ডক্টর এলিস সিলভার যে সতেরোটি কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন যার মাধ্যমে আমরা ভাবতে বাধ্য হই যে, আমরা এই পৃথিবীতে বহিরাগত তন্মধ্যে ৫,৬ নম্বর নিয়ে আজ আলোচনা হবে (সম্ভবত; সর্বাধিক বিতর্কিত অংশ);
৫.মানব-বিজাতীয় সংকরায়ন।
এটি একটি সুপরিচিত সত্য যে, মানুষের ডিএনএর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মিলে যায় পৃথিবীতে পাওয়া অন্যান্য উদ্ভিদ এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সাথে (এবং সম্ভবত সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে অন্য যে কোন প্রানের সাথে এই ডি এন এ’র মিল খুঁজে পাওয়া যাবে)।
বিজ্ঞানভিত্তিক রিপোর্ট আছে যে, আমাদের ডি এন এ ৫৫ শতাংশ কলার সাথে, মাছির সাথে ৬০ শতাংশ এবং শিম্পাঞ্জির সাথে ৯৮ শতাংশ মিলে যায়।
যাইহোক, হতে পারে এই পরিসংখ্যান কিছুটা বিভ্রান্তিকর! কারণ প্রশ্ন থাকতে পারে এটা ঠিক কিসের উপর নির্ভর করে আপনি তুলনা করছেন? এর মধ্যে কোন জিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- যা মানুষ ও শিম্পাঞ্জির মধ্যে ব্যাপক ব্যাবধান গড়ে দেয়?
আসলে সর্বশেষ গবেষণার ফল, যা জিনের মধ্যে সন্নিবেশ এবং মুছে ফেলার ক্রম হিসেব নেয়; শিম্পদের সাথে ভাগ করে নেওয়া ডিএনএর পরিমাণ ৯৮.৫ থেকে কমিয়ে সংশোধন করে ৯৫ শতাংশ (এবং শূকরের ক্ষেত্রে ৯৬ থেকে ৯১ শতাংশ) করা হয়েছে।
হোমোসেপিয়েন্স ও শিম্পদের মধ্যে আরেকটি মূল পার্থক্য রয়েছে যা খুব কমই উল্লেখ করা হয়: শিম্পদের ২৪ জোড়া ক্রোমোজোম আছে -যেখানে আমাদের আছে মাত্র ২৩টি। (যদি মানুষ আরো একখানা ক্রোমোজোম বেশী নিয়ে জন্মায় তবে ২৪ তম ক্রোমোজোম ডাউন’স সিনড্রোম সৃষ্টি করে।)
শিম্প’স এবং মানুষের মধ্যে অঙ্গ প্রতিস্থাপন (এবং শূকর এবং মানুষ) একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনের ভুল স্থানান্তরিত হবার কারণে ব্যর্থ হয়। এটা কোন ব্যাপার না কিভাবে বা কার সাথে আমাদের সবচেয়ে বেশী জেনেটিক মিল পাওয়া গেল। যদি অতি গুরুত্বপুর্ন জিনগুলির মধ্যে একটি মাত্র অনুপস্থিত থাকে তবে এটি কাজ করবে না।
হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট এবং অন্যান্য ডিএনএ প্রকল্পে কাজ করছেন এমন বিজ্ঞানীরা মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত ২২৩ টি জিন আবিষ্কার করেছেন যা অন্য কারো মধ্যে দেখা যায় না!!
পৃথিবীর কোন প্রজাতির মধ্যে যদি এই ডিএনএ গুলো বিদ্যমান না থাকে তবে কোথা থেকে এসেছে? কিছু জিন-তত্ত্ববিদ বিশ্বাস করেন যে তারা নেটিভ আর্থ হোমিনিডদের (অর্থাৎ হোমো ) ডিএনএ-তে বিভক্ত ছিল(ইরেক্টাস) সরাসরি ভিনগ্রহবাসীদের কাছ থেকে।
(যদিও এলিয়েনরা স্ব-ইচ্ছায় তাদের নিজস্ব ডিএনএ শেয়ার করেছিল নাকি কোন এলিয়েরা অন্য কোন এলিয়েন প্রজাতি থেকে নিয়েছিল তা অজানা।) এর ফলে হোমো ইরেক্টাস থেকে হোমো সেপিয়েন্স-এ (আধুনিক মানুষ) তাৎক্ষণিক লাফ দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে বড় ধরনের লিঙ্ক অনুপস্থিত।
(আমি ফিরে আসব পরবর্তী আলোচনায় ফের অনুপস্থিত লিঙ্ক ‘মিসিং লিঙ্ক’ খুঁজে না পাওয়ার জন্য। অন্যান্য আদি পৃথিবীর প্রজাতির সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ জেনেটিক লিঙ্ক ব্যাখ্যা করব। এটা এছাড়াও এই গ্রহে জীবনধারণের জন্য আমাদের কত কঠিন সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে সে বিষয়েও আমরা আলোচনা করব।)
আমরা অনুমান করতে পারি, উদাহরণস্বরূপ, এলিয়েনদের মাথা বড় ও বড় মস্তিষ্ক এবং আমরা অতিরিক্ত ২২৩ টি জিন তাদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। কিন্তু তাদের সম্ভবত বিশেষ বৃহৎ শারীরিক কাঠামো আছে (সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য-ভাবে একটি প্রশস্ত পেলভিক বেস) যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাইনি। এর মানে হল যে, এলিয়েনদের তাদের বড় মাথার শিশুদের জন্ম দেওয়ার জন্য কোন সমস্যা হয় না। আধুনিক মানুষের প্রচুর নারী আছে যাদের ‘পেলভিক বেস’ খুব সংকীর্ণ হওয়ায় সন্তান প্রসব বেশ কঠিনতর।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ *শিল্পীর চোখে ‘ নিয়েনডার্থাল’*
এছাড়াও বিষয়টা সংকরায়ন প্রক্রিয়া দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। আমরা জানি যে প্রথম দিকে মানুষের( নিয়েনথার্ডাল) চোখ রক্ষা করার জন্য ভারী ভ্রু ছিল। যখন অতিরিক্ত ২২৩টি জিন ছিল যোগ করা হয়েছে, আমাদের মাথার খুলির আকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে, আমাদের ক্রেনিয়ামগুলি আরও বড় হয়েছে এবং আমাদের ভারী ভ্রু অদৃশ্য হয়ে গেছে। স্পষ্টতই এলিয়েনদের ভারি ও উঁচু ভ্রু নেই – কারণ তাদের পৃথিবীতে তাদের বসবাসের প্রয়োজন নেই। দুর্ভাগ্যবশত পৃথিবীতে আমাদের সেসবের খুব প্রয়োজন ছিল- এসব ছাড়া আমারা বড় সমস্যায় আছি। সুতরাং, যদি এই তত্ত্ব সত্য হয়, আমরা সম্ভবত পৃথিবীর স্থানীয়, কিন্তু এলিয়েনদের দ্বারা সঙ্করায়িত(হাইব্রিড প্রজাতি) তবে দুঃখজনক যে এর ফলে আমরা দারুণ বুদ্ধিমান হলেও পৃথিবীতে নিশ্চিন্তে বসবাসের উপযোগী কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমরা হারিয়েছি।
***********************************
৬. জীবাশ্ম রেকর্ড - একটি অনুপস্থিত লিঙ্কের অভাব!
ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে, বানর ও আমরা একই বংশধর হিসাবে বিবর্তনীয় শাখা। তবুও জীবাশ্ম রেকর্ডের মধ্যে লিঙ্ক দেখাচ্ছে প্রথম দিকের বনমানুষ এবং আধুনিক মানুষের মাঝের লিঙ্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
(অনুপস্থিত লিঙ্ক ; আধুনিক মানুষ এবং তাদের নৃতাত্ত্বিক পূর্বপুরুষদের মধ্যে বিবর্তনীয় লাইনের অর্ধেক পথ অনুমানমূলক বিলুপ্ত প্রাণী। ১৯ শতকের শেষার্ধে, চার্লস ডারউইনের কাজের একটি সাধারণ ভুল ব্যাখ্যা ছিল যে মানুষ ‘রেখাগত-ভাবে’ বিদ্যমান প্রজাতির বনমানুষ থেকে এসেছে। এই তত্ত্বটি গ্রহণ করা এবং এটিকে শ্রেণীবিন্যাসের সাথে সমন্বয় করা ‘গ্রেট চেইন অফ বিয়িং’ এর কিছু জীবাশ্ম ‘এপ-ম্যান বা ম্যান-এপ’ চেইনটি সম্পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছিল।
আজ এটা স্বীকৃত, বর্তমানে সিংহভাগ নৃতাত্ত্বিকেরা মনে করেন যে, বনমানুষের (যেমন, শিম্পাঞ্জি) সাথে আধুনিক মানুষের সম্পর্ক সরাসরি বংশধরের পরিবর্তে সাধারণ পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে। এই পূর্বপুরুষদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি, তবে এপ-হোমিনিডের বিচ্যুতি ৬ থেকে ১০ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে থাকতে পারে।)
২০ শতকের গোড়ার দিকে এই অনুপস্থিত লিঙ্কটি খুঁজে পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বিজ্ঞানীরা এতটাই মরিয়া হয়ে ওঠেন যে একটি বড় ধরনের প্রতারণা জাল পাতা হয়েছিল; পিল্টডাউন ম্যান (১৯১২ সালে ‘আবিষ্কৃত’) জীবাশ্মকে ভাবা হোত আদিমতম বনমানুষ। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আসল বলে বিশ্বাস করা হোত। আসলে এটি মধ্যযুগীয় কোন মানুষের মাথার খুলি, একটি ওরাংওটাং-এর চোয়ালের হাড় এবং একটি শিম্পাঞ্জীর দাঁতের জীবাশ্ম। এগুলোকে অ্যাসিডে ভিজিয়ে ও লোহার মরিচা ব্যাবহার করে এটাকে অনেক পুরাতন রূপ দেয়া হয়েছিল।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~*পিল্টডাউন ম্যান এর জীবাশ্ম*
(পিল্টডাউন ম্যান ছিল একটি প্যালিওনথ্রোপোলজিক্যাল প্রতারণা যেখানে হাড়ের টুকরোগুলিকে আদি মানুষের জীবাশ্মাবশেষ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। যদিও শুরু থেকেই কার্যত এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ ছিল, তবুও বহু বছর ধরে জীবাশ্মটিকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাপক গৃহীত হয়েছিল। ১৯৫৩ সালে নিশ্চিতভাবে এটা প্রতারণা বলে প্রমাণিত হয়েছিল। ২০১৬ সালে একটি ব্যাপক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে অপেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিক চার্লস ডসন এর জন্য দায়ী ছিলেন।
১৯২২ সালে, চার্লস ডসন দাবি করেছিলেন যে তিনি বনমানুষ এবং মানুষের মধ্যে ‘অনুপস্থিত লিঙ্ক’ আবিষ্কার করেছেন।
১৯১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ডসন ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের জিওলজির রক্ষক আর্থার স্মিথ উডওয়ার্ডের সাথে যোগাযোগ করেন, তিনি জানান যে তিনি পূর্ব সাসেক্সের পিল্টডাউনের কাছে নুড়ি পাথর বিছানো এক স্থানে প্লাইস্টোসিন যুগের একটি মানুষের মত খুলির একটি অংশ পেয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে; সেই গ্রীষ্মে, ডসন এবং স্মিথ উডওয়ার্ড সাইটে আরও হাড় এবং নিদর্শন আবিষ্কার করেছিলেন, যা একই ব্যক্তির ছিল বলে তারা মনে করে। সেই আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি চোয়ালের হাড়, আরও মাথার খুলির টুকরো, এক সারি দাঁত এবং আদিম কিছু সরঞ্জাম রয়েছে।
স্মিথ উডওয়ার্ড মাথার খুলির টুকরোগুলোকে পুনর্গঠন করেছিলেন এবং অনুমান করেছিলেন যে তারা ৫ লাখ বছর আগে থেকে মানব পূর্বপুরুষের অন্তর্গত। একটি ভূতাত্ত্বিক সোসাইটির সভায় সেই আবিষ্কারের ঘোষণা করা হয়েছিল এবং এটার ল্যাটিন নাম দেওয়া হয়েছিল Eoanthropus dawsoni ("Dawson's dawn-man")। ১৯৫৩ সালে এটি একটি জালিয়াতি হিসাবে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহজনক এলোমেলোভাবে জোড়ার বিষয় নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ছিল।)*
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ * ‘জাভা ম্যনে’র খুলি, হাড় ও দাঁতের দুই পার্শ্বের ছবি।*
( জাভা ম্যান; জাভা ম্যান বা পিথিক্যানথ্রোপাস ইরেক্টাস ছিল একটি বানর মানুষ। জাভাদ্বীপের একটি নদীর বালিতে এর মাথার খুলির উপরের অংশ, দাঁত এবং উরুর হাড় পাওয়া গেছে। গবেষণার পরে, এটি পাওয়া গেছে যে এই হাড়গুলি একটি হোমিনিডের ছিল যা সোজা হয়ে হাঁটতে পারে। তাই একে বলা হতো 'পিথেক্যানথ্রপাস ইরেক্টাস হিউম্যান'। আনুমানিক ৭ লাখ এবং ২০ লাখ বছরের মধ্যে পুরানো, এটি আবিষ্কারের সময়, সবচেয়ে প্রাচীন হোমিনিড ফসিল ছিল, এবং এটি হোমো ইরেক্টাস টাইপ নমুনা হিসাবে রয়ে গেছে।
