নম্বরঃ ৭। আমাদের শরীরের চুলের অভাব
এটি আমাদের পরিবেশের সাথে খারাপভাবে অভিযোজিত হওয়ার আরেকটি উদাহরণ। এমনকি পূর্ব আফ্রিকা যেখানে আমারা বিবর্তিত হয়েছে বলে ধারনা করা হয়, সেখানেও রাতে বেশ ঠান্ডা পড়ে। এমন ঠান্ডায় হাইপোথার্মিয়া এবং মৃত্যু প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের মত লোমহীন প্রাণীদের নিজেদের গুটিয়ে নিতে হবে,উষ্ণ আশ্রয় স্থল খুঁজতে হবে কিংবা নিজেকে উষ্ণ রাখার জন্য ঢাকতে হবে। ভাগ্যক্রমে আমরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান-সেজন্যই জানি যে আমাদের এটি করতে হবে। কিন্তু বড় প্রশ্ন কেন, আমরা আমাদের শরীরের বেশিরভাগ লোম হারিয়ে ফেলেছি?
(যদিও আধুনিক গবেষনায় বলে যে, মানুষের শরিরের লোমকুপের সংখ্যা আমাদের নিকটতম প্রাইমেটদের থেকে অনেক বেশী।*)
- ধরে নিচ্ছি আমরা পৃথিবীতেই বিবর্তনের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছি এবং আমাদের পূর্বপুরুষের চুল/লোম/পশম ছিল। তবে কেন আমরা প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় একটা অনুষঙ্গ হারালাম?
হতে পারে কি-সম্ভবত যখন আমরা জামাকাপড় পরা শুরু করেছি (পশুর চামড়া) তখন থেকেই ধীরে ধীরে চুলের প্রয়োজন হারিয়ে ফেলেছি? অবশ্য আমাদের শরিরে এখনো কিছু চুল অবশিষ্ট আছে, এটা ঠিক যে এর বেশিরভাগই এতই সংক্ষিপ্ত বা সামান্য যে, এর তেমন কোন ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে নেই। তাই আমরা মূলত নগ্ন।
(বিস্তারিত জানতে পড়ুন রেফারেন্স অধ্যায়#২ Ref# Scientific American: The Naked Truth – Why Humans Have No Fur.)
[পশম দিয়ে ঢাকা ত্বকের চেয়ে খালি মানুষের ত্বক শরীরের তাপ অপসারণে বেশি দক্ষ। এটি করার জন্য, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের তিন ধরণের গ্রন্থি রয়েছে: অ্যাপোক্রাইন, একক্রাইন এবং সেবেসিয়াস। বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে, ত্বকের বাইরের স্তর, যা এপিডার্মিস নামে পরিচিত, তাতে অনেকগুলি অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি থাকে। এই গ্রন্থিগুলো চুলের ফলিকলের চারপাশে গুচ্ছ করে এবং তৈলাক্ত ঘাম দিয়ে পশম আবৃত করে। এই ঘামের বাষ্পীভবন, যা চামড়া থেকে তাপ সরিয়ে প্রাণীকে শীতল করে। কিন্তু একটি প্রাণী যত বেশি ঘামে, তাপ অপসারণে তার কার্যকারিতা তত কমে যায়, কারণ আবরণটি জট পাকিয়ে যায়, ঘামের বাষ্পীভূত করা আরও কঠিন করে তোলে। বিপরীতভাবে মানুষের বহিঃত্বকের একক্রাইন গ্রন্থিগুলি প্রাধান্য পায়। এই গ্রন্থিগুলি ত্বকের উপরিভাগে কাছে অবস্থিত এবং ক্ষুদ্র ছিদ্রগুলির মাধ্যমে সূক্ষ্ম জলযুক্ত ঘাম নিঃসরণ করে। ত্বকের পৃষ্ঠ থেকে সরাসরি বাষ্পীভূত হওয়ার পাশাপাশি, এই একক্রাইন(বহুকোষী গ্রন্থিগুলিকে বা যেগুলি তাদের নিঃসরণে সাইটোপ্লাজম হারায় না। বিশেষত ঘাম গ্রন্থি, যা শরিরের ত্বকে বিস্তৃত।) ঘাম অ্যাপোক্রাইন(বহুকোষী গ্রন্থিগুলিকে বা যেগুলি তাদের সাইটোপ্লাজমের অংশ নিঃসৃত করে, বিশেষ করে বগলে এবং পিউবিক অঞ্চলে লোমকূপের সাথে যুক্ত ঘাম গ্রন্থিগুলি।) ঘামের চেয়ে আরও সহজে বাষ্পীভূত হয়, যা বেশ শীতলতা প্রদান করে। সুত্রঃ scientific american]
বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীরা শত শত বছর ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুজে বেড়িয়েছেন, কোনো বিশ্বাসযোগ্য উত্তর মেলেনি এখনো। শুধু এর কারন হিসেবে সম্ভাব্য কিছু উত্তর;
সুবিধা:
শরীরের কম উকুন এবং অন্যান্য বাহ্যিক পরজীবী।
যেহেতু আগুন আমাদের নিত্য অনুষঙ্গ এবং আমরা আগুনের কাছাকাছি থাকি তাই আগুন ধরার সম্ভাবনা কম।
ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপ হারানো সহজ, অতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে আমরা অতিদ্রুত তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমরা পোষাক বা অন্য কোন মাধ্যম বা উপকরণ যোগ করে বা বিয়োজন করে কিংবা আগুনের সংস্পর্শে নিজেরাই নিজেদের শরিরের তাপ নিয়ন্ত্রন করতে পারি।
এই যুক্তিগুলি খণ্ডন:
১. অন্যান্য প্রাইমেটরা পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে উকুন বা অন্যান্য পরজীবী ভালভাবে মোকাবেলা করে। এছাড়া কিছু প্রাণী লেজ জিহ্বা বা পেশী কম্পনের ( কিংবা বিশেষ ভঙ্গীতে শরীর ঝেড়ে- যেভাবে শরীরে আমরা ঝাড়া দিতে পারি না) মাধ্যমেও এদের মোকাবিলা করে।
২. অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে, আমরা আগুন আবিষ্কারের বা আগুনের ব্যাবহার শেখার অনেক আগেই আমরা আমাদের শরীরের চুল হারিয়ে ফেলেছি। সম্ভবত লোম হারানোর পরেই আমরা আগুন বা তাপের প্রয়োজনীয়তা বেশি উপলব্ধি করেছি।
৩. অন্যান্য প্রাইমেটরা চুল থাকা সত্ত্বেও ঘামে, - আসলে তাদের চুল ঘামের জন্য ও অতিদ্রুত শরীর ঠাণ্ডা হবার জন্য আরও বেশী কার্যকরী। এগুলো হাজার হাজার উইক্স (কৈশিক ক্রিয়া দ্বারা শোষণ করা তরল) হিসাবে কাজ করে যা ঘাম বা তরল বহন করে তাদের ত্বক থেকে আর্দ্রতা দূরে করে এবং এটা দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে তাদের ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করে।
আমাদের যৌনাঙ্গের চারপাশেও চুল থাকে। পুরুষদের অণ্ডকোষ শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় ঠাণ্ডা রাখা প্রয়োজন এবং পিউবিক চুল এটি সাহায্য করে আর্দ্রতা দূর করে বাষ্পীভবনের হার বাড়িয়ে দিতে। *সেই সাথে দীর্ঘ সময় ধরে পোশাক পড়া ও আগুনের কারণে আমরা পিউবিক চুল কখনোই হারাই নি।
এর বিপক্ষে মুল উদাহরণ আমাদের মাথার চুল; যা আমাদের মাথাকে গরম বা ঠাণ্ডার হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে (*সেই সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাত থেকেও। শরীরের পশম মানুষের স্পর্শ-কাতরতা বাড়িয়ে দেয়।)
