৮। খড় জ্বর এবং হাঁপানি
খড় জ্বরঃ পরাগ বা ধূলিকণা দ্বারা সৃষ্ট একটি অ্যালার্জি যাতে চোখ ও নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লি চুলকায় এবং স্ফীত হয়, যার ফলে সর্দি এবং চোখে পানি আসে।
পৃথিবীর পরিবেশ আমাদের জন্য উপযুক্ত না হওয়ার আরও কারণ এখানে রয়েছে। আপনি ভেবে দেখুন; এই লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের পরে আমরা এখনো এটির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছি- আপনি কি পেরেছেন?
ঠিক আছে, এখানে লক্ষ লক্ষ বছর সম্ভবত আমরা আছি – যেহেতু তেমন যুক্তিসঙ্গত প্রমান নেই সেহেতু আমরা ভাবতে পারি সম্ভবত কয়েক হাজার বছর পূর্বে এলিয়েনেরা বা ভিন গ্রহের প্রাণীরা কিংবা আমাদের আদি গ্রহের পূর্বপুরুষেরা আমাদের এখানে রেখে গিয়েছিল।
এই সময়টা দৃশ্যত যথেষ্ট নয় চারপাশে ভেসে থাকা সমস্ত পরাগ এবং অন্যান্য আণুবীক্ষণিক পোকা বা কীটদের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য। পৃথিবীর বাতাসে ভাসমান পরাগ রেনু নয়তো ভাসমান আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের মল আমাদের বিশেষ কিছু এলার্জির জন্য দায়ী। সম্ভবত আমাদের হোম গ্রহতেও আণুবীক্ষনিক এমন কিছু আছে, কিন্তু তারা আলাদা, এবং আমরা তাদের সাথে অভ্যস্ত ছিলাম। সেখানে ঠিক যে পদ্ধতিতে পরাগায়ন হয়- অবশ্যই পৃথিবীতে এমন নয়। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত আর গোলমেলে- এত সুদীর্ঘ বিবর্তনের পথ ধরে হেটে আসার পরেও বাতাসে থাকা ভয়ঙ্কর এই জিনিসগুলি আমাদের কাছে নতুন।
ধুলোতে থাকা আণুবীক্ষণিক পোকা (dust mites)যা মানব শরীরে বিশেষ কিছু এলার্জির সৃষ্টি করে।
যদি বিষয়গুলো যেমন আছে তেমন চলতে থাকে তাহলে আমরা এই জিনিস সহ্য করতে বিবর্তিত হচ্ছিনা কেন? আমাদের ওষুধ আছে যা এসব রোগ বা উপসর্গ নিরাময় করে (কিছু পরিমাণ)। কিছু মানুষ হাঁপানিতে মারা যায়, কিন্তু অতি স্বল্প সংখ্যক খুব বেশি নয়। আপনি কি কখনও খড় জ্বরে কেউ মারা যাওয়ার কথা শুনেছেন? তেমনটা হয় না ততক্ষণ পর্যন্ত যদি না তাদের ফুসফুস অন্য কোন প্রাণ সংহারী রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। অবশ্য খড় জ্বর বা হাঁপানি আক্রান্ত ব্যক্তিরা অন্য সুস্থ সবল মানুষদের চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়- তাই তাদের বংশবৃদ্ধির সম্ভাবনা কম নয়। যদি তারা তাদের রোগের বা উপসর্গের জন্য নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নেয় তাহলে তারাও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে তারা তাদের রোগ ছড়িয়ে দেয়( বেশীরভাগ ক্ষেত্রে) পরবর্তী বংশধরের দেহে। তবে বিবর্তন এই সমস্যার সমাধান করছে না- বিবর্তন তক্ষন পর্যন্ত সমাধান করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত বিবর্তনের দিকে সহায়তার হাত না বাড়িয়ে দিচ্ছি। জিন থেরাপি, অবশেষে একটি সমাধান হয়তো প্রদান করতে পারে। তারপরে আমাদের আশা করতে পারি যে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করবে।
অবশ্যই প্রচুর লোক আছে যারা অভিযোগ করে যে, জেনেটিক বিষয়গুলো আসলে ‘ভগবানের লীলা’। কিন্তু ভীনগ্রহবাসীরা যখন আমাদের নিয়ে এসেছিল তখন কি এখানে ঠিক তাই হয়নি? এখানে এই গ্রহে জীবনকে সম্পূর্ণ সহনীয় করে তোলার একমাত্র উপায় হল ঈশ্বরের সেই খেলা আমাদের নিজেদেরই খেলতে হবে - এবং আমাদের এখনও একটি দীর্ঘ, সুদীর্ঘ পথ যেতে হবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
৯। ডায়েট
আমি আগেই উল্লেখ করেছি, যদিও পৃথিবীর খাদ্যই ভোজ্য এবং উচ্চ (বা এমনকি অত্যধিক) পুষ্টিকর। আমাদের হোম গ্রহে আমরা যা ব্যবহার করছি তার তুলনায় এটি বেশ ভয়ঙ্কর। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম বাদে,মুল ব্যাপার হোল এখানে যা পাওয়া যায় তার স্বাদ, রঙ বা টেক্সচার আমরা পছন্দ করি না। তাই অনেক পথ পেরিয়ে এখন আমরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে হাইব্রিড খাদ্য উৎপাদন করে আমাদের পছন্দমাফিক সবকিছু বদলে নিচ্ছি।
উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীর প্রাকৃতিক-ভাবে উৎপাদিত বন্য গাজর ছোট এবং বেগুনি এবং কাঠের স্বাদ। যেটা আমাদের পছন্দের নয়। তাই আমরা সেগুলিকে বড় এবং কমলা রঙ আর মিষ্টি স্বাদযুক্ত বানিয়েছি।
প্রথম ছবিঃ বন্য গাজর। দ্বীতিয় ছবিঃ ওয়াশিংটন রাজ্যে বন্য গাজরের বীজের বিস্তার রোধে প্রচারণার পোস্টার। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হল যে আমরা পৃথিবীতে যে খাবারটি সত্যিই পছন্দ করি সেগুলো সত্যিই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। নিশ্চয়ই আমরা সঠিক উপায়ে সেগুলোকে বিবর্তিত করতে পারিনি? যুক্তি বলে যে আমরা ভুল বিবর্তনের পথে হাঁটছি আমাদের স্বাদ আর শরীরের উপযোগী করতে যেই খাদ্যগুলো বিবর্তিত করেছি সেগুলো উলটো আমাদের শরীরের প্রতি হুমকিস্বরূপ হয়ে গেছে। যুক্তি বলে আমাদের জন্য সেরা জিনিসগুলিকে ভালবাসতে এবং এই জিনিসগুলি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বিবর্তিত হওয়া উচিত ছিল না। তবুও উল্টোটাই সত্যি বলে মনে হয়। কেন?
