somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবনিক- দ্বিতীয় খন্ড, প্রথম পর্ব

২৮ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এলিনাকে নিয়ে প্রথম পর্বঃ Click This Link
মি থাকি আমার এক বন্ধুর বাসায় তাঁর গলগ্রহ হয়ে- তাঁর আমন্ত্রনেই সপ্তাহ খানেকের কথা বলে প্রায় মাস হতে চলল- আমিও মস্কো ফিরে যাবার গাঁ করিনা! সেও আমাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখে।
গভীর রাত অব্দি বিয়ার, লিক্যোর কিংবা লাল মদের সাথে বাহারি সব জাকোজকা( মদের সহযোগী খাবার) চলে। কখনো আমরা দু’জন কখনো ইয়ার দোস্ত মিলে।
ফের কোন কাজ কাম নেই তাই অনেক বেলা-তক ঘুমাই। তখন সবে সকাল সাড়ে নয়টা কি দশটা বাজে- বন্ধু সুমনের ডাকে ঘুম ভাঙল, ‘এই তোর ফোন...
ফোন কানে ঠেকিয়ে ‘আ-লো’( রুশীয়রা ‘হ্যালো’ উচ্চারন করে আ-লো’র মত করে) বলতেই ও পাশ থেকে এক রমণীর লাজুক দ্বিধান্বিত কন্ঠস্বর,’সদ্রাস্তোবিইচে’-ভি সৌম্য স্তো-লে? ( এতদিন ধরে রাশিয়ান গল্প বলছি- এটুকু রুশ ভাষা ব্লগারদের বোঝার কথা) :)
-দা-ইয়া
-এতা এলিনা, ইজভিনিচে(দুঃখিত)-সকালে আপনার ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য’- এরপরে ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাসি।
এলিনা’র এই হাসিটা আমার বড় বিরক্তি ধরায়। ইতস্তত বোধ করলে,মন খারাপ হলে, দ্বিধান্বিত হলে সে এই রকম করে পস দিয়ে দিয়ে কন্ঠনালীর ভিতরে বাতাস রেখে রেখে হাসে। হাসির সাথে কেমন কান্নার মত একটা শব্দ বের হয়।
এই সাত সকালে এলিনার ফোন পেয়ে আমি চরম পুলকিত; কিন্তু তাকে সেটা বুঝতে না দিয়ে, বেশ বড় একটা হাই তুলে-ঘুম জড়ানো কন্ঠেই তাকে বললাম,
-ওহ এলিনা! আমার কি সৌভাগ্য- ঠিক আছে সমস্যা নেই বল?
-তুমি সজলের কোন খবর পেয়েছ?
- আ-হ্যা পেয়েছি ( অকারনেই মিথ্যা কথা বললাম)
ফের সেই ভাঙ্গা হাসি।
-তাই নাকি! আমাকে বললে না-যে কিছু? তোমার কথা হয়েছে ওর সাথে?
-নাহ আমার কথা হয়নি-, আমার বন্ধু উজ্জ্বল থাকে জার্মানিতে, সে বলেছে। ওর সাথে নাকি দেখা হয়েছিল।
সভ্য মেয়ে আবেগকে কন্ট্রোল করতে জানে।
- তুমি কি আজ সন্ধ্যায় আমার বাসায় চা খেতে আসতে পারবে?
আমিতো মনে মনে এটাই চাচ্ছিলাম। তাঁর কথা লুফে নিয়ে বললাম
- হ্যা হয়তো পারব। তা একাই আসব না-কি আমার বন্ধুকে নিয়ে আসব?
ফের সেই খট খটে হাসি দিয়ে বলল,
- দ্যাখো তুমি যেটা ভাল মনে কর।‘ আসছতো তা হলে?
- হ্যা আসব। দাস বিদানিয়া
- পাকা(বাই)
রতের শুরু তখন। গাছের পাতায় হলুদ আভা। সন্ধ্যে এখনো নামে বেশ দেরিতে। আমার কোন কাম কাজ নাই। সারাদিন সাজ-গোজ আর ভাব সাবেই গেল। ছ’টা বাজতেই একতোড়া ফুল আর এক বোতল রেড ওয়াইন নিয়ে হাজির হলাম ওর দরজায়।
আমাকে দেখে ঝক ঝকে একটা হাসি দিল। ফুল পেয়ে বেশ উৎফুল্ল হয়ে তৎক্ষণাৎ নিপুন হাতে কৃস্টালের ফুলদানিতে সাজিয়ে ফেলল। তবে মদের বোতল দেখে খুব খুশি হয়েছে বলে মনে হয় না। তেমনি একটা খ্যাক হাসি দিয়ে আলগা করে ধন্যবাদ দিল।
ওদের বাসায় ঢুকলে চোখ আর মনের একটা আরাম ও প্রশান্তি আসে। দারুন পরিচ্ছন্ন ও ছিমছাম করে সাজানো সবকিছু। আমি গিয়ে বসতেই সে বাটিতে করে গরম গরম রুশ প্লিমেন্নি আর চা এনে রাখল।
ভেড়ার মাংসের প্লিমেন্নির(মম’র মত এক ধরনের পিঠা) স্বাদ মুখে লেগে থাকে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কে বানিয়েছে?
উত্তর দিতে গিয়ে কপোলদ্বয়ে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ল, ‘কে আর আমি’।
তাঁর কথায় মনে হল এ বাসার সব রান্না বান্না সে-ই করে। আজো বাসা এক্কেবারে খালি! খালি বাসা শুনলেই মনের ভেতরে চিনবিন করে।
আজ তাঁর পরনে নীল রঙ্গের জিন্স আর লম্বা সাদা শার্ট। শার্টখানা যদিও বেশ ঢিলে ঢালা তবুও ওর ভরাট বক্ষের উদ্ধত্বক্বে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।শার্ট পরহিত কোন রমনীর কন্ঠার নীচে বুকের অনবৃত অংশটুকু আমাকে বরাবরই টানে-এরপরে সে যদি হয় এলিনার মত সুন্দরী তন্বী।
কথার ফাঁকে ফাঁকে আমার চোখ চলে যাচ্ছে ঘুরে ফিরে সেখানটায়। তবে সে আজ মনে হল নিজেকে নিয়ে বেশ উদাসীন। হেসে হেসে কথা বললেও হাসিতে বিষাদ মাখা।
সজলের প্রসংগ আমি ইচ্ছে করে উঠাচ্ছি না- এলিনাও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে।
আমি ভেবেছিলাম মিথ্যে কথা বলার সময়ে একটু মদির নেশা থাকলে জমত ভাল- চোখের পাতা কাঁপত না। কিন্তু সে বোতলখানা কুখনিয়া( কিচেন)তে রেখে এসেছে- সেটা দিয়ে আর আপ্যায়ন করবে বলে মনে হয় না।
এ মেয়ের নান হলে ভাল হত। এত শুচিতা-আদিখ্যেতা রুশীয় মেয়েদের মানায় নায়।
সজলের প্রসংগ এক সময় এসেই গেল কথায় কথায়- আমি বললাম যথাসম্ভব বানিয়ে গুছিয়ে। প্রতিশোধের প্রথম ধাপে আমি সফলকাম হলাম মনে হয়।
~জল! -সজল আর ফিরে আসবে না... নাগরিকত্ব পাবার জন্য কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করেছে........