প্রমাণিত হয়েছে (বাধা না করে) অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন বড় বিড়ালজাতীয়( বাঘ-সিংহ) তাদের শিকার করার সময় উল্লেখযোগ্য-ভাবে বেশি শরীরের তাপ উৎপন্ন করে-যেমন আমরা করি। চুল না থাকার কারণে যদি তারা সহজেই শরীরের তাপ হারাত এবং আরো বেশি সময় তাদের শিকারের পেছনে দৌড়াতে পারত তবে তারাও আমাদের মত চুল বিহীন হোত। কিন্তু তেমনটা হয়নি।অনেকে বলে থাকেন; অন্যান্য প্রানী দ্রুত হলেও খুব অল্প সময়ের জন্য তাদের শিকারের পেছনে দৌড়ায় কিন্তু মানুষের শরিরে চুল না থাকার কারনে প্রয়োজনে সুদীর্ঘ সময় শিকারের পেছনে ছুটতে পারে।
যুক্তি খন্ডনঃ
• ঘোড়ার শরির ঘন চুলে আচ্ছাদিত। তারা মানুষের চেয়েও দীর্ঘ সময় ধরে আরো দ্রুত গতিতে দৌড়াতে পারে।
অন্যান্য সম্ভাবনা:
আমাদের এখানে এমন একটি গ্রহ থেকে আনা হয়েছিল যেখানে আমাদের লোম থাকার কোন প্রয়োজন ছিল না। সম্ভবত দিনের বেলা এবং রাতের তাপমাত্রা অনেকটা একইরকম ছিল।
কিভাবে এমনটা হতে পারে; এর কারণগুলির মধ্যে ঘন মেঘের আচ্ছাদন তাপ প্রতিরোধ করতে পারে, স্থল দিনে তাপ শোষণ করে এবং রাতে বিকিরণ করে, বাইনারি (বা যমজ) সূর্য তাই গ্রহটিকে কখনই ঠাণ্ডা হতে দেয় না বা অন্ধকারে ঢেকে দেয় না বা পাতলা ভূত্বক এর কারনে গলিত কোর এর তাপ গ্রহের জমিকে উত্তপ্ত রাখে। পরে আরো বিস্তৃতভাবে আমি এর কিছু পরীক্ষা করব।
আরেকটি আকর্ষণীয় সম্ভাবনার কথা ভাবা যায়, যা ঘটতে পারে হয় পৃথিবীতে বা আমাদের হোম গ্রহে: এলিয়েনরা আমাদের ডিএনএ একসাথে সংযুক্ত করেছে একটি অত্যন্ত উঁচু বুদ্ধি সম্পন্ন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর সাথে(ডলফিন বা তিমি জাতীয়) – যারা প্রকৃতিগত-ভাবে চুল-হীন।
আমাদের ত্বক নিন্মস্থ পুরু স্তরের চর্বি, যা অন্য কোন স্থল স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে দেখা যায় না কিন্তু বিভিন্ন সমুদ্রে বাস করা বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়।
অনেকে মনে করেন যে জলের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সাথে এই ডিএনএ সংযুক্ত-করন হয়ত আদৌ ঘটেনি। তবে আমরা যে স্থল স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলি থেকে বিবর্তিত হয়েছিলাম তারা প্রায় ১০ মিলিয়ন বছর আগে সমুদ্রে ফিরে গিয়েছিল, ফের যখন ওরা ডাঙ্গায় ফিরে আসল তখন তারা ছিল মূলত চুল-হীন এবং সঙ্গে তাপ নিরোধক এর জন্য অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত স্তর।আমরা বিকশিত হয়েছি তাদের থেকে ভীনগ্রহবাসীর ডি এন এ -সংকরায়ন করে।
এটি সমর্থন করার প্রমাণ:
দ্বিপদবাদ, যা আমাদের জমিতে সোজা হয়ে চলতে বাধ্য করে। এটা আমাদের পিঠ বা পেছনভাগের জন্য কার্যত উপযোগী নয় যদিও আমরা প্রাকৃকিকভাবে সাতারু নই কিন্তু এমন গড়নের ফলে আমরা দক্ষ সাঁতারু হয়ে উঠতে পারি-*যা আমাদের নিকটতম প্রাইমেটরা পারে না।
~আঙ্গুল এবং পায়ের গোড়ালির মধ্যে ভেস্টিজিয়াল ওয়েবিং। ( যা মুলত সেইসব সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আছে এবং স্থলের প্রাণীদের মধ্যে শুধুমাত্র মানুষের এটি রয়েছে।) ত্বকের নিচের চর্বি বৃদ্ধি এবং শরিরের পশম বা চুলের হারানো, যা ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
~সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায় এমন একটি কিডনির গঠন (যেখানে এটি তাদের রক্ত থেকে অত্যন্ত বেশি লবণ অপসারণে দক্ষ) কিন্তু স্থল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের এমনটা দেখা যায়নি – এমনকি আমাদের অনুমিতভাবে বংশধর এপস’দের পর্যন্ত এমন কিডনি নেই।
~ডাইভিং রিফ্লেক্স, যখন আমাদের মাথা পানির নিচে থাকে যা আমাদের হৃদস্পন্দনকে ধীর করে দেয়, স্বেচ্ছায় আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সহ।
~ভার্নিক্স - মোমের আবরণ যা শিশুদের জন্মের সময় আবৃত থাকে। এটা অন্য কোন স্থল স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে পাওয়া যায় না, তবে বেশ কয়েকটি সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে দেখা যায়।
এটি খন্ডন করার প্রমাণ:
~আমাদের ত্বকের গঠন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা দীর্ঘ সময় ধরে পানির সংস্পর্শে থাকলে আমাদের ত্বক ভেজা স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ে এবং ত্বক ভেঙ্গে বা কুঁচকে যায় (দীর্ঘ সময় পানিতে হাত পা চুবিয়ে রেখে আপনি নিজেই পরিক্ষা করতে পারেন)
[জানুয়ারী ২০১৩ সালে বিজ্ঞানীরা একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছিলেন যে কেন আমরা স্নান করার সময় একজন ব্যক্তির আঙ্গুল এবং পায়ের আঙ্গুলের ত্বক শুকনো আলুবোখারার মতো কুঁচকে যায়। ল্যাব পরীক্ষা নিশ্চিত করেছে যে, কুঁচকে যাওয়া আঙ্গুলগুলি ভেজা বা নিমজ্জিত বস্তুর উপর সঞ্চালন উন্নত করে, সম্ভবত গাড়ির টায়ারে বৃষ্টির ট্র্যাকের মতো জলকে ঝাঁকুনি দিয়ে। আগে ভুল ধারনা ছিল যে, ত্বকের বাইরের স্তরের বলি রেখাতে পানি প্রবেশ করে। এই গবেষণায় আরো জানা যায় যে, পরিবর্তনটি শরীরের স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের একটি অনিচ্ছাকৃত প্রতিক্রিয়া বা একটি সিস্টেম যা শ্বাস, হৃদস্পন্দন ও ঘাম নিয়ন্ত্রণ করে। আসলে, ত্বকের নিচে রক্তনালী সংকুচিত হওয়ার কারণে ত্বক এভাবে কুঁচকে যায় হয়। সুত্রঃ aquatic-human-ancestor]
~বর্তমান সমস্ত লোমহীন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীরা কয়েক মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত হয়েছিল, দশ মিলিয়ন বছর আগে নয়।
~আমাদের কিডনি সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের মত খুব দক্ষতার সাথে লবণ অপসারণ করতে পারে না – রক্তে অতিরিক্ত লবণের উপস্থিতি আমাদের অসুস্থ করে ফেলে- তাই ডাক্তার আমাদের অনবরত লবণ খাওয়া কমাতে বলছেন। আমাদের কিডনির মাধ্যমে আমাদের শরীর সহজে এর থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে না। আসলে ঘাম লবণ অপসারণের জন্য অনেক বেশি কার্যকর উপায়-এটা অন্যান্য স্থল স্তন্যপায়ী প্রাণীরা করে কি না তা বলার মত যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এমনকি অন্য কোন স্থল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের স্বেচ্ছায় শ্বাস নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আছে কি-না সেটাও প্রমাণিত নয়( *হিপো হয়তো এর ব্যতিক্রম- তবে তারা জীবনের বেশীরভাগ সময় জলেই কাটায়। জলের না হলেও তারা স্থল স্তন্যপায়ী নয়।)
