সারা দেশে জামায়াতের মিছিলে পুলিশের হামলা চালিয়েছে পুলিশ অথচ প্রথম আলো নি উজ করলো জামায়াত নাকি ১১ জেলায় পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে।
রোববার জাতীয় প্রেস কাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী মহানগরী, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে গতকালের বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ করে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ ৯ জামায়াত নেতার মুক্তি, সংবিধানে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা পুনঃস্থাপন, কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং জনদুর্ভোগ লাঘবের দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচিতে গতকালের বিক্ষোভ ছাড়াও আজ মঙ্গলবার থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী জনসংযোগ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জামায়াতের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঠেকাতে গতকাল রাজধানীতে র্যাব- পুলিশের ব্যাপক রণপ্রস্তুতি ছিল। প্রতিটি পয়েন্টে শত শত পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও সাদা পোশাকধারী পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার লোকজন অবস্থান নেয় সকাল থেকেই। মিছিল বের করার সম্ভাব্য প্রতিটি পয়েন্টেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান লক্ষ করা যায়। পাশাপাশি গরম পানির কামান, রায়ট কার ও প্রিজন ভ্যান প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বিভিন্ন স্থানে। বাদ আসর জামায়াতের নেতাকর্মীরা মিছিল করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এর আগে সকাল থেকেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ-র্যাব সদস্যরা পথচারীদের তল্লাশি করে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। বিশেষ করে দাড়ি-টুপিওয়ালা লোকজনকে পথে পথে জেরা করা হয়। মিছিলের কথা জামায়াত আগে থেকে ঘোষণা করলেও কোন এলাকায় মিছিল হবে সে সম্পর্কে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে কোনোই তথ্য ছিল না। এ কারণেই তারা দিনভর সতর্ক ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টায় হঠাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি দৈনিক বাংলার দিকে অগ্রসর হতে থাকলে পথে পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মিছিলটি পুলিশি বাধা অতিক্রম করে জনতা ব্যাংকের সামনে পৌঁছে যায়। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে জামায়াত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশের শেষ পর্যায়ে দৈনিক বাংলার দিক থেকে পুলিশের একটি দল সমাবেশের কাছে গিয়ে সমাবেশকে লক্ষ্য করে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় জামায়াতের লোকজন দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার চেষ্টা করলে চার দিক থেকে তাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এর সাথে র্যাবও অংশ নেয়। জামায়াত নেতাকর্মীরা তখন পাল্টা আক্রমণ চালায় পুলিশের ওপর। শুরু হয় উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ। পুলিশ জামায়াত সমর্থকদের উদ্দেশ করে একের পর এক টিয়ার শেল এবং গুলিবর্ষণ শুরু করে। মুহুর্মুহু গুলি ও টিয়ার শেলের শব্দে পুরো মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল, আরামবাগ ও টিকাটুলী এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। পুরো এলাকা তখন জামায়াত সমর্থক ও পুলিশ-র্যাব সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ এক দিক থেকে ধাওয়া করে ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে জামায়াত সমর্থকদের সরিয়ে দেয়, ঠিক একটু পর তারা আবারো সংগঠিত হয়ে মিছিল শুরু করেন। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গলিতে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং সুযোগ পেলেই সংগঠিত হয়ে মিছিল শুরু করেন। পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি মেহেদীর নেতৃত্বে অলিগলিতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিচার্জ করে। এ সময় মতিঝিল, দিলকুশা, টিকাটুলী ও আরামবাগ, দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সাথে জামায়াত সমর্থকদের সংঘর্ষে পুরো রাজধানী অচল হয়ে পড়ে। মতিঝিলের সাথে রাজধানীর অন্যান্য অংশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সময় মতিঝিল ও এর আশপাশ এলাকায় অন্তত ৫০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় একটি বিআরটিসি বাস, পুলিশের একটি ভ্যান এবং দু’টি মোটরসাইকেলে। জামায়াত সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং অফিস লক্ষ্য করে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে পথচারীসহ অনেকেই আহত হন। আহতের সংখ্যা এক শ’ ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