ইউজিন ডুবোইসের নেতৃত্বে, খননকারী দল পূর্ব জাভাতে সোলো নদীর তীরে ত্রিনিল-এ একটি দাঁত, একটি মাথার খুলি এবং একটি উরুর হাড়ের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছিলেন। তারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে জীবাশ্মগুলি বনমানুষ এবং মানুষের মধ্যে ‘অনুপস্থিত লিঙ্ক’ প্রতিনিধিত্ব করে। ডুবাইস- প্রজাতিটিকে বৈজ্ঞানিক নাম ‘অ্যানথ্রোপোপিথেকাস ইরেক্টাস’ দেন, পরে এটির নামকরণ করেন ‘পিথেক্যানথ্রপাস ইরেক্টাস’। জীবাশ্মটি অনেক বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। ১৮৯১ সালের দশ বছরেরও কম সময়ে, ডুবাইসের সন্ধানের উপর প্রায় আশিটি বই বা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।
ডুবোইসে’র যুক্তি সত্ত্বেও, খুব কম লোকই স্বীকার করেছে যে জাভা ম্যান বনমানুষ এবং মানুষের মাঝের একটা রূপ। কেউ কেউ এই জীবাশ্মকে বনমানুষ হিসেবে এবং অন্যরা আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে বাতিল করেছেন। অনেক বিজ্ঞানী জাভা ম্যানকে বিবর্তনের একটি আদিম পার্শ্ব শাখা হিসেবে বিবেচনা করেছেন যা আধুনিক মানুষের সাথে একেবারেই সম্পর্কিত নয়। এটি ‘নিখোঁজ লিঙ্ক’ ছিল তা প্রমাণ করার জন্য ডুবোইস অনেক ভুল ব্যাখ্যা করেছিলেন)*
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সহজ সত্য হল যে, অনুপস্থিত লিঙ্কটি কোথাও নেই।
যেহেতু ভিনগ্রহের প্রাণী, ইউএফও এবং ভূতের অস্তিত্বের প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি এবং শিম্পাঞ্জি ও আধুনিক মানুষের ডি এন এর বেশ মিল আছে - সেকারণেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এলিয়েনসদের অস্তিত্ব অস্বীকার করে।
বনমানুষের সাথে আমাদের একমাত্র প্রমাণিত সংযোগটি হ'ল পৃথিবীতে বিদ্যমান যে কোন প্রাণীদের তুলনায় আমাদের উল্লেখযোগ্য-সংখ্যক ডিএনএর তাদের সাথে মিলে যায়। কিন্তু মহাবিশ্বের অন্য প্রাণীদের অস্তিত্ব আমাদের অজানা- হয়তোবা বিশাল মহাবিশ্বের আরো লক্ষ লক্ষ প্রাণীদের সাথে আমাদের ডি এন এর আরো বেশী মিল পাওয়া যাবে।
আমি উপরে উল্লিখিত হিসাবে, কেন লিঙ্কটি মিসিং বা পাওয়া যাচ্ছে না তার একটা যোগ্য উত্তর হতে পারে যে, এলিয়েনরা হয়তো প্রাইমেটদের(প্রথমদিককার মানুষ) মধ্যে থেকে অতি সাবধানে বাছাই করা জিনগুলির একটি সিরিজ সন্নিবেশিত করেছে বা তাদের ডিএনএর নির্দিষ্ট অংশ প্রতিস্থাপিত হয়েছে। যার ফলে তাৎক্ষণিক যে বিবর্তন ঘটছে সেটা প্রকৃতিতে এত দ্রুত ঘটা অসম্ভব। প্রাইমেট থেকে সরাসরি আধুনিক মানুষ এসেছে। সেকারনেই এর মাঝের লিঙ্কগুলো অনুপস্থিত।
আরেকটি কারণ হতে পারে; সম্ভবত আদি গ্রহ থেকে আমাদের এখানে আনা হয়েছিল সম্পূর্ণরূপে বিকশিত আধুনিক মানুষ হিসাবে।
ধারনা করা পূর্বপুরুষদের সাথে এত নিকটবর্তী ডিএনএ সংযোগ হতে পারে সম্পূর্ণভাবে কাকতালীয়।পৃথিবীর আদিবাসী মানুষ দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথে হোমিনিডগুলি মারা গিয়েছিল (বা সম্ভবত বিলুপ্তির পথে চালিত হয়েছিল)। মানুষই একমাত্র প্রজাতি যারা এখানকার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। পৃথিবী আমরা বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হল; আমাদের উচ্চতর মস্তিষ্কের শক্তি ব্যবহার। কিন্তু এভাবে বেঁচে থাকা বেঁচে থাকার মতো নয় – আমরা এই পৃথিবীকে সত্যিই উপভোগ করছি বলা যায় না।
হোমোসেপিয়েনসদের এই নতুন গ্রহের পরিবেশের মানিয়ে নেয়া যে কত কষ্টকর হয়েছে বা এখনো হচ্ছে; তা যদি আমাদের অন্যান্য (নেটিভ) প্রজাতির সাথে তুলনা করা হয় তবে তার সপক্ষে শত শত উদাহরণ তালিকাভুক্ত করা সম্ভব ।
শুরুতে, এখানে প্রাকৃতিক-ভাবে বেড়ে ওঠা খাবার আমরা পছন্দ করি না। আমাদের স্বাদ পরিবর্তন করতে হয়েছে- এবং প্রতিনিয়ত আমরা স্বাদ পরিবর্তন করছি। চাষ-কৃত প্রজাতি এবং বন্য প্রজাতি আকার, রঙ, স্বাদ বা টেক্সচারে একে অপরের সাথে সাদৃশ্য অল্পই মেলে । এবং তারপরেও আমরা এটাকে বহু ধরনের মশলা তেল সুগন্ধি রঙ মেখে রান্না করে খাচ্ছি কেননা পৃথিবীর প্রকৃ্তির পরিচর্যায় আমিষ জাতীয় খাবার আমরা সরাসরি খেতে পছন্দ করি না। * তবে কিছু ফল ও সবজী মানুষ প্রকৃতি থেকে সরাসরি খেতে পছন্দ করে। যদিও সংকর প্রজনন বা হাইব্রিডেশনের মাধ্যমে এসবের স্বাদ আকার রঙ সহ অনেক কিছুই পালটে দেয়া হয়েছে।
(আমাদের বাড়ির গ্রহের খাবার অবশ্যই অনেক সুস্বাদু ছিল - যদিও সম্ভবত পরিমাণে কম এবং কম পুষ্টিকর।)
অনেক স্থানীয় প্রাণী পৃথিবীতে ভূমিকম্প, সুনামি, হারিকেন ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগে থেকেই অনুধাবন করতে সক্ষম - আমরা যদি এই প্রাণীদের পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েই থাকি তাহলে আমাদের সত্যিই এইগুলি উপলব্ধি করতে সক্ষম হওয়া উচিত ছিল।* এবিষয়ে পরবর্তীতে বিষদ আলোচনা করা হবে।