অবশ্যই এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় না কেন আমাদের মাথায় এবং পিউবিক অঞ্চলে চুল রয়েছে (এবং আমাদের সমস্ত শরীর জুড়ে সীমিত পরিমাণে)। ঠিক তেমনি কেন বনমানুষের পশম আছে এবং আমাদের নেই? এর কোন সঠিক ব্যাখ্যা নেই। বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় প্রাইমেটরা প্রাথমিক হোমিনিডদের থেকে ৫ থেকে ৭ মিলিয়ন বছর আগে বিভক্ত হয়েছে বলে মনে করা হয়। সেহেতু তাদের বেশীরভাগ শারীরিক বৈশিষ্ঠগুলো অনেকটা একরকম থাকার কথা থাকলেও আসলে তা নেই।
বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই এখন বিতর্ক করছেন স্তন্যপায়ীদের সমুদ্রে এই অস্থায়ী প্রত্যাবর্তন আদৌ কখনও ঘটেছিল কি না।
অন্যান্য সম্ভাবনা:
কেউ কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, বরফ যুগের একটি সময় আমরা ধীরে ধীরে আমাদের চুল হারিয়ে ফেলেছিলাম, কারণ জমিতে খাবারের অভাব ছিল এবং আমরা জলে শিকার করতে বাধ্য হয়েছিলাম।
~ এমনটা হলে এবং শারীরিক গঠন সাঁতারের উপযোগী হলেও আমরা প্রাকৃতিক-ভাবে দক্ষ সাঁতারু কেন হলাম না?*
যাদের চুল কম তারা যাদের বেশি চুল তাদের তুলনায় দ্রুত শুকিয়ে যায় (এবং তাই গরম হয়ে যায়- বেশী চুল যাদের তারা হাইপোথার্মিয়ায় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল)।
অন্য দল বলছে যে স্থল স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন হাতি এবং জলহস্তী’র যে কারনে চুল নেই ঠিক একই কারণে আমাদের চুল নেই - তারা ঠাণ্ডা হতে পারে জল স্প্রে করে বা শরীর জলে ডুবিয়ে দিয়ে বা ঠাণ্ডা কাদায় গড়াগড়ি খেয়ে।
-যদিও প্রশ্ন থাকে আপনি শেষবার কবে কাদায় গড়াগড়ি দিয়েছিলেন?
কেন পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে টিকে থাকার জন্য মোটা কাপড় বা অতিরিক্ত স্তর পরতে হবে? কেন আমাদের শরীর ঘন লোম বা চুলে আচ্ছাদিত হচ্ছে না - ঠিক অন্যান্য স্থল স্তন্যপায়ীদের মতো?
এই অনুমানগুলির প্রতিটির পক্ষে ও বিপক্ষের যুক্তিগুলি ক্রমাগত উন্মাদনা ছড়াতে থাকে। তর্ক যুক্তি আর শেষ হবার নয়। এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় এসব নিয়ে দ্বীধা-বিভিক্ত হয়ে পড়েছেন এর মধ্যে।
স্পষ্টতই কোন স্পষ্ট উত্তর নেই!! অন্তত এখানে পৃথিবীতে। সম্ভবত আমরা নিজেদের যতটা জ্ঞানী ভাবি এখনো ততটা বিজ্ঞ হয়ে উঠিনি- আমাদের হোম গ্রহের পূর্বপুরুষেরা সেই তুলনায় অনেক বেশী জ্ঞানী। তাদের কাছে হয়তো এর উত্তর আছে।
আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link