এর একেবারে সহজতম ব্যাখ্যা হল –আমাদের আদিবাস এই গ্রহে নয়।
পৃথিবীতে আমাদের জন্য সেরা খাবারগুলি:
কাঁচা ফল এবং সবজি, বাদাম, বেরি, মাছ, সাদা মাংস।
পৃথিবীতে আমরা যে সব খাবার খাই:
কাঁচা ফল এবং সবজি, বাদাম, বেরি, মাছ, সাদা মাংস।
পৃথিবীতে যে খাবারগুলো আমাদের জন্য খারাপ:
চকোলেট, চিনি, লবণ, লাল মাংস, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়।
পৃথিবীতে আমরা যে খাবারগুলো সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি:
চকোলেট, চিনি, লবণ, লাল মাংস, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়।
এটা মোটামুটি বলা প্রয়োজন যে, হয় দীর্ঘ সময়ের জন্য বিবর্তন এলোমেলো হয়ে গেছে কিংবা আমরা সম্ভবত এই গ্রহের প্রাণী নই।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকের (সম্ভাব্য প্রাণঘাতী) কিছু খাদ্যে অসহিষ্ণুতা( এলার্জী বা অন্য শারিরিক উপসর্গ) রয়েছে এখানে পাওয়া যায় এমন অনেক খাবারে: গম, গ্লুটেন, গরুর দুধ (ল্যাকটোজ), ডিম, ইস্ট(খামির), বাদাম এবং আরও অনেক কিছু।
তাই লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের পরও অনেকে আমরা এখনও এখানকার খাবার সহ্য করতে পারি না -কেন? ভাবতে গেলে মাথা কাজ করে না!!!
আমরা স্পষ্টতই এখানে এতদিন ছিলাম না এবং আমরা স্পষ্টতই ভিন্ন কিছুতে অভ্যস্ত।
আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
শুরু থেকে শুরু করলেঃ Click This Link
************************************
বিশেষ নিবন্ধঃ
খড় জ্বর হল শ্লেষ্মা ঝিল্লির সংক্রমণ দ্বারা নাকের এক ধরণের অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া যা নির্দিষ্ট ধরণের সংক্রমণের সাথে আক্রান্ত হয। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে যেমন কিছু গাছের পরাগায়নের সংবেদনশীলতা যেমন জলপাইয়ের সংবেদনশীলতা, যা পরাগযুক্ত বায়ু শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে সংক্রমণ হয়। ধূলিকণা, ছত্রাক এবং কিছু ধরণের পোকামাকড়ের অ্যালার্জির কারণে সংক্রমণ হতে পারে। কুকুর এবং বিড়ালের মতো প্রাণীদের কারণে অনেকে এই অ্যালার্জিতে ভোগেন।
খড় জ্বরর সংবেদনশীলতা একধরণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখা দেয়, একবার শরীরে প্রবেশ করার পরে ব্যাকটিরিয়া দ্বারা অ্যান্টিবডি বা দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর এগুলি আক্রমণ করে। কাশি এবং হাঁচি এবং বিভিন্ন লক্ষণগুলি দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলি একজনের থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সংক্রামিত হয়।
খড় জ্বর এলার্জি কারণ:
১।ইমিউন সিস্টেম বাধাপ্রাপ্ত হয়।
২।জিনগত কারণে।
৩।হাঁপানির মতো কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ এর কারণে।
৪।অনুবিক্ষণিক পোকা ও পরাগের মতো অনুবিক্ষনিক উপাদানগুলির মাধ্যমে।
৫।তামাক ও ধূমপান খড় জ্বরতে ভূমিকা রাখে।
৬।অনুনাসিক মিউকাস ঝিল্লি প্রদাহ।
খড় জ্বর লক্ষণ:
১। নাক ও শরীরে চুলকানি।
২।ঘন ঘন কাশি এবং হাঁচি।
৩।চোখের লালভাব সৃষ্টি করে।
৪।শ্বাসকষ্টের সময় শ্বাসকষ্টের মতো শব্দ হয়।
৫।দেহে স্ট্রেস ও সাধারণ দুর্বলতার অনুভূতি।
৬।স্রাব বৃদ্ধি হয় ও কিছু ক্ষেত্রে গনোরিয়া সৃষ্টি করে।
৭।কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট।
৮।মাথার বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা অনুভব করা।
৯।ব্ল্যাকহেডস ও চোখের পলকের ফোলাভাব।
১০।অনিদ্রা এবং ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৪৯