আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
সেদিনের পরে বেশ কিছুদিন আর যোগাযোগ নেই। মনের মদ্যে আমার আঁকুপাঁকু করছে – তবু নিজেকে কঠিন অনুশাসনে রেখেছি।
দেখি সে যোগাযোগ করে কিনা? না হলে না হয় শেষ্মেষ আমিই কোন তালবাহানা খুঁজে তাকে ফোন দিব।
খুব বেশীদিন অপেক্ষা করতে হলনা। ধৈর্যচ্যুতিটা আমারই হল। এক দুপুরে ফোন দিলাম তাকে। ফোনে আমার কন্ঠ শুনেই সে গাঁ জ্বালানো হাসি!!
- আ-ত্বি(ও তুমি)- কেমন চলছে?
- এই তো, অনেকদিন যোগাযোগ নেই। ভাব্লাম কোন সমস্যা কি না সে জন্যই ফোন দিলাম।
- ও তা সেদিন ওভাবে চলে গেলে কেন(পাচিমু)?
- পাকিচিনু ( কেননা- এই শব্দটা পাচিমু’র প্রতুউত্তরে রুশীয়রা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্বক হিসেবে ব্যাবহার করে)
এবার সে হো হো করে হেসে উঠল!
- তুমি এই শব্দটা কোথায় শিখেছ?
- কেন আমার রুশ বন্ধুদের কাছে!
- শব্দের উচ্চারনটা ভুল- যারা শিখিয়েছে তারা হয় রুশ ভাষা ভাল করে জানেনা না হয় তোমাকে ইচ্ছে করে ভুল শিখিয়েছে।
এই রে মাষ্টারনি যে মাষ্টারি কড়া শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু বিষয়টা আমি পজিটিভলি নিয়ে কথার মোড় ঘোরালাম
- বুঝলাম। সুযোগ বুঝে তোমার কাছে শুদ্ধ রুশ ভাষা শিখে নেব। শেখাবে নাকি?
- আ-হা তাহলেতো আমার কিন্ডারগার্ডেনে তোমাকে ভর্তি হতে হবে।
- হব, কিন্তু তোমার বাসায় ক্লাস করব। আমি একজনই তোমার ছাত্র হব- আর তুমি আমার একমাত্র শিক্ষক!
কথাগুলো বলে একটু বিব্রত আমি- তবুও উত্তরের অপেক্ষা করছি। কিন্তু এলিনা একদম চুপ মেরে গেল। পাক্কা এক মিনিট দু পক্ষেরই নীরবতা, তারপরে বেশ নিচু কন্ঠে কম্পিত স্বরে বলল,
- সিভোতনিয়া তি প্রিজ্বায়েস কামনিয়া( তুমি কি আজকে আমার এখানে আসবে)?
আহঃ ধরে প্রাণ খুঁজে পেলাম!
- কখন?
- যখন সময় হয়-
- ঠিক আছে – ঠিক আছে আসব আজকে।
আবেগের যোশে অতি উৎফুল্ল হয়ে কথাগুলো হড়বড়িয়ে বলতে বলতেই ওপাশে ক্যাডেলে রিসিভার রেখে দেবার শব্দ।
দুপুর গড়াতেই ফোন দিলাম ওকে। আসব নাকি এখন?
- ও হো, আমার জরুরি একটা কাজে বাইরে যেতে হবে এখন। তুমি এক কাজ কর ছয়টার দিকে ‘সেভচেনকো পার্কে’ চলে এসো।
কত কিছুই না ভেবেছিলাম। এক ঘটি জলে মূহুর্তেই আগুন নিভু নিভু। গলার স্বর ভেঙ্গে গেল। তবুও বেশ সাবলীল কন্ঠে বললাম।
- হ্যা হ্যা আসবখন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রুশ দেশে প্রকৃতি এখন তাঁর রূপ যেন মেলে ধরেছে। গাছের পাতায় নানা রঙের ছোপ, সবুজের পাশাপাশি গাঢ় হলুদ, লালচে ও মেরুন রঙের মিশেল, বিকেলের মোলায়েম রোদ যেন সে পাতায় পিছলে গিয়ে যেন পুরো প্রকৃতিতে সোনার আবির ছড়িয়ে দিয়েছে। সেই আবিরের রঙ্গে রাঙ্গানো নিজের কালচে বাদামী ত্বকেও যেন চুমু খেতে ইচ্ছে করে।
শেষ বিকেলের এই মোহনীয় আলোয় স্বর্গ-দেবীসমা রুপবতী এলিনাকে দেখে আমি বিমোহিত হলাম! এ রূপ শরিরে আগুন ধরায় না~ অস্থির হৃদয়ে শান্তির পরশ বোলায়। যেকোন সামর্থবান পুরুষকে কামার্ত করবে ঠিক কিন্তু সে অসংযত হবে না, হিংস্রতা-নিঃস্বংসতা ভুলে মুদিত আখিতে দু-হাত ছড়িয়ে নিজেকে বিলিয়ে দেবার বাসনায় উন্মুখ হবে।
কাছে এসেই এলিনা তাঁর ঝকঝকে দাতের পাটি বের করে বেশ একটা প্রশ্রয় মিশ্রিত আদরমাখা হাসি দিয়ে বলল,
-স্যরি একটু দেরি হল বলে- স্কুলে কাজ ছিল। এই সুযোগে ভাবলাম তোমার সাথে আজকে একটু পার্কে ঘুরি !’ বলেই পাশে দাড়িয়ে আমার কনুই স্পর্শ করে গ্রীবা বাকিয়ে বেশ খানিকটা আহ্বালাদের স্বরে শুধাল- রাগ করনি-তো?