প্রাকৃতিক এই দুর্যোগগুলো পৃথিবীর প্রথম প্রাণীর আবির্ভাবের পূর্ব থেকেই ছিল। পৃথিবীতে বিবর্তিত প্রাণীগুলো এসব দুর্যোগ প্রকৃতিগত-ভাবে মোকাবিলা করেছে মধ্যেই নিজেদের মানিয়ে তারপরও আমাদের কোনো সচেতনতা নেই আসন্ন বিপদ আমরা এটি সম্পর্কে জানতে পারি যখন এটি আমাদের আঘাত করে। কিন্তু কোথায় আছে অন্য সব প্রাণী - কুকুর, গবাদি পশু, পাখি, এমনকি ব্যাঙ পর্যন্ত? তারা এটা জানত আসছে এবং তারা নিরাপদে পালিয়ে গেছে - এমনটা প্রায়শই ঘটনার কয়েক দিন আগেই ঘটেছে। যদি আমরা সত্যিই এই গ্রহে বিকশিত হয়ে থাকি তবে, খুব ভুল কিছু আছে এবং এখানে অবিশ্বাস্য-ভাবে অনেককিছু উদ্ভট রকম চলছে। (এটাও মনে হয়, আমাদের বাড়ির গ্রহে ভূমিকম্প, সুনামি বা হারিকেন নেই।)
(বিস্তারিত জানতে পড়ুন রেফারেন্স অধ্যায়#১ Ref#How animals predict earthquakes BBC Nature~ লেখার শেষে এই নিবন্ধটা দেয়া হবে)
আমাদের দিক-নির্দেশের অনুভূতি অভাব রয়েছে; সলমন ফিস শত শত মাইল দূর থেকে তাদের জন্মভূমিতে ফিরে ডিম ছাড়ার জন্য।
আপনি যেখানেই তাদের বসান না কেন সেখান থেকে কবুতররা তাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথ খুঁজে পেতে পারে (*একসময় নির্ভুল ঠিকানায় চিঠির আদান-প্রদান হোত কবুতরের মাধ্যমে) এমনকি যদি আপনি তাদের ছেড়ে দেওয়ার আগে পুরো যাত্রায় সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে অন্য দেশে নিয়ে যান- তবুও। পরিযায়ী পাখি উড়ে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ফের ছয় মাস পরে ঠিক একই বাসাগুলিতে ফিরে আসে।
বিড়াল ও কুকুর তাদের পুরানো বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পথ খুঁজে পেতে পারে এমনকি যদি তাদের মালিক চলে যায় শত মাইল দূরে কোন একটি নতুন ঠিকানায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাসে করে যায় কেউবা ট্রেনে - এবং তারা জানে কোনটি ধরতে হবে এবং কোথায় উঠতে হবে। অন্য দিকে, আমরা সবসময় পথ হারিয়ে ফেলছি বা ভুল পথে যাচ্ছি. আমি একসময় যে অফিসে কাজ করতাম বা যেই স্কুলে পড়েছি সেই পথ অনেকসময় আমরা সম্পূর্ণ ভুলে যাই। আমি একবার, মাত্র কয়েক ব্লক দূরে একটি ঠিকানা থেকে আমার বাড়ির পথ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। এ ব্যাপারে আমাদের স্মরণশক্তি বা ঘ্রাণশক্তি এতটাই খারাপ যে, আমাদের পথ খুঁজে পেতে আমাদের মানচিত্র এবং জিপিএস আবিষ্কার করতে হয়েছে (তারপরেও আমরা পথ হারিয়ে নদীতে গাড়ি চালাই।)
পৃথিবীর বেশিরভাগ স্থানীয় প্রজাতি গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে তাদের পথ খুঁজে পায়। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, আমাদের মধ্যেও এমন কোষ রয়েছে মস্তিষ্ক যা চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সনাক্ত করতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রটি আমাদের ব্যবহারের জন্য খুব দুর্বল বলে মনে হচ্ছে। আমাদের হোম গ্রহ সম্ভবত অনেক শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র আছে।
অন্যদিকে , প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি এটা প্রমাণ করার ব্যাপার রয়েছে, কেন আমরা ভাষা বিকাশ করেছি? ভাষা হল; কথা বলার ক্ষমতা যাতে আমরা একে অপরের দিকনির্দেশনা দিতে পারি - প্রধানত খাদ্য খুঁজে পেতে এবং শিকার ধরার সহযোগিতা করার জন্য।
এটা খুবই সম্ভব যে, আমরা আমাদের হোম গ্রহে ভাষা তৈরি করেছি, আমাদের পৃথিবীতে আনার অনেক আগে। এমনকি আমাদের পৃথিবীতে পাঠানোর সময়ে আমাদের ভ্রুনের জেনেটিক মেমোরিতে ভাষা বিকাশের ক্ষমতা আমাদের মধ্যে এনকোড করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে সহজে ব্যাখ্যা করতে যায়; কেন আমরা পৃথিবীতে ভাষা এত দ্রুত বিকাশ করেছি।
(*অনুবাদকঃ এখানে একটা প্রশ্ন রাখা যায় যে, তবে কেন আমরা আমাদের বাড়ির গ্রহে ভাষা সৃষ্টি করেছি?।
***************************** বিশেষ নিবন্ধ******************************
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~*মিসিং লিঙ্ক আবিস্কার* ইউ এস টুডে*~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
লুসি
দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পাথরের উপর পা রাখা নয় বছর বয়সী ‘লুসি’( বৈজ্ঞানিকদের নামকরণ) নামের একটি বালিকাকে গবেষকদের নতুন গবেষণা অনুসারে মানব বিবর্তনের একটি ’মিসিং লিঙ্ক’ আবিষ্কারের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
ম্যাথিউ বার্গার দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান মালাপা জীবাশ্ম সাইটের কাছে একটি শিলা অনুসন্ধান করার সময়ে তার কুকুরটিকে অনুসরণ অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা'র জীবাশ্মটি ২০০৮ সালে আবিষ্কার করেছিলেন।
