somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলায় নবাবের পতন ও ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা স্বল্প আলোচনা......

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি নয় কবি বা লেখক কিংবা ইতিহাসের আলোচক............
আমি এক সাধরণ ছাত্র আর গ্রাফিক্স ডিজাইনার, যে টুকু সময় পায় পড়তে বসি!
চল এবার মূল আলোচনা.......................................
বাংলা মুঘল সাম্রাজের একটি প্রদেশ ছিল। একজন সুবাদার এখানে শাসন করতেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর সুবাদার মুর্শিদকুলী খান এখানে প্রায় স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে থাকেন্। তিনি বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মাকসুদাবাদে স্থানান্তরিত করেন। তাঁর নামানুসারে এ স্থানের নাম রাখা হয় মুর্শিদাবাদ।
ইংরেজদিগকে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অনুমোদি দেন। ১৭২৭ খ্রীঃ তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর জামাতা সুজাউদ্দিন বাংলার মসনদে বসে। সে সময় বিহারও তাঁর শাসনভুক্ত ছিল এবং আলীবর্দী খান বিহারের শানকর্তা নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৭৩৯ খ্রীঃ সুজাউদ্দিন মৃত্যর পর তাঁর পুত্র সরফরাজ খান বাংলার নবাব হন। শাসক হিসাবে তিনি অতি দুর্বল। বিহারের শাসনকর্তা আলীবর্দী খান তাকে পরাস্ত করে বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাবী লাভ করেন।
নবাব আলীবর্দী খান যোগ্য শাসক ছিলেন। মারাঠা বর্গীদের আক্রমণই তাঁর সময়কার একটি প্রধান উল্লেখযোগ্য ঘটনা। অনেক টাকা পয়সার বিনিময়ে তিনি মারাঠা আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর বাংলার মসনরদে বসার পূর্ব হতেই ইংরেজরা এ দেশে বেশ প্রতিপত্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তিনি তাঁর আমলে অতিলোভী ইংরেজদেরকে কোন রাজনৈতিক ও সামরিক বৃদ্ধির তেমন সুযোগ দেননি। ইংরেজদের উদ্দেশ্য এবং শক্তি সম্বন্ধে সব সময়ই তাঁর দুশ্চিন্তা ছিল। নৌ-বলে বলীয়ান ইংরেজদেরকে এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া যে তেমন সহজ ব্যাপার নয় তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি তাদের সঙ্গে খুবই সতর্কতারমূলক নীতি অনুসরণ করে চলতেন। আলীবর্দী খানের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তিনি তাঁর মৃত্যর পূর্বেই কনিষ্ঠ কন্যায়র পুত্র সিরাজ উদ্-দৌলাকে নবাব মনোনীত করে যান। ১৭৫৬ খ্রীঃ এপ্রিল মাসে তিনি মারা যান এবং তাঁর পূর্ব মনোনয়নক্রমে সিরাজ উদ-দৌলা বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব হন।
সিরজা......
১৭৫৬ খ্রীঃ আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর মাত্র তেইশ বছর বয়সে সিরাজউদ-দৌলা বাংলার রাজ্বে বসেন। মসনদে বসেই সিরাজ নানা রকম বিপদের পড়ে। তাঁর সিংহাসনে আরোহণে তাঁর নিকট আত্নীয়ের অনেকেই দূর থাকে। তাঁরা তাকে অপসারণ করে সিংহাসনে বসার স্বপ্ন দেখতে থাকেন।
যখন সিরাজ এই সমস্য সমাধানে ব্যস্ত ঠিক তখনই ইংরেজা নানা রকম উৎপাত শুরু করে দেয়।

বিরোধ কারণ গুলো...........
১। সিরাজ উদ দৌলা মসনদে বসার পর ইংরেজরা রীতি অনুসারে সৌজন্য প্রকাশ করে তাঁর প্রতি স্বীকৃতি জানায়নি।
২। সিরাজরে বিরুদ্ধে রচিত চক্রান্তে ইংরেজগণ প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্রহণ করে।
৩। নবাবের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাস প্রচুর ধনরত্ন নিয়ে পালিয়ে এসে কলিকাতায় ইংরেজদের নিকট আশ্রয় নেয়।
৪। ইউরোপে ইংরেজ এবং ফরাসীদের মধ্যে সপ্তবর্ষের যুদ্ধ শুরু হলে ভারতবর্ষে এ দু'জাতির মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দেয়।
৫। নবাব তাদের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করলে ইংরেজরা তাঁর আদেশ অগ্রাহ্য করে।
৬। ইংরেজরা তাদের প্রদত্ত বানিজ্যিক সুবিধার যথেষ্ট অপব্যবহার করে তাদের স্বার্থসিদ্ধি জন্য নানাভাবে অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

ইংরেজদের বিরুদ্ধে নবাবেরর ব্যব্স্থাঃ
নবারেব কথা না মানার করণে সৈন্যবাহিনী নিয়ে নবাব কলিকাতায় রওনা হন। পথিমধ্যে তিনি ইংরেজদের বানিজ্য কুঠি কাসিম বাজার দখল করে। নবাবের আগমনের সংবাদে ভীত হয়ে কলিকাতায় ইংরেজ ঘাঁটি ফোর্ট উইলিয়ামের গভর্ণল তাঁর লোকজনসহ দূর্গ ত্যাগ করে জলপথে অন্যত্র চলে যায়। নবাব অতি সহজেই এটি দখল করে। দখল এর পর নবাব তার নানার নামানুসারে এর নাম রাখা হয় আলীনগর ফোর্ট উইলিয়াম দখল প্রসঙ্গে নবাবের বিরুদ্ধে অন্ধকূপ হত্যা নামক একটি বীভৎস মিথ্যা কাহিনীর সুষ্টি করে।

