জটিল খিদা পেয়েছে। সকালে খুব তাড়া-হুড়ো করে খাওয়া হালকা স্নেক্স, এক বোতল অরেন্জ জুস আর গত ২৪ ঘন্টার বিভিন্ন অখাদ্য পেটের একোন-ওকোন করছে। তাই চুপ করে থাকাই ভাল মনে করলাম। এই ফাকে দু-এক জন খাস আফগানির (না চাইতেই) সাথে কথা হয়ে গেল। আমাদের ভাঙা-ভাঙা উর্দু (হিন্দি ছবির কল্যানে!!!) কথোপকথনের সারমর্ম ছিল বেশ মজার। আমরা ঐ ভুখা দেশে যাওয়ারকি মানে? যখন মানুষ জন দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে! অত্যন্ত জটিল প্রশ্ন! যুগ যুগ ধরে গবেষকরা এই জটিলতম রহস্যের জট ছাড়ানোর চেষ্টা জরছেন, বিফল সাধণা। তবে আজ এটুকু অন্তত আপনাদের বলতে পরি যে, নিতান্ত অভাগারাই টাকার জন্য দেশ ছাড়ে। সে যেত টাকাই হোক, হলইবা ডলার নাহয়। অবশ্য যাদের অগাধ আছে, ২/৪ দিন বা সপ্তার জন্য যায়, তাদের কথা আলাদা। যদিও যথেষ্ট চেষ্টা করেছি কথা না বাড়াতে এদের সাথে। কিন্তু মুজতবা আলী ৮০ বছর আগেই বিফল হয়েছেন, এত জ্ঞানী মানুষ হয়ে। আর আমি-ত কোন ছার! কাবুলীরা নাকি খুব আড্ডাবাজ আর বন্ধু বাৎসল। সবাই অবশ্য না- জানা কথা সর্গেও সাপ থাকে। বাস্তব অভিজ্ঞতার সে কথা পরে হবে। মনো-দৈহিক অবস্থা ভাল না, চাপে আছি। আশে-পাশের লোক জন প্রায় সবাই জোব্বা-জাব্বায় ঢাকা, মাথায় বিশাল সব পাগড়ি। এদের কেউ কি তালেবান চর? আত্মঘাতি? প্লেনে এদের সাথে নিরাপদ কি আমরা? আর নামার নামার পর?
আমার দিবা-নিদ্রা ভংগ হল এনাউন্সমেন্টে আমাদের ডাক শুনে। মুজতবা সাহেবের দেশে বিদেশের পাতা থেকে উঠে এলাম। জিবন্ত কাবুলিদের সাথে আবার বাসে উঠে চললাম সামনের রানওয়ের দিকে। Safi Airwayes এর বোয়িং-৭৬৭ অর্ধেকের বেশিই খালি! আজিব অবস্থা! আমরা না আসলেত আরও বেশি খালি অবস্থায় ফ্লাই করত। কেমনে যে চলে এরা! ভাগ্য অবশ্য আমাদেরই ভাল, নইলেত আরও পাক্কা ২৪ ঘন্টার ধাক্কা। প্লেনের অবস্থাও অনেক ভাল, আরামদায়ক। স্পেস, ডেকোরেশন, খাবার, সার্ভিস প্রশংসনীয়।
রানওয়ের বিশাল কিউতে ২৫-৩০ মিনিটের ধাক্কা, গাদা গাদা ইমিরেটস লেখা বিমান আগে পিছে ট্যাক্সিয়িং করছে। মরুময় রোদ অজস্র ধারায় ঝরছে। ছুটতে ছুটতে আলতো ভাবে নাক উচা করে দিল প্লন। আকাশে শান্তির নীড়। দুবাই শহর আকাশ থেকে কেমন আজব লাগে। চারদিকে মরুময়তা, এক ধারে নীলের ছোয়া। গাড় নীলের ছোয়া যেন রোদ জ্বলা ধূষরতায়। মায়াবিনী চোখে আরব সাগর যেন আদরের শীতল ছোয়া দিচ্ছে, তপ্ত ধরনীর দগ্ধ অধরে। সাগরের বুকে নানান কারুকাজ। কৃত্তিম দ্বিপের পশরা সাজানো। বুর্জ-আল-আরাব খুজে ফিরলাম, চোখে পড়ল না। দেখার বড় শখ ছিল! শহরের ডিজাইন খুবই প্লানড, আমাদের ঢাকার মত এলোমেলো না। একটু পর শহরের দৃশ্য শেষ হয়ে ছাড়া ছাড়া ঘর বাড়ি এসে গেল। মাঝে মাঝে সাজানো সবুজ জংলা, খেজুর বাগান হয়তবা। এর মাঝে নাস্তা হাজির। এয়ার হোষ্টই বেশি চোখে পডল, অবশ্য আফগান কম্পানী, এসব দেশে মেয়ে পাওয়া সম্ভবত ভাগ্যের ব্যপার। পামেও অবশ্য এক জন ছিল। সার্ভ খুব আন্তরিক লাগল। ইমিরেটস্ এর মত পেশাদার মাপা হাসি না। হয়ত নতুন বলে শিখে উঠতে পারেনি এখনো। অথবা প্রেশার কম বলে আন্তরিকতার সূযোগ বেশি। খাওয়া শেষে আমিও নিজেকে সপে দিলাম ঘুমের রাজ্যে।
কাবুলিওয়ালার কথা (এক)
পড়ুন: Click This Link
কাবুলিওয়ালার কথা (দুই)
পড়ুন: Click This Link
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