আমার মনে ছিল অন্য বাসনা পার্কে দেখা করতে হবে বলে মনঃক্ষুন্ন হলেও ওর এই মোহ্নীয় রূপ দেখেই মনটা ফের ফুরফুরে হয়ে গেছে। তাঁর এই প্রশ্নের উত্তরে কপট গাম্ভীর্য এনে একটুখানি রাগের ভান করে বললাম, বেশ অনেক্ষন দাঁড়িয়ে আছি। ভেবেছিলাম তুমি আসবে না!
উত্তকে কি এক হৃদয় তোলপাড় করা আদুরে ভঙ্গীতে বলল,
-আহালে- স্যরি সৌম্মা ( সৌম্যর বিকৃত উচ্চারন) তারপর একটু নিচু স্বরে সগোক্তির মত করে বলল,- আর এমনটা হবে না।
- কি বললে?
ফের তাঁর ট্রিপিক্যাল সেই ভাঙ্গা হাসি দিয়ে বলল,
- নাহ কিছু না।
কেন যেন তাঁর সবকিছু আজ বড্ড ভাল লাগছে – তাঁর এই হাসিটাও বিরক্তি ধরাচ্ছে না। আজ তাঁর পরনে, লম্বা ঝুলের স্কার্ট আর হালকা রঙের ফতুয়া। গ্রীস্মের এই মাতাল সময়ে এই বয়সী রুশ মেয়েরা সাধাসিদে পোষাক পরে না। তবুও এলিনাকে দারুন মানিয়ে গেছে এই পোষাক। সাজ গোজ বলতে মাথায় একটা ফুলেল ব্যান্ড আর ঠোটে হালকা করে লাগানো গোলাপি লিপিস্টিক যেটা ঠোটের রঙের সাথে এমন করে মানিয়ে গেছে যে, আছে কি নাই বোঝা মুশকিল!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার হাত ধরে( রূশীয় ভদ্রতা- সদ্য পরিচিত যুবক-যুবতীরা এমনি করে পার্কে বা রাস্তায় ঘুরে বাড়ালেই যে তাদের মধ্যে প্রেম বা ভাব হয়ে গেছে সেটা ভাববার কারন নেই) অতি ধীর পদক্ষেপে পার্কে ঘুরে বেড়াল সে খানিক্ষন। কনুইয়ে অতি কাল ভদ্রে - ভরাট স্তনের সুক্ষ স্পর্শে অনুভব করলাম তার হৃদয়ের উষ্ণতা। আমি অতি ভদ্র স্বজ্জন সেজে মেকি মুখোশ পরে তাঁর পায়ে পায়ে পা মিলিয়ে চললাম।
এলিনা কথা বলে কম- শোনে বেশী, কথার ফাঁকে ফাঁকে অতি ভদ্রভাবে আমার ভাষাগত ভুল ধরিয়ে দেয়। বলার সময়ে উপযুক্ত শব্দ না পেলে সে মূহুর্তে ধরে ফেলে। একটু হাসি দিয়ে সঠিক শব্দটা সংযোজন করে বলে এই বলতে চেয়েছ?
আমি ভীষন অবাক হলাম আমাকে তাঁর বোঝার ক্ষমতা দেখে।
বেশ খানি হেটে পার্কের বেঞ্চিতে বসে স্থানীয় কাঠখোট্টা "কোণ' আইসক্রিম খেলাম। পাশাপাশি বসে আছি বলে তাঁর শরিরের দিকে চোখ দেখবার সুযোগ নেই। আমার চোখে যে অনন্ত খিদে!
৮টা নাগাদ সন্ধ্যে নেমে এলে দু’জনেই যেন চরম অনিচ্ছায় ধীরে ধীরে পার্ক থেকে বেরিয়ে এলাম! শেষ দিকে ঘনিষ্ঠতা আরেকটু বেড়েছিল বৈকি! সুযোগ বুঝে তাঁর অতি নরম –মোলায়েম স্তনপ্বার্শ কনুই দিয়ে ছল ছুতোয় একটু ছুঁয়ে দিলাম।
এলিনা বড় স্পর্শকাতর তরুণী। এ যাবত কোন পুরূষকে হয়তো তেমন করে তাকে কাছে ঘেষতে দেয়নি। তথাকতিথ কুমারিত্ব এখনো অতি সযতনে ধরে রেখেছে বলেই আমার ধারনা- যা রুশ সমাজে একেবারেই বেমানান। আমার সামান্য কনুইয়ের স্পর্শে সে কেঁপে কেঁপে উঠছিল প্রতিবার। আবতোবুশের( বিদ্যুতচালিত অটো বাস) আলোতে তাঁর চোখের কোনে আধ শুকনো জল চিক চিক করছে। জিজ্ঞেস করতেই লজ্জা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল অন্য দিকে।
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
এলিনাকে নিয়ে প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:১৮