somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুবোধ কাজী~২

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাজী সাহেবের লেখার স্টাইল দেখে আমার মাথা ঘুরে যাবার দশা! তিনি লিখতে গিয়ে বুড়ো আঙ্গুলের ব্যবহার করেন না। তিনি অনামিকা আর মধ্যমার মাঝে কলমটা বিশেষভঙ্গীতে চেপে ধরে কলম খাড়া করে লিখেন। আপনি যখন এক লাইন লিখে শেষ করবেন তখন তাঁর একটা তিন অক্ষরের শব্দ শেষ হবে। তাঁকে ডিক্টেট করা বেজায় মুশকিল।
তাঁর চশমা, কাগজ, কলম, টেবিল চেয়ারের তখন হাত পা গজিয়ে যায়। তারা তখন বেজায় ঝামেলা শুরু করে।
নিবের সাথে কাগজ আটকে যায় কিংবা কালি বেরোয় না, কলম ঝাকাতে গিয়ে দূরে ছিটকে পড়ে , কলম আনতে গিয়ে চেয়ারের সাথে উষ্টা খায়, তাড়াহুড়োয় বসতে গিয়ে টেবিলের সাথে দুম করে গুতো খেয়ে মুখ চোখ কুচকে মনে মনে উঃ আঃ করে। চোখের চশমা বার বার ঘোলা হয়ে যায়।
দশ মিনিটে যেই কাজ হবার কথা সেইটে শেষ আর হতে চায় না - অবশেষে রাগে দুঃখে চুল ছিড়তে ছিড়তে নিজেই লিখে তাঁর হাতে কাজের লিষ্টি ধরিয়ে দিতে হয়।
***
রপরেও কিন্তু শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলানোর জো নেই। এরপরে শুরু হয় তাঁর প্রশ্নবান। এইটা কি ওইটা কেন? ওই লোকের নম্বর- ওইখানে ক্যামনে যাব? ওইটা দেখতে কেমন -আমি কি চিনব? এইটা কি লিখছেন?
আমার 'ওয়ান ম্যান শো কোম্পানী' কোম্পানীর ছোটবড় প্রায় সব কাজ আমি দেখতাম - সাথে ছিল তুহিন শুধু( ওর কথায় পরে আসছি)। যে কোন কাজের শুরুটা হত (এখনো হয় তবে বেশ কিছুটা ছেড়ে দিয়েছি) আমার হাত দিয়ে। আমার অলক্ষ্যে কিছুই হয় না। সেজন্য প্রত্যেককে কাজ বুঝিয়ে দেবার শুরুটা করতাম ( দশ বছর আগের কথা বলছি)।
যাই হোক, স্বভাবতই প্রথম দিনই জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি এভাবে লিখেন কেন?
শুরু হল তারা ম্যারাথান উত্তর। বুড়ো আঙ্গুলে কবে কোথায় কিভাবে ব্যথা পেয়েছিল, তাঁর পর কি কি চিকিৎসা করেছিল, কোন কোন কবিরাজ ডাক্তার তাঁকে কি কি পথ্য দিয়েছিল? কত ধরনের ডায়াগোনসিস টেস্ট সে করেছিল? অবশেষে অগত্যা সে বাধ্য হয়েছে এভাবে লিখতে- এই পুরো বয়ান শুনতে শুনতে আমি আমার জরুরী সব কাজের কথা ভুলে গিয়েছিলাম বেমালুম!
***
খন বুঝিনি ইনি গল্পের জাহাজ!পেটের মধ্যে হেন তেন কোটি কোটি আকামের গল্প নিয়ে ঘোরেন - সারাদিন সে গল্প গ্যাসের মত ফুলে ফেঁপে ওঠে! মনের মত মানুষ না পেলেও অন্তত কুলি মজুর চায়ের দোকানদার কিংবা রিক্সাওয়ালাকে অন্তত না বলে হালকা হতে না পারলে উনি পেট ফুলে মারা পরবেন।
তাই আসল কাজ ভুলে উনি সারাদিন গল্প করার লোক খুঁজেন।
বাপ দাদা ঢাকার লোক তিনিও ঢাকার মানুষ তবে কুট্টি নন। খানদানী বংশ। বংশটাই খানদানী 'কাজী' আছে কিন্তু প্রায় চালচুলো বিহীন। বাপের ঢাকায় বহু সম্পত্তি ছিল। তিনি ছেলেদের আরাম আয়েশে মানুষ করেছেন। ছেলেরা 'অমানুষ মুর্খ' হয়নি কিন্তু 'অপদার্থ অকর্মণ্য' হয়েছে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সয়ার ছোট ছিল সুবোধ কাজী বাবার সবচেয়ে আদরের সন্তান। কৈশরে কোনদিন একগ্লাস পানি ঢেলে খাননি। বাজার-সদাই তো দুরের কথা; মোড়ের দোকান থেকে এক প্যাকেট বিস্কুট পর্যন্ত নিজের হাতে কিনেননি। স্কুলে যেতেন, তবে পড়াশুনায় ছিলেন লবডঙ্কা- সারাদিন ছিল আড্ডা ঘোরাঘুরি আর বিড়ি খাওয়া। স্কুল ফাঁকির ছিল হাজারো বাহানা। প্রভাবশালী বাপের আসকারায় স্যারেরাও কিছু বলার সাহস পেতেন না। কোনভাবে নমঃ নমঃ করে পাশ করে যেতেন।
বাপ শেষ বয়সে ছিটগ্রস্থ হয়ে যায়। অনেক জমিজমা বিক্রি করে দেন। তিনি মারা যাবার পরপরই সরকার তাদের বেশিরভাগ ভুসম্পত্তি 'টেকনিক্যাল কলেজ' করার জন্য অধিগ্রহন করে নেয়। সে সময়ে সরকারের সাথে কি নিয়ে একটা মামলার জন্য তারা কোন ক্ষতিপুরণ ও পায়নি নাকি।
একগাদা ভাই-বোন প্রায় আকুল পাথারে পরে। সবচেয়ে করুণ দশা হয় সুবোধ কাজীর। বাকি ভাইয়েরা যার যার মত কাজ কর্ম খুঁজে নিলেও সুবোধ সাহেব কিছুই জোটাতে পারলেন না- কেননা তিনি কিছুই জানেন না। তিনি জানেন শুধু চা- বিড়ি খেতে আর গল্প করতে।
গপ্পের গরু গাছে তুলে সেটাতে নানান রঙ চড়ান!
***
সুবোধ কাজী ~ প্রথম পর্বের লিঙ্ক এখানে
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ১০:১৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×