
সীতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পাওয়া সম্ভব হয় বাড়িওয়ালা সুভাষ দাশের বুদ্ধিমত্তার কারণে। প্রতিটি বাড়ির মালিক যদি এমন সচেতন হত তাহলে জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সহজ হয়ে যেত। এই জঙ্গি সমস্যা শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকারের নয়। যে কোন সময় বাড়িওয়ালা জঙ্গি আশ্রয় দেয়ার কারণে বিপদে পড়তে পারেন। বিপদে পড়তে পারে তার প্রতিবেশীরাও। কাজেই তাদের নিজেদের স্বার্থেই খোঁজ-খবর রাখতে হবে তার প্রতিবেশী পরিবারের সম্পর্কে। একটু চোখ-কান খোলা রাখলে আমরা অনেক বিপদ থেকে দূরে থাকতে পারি। আমাদের জীবনটা ধীরে ধীরে ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। পাশের ফ্ল্যাটে কে আছে, কেমন আছে, কী করে তার কিছুই আমরা জানি না। জানার চেষ্টা করি না। একটা সময় শহরের মহল্লার প্রতিটি মানুষ কে কী করত সেট জানত। সবাই ছিল একটা সমাজ ভুক্ত সেটা গ্রামের মত ততটা শক্তিশালী যদিও ছিল না। আমরা দিন দিন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছি, অমানবিক হয়ে যাচ্ছি—প্রতিবেশীর কাপড়ে আগুন লেগেছে শুনে দরজা ভাল করে লাগিয়ে দেই(সত্য ঘটনা)। যে সমাজে মানবিকতা লোপ পায়, মানুষ স্বার্থপর হয়ে ওঠে সে সমাজ বিশৃঙ্খল হয়ে এক সময় বিলুপ্ত হয়। নয়ত অত্যাচারীরাই চিরকাল টিকে থাকত—সমাজ নৈতিকতার চর্চা করত না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে আজ আমাদের বন্ধুবৎসল, প্রতিবেশীর ভাল-মন্দের খোঁজ না নিয়ে উপায় নেই—হয়ত এটাই প্রকৃতির এক রকম প্রতিশোধ!
জঙ্গিদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা দেখে আমরা সন্দেহ করে সতর্ক হতে পারি। আগে তারা নারীদের যুক্ত করত না, আজকাল নারী, শিশুদের নিয়ে একটা পরিবারের মত থাকে। এরা নিজেদের মতের অনুসারীদের ভেতরেই বিয়ে করে। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে খুব ঘন ঘন বাড়ি বদল করে। তাই ভারি আসবাব বলতে গেলে থাকে না। এই বিষয়টি আমরা সহজেই লক্ষ করতে পারি। বাড়ি ভাড়া দেয়ার সময় জানা উচিত আগের বাড়ি কেন ছেড়েছে। আয়ত্তের ভেতরে থাকলে যেখানে ছিল খোঁজ নেয়া যায়। যদি দেখা যায় সেই বাসাতেও সে খুব কম সময় থেকেছে, তবে তাকে সন্দেহ করা যেতেই পারে। ব্যবসায়ের কথা বা যেটাই বলুক সন্দেহ হলে কর্মক্ষেত্রে খোঁজ –খবর করা দরকার। তবে এ কাজটি মূলত পুলিশই ঠিকঠাক মত করতে পারবে। বাড়ির মালিকের নিশ্চয়ই অন্য কাজ আছে। তবে সামর্থ থাকলে চেষ্টা করা উচিত।
জঙ্গিরা নিয়মিত কোনও চাকরি করে না। বেশির ভাগই বলে অমুক ব্যবসা করে। হয়ত এটা বলে তাদের বিভিন্ন সময় এটা-ওটা বহন করে বাড়িতে আনতে হয়। তাই কেউ যেন সন্দেহ না করে তার আগাম সতর্কতা। বিভিন্ন কার্টন, বস্তার টানাটানি করলে ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা উচিত। এদের দুই শ্রেণি আছে কারও বাসায় তেমন কেউ আসেই না, আরেক শ্রেণির বাসায় হরদম অপরিচিত লোকের আনাগোনা থাকে। তবে দুটো বিষয়ে সব সময় মিল লক্ষ করা যায়—দরজা, জানালা সব সময় বন্ধ করে রাখে আর তারা কারও সাথে মেলামেশা করে না।
যে কেউ যখন তখন আমার বিপদে পড়ে যেতে পারি। আপনার পাশের ফ্ল্যাটে যদি বোমার গুদাম থাকে, আপনি কথটা ঝুঁকিতে আছেন একবার চিন্তা করে দেখুন। তাই শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ছেড়ে দিলে চলব না। নিজেদের প্রয়োজনেই সুভাষ দাশের মত সচেতন হতে হবে । পিঠ আজ সবার দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে।
ছবি - বিডিনিউজ২৪.কম
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



