স্তেপে বিষন্ন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এক ক্ষুধার্ত কুকুর। বুড়ো হয়ে গেছে সে ,আগের মত দৌড় ঝাপ করতে পারেনা , চোখেও ভাল দেখেনা। ক’দিন আগে মালিক তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। সেই থেকে বেওয়ারিশ হয়ে সে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই বিশাল স্তেপের প্রান্তরে। কোনদিন একটা আধটা ইদুর বা ছোটখাট কোন প্রাণী ধরে ক্ষুধার জ্বালা মেটায় - কখনোবা সেটাও জোটেনা। অথচ যৌবনে সে কত সুখেই না ছিল। মালিক গরীব হলেও তার কর্মদক্ষতার জন্য বেশ আদর করত । সারা রাত ধরে সে বাড়ি পাহাড়া দিত আর ঘেউ ঘেউ করে পাড়া মাতিয়ে রাখত। তার ভয়ে চোর ডাকাত মালিকের বাড়ির ত্রিসীমানায় ভিড়তে সাহস পেত না। বিনিময়ে মিলত তিনবেলা পেটভরে খাবার।
আর এখন বুড়ো হয়েছে বলেই তার আর কোন কদর নেই। এতদিন যার সেবা করল সেই-ই দুর দুর করে তাকে তাড়িয়ে দিল!
-হাউলো,ডগি !’কি ব্যাপার এমন মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াচ্ছ কেন?’ তার পাশ দিয়ে যেতে যেতে থমকে দাড়িয়ে এক নেকড়ে জিজ্ঞেস করল?
প্রতিউত্তরে বুড়ো কুকুর কিছু না বলে শুধু বিষন্ন চোখে নেকড়ের দিকে তাকাল।
- কি -যাচ্ছ কোথায় ,তডগি? ’ফের জিজ্ঞেস করল নেকড়ে।
কুকুর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ;
- আমার যাবার কোন জায়গা নেই,ভাই ! যখন আমি যুবক ছিলাম , আমার মালিক আমায় কত ভালবাসত। আর এখন আমি বুড়ো হয়ে গেছি বলে সে আমাকে তাড়িয়ে দিল!’
- তুমি নিশ্চই ক্ষুধার্ত।’নেকড়ে জিজ্ঞেস করল।
- হ্যা - ভীষন,” প্রতিউত্তরে বুড়ো কুকুর বলল।
- ঠিক আছে আমার সাথে চল , আমি তোমাকে খাওয়াব।’ বলেই নেকড়ে হাটতে শুরু করল।
বুড়ো কুকুরও বেশ খুশী মনেই নেকড়ের পিছু নিল। বেশ কিছুদুর হেটে যাবার পরে , নেকড়ের নজরে এল কিছু দুরে তৃনভুমিতে একপাল মেষ চড়ে বেড়াচ্ছে । সে থমকে দাড়িয়ে কুকরকে ডেকে বলল,
- একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে আসতো ওখানে কোন প্রানী চড়ে বেড়াচ্ছে।’
বুড়ো কুকুর কিছুটা পথ এগিয়ে গিয়ে ভাল করে দেখে দৌড়ে ফিরে এসে বলল’
- ওগুলো ভেড়া ।’
-ধ্যাৎ! মড়ক লেগে মরে না কেন ওগুলো। সারা গা ভর্তি শুধু পশম আর পশম! এসব আজে বাজে পশু পাখি খাওয়ার থেকে না খেয়ে থাকা অনেক ভাল।’ বেশ বিরক্তি সহকারে বলল নেকড়ে,“চল,সামনে এগোই। দেখে,ভাল কেছু মেলে কি না।”
আরো কিছু পথ হাটার পরে নেকড়ের নজরে এল এক ঝাক রাজ হাস চড়ে বেড়াচ্ছে নদীর ধারে। সে কুকুরকে ডেকে বলল,
- ডগি,চট করে,দেখে আসতো ওগুলো কি চড়ে বেড়াচ্ছে ওখানটায়।’
কুকুর ফের সামনে এগিয়ে গিয়ে ভাল করে দেখে দৌড়ে ফিরে এসে বলল,
- ওগুলো রাজহাস।
-ধ্যাৎ! মড়ক লেগে মরে না কেন ওগুলো। সারা গা ভর্তি শুধু পালকে। এসব আজে বাজে পশু পাখি খাওয়ার থেকে না খেয়ে থাকা অনেক ভাল।’এবারও তেমনি বিরক্তি প্রকাশ করে নেকড়ে ফের বলল,
- চল সামনে এগোই দেখি এর থেকে ভাল কিছু মেলে কিনা?
