে দিতে। বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ড মৌলবাদের উত্থান ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা,ফের আমাদের মুখে শুনে উনি বেশ ব্যাথিত হলেন। শিক্ষিত অভিজ্ঞ রুচিবান এ ভদ্রলোকের সাথে গল্প করে ভাল লাগল।
খাবারের দামও বেশীনা , বাংলাদেশের মাঝারী মানের হোটেলের মত। আমি দার্জিলিংয়ে যাব শুনে উনি আমাকে পরামর্শ দিলেন - যদিও এখন অফ সিজন তবুও ওখানকার হোটেল রুম এখান থেকে বুকিং দিতে।
তুলনামুলক সস্তায় নাকি মিলবে। তার পরামর্শ মত আমরা হোটেলের মুল রিসেপসন কাউন্টারে অবাঙ্গালী ম্যানেজার ভদ্রলোকের সরনাপন্ন হলাম । তিনি আমাদের বেশ কিছু হোটেলের ছবি দেখিয়ে তাদের ভাড়া সুযোগ সুবিধার কথা বয়ান করে পছন্দমত বেছে নিতে বললেন। বড় ধরনের কনসেশন ও হোটেল রুমের চাকচিক্য দেখে আমরা পুলকিত হলেও তাকেই সেরাটা বেছে দিতে বললাম।
মাত্র তিনশো রুপি ভাড়াতে একটা থ্রি স্টার সমমানের হোটেল রুমের ছবি আমাদের সামনে মেলে ধরতেই একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম । ওদের একটা টোকেন মানি দিয়ে দুদিনের জন্য হোটেল বুক করলা।
ইচ্ছে ছিল গ্যাংটকে যাব । এখান থেকে গ্যাংটক ও দার্জিলিংয়ের দুরত্ব প্রায় সমান হলেও গ্যাংটক নাকি দার্জলিংয়ের থেকে বহুগুন সুন্দর। কিন্তু জাতিগত কোন্দলের জন্য পুরো সিকিমটা নাকি আর্মি পরিবেষ্ঠিত ।
সেখানে বিদেশী পর্যটকদের ঢোকা নিষেধ।
তবুও দুর্দান্ত প্রকৃতিক সৌন্দর্যের টান উপেক্ষা করতে না পেরে বহু বাংলাদেশী তাদের মুল পরিচয় গোপন রেখে ভারতীয় ( স্বভাবতই পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী) বলে ঢুকে যায় । ধরা পরলে জরিমানা গুনতে হয় ।
এখানকার হোটেলগুলোতে সিকিমে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশীদের গাইডেন্স দেয়া হয় । পাসপোর্ট সহ সব পরিচয়পত্র ওদের জিম্মায় রেখে, কোথায় কি বলতে হবে (অবশ্যই হিন্দিতে)-পশ্চিমবঙ্গের কোন অঞ্চলের ঠিকানা বলবে এসব শিখিয়ে পড়িয়ে -যাওয়া আসার গাড়ি থেকে শুরু করে ওখানকার হোটেল বুকিং সহ সবকিছু এরাই করে।
আমাদের হাতে সময় কম -ফেরার পথে একটা চান্স নিব।তাছাড়া যদি কোন বিপদ হয় এই ভেবে আপাতত ওখানে যাবার ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রেখে দার্জিলিংয়ের পথেই রওনা হলাম ।
হোটেল থেকে রেরুলেই জিপ স্ট্যান্ড । সেখান থেকে দশ পনের মিনিট পরপরই দার্জিলিংয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যাছে হলুদ রঙ্গের মহেন্দ্র, টাটা সাফারী কিংবা সুমো জিপ । দুদান্ত সাহসী অভিজ্ঞ গুর্খা চালকেরা দশ/বারো জন যাত্রীর দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়ে ভয়ঙ্কর পাহাড়ী পথ বেয়ে টেনে নিয়ে যায় সমতল থেকে সাতহাজার এক’শ ফিট উঁচুতে দুর্দন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত চিরহরিৎ দার্জিলিং শহরে ।
দার্জিলিং নামের সুচনা 'দোরজিলিং' বা বজ্রপাতের দেশ থেকে, আবার মতভেদও আছে -অনেকের মতে এ নামের বুৎপত্তি-তিব্বতীদের ভাষা দুর্জয়লিঙ্গ বা বিশাল বা অজেয় পাহাড় থেকে। তবে দুটো আদি নাম নিয়েই আমার সন্দেহ আছে কেননা ,আমি নিজেতো দেখিইনি- আজ পর্যন্ত কারো মুখেও শুনিনি দার্জিলিং এ ঘন ঘন বজ্রপাত হয়। তবে হতে পারে অন্য কোন সময়ে অন্য কোন খানে। আর বিশাল কাঞ্চনজংঘা পর্বতের বন্ধুর পথ ডিঙ্গিয়ে দার্জিলিং শহর থেকে অনেক অনেক উচুতে দুঃসাহসী তিব্বতীদের বাস,তারা কেন দার্জিলিংকে বিশাল বা অজেয় পাহাড় নামে ভুষিত করবে?
