somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাকার নেশা!!!

২৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


র্থই সব অনর্থের মুল কিংবা টাকা হারাইলে তুমি কিছুই হারাইলে না, স্বাস্থ্য হারাইলে কিছুটা হারাইলে, চরিত্র হারাইলে সব হারালে- এই সব আপ্ত বাক্য শুনে ছোট বেলায় মনে হয়েছিল অর্থ সম্পদ জীবনের জন্য অতি তুচ্ছ বিষয়।
ওদিকে আমার বাবা বলতেন; মাটি খাটি, সোনায় আধা, বেশী দামে যে কাপড় কেনে সে-ই হোল গাধা!
তখন মনে হয়েছিল পোষাক- আশাকও জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ন নয়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওই অতি মুল্যবান বাণীগুলোর রঙ ফিকে হতে থাকল।
আমার বাবা ছিলেন ভীষন রকমের দ্বৈত চরিত্রের মানুষ।
লালনের -তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা তুমি জাননা।‘ এই বাউল গানের সাথে তার চরিত্র মিলে যায় খাপে খাপ।
বাড়িতে ছিলেন তিনি ভীষন রকমের গম্ভীর ও রাগী। তিনি বাড়িতে থাকলে আমরা সবাই ভয়ে তঠস্থ থাকতাম- কখন জানি তুচ্ছ কোন কারনে তিনি ক্ষেপে গিয়ে উত্তম মাধ্যম দেন এই আশংকায় সবাই তার থেকে নিরাপদ দুরুত্ব বজায় রাখতাম।।
ছোট বেলা থেকেই আমি বেশ শান্ত আর হিসেবি ছিলাম। আমার পরিবারে হিসেবি মানুষকে ব্যাঙ্গ করে কিপ্টে বা কৃপন বলা হোত। সেই হিসেবে আমাকেও কিপ্টে বলা হোত।
কিন্তু এই দুটো চারিত্রিক কারনে বেশ ছোট থেকেই আমাকে আমার বাবার কাছাকাছি আনার সুযোগ করে দেয়।
শিশূ সুলভ চঞ্চলতা, উড়ু উড়ু মন না থাকা ও হিসেবে বেশ পাকা থাকায় স্কুল জীবন থেকেই তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে বসার সুযোগ পেয়ে যাই।
তখন দেখেছি তার অন্য আরেক রুপ; প্রচন্ড গল্পবাজ, আড্ডাবাজ একজন সুরসিক মানুষের খোজ পেয়েছিলাম তখন।
কত শোলক, জোকস,গল্প-কাহিনী, খনার বচন তার কাছ থেকে শূনেছি তার ইয়ত্ত্বা নেই।
শৈশবের স্মরণশক্তি আমার সাথে প্রতারণা করেছে- সেসবের বেশীর ভাগই ভুলে গেছি।
আমার বাবার বড় মাছ, মিষ্টি আর টাকার প্রতি ভীষন রকমের নেশা ছিল। শাক-সব্জিকে তিনি ঘাস পাতার সাথে তুলনা করতেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বড় মাছ আর মিষ্টি খেয়েছেন এবং দারুন উপভোগ করেছেন। কন্সাস আন-কনসাস মাইন্ডে তিনি টাকা আর মিষ্টির কথা ভোলেননি এক মুহুর্তের জন্য। তবে খাবার দাবারের সখ মিটলেও- অর্থের সখ মেটাতে পারেননি কখনো।
আমরা তার সাথে দেখা করতে গেলেই তিনি প্রথমে জানতে চাইতেন মিষ্টি এনেছি কিনা?
হ্যা বললে বেশ শীশু সারল্যে হাসতেন! কোন আত্মীয় বেশ কয়েক কেজি মিষ্টি নিয়ে তার বাটিতে উপস্থিত হলে সে আত্মীয়ের উদার মানসিকতা ও ভাল মানুষত্ব নিতে তার কোন দ্বিধা থাকতনা। দ্ব্যার্থহীনভাবে তিনি তার গুনগান করতেন।
বাবার দ্বীতিয় প্রশ্ন থাকত, টাকা আছে?
আমরা প্রশ্ন করতাম, আপনি সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকেন। যা চাচ্ছেন সবই পাচ্ছেন- টাকা-পয়সার দরকার কি?
তিনি হেসে ফেলতেন। বেশ বুদ্ধিজীবীর মত বলতেন, আছেরে আছে- তোরা বুঝবি না। টাকার দরকার নাই কার? আমারে এক কোটি টাকা দে- দেখ আমি এখনি যুবক হয়ে যাব।
আমরা তার কথায় হাসতাম। অর্থ আমাদের কখনোই উদ্বৃত্ত ছিল না!
তবে তার বালিশের নীচে টাকা থাকলেই তিনি তখন অন্য মানুষ হয়ে উঠতেন। তিনি বিছানায় কষ্টে সৃষ্টে উঠে বসে কোল বালিশে হেলান দিয়ে-জোড়াসন হয়ে এক পা নাচাতেন আর মিটি মিটি হাসতেন।
কেউ তার কাছে গিয়ে একটু মুখ শুকনো করে থাকলেই- আসেত করে জিজ্ঞেস করতেন সমস্যা কি- মুখটা শুকনা কেন?
টাকা পয়সা লাগবে?
অভ্যাগত কিছু বলার আগেই তিনি সগোক্তি করে বলতেন; চিন্তা কইরনা- আমার বালিশের নীচে অনেক টাকা আছে। তোমার কত লাগবে বল?
মাস খানেক ধরে একে-ওকে ধরে এক গুচ্ছ টাকা জমিয়ে দুই দিনেই একে ওকে দিয়ে শেষ করে ফেলতেন!

বার্ধক্যজনিত রোগে শয্যাশায়ী তিনি যতক্ষন অন্যভুবনের বাসিন্দা হয়ে ঘোরের মধ্যে ডূবে থাকতেন- ততক্ষণই চরম আনন্দে থাকতেন। ভ্রমন করে বেরাতেন তার ফেলে আসা শৈশব-কৈশোর কিংবা প্রথম যৌবনে। গল্প করতেন তার মৃত বাপজান, মা কিংবা চাচা মামাদের সাথে। বেমালুম ভুলে যেতেন তার স্ত্রী আর সন্তানদের কথা।
বাস্তবে ফিরে আসলেই ফের টাকা-পয়সার দুঃশ্চিন্তা তাকে ঘিরে ধরত।
একবার জিজ্ঞেস করলাম; আচ্ছা আব্বা। আপনার কি মনে হয় –ফের আপনার জন্ম হতে পারে?
তিনি চোখ বন্ধ করেই বললেন, হতে পারে- হতে পারে।
-ধরে নেন ফের যদি আপনার জন্ম হয় আর আপনাকে অপশন দেয়া হয় আপনি কোথায় জন্ম নিতে চাইবেন?
আব্বা বেশ খানিক্ষন হাসলেন, বললেন;
-আমার খুব সখ বিশাল এক জমিদারের ঘরে জন্ম নেয়া।
-কেন?
এবার তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন,
- দ্যাখ একটা জীবন কেটে গেল শুধু টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে করতে। এই জীবনে কত সখ ছিল টাকার অভাবে পুরন করতে পারি নাই। বড় জমিদারের ঘরে জন্ম হলেতো অন্তত টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না!!!

আমার বাবাকে নিয়ে আগের পর্বে 'একটি ছাগল মরার গল্প' - Click This Link



সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×