ফের তারা হেটে চলল । অনেক অনেক দুর যাবার পরে , নেকড়ে দেখল গো চরন ভুমিতে ঘাস খাচ্ছে একপাল ঘোড়া । এবারও সে কুকুরকে ডেকে বলল;
-দেখতো;ডগি। ওগুলো কি প্রানী ওখানে ঘাস খাচ্ছে ।
কুকুর বরাবরের মত সামনে এগিয়ে ভাল করে দেখে দৌড়ে ফিরে এসে বলল,
-ওগুলো ঘোড়া।’
-যাক্! তাহলে পাওয়া গেল। ওটাকে আমরা এখন খাব ।’কুকুরকে ইশারা করে নেকড়ে আরো কিছুটা সামনে ঘোড়ার কাছাকাছি। সে তার থাবার নখড় দিয়ে মাটিতে কয়েকটা আচড় একে দাতে দাত ঘষল । এমন করলে তাকে ভীষন হিংস্র মনে হয়।’
সে কুকুরকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করল ;
- দেখতো আমার লেজ নড়ছে কিনা ?’
বুড়ো কুকুর নেকড়ের লেজের দিকে চেয়ে বলল ,
-হ্যা হ্যা এটা বেশ জোড়ে নড়ছে।’
- তাই ! এবার ভাল করে দেখতো, আমার,চোখগুলো কি কোটর থেকে বের হয়ে আসতে চাইছে।’
- আরে তাইতো! ওগুলো মনে হচ্ছে এখুনি খুলে পড়বে ’ বুড়ো কুকুর কথা গুলো বলতে বলতেই নেকড়ে দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল একটা ঘোড়ার উপর। টুঁটিতে সজোড়ে কামড় বসিয়ে চিৎপটাং করে ফেলে দেয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই সেটা মারা পড়ল।
এবার সে কুকুরকে ডেকে বলল ,
-আসো এদিকে। আমরা এটাকে মিলে মিশে খাই।’
নেকড়ে খুব সহজেই ঘোড়াটাকে ছিড়ে খুড়ে উদরপূতি করে একটা ঢেকুঢ় তুলে বিশ্রামে গেল।
ওদিকে বুড়ো কুকুর তার নড়বড়ে দাত দিয়ে একটুকড়ো মাংস বহুক্ষন ধরে চিবিয়ে নরম করতে না পেরে ,মনের দুঃখে খাবার আশা পরিত্যাগ কর ! মনে হল;তার বাপের জন্মে এমন শক্ত কিছু খায়নি।
-শিকার ধরার পদ্ধতিতো আমি শিখেই গেলাম। এর পিছু পিছু না ঘুরে ,এবার নিজেই শিকার ধরে খাইগে।’ মনে মনে বুড়ো ককুর ভাবল।
সে নেকড়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হেটে চলল শিকারের খোজে।
সে পথ দিয়ে হেটে আসছিল একটা বুড়ো বেড়াল। তারও দশা হয়তো কুকুরের মত! কুকুর তাকে ডেকে বলল;
- হাউলো ,পুষি। যাচ্ছ কোথায়?’
