somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাবলু মিয়ার মহাপুরুষ দর্শন-1 (আরিফ জেবতিকের গল্পেচ্ছা)

২৮ শে মার্চ, ২০০৭ ভোর ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মান্নান মিয়ার মনটা বেজায় খারাপ। তার নিজের নাম মান্নান মিয়া,কিন্তু তার ছেলের নাম 'টাবলু'। এটা কোন নাম হলো!

মান্নান মিয়া মিডিলইস্টে ছিলেন দীর্ঘদিন। সেখানে থাকা খাওয়ার বেজায় কষ্ট,তবু সেই কষ্ট সহ্য করে তিনি প্রায় এক যুগ কাটিয়ে এসেছেন বাহরাইনে। মাঝখানে একবার দেশে এসে বিয়ে করেছিলেন,বিয়ের পর দিন পনেরো থেকেও গেছেন। সেই পনেরো দিনের ফসল এই টাবলু মিয়া। ছেলের জন্মের সময় তিনি ছিলেন বাহরাইন, পই পই করে বলে দিয়েছেন ছেলের নাম আহসান উদ্দিন রাখার জন্য,দেশ থেকে তাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে,ছেলের নাম আহসান উদ্দিনই রাখা হয়েছে,কিন্তু দেশে ফিরে দেখছেন, 8 বছরের গাব্দা গোব্দা ছেলেকে সবাই ডাকছে 'টাবলু'। আহসান উদ্দিন নাকি আসল নাম, টাবলু হচ্ছে ডাক নাম। মান্নান মিয়া বিরক্তিতে কথা বলতে পারেননি,আসল নাম আর ডাকনাম কী,যে নামে সবাই ডাকে,সেটাই তো আসল নাম। তার নিজের নাম একটা,সেটা নিয়ে তো তার কোন সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে এক লোকের দুই নাম দেয়ার দরকারটা কী?

তিনি কয়েকবার আহসান উদ্দিন বলে ডেকে দেখেছেন,ছেলে সাড়া দেয় না। টাবলু বলে ডাকলে দৌড়ে চলে আসে। এ নিয়ে রাগারাগি করতেই বউ মিনমিন করে বলল,নামে কি আসে যায়? আপনি এমন করছেন কেন ?
এ কথা শুনে মান্নান মিয়ার মাথা রাগে চিড়বিড় করে ওঠে।বেকুব মহিল বলে কী! নামে অনেক কিছু্ই যায় আসে।গোলাপকে গোলাপ নামেই ডাকতে হয়,গোলাপের নাম গন্ধমাতারি দিলে কেউ পুছবে না। এই যে কচুরি পানা ফুল,কতো সুন্দর তার রং,কিন্তু নামের জন্যই তো সে কদর পাচ্ছে না।এর নাম হতো ক্যান্ডিফ্লস,দেখতা বড়োলোকের বাড়িতে তার কদর কতো হতো।

তার ছেলে যখন একদিন বিরাট নামিদামি মানুষ হবে তখন কি টাবলু নামে চলবে? কেউ কি বলতে পারবে সুপ্রিমকোর্টের বিচারক টাবলু মিয়া,নয়তো ইউনিভার্সিটির প্রফেসর টাবলু মিয়া। দেখা যাবে এই নামের কারনেই ছেলের চাকরিটা পর্যন্ত হচ্ছে না।

ছেলে যে বিখ্যাত কেউ হবে,তা নিয়ে মান্নান মিয়ার কোন সন্দেহ নেই।সব বাবাই চায় তার ছেলে হোমড়া চোমড়া কেউ হোক,মান্নান মিয়া তা চান না। তিনি চান তার ছেলে মানুষের মতো মানুষ হোক,সমাজের জন্য কিছু একটা করুক। সে জন্য তার চেষ্টার অন্ত নেই। ছেলেকে অনেক মহৎ মানুষের জীবনী কিনে দিয়েছেন,চেষ্টা করছেন ভালো কিছু করার দিকে ছেলেকে ঝুকাতে। ছেলেকে নিয়ে শহীদ মিনার,স্মৃতি সৌধ ইত্যাদিও ঘুরে এসেছেন কয়েকদিন। ইচ্ছে ছিল,ছেলেকে নিয়ে কয়েকজন মহান মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাবেন, মহান মানুষদের কাছ থেকে দেখলে ছেলের অনেক উপকার হতো।

