
সে দৌড়াচ্ছে উর্দ্ধশ্বাসে-বৃষ্টিভেজা পিচ্ছিল জমির আইল বেয়ে ছুটে যাচ্ছে সে। কখনো পা হড়কে কাদামাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে আছড়ে পড়ছে কেটে নেয়া ধানের শক্ত ধারালো খড়ের জমির উপর। কোনমতে হাচড়ে পাঁচড়ে উঠেই ফের দৌড়াচ্ছে সে। পায়ের সেন্ডেলজোড়া কাদায় আটকে ছিড়ে গেছে। কচি শরিরের এখানে ওখানে ছড়ে গিয়ে-কাদায় রক্ত মিশে অন্য এক রঙ ধারন করেছে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার! প্রাণ বাঁচাতে তার এই ছুটে চলা। পিছনে ছুটে আসছে রক্ত মাংসের মানুষরুপী একদল হায়েনা!ছেলেটার বুকের কাছে আঁকড়ে ধরা কিছু একটা- দুর থেকে ঠাহর হয় না। হয়তো ভাঙ্গা একটা তালা- কিংবা বহু পুরনো অচল হয়ে যাওয়া একটা টেবিল ঘড়ি!পিছনের মানুষগুলি পণ করেছে আজকে ওকে মেরেই ফেলবে-ধর ধর বলে ভয়ঙ্কর রব তুলে তারা ছুটছে ওর পিছু পিছু।
তের-চৌদ্দ বছররে কিশোর সেই ছেলেটা মৃত্যু ভয়ে ভীষনভাবে শংকিত!মানুষের নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার সাথে জন্মলগ্ন থেকেই পরিচিত। সে বিস্মিত নয় হতবাক নয়- নিঃশ্বাসে তার আগুনের হলকা-ছোট্ট বুকের ছাতিটা যেন ফেটে যেতে চাইছে।
কোনমতে দৌড়ে সে খাল পাড়ে এসে দাড়ালো। চকিতে পিছন ফিরে একবার দেখে নিল তার দিকে ধেয়ে আসা মৃত্যু পরোয়ানা হাতে সেই মানুষগুলোর দিকে।আর মাত্র কয়েক গজ –ওরা কোন মতে নাগাল পেলেই তার কৃষ ছোট্ট শরিরটাকে তুলে আছড়ে পিটিয়ে কুপিয়ে ভবলীলা সাঙ্গ করে দিবে।
সামনেই ভরা বর্ষার যৌবনবতী খাল। মুল পদ্মার সাথে সংযুক্ত এই খালে যেন পদ্মার-ই আদিম উন্মত্ততা। কি ভীষন স্রোত- সেই স্রোতের শব্দ শোনা যায় বহুদুর অব্দি।কোন কিছু না ভেবে বাঁচার তাড়নায় সে ঝাপিয় পড়ল সেই খালে।
তারপর ... না। সে দক্ষ সাতারু!খালের স্রোত তার হ্যাংলা শরিরটাকে বহুদুর টেনে নিয়ে গেলেও সে ঠিক-ই এপাড়ে এসে পৌছুতে পেরেছিল।আর সেই মানুষগুলোর বিরত্ব সেখানেই শেষ!শুধু পাড় থেকে খিস্তি-খেউড় করে আর ঢিল ছুড়ে তাদের বাকি ক্ষোভ ও আক্রোশটুকু মেটাল।
***
যাকে নিয়ে এই গল্প সেই কিশরের জন্মটা হয়েছিল খানিক অবহেলায়। স্বাধীনতার অল্প ক’দিন পরেই সে তার মায়ের গর্ভে আসে। তখন তাদের ভেঙ্গে যাওয়া ব্যবসা আর পুড়ে যাওয়া বাড়ির সাথে পুরোপুরি নতুন করে সংসার গোছানোর পালা। কপর্দকশুন্য দিশেহারা বাবার তার মেজাজ সারাক্ষন সপ্তমে চড়ে থাকে। এটা ওটা বেচে,এদিক ওদিক থেকে ধার করে কোনমতে সে সংসার আর ব্যবসায় জোড়াতালি দেবার চেষ্টা চালাচ্ছে। মায়ের তখন সামান্যক্ষন অবসর নেবার সময় নেই-ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা সব উচ্ছন্নে গেছে। লুট হয়ে গেছে তার অতি যত্নে গুছিয়ে রাখা সামান্য সম্বল আর গয়নাগাটি।ঘটি নেই বাটি নেই গেলাস থালা কিচ্ছু নেই-নতুন করে ঘর সে গোছাবে ক্যামন?