বায়ু-দুষন, শব্দ-দুষন, যান্ত্রিকতা ,মানুষের কোলাহল ও অত্যাচারে সেই অবিমিশ্র সৌন্দর্য আজ অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে তবুও যতটুকু আছে তাই দেখে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসুদের চোখ জুড়িয়ে যায় ।
টিকেটের দাম জনপ্রতি ৬২ রুপি। শীতকালর পড়ন্ত বিকেলে যাত্রীসংখ্যা এমনিতেই কম -রাত হয়ে গেলে পাহাড়ী পথে বিপদ হতে পারে ভেবেই হয়তোবা অনেকের যেতে সাহসে কুলোয়না ।
আমাদের চালক দুজন যাত্রী কম নিয়েই গাড়ি ছেড়ে দিল । শহর ছাড়িয়ে সমতলকে বিদায় দিয়ে বিশাল চা বাগানের পাশ দিয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে পাহাড় বেয়ে ওঠা। কখনো খাড়া উচু পথে গোঁ গোঁ শব্দে এগিয়ে চলা আবার তীক্ষ্ণ বাক ঘুরেই তেমনি খাড়া ঢালু পথে পিছলে যাওয়া। চিরটাকাল সমতলে কাটিয়ে দেয়া নাগরিকের প্রথম এমন অভিজ্ঞতা রোমাঞ্চর সাথে ভয়েরও মিশ্র অনুভুতির জন্ম দেয় । আমিও এর ব্যাতিক্রম নই - তবে সান্তনা এই যে এপথে পৃথিবির প্রথম মানুষ আমি নই । প্রতিদিন শত-সহস্র লোক ভ্রমন সাস্থ্য উদ্ধার , শিক্ষা ব্যাবসা বা অন্যকোন জীবিকা উর্পাজনের ধান্ধায় এ রাস্তা দিয়ে নিশ্চিন্তে যাওয়া আসা করছে -তাহলে কেন আমি...?
অতি উচু পাহাড় চুড়ার ফাকে ফাকে মেঘ সুর্য ও আকাশের লুকোচুরি খেলা আর বহু নিচুতে ফেলে আসা -ধীরে ধীরে আরো ছোট হয়ে আসা সমতলের দিকে তাকিয়ে মনের মধ্যে অন্যরকম এক অনুভুতি হচ্ছিল ।
রাস্তায় মাঝে মধ্যে বেশ বড় বড় গর্ত -কোথাও পাহার ধ্বসে পথ সংকীর্ন হয়ে গেছে,সে পথে গাড়ি বেশ সাবধানতার সাথে চালাতে হচ্ছে । বৃটিশদের করে দেয়া এ পথের রক্ষনাবেক্ষন করতেই মনে হয় ভারত সরকার হিমসিম খাচ্ছে !