মুশকিল হচ্ছে ,সেরকম মহান মানুষদের আকাল আছে দেশে। এই পোড়ার দেশে যতো ভালো মানুষ জন্মেছিলেন ,তাদের প্রায় সবাই মরে গেছেন। জীবিত মহামানব পাওয়াটা বড়ো দুষ্কর।


আজ একজন অসাধারন মানুষের খবর পেয়েছেন মান্নান মিয়া।প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় সেই মানুষটির খবর ছেপেছে। সেই মহাপুরুষের নাম আমিনুল হক ভুঞা। তিনি ছিলেন শেরে বাংলা নগর বালক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। এমন বড়ো কোন পদ নয়,এরকম গন্ডায় গন্ডায় সহকারী প্রধান শিক্ষক দেশের কোনায় কানায় ছড়িয়ে আছে। কিন্তু এই আমিনুল হক যে কাজটি করেছেন,সেটা করার হিম্মত আছে এমন লোক দেশে খুব বেশি নেই। বিচারপতি আজিজের যুগে ভূয়া ভোটার লিস্টে 900 ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্ত করার আদেশ এসেছিল তার উপর। এরকম তো কতো হচ্ছে,সারা দেশেই প্রতিটি সেন্টারে ভোটার বাড়ানো হচ্ছে বি.এন.পি র সুবিধার জন্য,কোন শিক্ষকই উচ্চবাচ্য করছেন না। কিন্তু আমিনুল হক বেকে বসলেন,তিনি গলার রগ ফুলিয়ে বলে উঠলেন,'না।' তারপর তার উপর দিয়ে অনেক ঝড় ঝঞ্জা গেছে,নিরুপায় হয়ে আমিনুল পুরো ব্যাপারটি সাংবাদিকদের জানালেন।

এতে করে বেকায়দায় পড়ে গেল বি.এন.পি সরকার।তার অভিযোগ প্রত্যাহারের বিনিময়ে না না সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব এলো তার কাছে। কিন্তু তিনি টললেন না।এতে করে তার উপর নেমে এলো প্রতিশোধের খড়গ। 27 বছরের পুরোনো চাকরি থেকে বাধ্যতামুলক অবসর নিতে হলো,চাপের মুখে সরকারি চাকরি ছাড়লেন তার পুত্রবধু, সরকারি চাকরি তে 6 মাসে 6 জায়গায় বদলি হলেন তার ছেলে।
এতো করেও আমিনুল হককে টলাতে পারে নি বি.এন.পির লোকজন।
এখন তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। সরকার আর বড়ো দলের বিরুদ্ধে এরকম ঢাল তলোয়ার ছাড়া লড়াই চালিয়ে যাওয়া সোজা কথা নয়।

আমিনুল হকের প্রতি শ্রদ্ধায় মান্নান মিয়ার মাথা নিচু হয়ে আসে। এ রকম আমিনুল হক যদি দেশের সবগুলো অফিসে থাকতো,তাহলে এই দেশের আর কোন দূ:খ থাকতো না।

তিনি ঠিক করেন,টাবলু মিয়াকে নিয়ে তিনি আমিনুল হকের বাসায় যাবেন। ছেলেকে সামনে বসিয়ে দেখিয়ে নিয়ে আসবেন এ রকম মেরুদন্ডঅলা লোককে...।একজন মহাপুরুষকে দেখলে টাবলু নিশ্চয়ই অনেক কিছু শিখতে পারবে।

[ইটালিক](দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্য)[/ইটালিক]
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×