বুড়ো বেড়াল বিষন্ন কন্ঠে বলল,
- জানিনা ,যেখানে এই রাস্তা আমাকে নিয়ে যায়,সেখানেই যাচ্ছি । যখন আমার যৌবন ছিল,চোখের পলকে ইদুর ধরতে পারতাম,তখন আমার কত কদর ছিল মালিকের কাছে। আর এখন বুড়ো হয়েছি শরিরে আগের মত শক্তি নেই বলে সে বাড়ি থেকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিল! এখন আমি পৃথিবির পথে ঠোকর খেয়ে বেড়াচ্ছি।’
- মন খারাপ না করে ,আসো আমার সাথে,ভাই। আমারও তোমার মত দশা! চল;আমি তোমাকে খাওয়াবো ’ বলল বুড়ো কুকুর।
বুড়ো বেড়াল খুশী মনেই কুকুরের প্রস্তার মেনে নিয়ে তার পিছু পিছু চলল।
কুকুর চলল সেই পথ দিয়ে যে পথ দিয়ে এর আগে নেকড়ে তাকে নিয়ে এসেছে। ওদেরও ঠিক তেমনি,বেশ কিছুদুর হেটে যাবার পরে কুকুর,দেখতে পেল কিছু দুরে তৃনভুমিতে একপাল মেষ চড়ে বেড়াচ্ছে। সে থমকে দাড়িয়ে বুড়ো বেড়ালকে ডেকে বলল,
- একটু এগিয়ে গিয়ে দেখতো ভাই পুষি,ওখানে কোন প্রানী চড়ে বেড়াচ্ছে ।’
বুড়ো বেড়াল কিছুটা পথ এগিয়ে গিয়ে ভাল করে দেখে দৌড়ে ফিরে এসে বলল’
- ওগুলো ভেড়া।’
-ধ্যাৎ! মড়ক লেগে মরে না কেন ওগুলো। সারা গা ভর্তি শুধু পশম আর পশম। এসব আজে বাজে পশু পাখি খাওয়ার থেকে না খেয়ে থাকা অনেক ভাল।’ বেশ বিরক্তি সহকারে বলল কুকুর,“চল,সামনে এগোই । দেখে,ভাল কেছু মেলে কি না?”
আরো কিছু পথ হাটার পরে তার নজরে এল এক ঝাক রাজ হাস চড়ে বেড়াচ্ছে নদীর ধারে। সে বেড়ালকে ডেকে বলল,
- পুষি,চট করে,দেখে আসতো ওগুলো কি চড়ে বেড়াচ্ছে ওখানটায়।’
বেড়াল ফের সামনে এগিয়ে গিয়ে ভাল করে দেখে দৌড়ে ফিরে এসে বলল,
- ওগুলো রাজহাস।
-ধ্যাৎ! মড়ক লেগে মরে না কেন ওগুলো। সারা গা ভর্তি শুধু পালকে। এসব আজে বাজে পশু পাখি খাওয়ার থেকে না খেয়ে থাকা অনেক ভাল।’এবারও তেমনি নেকড়ের অনুকরনে ফের বিরক্তি প্রকাশ করে বুড়ো কুকুর বলল,
- চল সামনে এগোই দেখি এর থেকে ভাল কিছু মেলে কিনা?
তারা হেটে চলল। বেশ খানিকটা হেটে গো চরন ভুমির কাছে এসে বুড়ো কুকুর দেখল এখনো চড়ে বেড়াচ্ছে সেই ঘোড়ার পাল। এবারও সে বেড়ালকে ডেকে বলল;
-দেখতো;পুষি। ওগুলো কি প্রানী ওখানে ঘাস খাচ্ছে ।
বুড়ো বেড়াল বরাবরের মত সামনে এগিয়ে ভাল করে দেখে দৌড়ে ফিরে এসে বলল,
-ওগুলো ঘোড়া।’
-যাক্! তাহলে পাওয়া গেল। ওটাকে আমরা এখন খাব।’
সে বেড়ালকে ইশারা করে কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে,ঠিক নেকড়ের মত মাটিতে কয়েকটা আচড় একে দাঁতে দাঁত ঘষল। ভাবল এমন করলে তাকেও হয়তো ভীষন হিংস্র মনে হবে ।’
এবার বুড়ো বেড়ালকে ডেকে বলল,
-দেখতো ভাই পুষি,আমার লেজ নড়ছে কিনা ?’
