somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চৌদ্দ-তে ১৪ (পর্ব-২)

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চৌদ্দ-তে ১৪ (প্রথম পর্ব)
করোনা ও আমার উপলব্ধি:
চমকা পৃথিবী থমকে গেল! দু’চার রুমের একটা ফ্লাট আর একটুকরো বারান্দা-এই ছোট্ট ক্ষেত্রে আটকে গেল জীবন। বাইরের পৃথিবী দেখা যায় ওই বারান্দাটুকু দিয়ে- কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই একই দৃশ্য! সবকিছু যেন ‘পস’ করে দিয়েছে কেউ-দু’চারটে নেকড়ে কুকুরদের দখলে ফুটপাথ ও রাস্তা। শুধু সকাল থেকে সন্ধ্যা হয় আর সন্ধ্যা থেকে রাত ভোর হয়- আলোর তারতম্য ছাড়া আর কোন পরিবর্তন নেই। টেলিভিশন মোবাইল কম্পিউটার আর কতক্ষণ! মনের মধ্যে যখন সারাক্ষণ মৃত্যু চিন্তা দাবড়ে বেড়ায় তখন কাহাতক আর এসব ভাল লাগে!
এক নিমেষে কাছের মানুষগুলো দুরের নক্ষত্র হয়ে গেল! সারাদিন কতই না তাড়াহুড়ো এটা না করলে ওটা না হলে লাইফ বরবাদ। কখনো বেহুশের মত গাড়ি চালাই, কখনো জানের ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হই- একটা কাজ হারালে হতাশায় মুষড়ে পড়ি। সময় মত ডেলিভারি না দিলে যেন পৃথিবী-শুদ্ধ গোলমাল বেধে যাবে!
কিন্তু আজ আর কোন কাজ নেই- জীবনের কোন কিছুর মানে নেই। জীবন বাঁচানোই এখন মুল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যেন!!
প্রথমে গিন্নীর জ্বর আসল। সে অতিরিক্ত সতর্কতায় দ্রুত নিজেকে আইসোলেট করে নিল।
কি ভয়াবহ অবস্থা! আমার দশ এগার বছরের ছেলে আর চার বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে পড়লাম অথৈ পাথারে। এভাবে একাকী ওদের কখনো সঙ্গ দেইনি। মেয়ে সেদিন প্রথমবার ওর মাকে ছাড়া আমার সাথে ঘুমাল। আমার এক পাশে ছেলে আরেক পাশে মেয়ে। করোনা হলেই সবাই নিশ্চিত মরে যাবে সবার মধ্যে এমন ভাবনা ছিল তখন। দুপাশে দু’জনকে নিয়ে সারারাত নির্ঘুম ভাবলাম; ও চলে গেলে এভাবেই এদেরকে নিয়ে বাঁচতে হবে!
শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছিল। দুদিন বাদেই এক সকালে ব্লাক কফিতে চুমুক দিতেই বিস্বাদ ঠেকল। নাকে কোন কফির গন্ধ আসছে না- তার মানে আমি করোনায় আগেই আক্রান্ত হয়েছি!!
এবার ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মধ্যে এসে দাঁড়ালাম! আমি আইসোলেশোনে গেলে বাচ্চা দুটোর দেখভাল করবে কে? আমার নীচ তলায় বোনেরা থাকে। এক ব্লক দুরেই ছোট ভাই থাকে বৃদ্ধা মা আর পঙ্গু ভাইকে নিয়ে। জানিনা ছেলে-মেয়ে করোনার জীবাণু বহন করছে কি-না? ওদেরকে ওখানে পাঠিয়ে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া ঠিক হবে না। নিজের আপন মা-বোন থেকে দূরে থাকাই তখন তাদেরকে সেফ রাখা।
ছেলে মেয়ে যেন হুট করে বড় হয়ে গেল! ছেলেটা তার বোনের দায়িত্ব নিয়ে নিল সাবলীলভাবে। আমি বা আমার গিন্নি এক ফাঁকে সারা দিনের রান্না করে ওদের জন্য টেবিলে খাবার ঢেকে রেখে ফের রুমে ঢুকে যাই। ওদের মত কোন গোলমাল না করে খেয়ে নেয়, ছেলেটা তার বোনকে আদর করে খাইয়ে দেয়। দূর থেকে আমি নজর রাখি ওদের দিকে আর ভাবি; আমাদের দু’জনের ছাড়া ওরা পৃথিবীতে এভাবেই থাকবে।
বই পড়ে কম্পিউটার দেখে দিন কেটে যায় কোনভাবে কিন্তু রাত আর কাটতে চায় না। সারারাত অন্য রুম থেকে ওর চাপা কাশী আর মৃদু শ্বাসকষ্টের শব্দ বুকের উপর যেন পাথর চাপা দিয়ে রাখে। মাঝে মধ্যে এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ মৃত্যুভয়কে জাগিয়ে দেয় বহুগুণ!