‘মানবজাতির দোলনায়’ একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক মহিলা এবং পরবর্তীতে একটি দুই মিলিয়ন বছর বয়সী যুবক পুরুষের জীবাশ্ম আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের তুমুল আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল। নতুন সমীক্ষা নিশ্চিত করে যে প্রজাতিটি হোমো প্রজাতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং প্রাথমিক মানব এবং আমাদের আরও বানরের মতো পূর্বপুরুষদের মধ্যে মানব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যতা পূরণ করে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~সেডিবার জীবাশ্ম
বিজ্ঞানীরা প্যালিওঅ্যানথ্রোপলজি জার্নালে লিখেছেন যে প্রজাতিটি ৩ মিলিয়ন বছর বয়সী ‘লুসি’ বা অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস এবং ‘হ্যান্ডিম্যান’ হোমো হ্যাবিলিসের মধ্যে সেতু বন্ধন যোগ করেছিল।
নতুন প্রজাতির এনাটমি’র বিস্তারিত একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, সেডিবা অনন্য, তবে তার প্রতিবেশী অস্ট্রালোপিথেকাস আফ্রিকানাস এবং হোমোগণের প্রাথমিক সদস্যদের সাথে মিল রয়েছে ‘একটি ঘনিষ্ঠ বিবর্তনীয় সম্পর্ক নির্দেশ করে’।।
‘আমাদের ফলাফল বিবর্তনের ঐতিহ্যগত, রৈখিক দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করে।এবার মনে করা হচ্ছে যে, লুসির চেয়ে এক মিলিয়ন বছর ছোট একটি জীবাশ্ম-এর মুল প্রজাতি আরও বেশি মানুষের কাছাকাছি হবে, ~জেরেমি ডিসিলভা-ডার্টমাউথের নৃবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক এবং সহ-লেখক।
'দাঁতে বিরল নীল রঞ্জকের এমবেড করা মিডলএজে’র মহিলার ফসিলের ইতিহাস পুনরায় লেখা যেতা পারে'।
ডিসিলভা আরো বলেন "আমাদের জটিল বিবর্তনীয় ইতিহাসের প্রথম দিকে বিভিন্ন হোমিনিডরা কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে সেটার সঠিক সমান্তরাল রেখার একটা চিত্র খুজে পাই, এখানে মিসিং লিঙ্ক থাকার কোন অবকাশ নেই;।
বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা অনুসারে, সেডিবা দুই পায়ে হাঁটতে পারত, ‘ তবে সে গাছে আরোহণে দক্ষ ছিল এবং বেশীরভাগ সময় সে গাছে গাছে কাটিয়েছে সম্ভবত খাদ্য এবং শিকারীদের থেকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য।‘ তার হাতের শক্তিশালী গ্রিপ এবং আরোহণের জন্য প্রয়োজনীয় ‘সূক্ষ্ম গ্রিপিং’ এবং শরির ও পায়ের ধরনে প্রমান হয় সে সোজা হয়ে জমিতে হাটতে সক্ষম ছিল। (গাছে আরোহণ ও জমিনে চলাচল; সে দুটোতেই দক্ষ ছিল)
সুত্রঃ
USA TODAY -MISSING LINK
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ * বিরুদ্ধমত*~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~সেডিবার কাল্পনিক চিত্র
বিরূদ্ধমত~ সেডিবা
২০০৮ সালে তাদের আবিষ্কারের পর থেকে, আমরা অস্ট্রালোপিথেকাস‘সেবিডা'র ফসিল নিয়ে মিডিয়ার হৈ চৈ এর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি। যে ফসিলটাকে বলে হচ্ছে, অস্ট্রালোপিথেকাস এবং জেনাস হোমো এর মধ্যে অনুপস্থিত লিঙ্কের মাঝামাঝি কোন প্রাণী বা আমাদের পূর্বপুরুষ- বৈজ্ঞানিকেরা ধরেই নিয়েছেন যে, এটা সেই মিসিং লিঙ্ক। জীবাশ্মগুলিকে মিডিয়া বিবর্তনীয় 'গেম চেঞ্জার' 'আমাদের প্রথম দিককার পুর্বপুরুষ' এবং 'বিবর্তনীয় তত্ত্বের জন্য শক্তিশালী প্রমাণ' হিসাবে প্রশংসা করেছেন।
আমরা যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছি, জীবাশ্মগুলির আরও অধ্যয়নের জন্য যথেষ্ট সময় অতিবাহিত হবার পরে এবং যেখানে এগুলো আবিস্কৃত হয়েছে তাঁর চারপাশের ভু প্রকৃতি ও পরিবেশ অনেকখানি পালটে বা ধ্বংস হয়ে যাবার পরে একসময় মিডিয়ার হৈ চৈ ও বন্ধ হয়ে যায়।
আসলে,মুল তথ্য হচ্ছে, নিউ সায়েন্টিস্ট-এ ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে শিরোনামে বলা হয়েছে ' এটা সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রী বাঁক নিয়েছে'
: “ সুদীর্ঘ সময় আগের-হারানো আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে কাছের একজনের অস্তিত্ব হয়তো কখনও ছিল না। অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবার জীবাশ্ম যা মানব বিবর্তনের ইতিহাস পুনর্লিখনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা আসলে একসাথে মিশ্রিত দুটি প্রজাতির অবশিষ্টাংশ হতে পারে" (বারাস, ২০১৪)।
ইস্রায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এলা বিন' প্রাচীন হোমিনিডদের মেরুদণ্ড বিষয়ে গবেষণা করছেন এবং তাঁর গবেষণার ফল নিয়ে সায়েন্স জার্নালে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল। তাদের নিজস্ব গবেষণার মাধ্যমে, সায়েন্স জার্নাল 'ইয়োয়েল রাক' এবং তিনি "উপসংহারে পৌঁছেছেন যে 'সেডিবা জীবাশ্ম মুলত দুটো নয় চারটে ফসিল জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে'!!
