বালু ও চরের শাসনে মরা নদী, ছইঅলা নৌকা বৈঠা ঠেলে এগুচ্ছে, উপরে নিড়ানি দেয়া ক্ষেত, তারও উপরে একটা বটগাছ বিস্তীর্ণ ডালপালা ছাড়িয়ে সকালের রৌদ্রটাকে ছায়ার আবডালে শাসন করছে। সেই আবছায়ায় একটা মেয়ে কারো অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছে।
মেয়েঃ না না, এক্ষুনি...... আমি চাই-ই চাই... বলেছি তো... এখান থেকে এক পা-ও নড়বোনা... তুমি আসো......
ফোন কেটে, ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা বিদেশি চকলেট খোসা মুক্ত করে মুখে পুরে দিল। চকলেট মেয়েটার ঠোঁটের ভেতর-বাইরে খেলা করছে। খেলা- মেয়েটার চোখেও; রৌদ্র-ছায়ার, আঙ্গুল ও ফোনের ডিজিটে...
কোথাথেকে একটা লাল পিঁপড়া মেয়েটার গালের সীমা অতিক্রম করে ঠোঁটে চলে এসেছে। ঠোঁট বরাবর চকলেটের কাছে পৌঁছুতেই চকলেট ঠোঁটের ভেতর ঢুকে গেল। ঠোঁট বন্ধ। পিঁপড়াটা বন্ধ ঠোঁটের দরজায় কিছু মুহূর্ত আঁটকে থেকে কুটুস করে কামড় বসালো। উপলব্ধি হতেই মায়েটা দুআঙুলে পিঁপড়াটাকে ঠোঁট থেকে তুলে পিষে ফেলল। পিঁপড়ার উৎস সন্ধান করতেই দেখতে পেল গাছের বাকল বেয়ে আর এক লাইন উপরে উঠে আসছে, নিচে চকলেটের খোসা ও তার পাশে একদল পিঁপড়ার মহোৎসব চলছে।
মেয়েটা জুতোর সোল দিয়ে গোটা পিঁপড়ার দলটার উপর নির্মম ভাবে পিষতে লাগলো। যেন একটা ক্ষুদ্র পিঁপড়ার কামড়ের শাস্তি সরূপ একদল পিঁপড়ার উপর পা- জুতা- হিল- এর মহানন্দে নিষ্ঠুর প্রতিশোধ...... নিমিষেই কিছু পিঁপড়া নিহত, কিছু আহত ও কিছু কিছু ছত্রভঙ্গ হয়ে দিক-বিদিক ছুটতে লাগলো।
পাখিরা উড়ছে, রোদ বাড়ছে, গাছের ডালপালার পাতার ফাকফোঁকর দিয়ে রোদ ছায়াদের শাসন ভাঙ্গার চেষ্টা করছে মেয়েটার ফোন বাজছে, কথা বলছে, কথা চলছে...
পিঁপড়েরা কয়েকটি দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছে। পিঁপড়েরা পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে। দলবেঁধে একে একে বটতলার দিকে সংগঠিত হচ্ছে। এক... দুই... করে বহুদলে সারি সারি পিঁপড়া এসে জড় হচ্ছে। যেন বটতলায় লাল পিঁপড়ার সমুদ্র।
সমুদ্র থেকে স্রোতের মত ভেসে ভেসে কিছু পিঁপড়া উঠে যাচ্ছে মেয়েটার পাজামার পশ্চাতে, শরীরে।
মেয়েটা প্রথম দেখতে পেল একদল পিঁপড়ে তার ওড়না দখল করে ফেলেছে তৎক্ষণাৎ সে ওড়না ঝারতে শুরু করলো। তখনই খেয়াল করলো শুধু ওড়না নয় জামা, পাজামা, সামনে পিছে পিল পিল করে চষে বেড়াচ্ছে পিঁপড়ের দল। মেয়েটা ওড়না ফেলে দিল। দু হাত পা ঝেড়ে লাফিয়ে নানাভাবে পিঁপড়েদের মাটিতে ফেলতে চেষ্টা করলো। তার পুরো শরীরে পিঁপড়েদের অবাধ বিচরণ টের পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে মায়েটি কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে পড়লো। তার চোখ স্থির হয়ে গেলো পাথরের মত।
এরই মধ্যে পিঁপড়ের কামড় শুরু হয়ে গেছে। কোন উপায় না দেখে মায়েটি দৌড় শুরু করলো। নদিতে মেয়েটির লাফের ছন্দ ও শব্দ ।
পানিতে মেয়েটার অন্তর্বাস ভাসছে। উপরে জামা-পাজামা-ওড়না, সবকিছু পিঁপড়াদের দখলে চলে গেছে। যেন লাল পিঁপড়াদের মহোৎসব-মহাসমুদ্র-ঢেউ; লাল পতাকার মত পতপত করে উড়ছে।
সূত্র ঃ নট এ থিং /বিপ্লব সিরাজী

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