১৭৫৭ খ্রীঃ ৪ঠা ফেব্রুয়ারী তারিখে কলিকাতার উপকন্ঠে এসে উপস্থিত হন। তাঁর চারদিকে ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল এবং ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে ইংরেজদের অশুভ আঁতাতের বিষয় উপলব্ধি করে তাদের সংগে তাঁর বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে মনস্থির করেন। এছাড়া আফগান অধিপতি আহমদ শাহ আবদালী তাঁর দিল্লী আক্রমণ সমাপ্ত করে বাংলা আক্রমণ করতে পারেন বলেনও তাঁর আশংকা হলো। এমতাবস্থায় নবাব ইংজেদের সাথে আলীনগরের সন্ধি নামে এক সন্ধি স্থাপন করেন। এ সন্ধি অনুসারে ইংরেজরা নবাবের রাজ্যে বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অধিকার লাভ করলে। দূর্গ নির্মাণ এবং মুদ্রা প্রচলনের অধিকারও পেল।

নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র...
নবাবের সাথে সন্ধি হলেও ধূর্ত ক্লাইভ সিরাজ উদ দৌলাকে মসনদচু্তে করার জন্য সুযোগের আপেক্ষায থাকে। এ সময়ে মুর্শিদাবাদে ষড়যন্ত্রকারীরা নবাবের সেনাপতি মীরজাফরকে মসনদে বসাতে স্থির করলো। এবার ক্লাইভও এ ষড়যন্ত্রে যোগ দিলেন। তাদের মধ্যে এক গোপন চুক্তি হলো। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধান হলেন রায়দুর্লভ, জগৎ শেঠ, রাজবল্লভ, আমিরচাঁদ প্রমুখ। নবাবী লাভের বিনিময়ে মীরজাফর ইংরেজদেরকে পৌণ দুই কোটি টাকা দিতে স্বীকৃত হলেন। উমিচাঁদ নামক এক ব্যক্তি এ ষড়যন্ত্রের কথা ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখালে তাকে বহু অর্থ প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে বশকরা হলো। ওয়াটসন এই ঘূন্য চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে ক্লাইভ তাঁর স্বাক্ষর জাল করতে দ্বিধাবোধ করলেন না। এই ভাবে নবাবের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্য হতে থাকে। যেন নবাব ইংরেজদের কাছ থেকে কোন প্রকার সুযোগ না পায়।

পলাশীর যুদ্ধ ...................
ষড়যন্ত্র পাকাপাকি হওয়ার পর ক্লাইভ এক মিথ্যা অজুহাতে নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। তিনি ১,২০০ ইউরোপীয় সৈন্য, ২,১০০ দেশীয় সৈন্য নিয়ে রাজধানী মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করতে অগ্রসর হন। এ খবর জানতে পেরে সিরাজ উদ দৌলা মুর্শিদাবাদের ২৩ মাইল দক্ষিণে ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর প্রান্তর সৈন্য মোতায়েন করেন। ১৭৫৭ খ্রীঃ ২৩শে জুন যুদ্ধ শুরু হলো। নবাবের পক্ষে ৫০ হাজার পদাতিক এবং ২৮ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য ছিল, কিন্ত সেনাপতি মীরজাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ তাদের সৈন্যসহ যুদ্ধক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়েথাকেন। নবাবের অনগত সেনাপতি মোহনলাল, মীরমদন, ফরাসী সেনাপতি সিনফ্রে তাঁদের যখন খুবই বিপন্ন ঠিক তখনই মীরজাফর নবাবকে ঐদিনের মত যুদ্ধ বন্ধের আদেশ দিলে নবাবের সর্বনাশ সূচিত হয়। সম্পূর্ন অপ্রস্তুত অবস্থায় নবাবের সৈন্যদের ওপর ইংরেজরা অতর্কিত আক্রমণ চলালে নবাবের সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ইংরেজরা সহজেই জয়লাভ করে। সিরাজউদ দৌলা পথে ধরা পড়ে। তার পর নবাবকে বন্ধি করে। এবং একে একে হত্যা করে। আর বাংলার মাটি থেকে চলে যায় ইংরেজদের হাতে ক্ষমতা। তারা শুরু করে তাদের পরিকল্পীত ভাবে এই দেশে শাসন।

সিরাজউদ দৌলা পতনের কারণঃ........
পলাশী যুদ্ধে প্রকৃতপক্ষে একটি প্রহসন ছাড়া কিছু ছিল না। মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা ছিল এক গভীর ষড়যন্ত্রেরই ফল। মীরজাফর সে ষড়যন্ত্রের হোতা ছিলেন না, ছিলেন একটি দাবার গুটি মাত্র।
কলিকাতা নগরীর উৎপত্তি এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বাণিজ্য বিকাশের সংগে এদেশে একটি হিন্দু বেনিয়া শ্রেণীর উৎপত্তি হয়। কালক্রমে তারা বিশাল ঐম্বর্যের অধিকারী হয়ে উঠেছিল। বস্তুত এ দেশের অর্থনীতিকে তারাই নিয়ন্ত্রণ করতো এবং রাজনীতি ক্ষেত্রেও তাদের ক্ষমতা ছিল অত্যাধিক।

ফলাফল......................
এ যুদ্ধে জয়লাভ করে ইংরেজরা মীরজাফরকে পুতুর নবাব হিসাবে বাংলার মসনদে বসালো। প্রকৃত শাসন ক্ষমতা তাদের হাতেই রয়ে গেল এভাবে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তিমিত হয়ে সারা ভারতে বৃটিশ আধিপত্য বিস্তারের পথ সুগম হয়ে গেল।
সকলের সু-চিন্তা কামনা করি.....................................
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:২০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×