somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানছুরা- কবিতা কিন্তু গল্প অথবা গল্প নয়

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম ও ২য় সংস্করন খুব দ্রুত নিঃশেষিত হওয়ায় এর ৩য় সংস্করন প্রকাশিত হল।

"মানছুরা"

মানছুরা- বিয়ে হইয়া ছিল তাহার ফরিদপুর ।
স্বামী তাহার করিৎকর্মা , বানায় খেজুর গুর।

একখানি তাহার কণ্যা ছিল, বয়েস মোটে তিন।
সুখ দুঃখের মাঝেই তাহার কাটিয়া যাইত দিন।

একদিন এক কুকুর হঠাৎ কামড়াইয়া দিল তাকে।
ডাক্তার না ডাকিয়া স্বামী কবিরাজ কে ডাকে।

কবিরাজ, সে মস্ত ভাব, ডাকিয়া কয় "ওরে!
দশদিন শুধু ওষুধ খাবি- থাকবি অনাহারে।
এই তাবিজটা ভিজাইয়া পানি তিন বেলা খাবি।
ইনশাল্লাহ! দশ দিনে তুই ভালো হইয়া যাবি"।

মানছুরা একি পড়িল বিপদে- হয় নি তাহার কিছু,
তবুও নানান উৎপাত তাহার ছাড়িতে চায় না পিছু।
হয় নাই তাহার জলাতংক- হয়েছে শুধুই জ্বর।
না বুঝিয়া শ্বশুর শাশুড়ী বন্ধ করিল ঘর।

তিন বেলা শুধু ওষুধ পানি নামিতে চায় না গলে,
দুইদিনেই আরো কাহিল হইলো অনাহারের ফলে।
জ্বর বাড়ে, ব্যাথা বাড়ে -আসেনা কেউ কাছে,
কাছে গেলে যদি আবার কামড় দিতে আসে!

ছোট ননদ মাঝে মাঝে তাহারে দেয় মুড়ি,
কেউ জানতনা, চুপি চুপি তাহা করিতে হইত চুরি।

কণ্যাকেও তাহার আসিতে দেয় না,সরাইয়া রাখে দূরে,
প্রানের ধনকে না দেখিয়া- প্রান যেতে চায় উড়ে।

রাগের মাথায় চিৎকার করে ভাঙ্গিত ঘরের হাড়ি,
তাই দেখিয়া স্বামী তার পা'য় শিকল দিল মারি।
ভাবিল সবাই , এমনি করিয়া আটকাইয়া রাখুক ওরে।
ছুটিয়া গেলে যে কাউরে কামড়াইয়া দিতে পারে।

মানছুরা কাঁদে, আকুতি করে,দেয়ালে ঠোকে মাথা,
"আমার কিছুই হয় নাই গো..."-কে শোনে কার কথা?

এমনি করিয়া পাচঁ দিন যায়, অসহ্য তাহার কস্ট!
যমদূত কে দেখিতে পায় চোখের সামনে স্পস্ট।
জোড় করিয়া স্বামী অষুধ খাওয়ায়, দেয় মিছে সান্তনা।
মানছুরার এই অবস্থা- তাহার বাড়ির কেহ জানিতনা।

ননদিনির সহায়তায় খবর দিল বাড়ি,
" আমায় যদি জীবিত চাও- চলে আস তাড়াতাড়ি"।

বড় ভাই তার আবুল কাশেম, করিল না আর দেরী।
ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিল বোনের শ্বশুর বাড়ি।
পথে কিনিল মিস্টি, রুটি, আপেল, কমলা, কলা।
এত দূর পথ! তবুও তাহার থামিল না পথ চলা।

পৌছিয়া বাড়ি দেখিল একি!কোথায় তাহার বোন?
অজানা এক বিভীষিকায় কাপিয়া উঠিল মন।
বোনের শাশুড়িকে দেখিতে পাইয়া শুধায় বোনের কথা।
-"ওই ঘরে তারে আটকে রেখেছি, যাইওনা বাবা হেথা"।

-" কি বলেন এসব? কি হইছে ওর? দেখিতে আমি চাই।
কতক্ষন হল এলাম এবাড়ি, মানছুরার দেখা নাই!"

-পাগলা কুকুর কামড়াইয়াছে মানছুরার বাম পায়,
যাকে দেখে তাকেই এখন কামড় দিতে চায়।"

কোন কথা না শুনিয়া কাশেম ছুটিল বোনের ঘরে,
তাহার এরূপ হাল দেখিয়া বোবা ক্ষণিকের তরে।
শরীর তাহার শুকাইয়া কাঠ, বিছানায় গিয়াছে লাগি,
দূর্গন্ধে ঘরে থাকা দায়-মনে হয় যেন 'ভাগি'।

-" ভগ্নি আমার, একি হাল তোর! কি হইয়াছে দশা!
মরনেরে আমি দেখিতে পাচ্ছি তোর শিয়রে বসা।"

অনেক কস্টে কথা কহিল , বেরুতে চায় না আওয়াজ,
কাপড় টানিয়া গায়ে তুলিল- ঢাকিল নিজের লাজ।

-" ভ্রাতা আমার! কাছে আসো। কিছুই হয়নি মোর।
নিশ্চিন্তে তুমি বিছানায় বস- দিবনা কামড়।"