-এলিনা মাথা ঝুঁকে শুনছিল... একসময় কয়েকফোঁটা অশ্রু সরাসরি চোখের পাপড়ি চুইয়ে নীল জীন্সের উরুদেশে আলতো করে ঝড়ে পড়ল। যদিও এ প্রসংগ এলে সল্প বিস্তর কান্নাকাটি হবে সেটা আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম-তবুও খানিকটা বিব্রত ও অপরাধবোধ নিয়ে উঠে দাড়িয়ে তাঁর মাথায় হাত রাখতেই সে ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল। অল্প কয়েক সেকেন্ড মাত্র – আমি চেয়েছিলাম এই সুযোগে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হতে, কিন্তু সে আমার হাতটা সরিয়ে দিয়ে ধীর পদক্ষেপে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল!
------------------------------
ফিরে আসল বেশ সময় বাদে – এলিনা এমনিতেই অতি মামুলী সাজগোজ করে, ফিরে আসল একেবারে ন্যাচারাল চেহারায়। পরিস্কার করে মুখ ধুয়ে এসেছে-এবারে স্ফইকের মত চকচক করছে তাঁর মুখ মণ্ডল। চুল আগছালো পনিটেল করে বাঁধা। মামুলি কিছু বেয়াড়া কালচে সোনালী কুন্তলরাশি কপালে এসে লুটোপুটি খাচ্ছে। সে ভ্রু প্লাগ করে না। তাঁর গাঢ় ভ্রুর অগ্রভাগে শিশিরবিন্দুর মত জল জমে আছে এখনো। চক্ষুদ্বয় খানিকটা ফোলা- আর অক্ষিগোলকে রক্তিম আভা! আমার অলক্ষ্যে বেশ কান্নাকাটি করেছে বোঝা যায়। আমি নিস্পলক নেত্রে চেয়ে আছি তাঁর দিকে।
-তবে বেশ আমোদের খবর যে ফিরে এসেছে সে শুধু নতুন রুপেই নয়- তাঁর এক হাতে ধরা দুটো গেলাস আর আরেক হাতে সে লাল মদের বোতল। আমি নিজের মনে ধেই ধেই করে দু-পাঁক নেচে নিলাম।
রিয়েল লাইফের কাহিনীর প্লটে আমি তখন এন্টি হিরো। ওর দুঃখ কষ্ট আমাকে খুব বেশী স্পর্শ করছে না। আমি শুধু কল্পনায় তখন ওর শরিরের গলি অলিন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
শশা টম্যাটো আর কালো রুটির মত সামান্য কিছু জাকোজকা সহযোগে আমরা দুজনে মিলে আধ ঘন্টাতেই পুরো বোতলটা সাবাড় করে দিলাম। অবশ্য রেড ওয়াইন গেলাস ভরে খেতে কারো আপত্তি নেই। নিন্ম অ্যালকোহল যুক্ত মদ-দু এক বোতলে জম্পেশ নেশা ধরে না!
মদ্যপান শেষে এলিনা আরো বেশী গম্ভীর হয়ে গেল –নিজেকে নিজের ভেতরে আরো বেশী গুটিয়ে নিল। থম ধরা পরিবেশটা নর্মাল করার জন্য আমি তাকে নাচার প্রস্তাব দিলে সে অতি ভদ্রভাবে বিনয়ভরে প্রত্যাখ্যান করল।
অবশ্য আমি ফিরে আসার মূহুর্তে –রাগ করে চলে যাচ্ছে ভেবে, সেই ভাঙ্গা হাসি দিয়ে বলল, আসো না হয় নাচি।
রাগের সাথে আমার আত্মভিমান ও হল খানিকটা।
-না আজ থাক অন্য কোনদিন হবে বলে চলে আসলাম।

পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:৩৬
২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×