মিছিল ও সংঘর্ষ চলাকালে ওই এলাকা থেকে পুলিশ গণহারে গ্রেফতার চালায়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই নিরপরাধ পথচারী বলে জানা গেছে। অফিস ছুটির পর তারা অনেকেই ছিলেন ঘরমুখো। পথে সংঘর্ষের কারণে তারা আটকে পড়েন। পরে পুলিশ তাদেরই হাতের কাছে পেয়ে ধরে নিয়ে গেছে বলে অনেকের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, তারা ওই এলাকা থেকে অর্ধশত লোককে আটক করেছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আটকের সংখ্যা এক শ’ ছাড়িয়ে যাবে। পুলিশ যাকে যেভাবে পেয়েছে ধরে নিয়ে গেছে। বিশেষ করে দাড়ি-টুপিওয়ালা যাকেই পুলিশ পেয়েছে তাকেই নির্মমভাবে পিটিয়ে গাড়িতে তুলেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। মতিঝিল জোনের ডিসি বলেছেন, কেউ নিরপরাধ হলে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। মতিঝিল থানার ডিউটি অফিসার গত রাত ৮টায় জানান, আটকের সংখ্যা ১০-১৫ জন। পল্টন থানার ডিউটি অফিসার জানান, তারা ৯ জনকে আটক করেছিল। তাদের মতিঝিলে সোপর্দ করা হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে তাদের অন্তত ১০ জন সদস্য আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে সাতজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে অসংখ্য মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। অফিসফেরত লোকগুলোই বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে একটি-দু’টি করে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল।
সন্ধ্যা ৭টায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, অ্যাডিশনাল আইজি এ কে এম শহীদুল হক এবং ঢাকার পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত-শিবিরের লোকজন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনার ধিক্কার জানান তিনি। তিনি বলেন অপরাধীদের বিচার হবে।
গত রাত ৮টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে জামায়াত কর্মীদের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষকালে জামায়াতের অর্ধশত নেতাকর্মী ও পাঁচ পুলিশ আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ জামায়াত কর্মী সন্দেহে নয়জনকে আটক করেছে।
বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ করে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মুক্তিদান, সংবিধানে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা পুনঃস্থাপন, কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং জনদুর্ভোগ লাঘবের দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী বগুড়া শহর শাখা বেলা ২টায় শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়ক থেকে একটি বিােভ মিছিল বের করে। মিছিলটি জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় পৌঁছলে পুলিশ বাধা দিয়ে ব্যানার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় জামায়াতকর্মীরা মিছিল নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। জামায়াতকর্মীদের সামনে পুলিশ টিকতে না পেরে পিছু হটে। তখন মিছিল নিয়ে জামায়াতকর্মীরা শেরপুর রোড ধরে ইয়াকুবিয়া মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ মিছিলের পেছনে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট নিপে ও লাঠিচার্জ এবং পুলিশ চার-পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলে প্রত্যদর্শীরা জানান। এর পরও জামায়াতকর্মীদের ধাওয়া খেয়ে পুলিশ পিছু হটে যায়। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানের কাচ ভেঙে যায় এবং পাঁচ পুলিশ আহত হয়। এ সময় পুলিশের টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে জামায়াতের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের মধ্যে রয়েছেন শহর আমির আবদুর রাজ্জাক, সেক্রেটারি এ বি এম মাজেদুর রহমান জুয়েল ও কর্মী পারভেজ। শহরের বিভিন্ন স্থানে তাদেরকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গ্রেফতারকৃত ৯ জনের মধ্যে হামিদ (৬৫), মাসুদ (২৫), মোস্তফা (৪০), আলমগীর (৪৫), আতিয়ার (৩৪), শহিদুল (২৫) ও পারভেজ (৩০)। জানান, তারা পথচারী, জামায়াতের কেউ নন। সংঘর্ষের সময় পুলিশ পিছু হটলে জেলা যুবলীগের ৩০-৩৫জন নেতাকর্মী লাঠি হাতে পুলিশের সাথে যোগ দেয়। তারা জামায়াতকর্মীদের শহরের বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকে। তারা পারভেজ নামে একজনকে জামায়াতকর্মী সন্দেহে ধরে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