টা কোন কথা হোল এভাবে চলে যাব!! কত কিছু বলার ছিল, কত কিছু করার ছিল, কত স্বপ্ন সাধ আশা এই চার দেয়ালের বন্দীদশায় শেষ হয়ে যাবে? (আমাদের দুই পরিবারের ৮ এর অধিক প্রিয়জন হারিয়েছি করোনায়)

নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করে শেষে আঁকড়ে ধরলাম ফের লেখা-লেখিকে! সেবার করোনা থেকে খুব সহজেই বেঁচে ফিরলাম আর লিখে গেলাম দীর্ঘ ছয়মাস একটানা (কাজ-কাম করেছিও কিছু)। করোনা আমাকে নতুন করে জীবন দিল যেন। আমাকে বুঝিয়ে দিল প্রকৃতিতে কত নিঃসঙ্গ অসহায় আমি। করোনা আমাকে শিখিয়ে গেল এ মহাবিশ্বে কেউ কারো নয়- দিন শেষে ভীষণ একা আমি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে জানলাম; করবো বলে কোন কিছু ফেলে রাখা যাবেনা। হয় এখনি করতে হবে না হলে কখনোই নয়।
ফের আমি আমার প্রিয় ব্লগ-মুখী হলাম- ব্লগারেরাও আমাকে অতি সাদরে কাছে টেনে নিল। হয়তো কিছু হবে না- হয়তো কিছু পাবনা। আমি যা ছাইপাঁশ লিখি সেটা দিয়ে পৃথিবীর কোন ক্ষতি-বৃদ্ধি সাধন হবে নাদ। তবুও যতক্ষণ আঙ্গুল চলবে, চোখের দৃষ্টি ঘোলা হয়ে না আসবে, অমোঘ মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শ না পাই ততদিন লিখে যাব। হতাশা মানুষকে শুধু পিছনে ঠেলে দেয়- আরও বেশী হতাশ করে, রূঢ় করে নিঃসঙ্গ ও হিংস্র করে।
লেখালেখি আমার একান্তই আমার, এ ভুবনে আমার সদর্প বিচরণ! আমি আমার সাথে গল্প করি, আমাকে নিয়ে গান বাঁধি, বিশ্বের সব মহান মনিষীরা আমার স্বপ্নের সারথি হয়, জগতের তাবৎ মহা-সুন্দরীরা আমার রোমান্টিসিজমের সাথী হয়, আমার ফ্যান্টাসি কিংবা কল্পলোক ছুঁয়ে আসে মহাবিশ্বের কোর কে। আর কি চাই- জীবনের প্রতিটা দিন আনন্দের প্রতিটা ক্ষণ উপভোগের।
(আরো কিছু বলার ছিল কিন্তু আমার সাহিত্য সৃষ্টি করার ক্ষমতা ভীষণরকম সীমিত)

কেকটা দিন যায় শত স্বপ্ন, আশা আর ভালবাসা না পাওয়ার হতাশা নিয়ে লক্ষ মানুষ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়- আর আমি ভাবি কি সৌভাগ্যবান আমি আরেকটা দিন বেঁচে রইলাম!! প্রখর সূর্যালোক আর সাথে প্যাচপ্যাচে ঘামও তখন উপভোগ্য মনে হয়।
কারো কটু কথা তখন গায়ে লাগেনা- মাঝে মধ্য উপভোগ্য মনে হয়।

মানুষ আমি লোভ লালসা অহংকার ঘৃণা হতাশার ঊর্ধ্বে নই- তবুও নিজেকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টায় প্রতিনিয়ত মত্ত! আশীর্বাদ করবেন।

(অতীব সংক্ষিপ্তকারে)
******
১৪ই ডিসেম্বর ২০০৮
প্রথম আলোর ব্লগে ঘোরাঘুরি করছি তার জন্মলগ্ন থেকেই। লেখালেখির সখ অনেক দিনের তবুও ইচ্ছে হয়নি তেমন করে কখনো প্রচার বা প্রকাশের।
সুযোগ এসে হাতের মুঠোয় ধরা দিতে চাচ্ছেই যখন, তখন ভাবনাটা না হয় একটু শেয়ারই করি। ধন্যবাদ সামহোয়্যার ইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে এমন একটা সুযোগ করে দেবার জন্য।
চিটি (হামিদা রহমান) বলেছেন: ব্লগে সু-স্বাগতম!! পথ চলা হোক আনন্দের। শুভকামনা থাকলো।

~তিনি শেষবার কারো পোস্টে মন্তব্য করেছিলেন ০৭ ই অক্টোবর, ২০১১ সালে। তারপর আর ব্লগ-মুখো হননি সম্ভবত! কেমন আছেন চিটি আপু? ভাল থাকুন যেখানেই থাকুন যেভাবেই থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২৭
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×