তারা প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র কোন আদি মানব বা এপস যাদের মৃত্যুর সময়ে জোরে ঝাঁকুনি বা ভুমিকম্প হয়েছিল, যার ফলে হাড়গুলো খুব কাছাকাছি এলোমেলোভাবে পেট্রিফিকেশনের (যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব পদার্থ, দীর্ঘ সময় ধরে খনিজ পদার্থের সংস্পর্শে আসে, তা পাথুরে পদার্থে পরিণত হয়।) সূচনা করেছিল।
তারা এপ্রিল ২০১৪ সালে কানাডার ক্যালগারিতে ‘প্যালিওনথ্রোপোলজিক্যাল সোসাইটি’র(আদি ভূতাত্ত্বিক অতীতের সাথে সম্পর্কিত নৃবিজ্ঞান) একটি সভায় তাদের গবেষণা উপস্থাপন করে। সেখানে উদ্ঘাটন করা হয় যে, বিবর্তনবাদীদের জন্য জীবাশ্ম সম্পর্কে তাদের সিদ্ধান্তে ভুল করা কতটা সহজ, বিশেষ করে অতি‘অল্প প্রমাণ’ এর উপর ভিত্তি করে যদি তৈরি করা হয়। যেমন ‘ শধু মাত্র একটি পায়ের হাড় ব একটি চোয়াল এর হাড় দিয়ে পুরো প্রাণীর শারিরিক ও চারিত্রিক রূপ নিরূপণ করা ভীষণ কঠিন’।
দক্ষিণ আফ্রিকার উইটওয়াটারসরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় জীবাশ্মবিদ লি বার্গার, যিনি সেডিবা জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছিলেন। বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হাড় থেকে অত্যধিক তথ্য আহরণ করার চেষ্টা করার প্যালিওন্টোলজিকাল( আদি সৃষ্টি-সম্বন্ধীয়) সম্প্রদায়ের একটি সাধারণ অভ্যাসকে অস্বীকার করেছিলেন। সেডিবার জীবাশ্মগুলি সাধারণ জীবাশ্মের চেয়ে অনেক বেশি সম্পূর্ণ বলে প্রমান করার চেষ্টা করেছিলেন (যদিও সেডিবার জীবাশ্মগুলি অসুম্পুর্ন ছিল- এমনকি ৫০ ভাগ সম্পূর্ণ থেকেও অনেক দূরে ছিল)। বার্গার যুক্তি দিয়েছিলেন যে তিনি যে হাড়গুলি খুঁজে পেয়েছেন তার মধ্যে যদি কোনও অমিল পাওয়া যায় (যেমনটি সাধারণত জীবাশ্মের সন্ধানের ক্ষেত্রে হয়) তবে কঙ্কালের শারীরস্থান(এনাটমি) সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
একটি নিউ সায়েন্টিস্ট নিবন্ধ অনুসারে, 'বার্গারের সর্বশেষ কাজ ইঙ্গিত দেয় যে, একজন যুবক পুরুষের কশেরুকা রোগের লক্ষণ থাকতে পারে। যদি তাই হয়, এমন জীবাশ্ম কোন প্রজাতির প্রতিনিধিত্ত্ব করে না'। এর অর্থ এই যে সেডিবার জীবাশ্মগুলি এমনকি একটি ট্রানজিশনাল প্রজাতির অস্তিত্বের প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না, যেহেতু সেই আদিম প্রজাতির স্বাভাবিক এনাটমি অজানা থাকবে।
যদি ডারউইনীয় বিবর্তন সত্যিই ঘটে থাকে তবে জীবাশ্মের রেকর্ড অবশ্যই শত কোটি পরিবর্তনকালীন ফসিল দিয়ে পূর্ণ হতে হবে। কিন্তু আমরা যে বিষয়টা বারবার জোর দিয়েছি- এমনকি অনেক বিবর্তনবাদীরাও প্রায়শই স্বীকার করেন-মানুষের বিবর্তনের প্রমাণ একটি বানরের মতো পূর্বপুরুষ থেকে হবার সম্ভাবনা নেই। জীবাশ্ম রেকর্ড বাইবেলের মডেল সঠিক হলে সৃষ্টিবাদীদের ভবিষ্যদ্বাণী সমর্থন করে। ঈশ্বর আদি ‘প্রজাতি’ (জেনেসিস ১:২১,২৪-২৫) সৃষ্টি করেছেন, এবং সময়ের সাথে সাথে এই ধরণের মধ্যে কেবল বৈচিত্র্য ছিল।
যদিও এটা বিশ্বাস করা কঠিন তবুও আমরা কোটি কোটি বছর আগে একটি এককোষী জীব থেকে বিবর্তিত হয়েছি সে বিশ্বাস করা আরো কঠিন। ধর্মে যদি রূপকথার বয়ান হয় তবে এই বিবর্তনের ধারা সেই রূপকথাকেও হার মানায়।
মুল
JEFF MILLER, Ph.D.
