somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"এক ভাগ্যহত বাদশা আমানুল্লাহ ও পাশ্চাত্য চক্রান্ত"

২৭ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"এক ভাগ্যহত বাদশা আমানুল্লাহ ও পাশ্চাত্য চক্রান্ত"
মোঃ সানোয়ার হোসেন।

১৯৪৭ সালের ১২ বছর আগে আফগানিস্তানের চারশ বছরের বাদশাহী পরিবার ধ্বংশ করা হয়েছিলো ব্রিটিশদের কুচক্রে। তৎকালীন আফগানিস্তানের বাদশা হন বাদশা আমানুল্লাহ। যিনি ছিলেন মুসলিম আধুনিক মনমানষিকতার একজন বলিষ্ট শাসক। তখন আফগানিস্তান সোভীয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত ছিলো অর্থাৎ রাশিয়ার সাথে জোটবদ্ধ ছিলো। আর ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে শাসন পরিচালনা করছে শেষ সময়ে। পাকিস্তান থেকে ব্রিটিস একজন গুপতচর কর্নেল লরেঞ্চ গুপ্তচর বৃত্তির দায়ে বিতারিত হয়ে ভারতেত আফগান সীমান্তে আশ্রয় নেন। ও দিকে বাদশা আমানুল্লাহ ১৯৩৯সালে আফগান-ভারত সীমান্তে তাঁর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনাদের পরাজিত করে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় অধিষ্টিত হন। পরে বাদশা আমানুল্লাহ ফ্রান্সে ও ইংল্যান্ডে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে অঠেন রাজনৈতিকভাবে। তিনি তাঁর দেশে কলকারখানা স্থাপন শুরু করেন ও মেয়েদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে ডাক্তারি পড়ার জন্য ফ্রান্সে পাঠানোর ব্যাবস্তা করেন। তখন আফগানিস্তানে সীয়া মোল্লারা ধর্মীয় নেতা ছিলো। তারা বিভিন্ন শহরে একেকজন ধর্মিও নেতা হিসেবে ফতোয়া দিতেন ও তাদের একজন আবার লিডার নেতাও ছিলো। আফগানিস্তানে তখন ধর্মিও নেতাদের কথা সবাই মানত। তারা প্রথমে আমানুল্লার বিরুদ্ধে এই নারী শিক্ষার বিরধিতা শুরু করল ও নারী শিক্ষা হারাম এই ফতোয়া দিতে থাকল। আমানুল্লাহ তবুও ওদের কথায় কান দিচ্ছিলেন না। সংগত কারণে তুরস্কের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্কের মেয়ের সাথে বাদশা আমানুল্লার বিয়ে দেন কামাল আতাতুর্ক। কামাল আতাতুর্ক একজন আধুনিক মুসলিম শাসক ছিলেন। তাঁর আধুনিক শিক্ষাব্যাবস্তার বিরুদ্ধে যারাই বিদ্রোহ করেছিলো তাদেরকেই তিনি হত্যা করতেন যার ফলে কেউ আর সাহস পেতনা তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলতে। কিন্তু বাদশা আমানুল্লাহ খুবই নরম স্বভাবের ছিলেন। তিনি তাঁর দেশের নাগরিক ও মোল্লাদের কথা শুনতেন বাদশা হারুন-আল-রশিদের মত ছদ্মবেশ নিয়ে গিয়ে ও সবার দূর্দশা লাঘব করার চেষ্টা করতেন। এই দুর্বলতাই তাঁর কাল হয়েছিলো। কামাল আতাতুর্ক তাকে বার বার উপদেশদিতেন ও তিনি একটা ছিঠি লেখেন আমানুল্লাহকে এই বলে যে , " আমিরুল মুমিনিন বাদশা আমানুল্লাহ ও আমার প্রিয় জামাতা। আপনি নিঃসন্দেহে আফগানদের ভালো চান ও তাদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে অর্থনৈতিকভাবে আফগানিস্তানকে এক মহান আসনে নিয়ে যেতে চান। আপনি নিজেও ফ্রান্সে থেকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এসেছে। আপনি কলকারখানা স্থাপন করে ভালো কাজ করেছেন ও নারী শিক্ষায় অগ্রগতী লাভ করেছেন, কিন্তু যারা দেশের স্বার্থে না দেখে আপনার এই মহান উদ্যোগ কে গ্রহন করতে চায় না বা বিরোধীতা করছে তাদের আপনি স্বাস্থি প্রদান করুণ নচেত এরা একদিন আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে আপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে।" কিন্তু বাদশা আমানুল্লাহ কামাল আতাতুর্কের কথা না শুনে তিনি মোল্লাদের সাথে এক বৈঠক করে মিমাংশা করে ফেলেন এই আশায় যে তারা হয়ত একদিন বুঝবে। কিন্তু কুস্কারাচ্ছন্ন আফগান পীর রা সেটা করেনি।