কোথাও কোথাও পথের পাশের নিরাপত্তা দেয়াল ভেঙ্গে গেছে -ড্রাইভার একটু অসতর্ক হলেই নিমিষে কয়েক হাজার ফূট গভীরে জীবনের শেষ পতন। পড়তে সময় লাগবে মরতে নয় ।
এরই মাঝে কখনও মাথার উপর ঝুলন্ত পাহাড় - মনে হয় এই বুঝি খসে পড়বে, কখনও বা দুরন্ত ঝর্না উন্মত্ত নিত্যে গড়িয়ে পড়ছে উচু পাহাড় বেয়ে রাস্তার নিচ দিয়ে করে দেয়া পথ পেরিয়ে নীচে অনেক গভীরে কোন নদীর সাথে মিলনের বাসনায় । তারি পাশ কালো পাথুরে দেয়াল হিংসেয় গম্ভীর বিষন্ন মুক হয়ে দাড়িয়ে আছে আকাশকে ছোয়ার আকাঙ্খা মনের মধ্যে লুকিয়ে । দুর থেকে মেঘে ঢাকা সবুজ পাহাড় শ্রেনীকে নীলাভ লাগে -যেন মেঘের দল নীল গভীর সুমুদ্রের আবির কিছুটা এনে যেন তাদের গায়ে ছড়িয়ে দিয়েছে।
আমরা কার্শিয়াং পৌছুলাম সুর্য ডোবার কিছু আগে। এখানে একটা টার্মিনালে যাওয়া আসার পথে সব গাড়ি এসে দু-দন্ড বিশ্রাম নেয়। কার্শিয়াংয়ের আবহাওয়া স্বাস্থ্যকর । সাস্থ্য উদ্ধারের জন্য আসা ভ্রমনকারীদের অনেকেই অতউচুতে দার্জিলিংয়ে যেতে চায়না । তারা এখানেই এসে বেড়িয়ে যায় । এছাড়া এ শহরটায় প্রচুর নামীদামী স্কুল আছে,ভারতের অন্যান্য প্রদেশতো বটেই বাংলদেশেরও বহু ছাত্র ছাএী এখানে এসে শিক্ষাগ্রহন করছে । প্রতি বছর প্রচুর অভিবাভক তাদের ছেলে মেয়েকে পাঠাচ্ছেন ওখানে ভাল শিক্ষা ও নির্মল পরিবেশের লোভে ।

... ভেজা ভেজা কুয়াশা রেলিংয়ের ধারে
ছোট্ট ছেলের দল লাল সোয়েটার গায়
স্কুল ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাবেনা
কেটে যাবে সারাদিন দাজিলিং এর রাস্তায়
হঠাৎ কুয়াশা হঠাৎ কাঞ্চনজংঘা ডাকছে তাদের আয় ছুটে আয়
সহজেই খাদে নেমে যাওয়া যাচ্ছে কেটে যাবে সারাদিন দা. রাস্তায়
ছুটে গিয়ে উঠে পড়া যাচ্ছে রেলগাড়ি
ঝুলে ঝুলে চলে যাওয়া যাচ্ছে- বাতাসিয়ায়
পাহাড়ির ঝর্নাটা ঘিরে লুকোচুরি
হঠা বৃষ্টি ভিজে যায় লাল সোয়েটার
সারি সারি পাইন গাছের শুকনো পাতা
আছে একটা কাঠি আর একটা ভিজে দেশালাই
ছিড়ে নিয়ে দুটো অংকের খাতার পাতা
জ্বলবে আগুন ঠিকই -জ্বলবে ভাই ॥
গায়ের সোয়েটার শুকিয়ে যাবে গায়ে
জ্বর এসে যাবে ঠিক ঠিক ভোর বেলায়
আরো একদিন স্কুলে যেতে হবেনা
কেটে যাবে সারাদিন দাজিলিংএর রাস্তায় ॥
মিনিট পনের ওখানে অপেক্ষা করে আবার আমরা চলতে শুরু করলাম । কার্শিয়াংয়ে পৌছুনোর আগেই ঠান্ডার প্রকোপ টের পেয়েছিলাম -যত উপরে উঠছি ঠান্ডাটাও একট একটু করে বাড়ছে, তীব্রতা যথেস্ট তবে অসহনীয় পর্যায়ে নয় । শীত সহনীয় হলেও চলন্ত গাড়ির তীব্র বাতাসের ঝাপটা নিশ্চই ভয়ঙ্কর । তবুও এই ভয়ঙ্কর ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে আমাদের গাড়ির সাহায্যকারী পিছনের পাদানীতে দাড়িয়ে সারা পথ চালককে নির্দেশনা দিচ্ছিল । মাঝে মধ্যে অবশ্য আমাদের সামনের সিট ফাকা থাকায় সুযোগ পেরেই ওখানে বসে একটু গরম হয়ে নিচ্ছিল ।