দুর্বল শরিরে কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠে সে- পেটের সন্তানটাকে অভিসম্পাত দেয় সে তখন। কেন যে এই দুঃসময়ে পেটে এসেছিল!এটা কোনমতে পেট থেকে বের হলেই সে বাঁচে। গর্ভপাত হলে কিংবা ভ্রুনটা নষ্ট হয় গেলে তিনি হয়তো অখুশী হতেন না।
দো-চালা স্যাতস্যাতে বাঁশের বেড়ায় ছাওয়া ঘরে তার জন্ম। সময়ের আগে যথারীতি অপুষ্ট সন্তান তার।তবুও ছোট্ট এতটুকুন ন্যাকড়ায় জড়ানো সেই কচি ছেলেটার চাঁদমুখ দেখে তার মায়ের মন তৃপ্ত হয়।
তারপর চল্লিশ দিনের আতুড়ঘর!মায়ের সময় নেই সেই আতুড়ঘরে সন্তানের যত্ন-আত্মির।বারো আর নয় বছরের কিশোরী দুটো বোন তাদের অপটু হাতে সারাক্ষন তাকে আগলে আগলে রাখার চেষ্টা করে।বড় তিনটে ভাইয়ের একজনের বয়স ছ’বছর হলেও এখনো সে হাটতে পারেনা। সারাক্ষন সে হামাগুড়ি দিয় চলে আর বড় বড় চোখ তুলে অসহায়ের মত তাকিয়ে থাক সবার দিকে একটু আদর আর ভালবাসার আশায়।আর একজনের বয়স মাত্র তিন। সদ্য সমাপ্ত যুদ্ধ যদিও তার বয়স বাড়িয়ে দিয়েছে খানিকটা তবুও সে মায়ের কোলের কাছে ঘুর ঘুর করে তার একটু সান্নধ্যি পাবার আশায়।
সদ্য সমাপ্ত এক যুদ্ধ ভীষন ভাবে পাল্টে দিয়ে গেছে পুরো এই দেশটাকে। ধ্বংস স্তুপ থেকে ফের মাথা তুলে উঠে দাড়াবার চেষ্টা করছে পুরো বাংলাদেশ নামের ছোট্ট ভুখন্ডের মানুষগুলো।কোনমতে শোক কাটিয়ে এখন তকরা ছুটছে জীবন জীবিকার তাগিদে উদ্ধশ্বাসে! চাকুরি নেই-বসতবাড়ি পুড়ে গেছে লুট হয়েছে , ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিঃশ্চিহ্ন! কারো ভাইয়ের শোক কারো সন্তানের কারো মা-বাবার কিংবা কারো পুরো পরিবারের। কেউবা কিচ্ছু হারায়নি কিন্তু পুরো নিঃস্ব রিক্ত হয়ে গেছে। আপনজনের মৃত্যুর ধকল কাটিয়ে রমণীরা ব্যাস্ত নতুন করে সংসার গোছানোর কাছে- আর পুরুষেরা জীবিকার তাগিদে।
মানুষ খানিকটা নিঃস্বংশ হয়ে গেছে, হয়ে গেছে আত্ম কেন্দ্রিক স্বার্থপর। মানবিকতা লোপ পেয়েছে অনেকখানি। একটি নিরিহ, আত্মজ বন্ধু আর অতিথি অন্তপ্রান জাতি মাত্র বছরখানেকের ব্যাবধানে কতটা পাল্টে যেতে পারে সেটা সচক্ষে না দেখলে অনুধাবন করা অসম্ভব!
***
Piano Man | by Billy Joel
It's nine o'clock on a Saturday
The regular crowd shuffles in
There's an old man sittin' next to me
Makin' love to his tonic and gin
He says, "Son can you play me a memory?
I'm not really sure how it goes
But it's sad and it's sweet and I knew it complete
When I wore a younger man's clothes"
Sing us a song you're the piano man
Sing us a song tonight
Well we're all in the mood for a melody
And you've got us feeling alright
He says, "Bill, I believe this is killing me"
As a smile ran away from his face
"Well, I'm sure that I could be a movie star
If I could get out of this place"
And the waitress is practicing politics
As the businessmen slowly get stoned
Yes they're sharing a drink they call loneliness
But it's better than drinking alone…
For his departed soul - This single song he most listened in his abroad life.
অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি ~১
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



