মাফুর হল গিয়ে রাশির দোষ। খুবই হ্যান্ডসাম ছেলে, মেয়ে-পটানো কিউট চেহারা, স্বাস্থ্য-টাস্থ্যও মাশাল্লা (নাইলে কি উপরতলার 'বায়রন' টিস্যুতে চিঠি লিখে গায়ের মাঝে ছুড়ে মারে বা পাশের বাড়ির 'গেরুয়া' দেখা হলেই মনমাতানো হাসি হাসে!)। কিন্তু সময়ে অসময়ে আজব সব অসুখ বাধিয়ে বসে। বৃষ্টিতে ভিজে বা রোদে পুড়ে জ্বর-জ্বারি বাধানোর মত না। হটাৎ করে ১৮/১৯ বছরে চিকেন পক্স হওয়া বা দুমকরে ডেন্গু বাধিয়ে বসা। (অসমর্থিত সূত্র মতে, মাসুদের সাথে কসমোপলিটনে সাথির বাসার সামনে, বিশাল নালার ধরে প্রতিদিন সন্ধার নিয়মিত ডিউটির সময়, মশক-সাক্ষাতের অবদান!)। অবশ্য এইচ.এস.সি'র প্রথম পরিক্ষার দিন হলে গিয়ে হটাৎ অনবরত বমি আর প্রচন্ড আষাড়ে-জ্বর বাধিয়ে বসার ব্যপারটাই সবচেয়ে খারাপ ছিল।
এমনি কোন এক বিকেলে ফারুকের সাথে ঘূরতে বেরিয়েছে মাফু। হাটতে হাটতে ফয়েস লেকের দিকে। ওদিকে আবার সানির বাসা। তাই ফারুকের প্রত্যাহিক সান্ধ্যভ্রমনের তাবৎ হাটা হাটি এপথে ( সেই ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত!, নিয়মিত)। গন্তব্যে পৈছানোর আগে না পরে ঠিক জানি না, পথে হটাৎ শুরু তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা। দ্রত হাসপাতালান্তরিত করা হল। পরদিন সুবা সুবা দেখতে গেলাম। আমদের দেখে বেচারা যেন হালে পানি পেল। আনন্দে চি-চি চিৎকার করে উঠল! হড়বড় করে যা বল্ল তার সারমর্ম অতি গোপনীয়। মাফুর টেবিলে, দ্বিতীয় ড্রয়ারে নাকি লুকানো আছে রসময়দার গুটিকয় সুখপাঠ্য উপন্যাসিকা! ১৭/১৮ বছরের একটা ছেলের গোপন ড্রয়ারে রসময়দা থাকবে নাত কি থাকবে? তাতে চমকে উঠার কিছু নাই ! বরং না থাকাটাই আশ্চর্য। অবৈধ অস্ত্র বা ড্রাগ নাই এটাই বড় কাথা। গান্জার নামও শুনিনাই ধরনের ভাল ছেলে ছিলাম আমরা , বিড়ি খাওয়াই ধরি নাই তখনও! চটিগুলো সারাতে হবে। বেচারা অনেক কাকুতি মিনতি করল, যেন মরে টরে গেলে অতি অবশ্যই আমরা বন্ধু হিসেবে এই নুন্যতম কর্তব্যটা করি। বেঁচে গেলে ফুটিস্-এ খুব একপেট খাইয়ে দেবার ওয়াদাও করল। জানালার কোনায় লুকিয়ে রাখা চাবিটা তাই খুব প্রয়োজনীয় হয়ে দাড়াল! হাজার হোক, জিগারী দোস্তের মৃত্যু-ইচ্ছা বলে কথা! তার উপরে ব্যাপক খানা দানা হাতছানি!! কিন্তু ওর বাসার সাবাই হাসপাতালে ছুটাছুটি করছে। আমি বাসায় গিয়ে কি ভাবে কাম সারি?
মহা মুসিবৎ। তাই ভাগ্যের হাতেই ছেড়ে দিলাম আপাতত। ভাল মন্দ যাই হয়, হোক আগে। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা করা যাবে। অপারেশন করে আ্যাপেন্ডিক্সের গুষ্টি উদ্ধার করা হল। ২/৩ দিন পর বেচারা চ্যাংদোলা হয়ে ঢুকল বাসায়। পাইক বরকন্দাজ হয়ে আমরা পিছে পিছে। বাসায় উৎসব ভাব, হেভ্ভি খানা দানা । মামা খালারা রুমে ভিড় করে আছে। অনেক দেরিতে সুযোগ পেলাম আসল কজের। আমি আর ভুট্টি হাত চলায়ে দিলাম ভেতরে। ফরমায়েশ মত জিনিসের সাথে নির্দোষ আরও অনেক কিছুই পেলাম আর পেলাম এক পোটলা লিজান উপটান!!! আমাদের সাথে নিয়েই একদিন কিনেছিল, ছোট খালার নাম করে। হা হা হা! এই কথা নিয়ে পরে অনেক ক্ষেপিয়েছি। ক্ষেপাবনাই বা কেন? চটি, তা নাহয় মেনে নিলাম, কিন্তু উপটান! যখনই বলতাম বেচারা লজ্জায় লাল হয়ে যেত! আমার এই অপরাধ সে কখনোই ক্ষমা করতে পারে নি। সেই থেকে ঐ ড্রয়ারের নাম চটিড্রয়ার!!!
আন্টিকে বলে দেব বলে শয়তানটা আমাকে না বলে , গোপনে সাদা চামড়ার দেশ অষ্ট্রেলিয়ায় বসে বিয়ে করে ফেলেছে । ছয় মাস পর জানানোর প্রতিশোধ হিসাবে আমিও হাটে হাড়ি ভাংলাম!!!
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, বিদেশ যাবার আগে, 'চটিড্রয়ারের' চাবি হারিয়ে ফেলেছিল। তাড়া হুড়ার মাঝে গোপন মালপত্র উদ্ধার করে যাওয়া হয়নি। তাই হটাৎ কোন মাঝ রাতে, ভয়ংকর সব দূ-স্বপ্নে নাকি বাসার লোকজন চাবি হাতে হাজির হয়! ইদানিং নতুন বউকেও নাকি চাবি হাতে চটিড্রয়ারের দিকে যেতে দেখে চমকে জেগে উঠছে প্রায় রাতেই। আজ কাল তাই আবার দূশ্চিন্তা শুরু হয়েছে!!! আল্লা মালুম এখন ওখানে কি আছে?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৫:৪৩