জিজ্ঞেস করেলে বলল ,ওর নাম - দেওয়া - দেওয়া লামা । আড়াই বছর ধরে এ চাকরি করছে । দার্জিলিং শহর থেকে দু মাইল নীচে পাহাড়ের ঢালে তার বাড়ি । অতদুর পথ প্রতিদিন পায়ে হেটেই আসা যাওয়া করে।
আমি বাংলাদেশী শুনে সে বিশ্বাসই করতে চায়না । আমি যতই বুঝাই ওর একই কথা - তাহলে তুমি হিন্দি জানো কিভাবে। শুনেছিলাম পাহাড়িরা খুব সহজ সরল-এখন গুর্খা 'দেওয়া লামার' সাথে কথা বলে তার প্রমান পেলাম। অবশ্য আমার হিন্দি যথেষ্ঠ দুর্বল হলেও ওর অবস্থা এর থেকেও খারাপ। নিজেদের ভাষার বাইরে এ হিন্দি যতটুকু জানে বাংলাও ততটুকু । ওকে জিজ্ঞেস করলাম প্রতিবছর কয়টা গাড়ি এ্যাকসিডেন্ট করে এই পথে ? প্রতিউত্তরে সে বলল, একটাওনা!
তার এই বয়েসে সে কখনো এ রাস্তায় গাড়ি এ্যাকসিডেন্টের কথা শোনেনি । সত্যি বলতে কি সে যতই কনফিডেন্টলি বলুক না কেন আমার বিশ্বাস হয়নি - রাস্তা থাকলে দুর্ঘটনা ঘটবেই, তা সে যেখানেই হোক না কেন!
চারপাশের প্রকৃতি পাহাড়ের চুড়া আকাশ আর মেঘের মাঝে তীব্র লালচে কমলা আভা ছড়িয়ে দিয়ে পশ্চিমাকাশে সূর্য তার দিন শেষে বিদায়ের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে । চমৎকার উপভোগ্য সে দৃশ্য -বর্ণনা অসম্ভব। চলন্ত গাড়িতে বসে পাহাড়ের ফাকে ফাকে শেষ বেলার সেই রঙ্গে নিজের মনটাকে রাঙিয়ে নিয়ে পুরো সুর্যস্তটা উপভোগ করলাম । রাস্তার ধার ঘেষে পাহাড়ীদের কাঠের দোতালা রঙ বেরঙের একতলা দোতালা বাড়িগুলোও দেখার মত। পাহাড়ের এমন সুক্ষ প্রান্তে তারা এমন ভাবে বাসা বেধে আছে-দেখে মনে হয় ঝুলে আছে। এই বুঝি খসে পড়বে । বয়স্করা শীতের কাপড় গায়ে চড়িয়ে কেউবা যুবুথুবু মেরে উদাস দৃস্টিতে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে কেউবা উল বুনছে কেউ সন্তান ও গৃহস্থালী সামলাচ্ছে ।অপেক্ষাকৃত অল্প বয়স্করা রাস্তার ধারে কিংবা রাস্তার কিছুটা দখল করেই খেলা ধুলায় ব্যাস্ত। কি করবে? ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যও ন্যুনতম যতটুকু সমতলের প্রয়োজন সেটুকুওতো ওদের নেই।
....দ্বীতিয় পর্ব শেষ।

প্রথম পর্বের জন্য; Click This Link
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link

ছবি: সংগ্রহিত।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫৫
১৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×