এর পরে বাদশা ফ্রান্সে গিয়ে আধুনিক কলকারখানা স্থাপনের বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে এসে দেশে বিভিন্ন পন্য তৈরি করতে শুরু করে দিলেন। কিন্তু আফগানরা বিদেশী পন্য ছাড়া কিছুই ব্যাবহার করত না। ওরা নিজেদের পন্যগুলো নিয়ে হাসিতামাশা শুরু করল ও তেমন আগ্রহ দেখালনা। এর পর বাদশার কাজ দেখে ঐ ব্রিটিশরাই বাদশাকে অর্থ সহায়তা ও কারিগরি সহায়তা দেয়ার প্রতিশুতি দিয়ে তাঁর বিবি সহ ইংল্যান্ডে আমন্ত্রন জানালো। বাদশা আমানুল্লাহ খুশি মনে তাদের আমন্ত্রন গ্রহন করলেন। ও তিনি ইংল্যান্ডে ভ্রমন করলেন জাহাজে করে। প্রায় ৬মাসে সফরে বের হলেন তাঁর চাচা কে দ্বায়ীত্ব দিয়ে। এদিকে অনেক আগে থেকেই ভারতীয় আফগানসীমান্তে অবস্থান করা কর্নেল লরেঞ্চ সীমান্ত বর্তী এক পীরের মুরিদ হলেন আবদুল্লাহ ইবনে হাসান নাম নিয়ে। (*কর্নেল লরেঞ্চ ছিলেন প্রকৃতপক্ষে তখনো ব্রীটিশদের গুপতচর। ) কর্নেল লরেঞ্চ সেই পীরের এতো ভালো সেবা যত্ন করলেন ও এতো আল্লাহ্‌ ভক্ত হলেন যে সেই পীর তাকে একজন খাশ মুরিদ করে নিলেন। আর কর্নেল লরেঞ্চ মুসলিম সেজে সেই পীরকে আমানুল্লাহর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছিলেন এই বলেযে তিনি মেয়েদের বেপর্দা করে অশ্লীল কাজে নিয়োজিত করছেন কেননা তিনি নিজেও বিদেশে লেখাপড়া করেছিলেন। অশিক্ষিত পীর যিনি ছিলেন একজন ক্ষমতাবান কেননা তখন আফগানিস্তানে সীয়াদের ধর্মীয় নেতারাই ছিলো বেশি ক্ষমতাবান আর সে পীর সকল পীরদের একত্রিত করে বাদশার বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলছিলেন। হঠাত করেই সেই ধর্মিও নেতার মৃত্যু হলে ঐ ভন্ড মুসলিম কর্নেল লরেন্স ঐ পাহারী সীমান্তবর্তী এলাকার পীর বনে যান কেননা সেই পীর তাকে অসিয়ত করেছিলেন। এবার কর্নেল লরেন্স পেলেন বড় এক সুযোগ। ঐদিকে বাদশা আমানুল্লাহ ইংল্যান্ডের উন্নতি দেখে অবিভূত। আর ইংলয়ন্ডের রাজকীয় অতিথীয়টায় তিনি মুগ্ধ! কিন্তু তাঁর বিবি যখন আলাদা রুমে বিশ্রাম করছিলেন তখন ইংল্যান্ডের কিছু যুবতী তাঁর সাথে দেখা করতে রুমে প্রবেশ করেন ও আফগান রানী ছিলেন কিছুটা খোলামেলা কেননা ঘরে মেয়ে ছাড়া কোন পুরুষ প্রবেশের অনুমতি ছিলই না। তাই তারো কোন ভাবান্তর হয়নি কিছু যুবতীকে দেখে। সেই যুবতীরা রানীর ভূয়সী প্রশংসা করেন ও রানীর অজান্তেই কিছু ছিবি তোলেন*(তখন ইংল্যান্ডে ক্যামেরার প্রচলন ছিলো ১৯৪০ /৪২ সালে হবে এবং ছবি ইডিটীং হতো ফ্লিম দিয়েই যেমনটা সাদাকালো সিনেমার ফিতা কেটে কেটে ইডিট করে একটার পর একটা জোড়া লাগিয়ে বা কেটে ফেলে সিনেমা বানানো হতো।) রানীর ছবি গোপনে ইডিট করে এক পুরুষের সাথে জোড়া লাগিয়ে সেই ছবি কপি করে সুদূর আফগানিস্তানে কর্নেল লরেন্স নামক এক ভন্ড পীরের কাছে পাঠানো হলো আর ঐদিকে ওরা বাদশাকে অনেক সমাদর করতে লাগল। কর্নেল লরেন্স সেই ছবি প্রতিটি রাজ্যের পীরদের কাছে পৌছে দিলো ও তারা বাদশার অনুপস্থিতিতেই বাদশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করল। পরে বাদশা আমানুল্লাহ দেশে ফিরলে আর সামলাতে না পেরে নিজেই ক্ষমতা ছেড়ে দেন ও ফ্রান্সে পারি জমান। আর কর্নেল লরেন্সের গুপ্তচরের চমৎকার খেলায় চারশ বছরের বাদশাহী পরিবারের পতন ঘটায় ব্রিটিশরা। ব্রিটিশরা এভাবেই বাদশা আমানুল্লার কাছে ১৯৪০সালে হারার প্রতিশোধ নিয়েছিলো।
(সূত্রঃ হতভাগ্য বাদশা আমানুল্লাহ- লেখক আনিস সিদ্দিকী ১৯৭২ সালে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×