Apologeticspress অরগানাইজেশান (ভাবানুবাদ-শেরজা তপন)
বিরুদ্ধমত~ লুসি
যদি এটি এত গুরুত্ত্বপূর্ন না হয় তবে পরিস্থিতি হাস্যকর হবে। কয়েকমাস পর পর মিডিয়া একটি নতুন এমন কিছু প্রাণীর জীবাশ্মের সম্পর্কে কথা বলে যা দেখতেএরন্যান্য এপসদের মতো নয়-যাদের আকার আকৃতি ও প্রকৃতি আধুনিক মানুষের সাথে বেশই মিলে যায়, আর বিবর্তনবাদীরা বিশ্বজুড়ে লাফালাফি শুরু করে মিসিং লিঙ্ক কুজে পাওয়া গিয়েছে বলে।
সম্ভবত, এই নতুন প্রাণীর ক্ষুদ্র বৈশিষ্ট্যগুলি আদিম পূর্বপুরুষদের থেকে কীভাবে আমাদের আধুনিক মানুষ হিসেবে বিবর্তিত হয়েছিল সে সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা দেয়। এদের কারো অক্ষি-কোটরের গর্তগুলি বেশিরভাগ এপস-এর চেয়ে বড় বা ছোট, মাথার খুলিটি বড় (বা ছোট)।
লুসির মত ছোট পায়ের প্রানী কিভাবে স্থলভাগ দিয়ে দুই পায়ে ছোটাছুটি করেছিল সেইটা একটা ভাবনার বিষয়- বিশেষ করে যখন বড় বিড়াল জাতীয় বা হিংস্র পশু যখন তাড়া করেছিল? তার আঙুলের হাড়ের ছোট ছোট গিঁটগুলোর আমাদের জানায় যে, এই প্রাণীটি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় গাছ থেকে গাছে বিচরন করেছে। শুধু সঙ্গম বা অন্য কোন কারণে অতি সংক্ষিপ্ত সময়ে এরা মাটিতে নেমে এসে সোজা হয়ে দাড়িয়েছে।
এই পুরো দৃশ্যকল্পের উদ্বেগের বিষয় হল যে প্রতিবারই সৃষ্টিবাদীরা এটিকে ভুল প্রমাণ করে এবং প্রতিবারই নির্দিষ্ট কিছু প্রাণী- যেমন পিল্টডাউন ম্যান, লুসি, বা ইডার জীবাশ্মকে অসম্মানিত করা হয়, এবং কিছু চমৎকার আবিস্কার বিজ্ঞানের গৌরবোজ্জল দিকটাকে হেয় করা হয়। এইসকল জীবাশ্ম আবিস্কারের পরে সারা বিশ্বের মিডিয়া এত হৈ চৈ শুরু করে যে, সৃষ্টিবাদীরা তাদের বিশ্বাসের মুলে ধাক্কা খেয়ে চরম মুষড়ে পড়ে। প্রতিটি নতুন আবিষ্কারের এই ধাক্কা সইতে না পেরে সৃষ্টিবাদী বা ধার্মিক উন্মত্ত পাঠকরা তাদের প্রিয় ধর্মগুরু বা জ্ঞানী বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে এবং মুলত খৃষ্ট ধর্মের বিজ্ঞ ব্যক্তিরা দাবি করে যে, কিছু দিনের মধ্যে উত্তর দেওয়া হবে অন্যথায় জেনেসিস সৃষ্টির বিষয়টি পাল্টে দেয়া হবে কিংবা আপডেট করা হবে না হলে এর বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে।
এটা যেন অসংখ্য বিবর্তনীয় দুর্বলতার গল্প – জনসাধারণ ততবার ভুলে যায় যতবার মিডিয়া আরেকটি বিবর্তনবাদী শিশুকে দত্তক নেয় কিংবা জন্ম দেয়।
আসুন আমরা সবাই কিছুক্ষনের জন্য থামি, একটি গভীর শ্বাস নিই, এবং পদ্ধতিগতভাবে বিভিন্ন কারণ বিবেচনা করি যে কেন ‘সর্বশেষ আবিষ্কার’ এর আগে আসা অন্যান্য সমস্ত বিবর্তনীয় ‘স্ট্যান্ডবাজি’ বা ‘ব্রেকথ্রু’ ছাড়া কিছুই নয়।
মানব ইতিহাসের প্রতিটি বৈধ পরীক্ষা যা এর সাথে কিছু করার আছে তা দেখিয়েছে যে মহাবিশ্বে প্রাকৃতিক জীবন শুধুমাত্র তার নিজস্ব ধরণের প্রাক-বিদ্যমান জীবন থেকে আসে। উপরন্তু, চিন্তা- চেতনা, যৌন প্রজনন, বিভিন্ন রক্তের ধরন, কথ্য ভাষা এবং মানব মস্তিষ্কের জটিলতার মতো নির্দিষ্ট মানবিক বৈশিষ্ট্য মানব বিবর্তন তত্ত্বের মিথ্যা প্রমাণের ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য বাধা সৃষ্টি করে (হাররুব এবং থম্পসন, ২০০৩)
দ্বিতীয়ত, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে "সঠিক" তারিখগুলি পাওয়ার জন্য ব্যবহৃত ডেটিং পদ্ধতিগুলি দুর্লভ অসুবিধায় পরিপূর্ণ যা তাদের অকেজো করে দেয় (দেইয়ং,২০০৫; স্নেলিং, এনডি; মরিস, ১৯৯৪)। প্রকৃতপক্ষে, বিবর্তনবাদী সম্প্রদায় অনেকসময় কাছাকাছি কিংবা তাদের ইচ্ছামত তারিখ তৈরি করছে, তাদের পূর্বকল্পিত ধারণার সাথে খাপ খায় না এমন যেকোন তারিখগুলিকে বাতিল করে দিচ্ছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নতুন তারিখগুলি করছে। অসংখ্য জীবাশ্মের আবিষ্কারের পরে এমন হয়েছে লক্ষ লক্ষ বছর বিবর্তনীয় সময় যোগ করা হয়েছে, যদিও তাদের প্রত্যাখ্যান করা সময়রেখা সঠিক বলে ‘জানা’ ছিল (বাট-২০০৮)। কোন জীবাশ্মের সঠিক সময়কাল বের করা এতটাই দুরূহ এবং সকল পরিক্কা নিরীক্ষা এত ব্য্যবহুল এবং কঠিন যে, বাইরের কেউ এর চ্যালেঞ্জ করতে সাহস পায় না। আপনাকে যখন বলা হবে এটা বিলিয়ন বা এত মিলিয়ন বছর আগের তখন বিশ্বাস করা বা অবিশ্বাস করে ছুড়ে ফেলা ছাড়া আর কোন পথ থাকে না।