- নাহ্! এটা নড়ছে না।’বেড়াল ভাল করে দেখে শুনে একটু সময় নিয়ে বলল।
এবার ফের বুড়ো কুকুর তার থাবার নখড়গুলো দিয়ে আচ্ছা করে মাটিতে কয়েকটা আঁচড় একে ,দাঁতগুলো বেশ জোড়ে জোড়ে ঘষে বলল,
- এবার দেখতো। এখনো কি আমার লেজ নড়ছে না ?’
বুড়ো বেড়াল কুকুরের লেজের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে বলল’
- নড়ছে। তবে খুব ধীরে ধীরে। ভাল করে বোঝা যাচ্ছে না।’
-ভাল করে দেখে বল। শিকার করার আগে প্রস্তুতিটা ভাল করে নিতে হবে।’
বলেই,আবার সে দাঁত কিড় মিড় করে মাটিতে আচড় কাটতে লাগল।
-এবার দেখতো ,আমার চোখ জোড়া কোটর থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে কিনা?’
বুড়ো বেড়াল আরো কাছে এসে ভাল করে দেখে শুনে বলল,
- নারে ভাই ।তোমার চোখ যেমন ছিল তেমনই আছে। বেরটের হয়ে আসছেন ।’
- তুমি মিথ্যে বলছ ! তোমার অবশ্যই সত্যি কথা বলা উচিৎ।’ বুড়ো কুকুর গোস্যা হয়ে বলল।
- ঠিক আছে! তুমি যেমন বলছ ঠিক তেমন করেই তেমার চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসতে চাইছে ।’ বেড়াল নিরস কন্ঠে বলল।
কুকুর এবার খুশী হয়ে দৌড়ে গিয়ে ঘোড়ার উপর ঝাপিয়ে পড়তেই ঘোড়া তার পিছনের পা জোড়া দিয়ে তার মাথায় এমন জোড়ে এক লাথি কষাল যে,সে উড়ে গিয়ে পড়ল কয়েক ফুট দুরে। লাথির চোটে তার চোখ জোড়া কোটর থেকে ফট্ করে ঠিকরে বেরিয়ে পড়ল।
বুড়ো বেড়াল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দৌড়ে কুকুরের কাছে গিয়ে বলল ,
- ডগি,ভায়া। এবার সত্যিই তোমার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে। ঠিক তুমি যেমনটা চেয়েছিলে।
মুল রুশ ভাষা ও ইংরেজী থেকে অনুবাদঃ শেরজা তপন
• এর আগে কি এই রুপকথাটি আপনি পড়েছিলেন? উল্লেখ্য বহু বছর আগে জনাব ননী ভৌমিক ও মিসেস ননী ভৌমিক ‘রত্নের পাহাড়’ নামে রুশ রুপকথা অনুবাদ করে একটা বই বের করেছিলেন। যেটা প্রকাশ করেছিল ‘রাদুগা’ প্রকাশনী। কিন্তু মুল রুপকথাগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছিল অনুবাদটা বেশি শিশুতোষ হয়ে গেছে। লেখাগুলো আসলে শিশূ কিশোর থেকে শুরু করে বড়দেরও উপযোগী। তাই সেই অনুবাদ্গুলো ফের আমি করেছিলাম। সবার আগ্রহ থাকলে, ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হবে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ বন্ধু সৈয়দ আবুল হাসান।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৫