দু'চোখে তাহার অশ্রু ঝরে, কইতে পারেনা কথা।
আবুল কাশেমের বুক ফেটে যায় দেখিয়া বোনের ব্যাথা।
একটু একটু করিয়া সে কহিল সব খুলে।
আক্রোশে কাশেম ফাটিয়া পড়িল বোনের কথা ভুলে,

-" মুর্খগুলোরে আমি দেখিয়া লইব তোর কিছু হয়ে গেলে।
মারিয়া ওদের দাঁত ভাঙ্গিব, ভরিয়া দিব জেলে।
কাদিস না তুই , আমি আছি না? খেয়ে নে একটু খাবার।
ডাক্তার দেখাইলেই সুস্থ্য হইবি- ছুটিয়া বাড়াইবি আবার।"

-" এখানে আর থাকিব না আমি, নিয়া যাও মোরে বাড়ি।
সাত দিন ধরিয়া পড়িয়া আছি এই একখানা শাড়ি।
কস্ট হচ্ছে- ভীষন কস্ট, কণ্যা আমার কোথা?
একনজর দেখিলে ওরে জুড়াইবে মোর ব্যাথা।
মনে হয় যেন কত দিন ধরে দেখিনা ওর মুখ,
ওরে ছাড়া প্রতিটা ক্ষণ শুন্য লাগে বুক।"

কাশেম গিয়া ভাগ্নিকে তাহার আনিল মায়ের কাছে।
মাকে দেখিয়া শিশুটি যেন কেমন করিয়া হাসে।
কন্যাকে পাইয়া বুকে জড়াইল, তুলিয়া লইল কোলে।
এ ক'দিনেই না দেখিয়া মাকে গিয়াছে ভুলে।
কণ্যাকে যতই কাছে টানে -কণ্যা যেতে চায় দূরে,
কি করিবে? শিশু মানুষ- গন্ধতো ঘর জুড়ে।
কণ্যা তাহার ছুটিয়া গেল, থাকিল না মা'র কাছে।
ঘর হইতে বাহিরে গিয়া দম ছাড়িয়া বাঁচে।

এমন সময় ঘরে আসিল মানছুরার স্বামী,
-" ভাইজান কখন এলেন? কি করিতে পারি আমি?"

-" ওরে হারামী কি করেছিস আমার বোনের হাল?
মারিয়া তোর মাথা ফাটাইব, তুলিব পিঠের ছাল।
এখানে নয়, এক্ষুনি যা- নিয়া আয় একটা গাড়ি।
তাড়াতাড়ি যেন মানছুরাকে ডাক্তার দেখাইতে পারি"।

ভয়ের চোটে স্বামী গেল তাড়াতাড়ি ঘর ছাড়ি,
মানছুরার গা জ্বরে পুড়ে যায়-মাথাটা ভীষন ভাড়ী
শিয়রে বসিয়া কাশেম কহিল," ওহে ভগ্নি আমার-
কস্ট করিয়া একটু খানি মুখে তুলে নে খাবার।"

-"জ্বিহ্বা আমার ভাড়ী হয়ে গেছে, গলায় নামে না কিছু-
মৃত্যু আমায় তাড়া করে ফিরে সারাক্ষন পিছু পিছু।"

জোড় করিয়া কাশেম তাহারে খাওয়াইল কিছু ফল।
না খাইলে হইবে কেমনে তাহার গায়ে বল।
অনাহারে থেকে মানছুরার দেহ হইয়াছে পুরো নস্ট
এটুকু খাবার খেতেও তাহার কি নিদারুন কস্ট।

-" ভ্রাতা আমার, দাবি জানাই- আমার কন্যারে দেখো,
আমায় যেভাবে মমতা দিয়াছ- ওরেও সেভাবে রেখ।"

স্বামী তাহার গাড়ি আনিয়াছে, দাড়াইয়া আছে দূরে।
" যাইব না আমি"-এই বলিয়া শুইয়া থাকে ঘুরে।
কাশেম বোন কে কোলে তুলিয়া রাখিল গাড়ির 'পরে।
শ্বশুর শাশুড়ি কেউ আসিল না- বসিয়া রইল ঘরে।

স্বামী আসিয়াছে কন্যারে লইয়া-যাইবে ওদের সাথে,
কন্যাকে একটু ছুয়ে দিতে চায় কম্পিত ক্ষিন হাতে।

-" কন্যা আমার ভালো থাকিস , সোনা মানিক ওরে!
এই জীবনে দিলাম নাতো কোনো কিছুই তোরে"।

দু'চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরিছে, কহিতে পারেনা কথা-
কাপিয়া উঠিল সারা দেহখানি, বাড়িয়া গেল ব্যাথা।

-" ভ্রাতা আমায় আদর কর , কোলে লও মোরে তুলি-
তোমার কোলে মরিব আমি , দুঃখ ব্যাথা ভুলি।

কাশেম বোনের মাথাখানি -তুলিয়া লইল কোলে,
মানছুরা কি একটু হাসিল?- গাড়ি তখনো চলে।

চলিতে চলিতেই কখন যেল ফুরাইল তার আয়ু
ভাইএর কোলে মাথা রাখিয়া বাহির হইল প্রান বায়ু।

স্বামী কাদিল কন্যাও কাদিল, কাদিল কাশেম ভাই।
এই জগতে মৃত্যু ছাড়া কোনো সত্য নাই।।



---------------------*************----------------------------

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১২ দুপুর ২:০৬
৫২টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×