তৃতীয়ত, বিশ্ব এই মিথ্যা বিবর্তনবাদী দাবিগুলোকে যথাযথ বিশ্বাসের সাথে তুলে ধরার জন্য অন্য প্রাণীর জীবাশ্মকে কতজন কথিত মানব পূর্বপুরুষ হিসেবে প্রমানের চেষ্টা করা হয়েছে, তাঁর মধ্যে নিয়ান্ডারথালস, নেব্রাস্কা ম্যান, পিল্টডাউন ম্যান(১৯১২), জাভা ম্যান এবং রোডেসিয়ান ম্যান (২০০৩)। এছাড়াও, The Hobbit Man (২০০৫)এবং লুসি কিংবা সেডিবা( ২০০৮) অন্যতম।
আরও সাম্প্রতিক খবরে, বিবর্তনীয় পরাজিতদের দীর্ঘ তালিকায় সর্বশেষ নবাগতকে লিখুন –আর ডি ইডা-র মাত্র পাঁচ মাস পরে - "সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে অসাধারণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য, আমাদের প্রাচীনতম পূর্বপুরুষ" ‘ইডা লেমুর’ জীবাশ্মকে শুধুমাত্র ‘ বিশেষ মহান বৈজ্ঞানিক আবিস্কার (রেফ. ২০০৯) হিসেবেই নয়, বরং ‘সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি’ হিসেবেও সমাদৃত করা হয়েছে। কিছু বিজ্ঞানী যুক্তি দিয়েছেন যে, এটি ‘সম্পূর্ণভাবে এবং অকাট্যভাবে স্যার চার্লস ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বকে নিশ্চিত করে’। ডঃ জেনস লরেঞ্জ ফ্রানজেন
- আমরা আরডির সাথে দেখা করি - সাধারণ পূর্বপুরুষের "সন্নিধ্যে আমরা এসেছি", যাকে আমরা মানব বিবর্তনকে ৪.৪ মিলিয়ন বছর আগে নিয়ে যাওয়ার কথা। এটি এত গুরুত্বপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে যে সায়েন্স জার্নালে অক্টোবর ২০০৯ সংখ্যায় ১১ টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। ডেভিড পিলবিম সাহসিকতার সাথে বলেছিলেন, "এটি মানব বিবর্তনের অধ্যয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি’।
বিবর্তনের বিজ্ঞাপন হিসাবে ‘ইডা’ চমৎকার শোনাচ্ছিল-‘বিশেষজ্ঞরা এটিকে গত শতাব্দীতে মানব বিবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে অভিহিত করেছিলেন’ (২০০৯)। ইডা’র জারিজুরি ফাঁস হবার পরে আশ্চর্যজনকভাবে চরম দ্রুততার সাথে "বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য" আরডি’কে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছিল।
টাইম ম্যাগাজিনের ২৩ জুলাই ২০০১ সংখ্যায়, স্টাফ লেখক মাইকেল লেমনিক এবং আন্দ্রেয়া ডোরম্যান তাদের পাঠকদের ‘আর্ডিপিথেকাস রামিডাস কাদাব্বা’র সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। অনুমিতভাবে, কদাব্বা -‘আরডি’ নামক নুতুন জীবাশ্ম যা বর্তমান শাসনকারী মিডিয়া চ্যাম্পিয়নের এক মিলিয়ন বছরেরও বেশি আগে ৫.২ থেকে ৫.৮ মিলিয়ন বছর আগে বেঁচে ছিলেন তাঁর স্থান দখল করেছিল। উপরন্তু, কদাব্বা কথিতভাবে বিবর্তিত হয়েছিল ‘সেই সময়ে যখন মানুষ ও শিম্পরা তাদের পৃথক পথে চলে গিয়েছিল’। উপরন্তু, বিবর্তনবাদীদের মতে যারা এই সন্ধান সম্পর্কে লিখেছেন, তারা বলেছেন ‘কাদাব্বা’- ‘প্রায় নিশ্চিতভাবে সোজা হয়ে হেঁটেছিল’। এক সময় আবিষ্কৃত কদব্বার হাড় এখনও আমাদের কাছে আছে। তাহলে কেন আমরা এখনও সেই অভূতপূর্ব বিবর্তনীয় বিজয়ের কথা শুনছি না?
সহজ কারণের জন্য যে এটি ‘ইদানীং জনি-কাম-লেট’ নয় যা মিডিয়া হাইপ তৈরি করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের এই উদ্ভট ও মিথ্যা প্ররোচনার পেছনে যে বিশ্বের চিন্তাশীল ব্যক্তিরা যে শত শত বছর ধরে দৌড়েছেন এবং প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের ছাত্রদের যে, ভুল শেখানো হচ্ছে এবং সেই ভুলটাকেই তাদের বিশ্বাস করাতে বা প্রমান করাতে বাধ্য করা হচ্ছে, এর খেসারত কে দিবে?
কিভাবে মানবজাতি বিবর্তিত হয়েছে তা জানতে আর কত লুসিস, হবিটস, পিল্টডাউনস, নেব্রাস্কাস এবং আরডি লাগবে? কথিত মানব বিবর্তনের গণকবরে স্তুপীকৃত ফসিল বা জীবাশ্ম ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তেই থাকবে শুধু। কিন্তু ফলাফল শুন্য।
মুল সুত্রঃ
Ardi Joins a Long, Infamous List of Losers
Apologetics Press
( ভাবানুবাদঃ শেরজা তপন)
আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম এডিটঃ ২৩ অক্টোবর-সকাল ১০ঃ০০
দ্বীতিয় এডিটঃ ২৩ অক্টোবর রাত ৮ঃ৫৫