somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংবাদিক কোন দলের লোক?

৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি কাউকে অসম্মান করতে শিখিনি তাই এখানে মূল চরিত্র ও কিছু কিছু নাম, স্থান ও দিন-ক্ষণ পরিবর্তন করে দিয়েছি। আজকের গল্পটি খুবই ছোট্ট কিন্তু এ গল্পটি আমার হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করছে। গল্পের নায়ক ফরহাদ একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের নিউজ সেকশনে কাজ করে। অফিস শেষ করেই সে বাসায় ছুটে যায় কারন তার একমাত্র কন্যা জান্নাত তার জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করছে। জান্নাতের বাবাই যেন জান্নাতের সব। বাবা না হলে তার খাওয়া হয়না, বাবা না হলে তার পড়া হয় না, এমনকি বাবা না থাকলে সে ঘুমাতেও চায়না। পড়া শেষে খেয়ে দেয়ে ফরহাদের বুকে শুয়ে গল্প শুনতে শুনতে জান্নাত ঘুমিয়ে যায়। এ নিয়ে মায়ের অনেক অনুযোগ। ফরহাদের বউ বলে,“তোমার লাই পেয়ে মেয়ে একদিন নষ্ট হয়ে যাবে।” অনুযোগ শুনে ফরহাদ হাসে আর বলে, “আমি আর তুমি ছাড় ওর আর কে আছে বল।” শিউলি কিছু বলে না। কারন মেয়ের প্রতি ফরহাদের ভালবাসায় সেও খুশি। এভাবে দিন ভালই চলছিল। কিন্তু সুখের সময় নাকি খুব বেশি দিন থাকে না। ফরহাদ পরিবারের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো না। ৫ মে ২০১৩ রাতে সরকারের নির্বাহী আদেশে ফাহাদের কর্মক্ষেত্র বন্ধ করে দেয়া হলো। চ্যনেলটি বন্ধ করার সময় সরকারের মুখপাত্ররা জানালো এটি সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হচ্ছে, শিঘ্রী খুলে দেয়া হবে। চ্যানেলে কর্মরত সবার মন খারাপ হলেও সবাই ভাবলো দু’একদিন বন্ধ থাকার পর হয়তো চালু হয়ে যাবে। কিন্তু সময় গড়িয়ে যেতে থাকে, দিন-সপ্তাহ-মাস - - সরকারী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়না। চ্যানেল ফিরে পেতে নানান কর্মসূচী দেয়া হয়। কখনো মানববন্ধন, কখনো র‌্যালী, কখনো প্রতিবাদ সমাবেশ। ফরহাদ সব কর্মসূচীতেই অংশগ্রহণ করে আর একবুক আশা নিয়ে ঘরে ফিরে যায়। মনে মনে ভাবে আজকের এই কর্মসূচীর পর সরকার হয়তো তাদের চ্যানেল খুলে দেবে। কিন্তু চ্যানেল চালু হয়না।

এর ভেতর চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তাদের অপারোগতা প্রকাশ করে। কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয় যে, তারা আর বেতন দিতে পারবেনা। মালিক পক্ষের এমন কথা শুনে প্রথমে মনে হয়েছিল সবারই চাকরী চলে যাচ্ছে। তাই দুঃখ্যটা একটু কম ছিল। কিন্তু দেখা যায় যে, ঘটনাটি আসলে তা না। কিছু কিছু লোকের চাকরী রয়ে গেলো।

শুরু হলো নতুন চাকরীর অনুসন্ধান। সিভি হাতে চ্যানেলের দ্বারে দ্বারে ফরহাদ ধরণা দিতে লাগলো। প্রতিটি যায়গা থেকে সে একই জবাব পেলো,“আপনি ওই চ্যানেলে চাকরী করতেন। সর্বনাশ! আপনিতো - - দলের লোক। আপনাকে চাকরী দিলেতো সরকার আমাদের চ্যানেলও বন্ধ করে দেবে।” তিন মাস ধরে চলতে থাকলো একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি। কোন চ্যানেল তাকে চাকরী দিলো না। সাংবাদিকতার পাশাপাশি দালালি, লিয়্যাজু, রাজনীতি বা অন্য কিছু না করার ফলে এখন অর্থ উপার্যনের কোন পথই সে পাচ্ছে না। আবার টিভি সাংবাদিকতা ছাড়া আর কিছু সে শেখেনি তাই অন্য কোন কাজও সে করতে পারছেনা। এদিকে জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে। অন্যান্য সাংবাদিক বন্ধু ও পুরোনো সহকর্মীদের কাছে গিয়েও কোন লাভ হলো না। সাহায্যের হাত কেউই বাড়ালো না, চাকরী সে পেলো না। আত্মসম্মানের কারনে কারো কাছে টাকা চাইতেও পারলোনা। অথচ কিছু টাকা তার খুবই প্রয়োজন। জান্নাত না খেয়ে বসে আছে বাবার প্রতীক্ষায়। বাবা ফিরবে, অন্যান্য দিনের মতো আজও সে বাবার সাথে এক সাথে খাবে।

উপরের এটি কোন গল্প নয় বা এটি কোন নাটকেরও দৃশ্য নয়। এটি আমার এক সহকর্মীর জীবন থেকে নেয়া। এ লেখাটি আমি যখন লিখছি তখন রাত ২টা বাঁজে। আজ জান্নাত খেয়েই ঘুমিয়েছে। কিন্তু কাল? কালও কি ফরহাদ ভেজা চোখে আবার কারো দরজায় কড়া নাড়বে? নাকি কাল সে তার জান্নাতের জন্য রক্ত বেঁচে দু’মুঠো চাল কিনে নিয়ে যাবে? অনেকের কাছে রক্তের চেয়ে নীতি বেঁচা অনেক সহজ। কিন্তু ফরহাদরা জান্নাতের জন্য শরীরের সব কিছু বেঁচতে পারে, পারেনা শুধু নীতিকে বেঁচতে। তাই বোদহয়; একটি বিশেষ দলের লোক আক্ষায়িত করে ফরহাদদের কোন চ্যানেলে চাকরী দেয়া হয়না। অন্যপক্ষে একটি বিশেষ দলের লোক নয় বলে নিজের চ্যানেল থেকে চাকরী হারাতে হয়। আর দলের লোক / দলের লোক নয়; এই যাতাকলে পিষ্ট হয় আমাদের ঘরের জান্নাত আর শিউলি।

আজ ফরহাদের জীবনে এ ঘটনা ঘটেছে। কাল আমার ঘটবে। পরশুর কাতারে যে আপনি নেই তাকি নিশ্চিত? আসুন আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। যার যার অবস্থান থেকে জোরালো প্রতিবাদ করি। আপনার আমার সম্মিলিত গুঞ্জন এক সময় বজ্র ধ্বনিতে পরিনত হবে। তখন বন্ধ হবে সাংবাদিক নিপীড়ন, তখন নিশ্চিত হবে জান্নতদের ভবিষ্যৎ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×