মুখভর্তি দাড়ি নিয়ে তোলা ছবিটা ফেসবুকে প্রফাইল পিকচারে আপলোড করার পর আমার কাছের মানুষদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছিলাম! আমি ঠিক আছি কি না! হতাশায় আছি কি না! সব ঠিক আছে তো! মোটেও ভালো দেখাচ্ছে না আমাকে। আবার কারও কারও অভিমত, রাতারাতি শরৎ বাবুর অমর রচনার দেবদাস খেতাব অর্জন করে ফেলেছি। কারও অভিমত আমি কি সিরিয়াস কোনও কবি হয়ে গেলাম কি না! আবার কেউ কেউ ভয় পেয়ে আল্লাহকে ডাক দিয়েছে। আমার ভূতনীর অবশ্য কোনও বিকার নেই; যদিও তা থাকার কথাও নয়! সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা, আমার মা যার কি না ফেসবুকে কোনও এ্যাকাউণ্ট নেই, এমনকি ফেসবুকে আমার দর্শন পাবার কোন সম্ভানাও নেই, ফোনে সে আমাকে প্রশ্ন করে বসল আমার দাড়ি এখন কত বড় হয়েছে!
যাই হোক, সেই ফেসবুকেই যখন ড্যাশিং কোন পিকচার আপলোড দিলাম তখন এই আমি ছ্যাকা খাওয়া দেবদাস থেকে উঠতি এক নায়কে পরিনত হলাম। তখন মানুষের মতামত, নায়ক নায়ক ভাব! নায়িকার অভাব! চরম লাগছে আমাকে! নিজেকে পদার্থের সব রুপেই লাগছে যেমন কঠিন,তরল, বায়বীয়। ঝাক্কাছ! আরও অনেক অনেক অদ্ভুৎ অদ্ভুৎ শব্দ যার বু্যৎপত্তিগত কোন অর্থও হয় না। ব্যাপারটা ভাষাকে ভাষা দান করা। এখানেও আমার ভূতনীর কোন বিকার নেই, কেনই বা থাকবে!
আমরা সবাই বাহ্যিক দিক দেখতে এতটাই ব্যস্ত, মানুষের মানবিক দিকগুলো অবলোকন করার সক্ষমতা একদমই শূন্য। যারা প্রথমে আমাকে হতাশাগ্রস্থ, মানসিক বিকারগ্রস্থ, প্রেমে ব্যর্থ আরও অনেক হতাশার শব্দের ফুলঝুড়ি আওড়েছেন তাদের কথা মেনে নিলাম। তাদের প্রশংসিত করলাম। তাদের ভেতর সত্যিই মানবিক বোধ আছে, মেনে নিলাম। কিন্তু পরক্ষনেই আবিষ্কার করলাম আমাকে নিয়ে তাদের উচ্ছাসতা যখন আমাকে দেখতে ভালো লাগছে বলে। প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, মানসিক অবস্থা বোঝার মত সক্ষমতা তবে কি সত্যিই হারিয়ে যাচ্ছে? সেভ করার সময় দাড়ির সাথে সাথে কি মনের কষ্টও ফেলে দেয়া সম্ভব? এত সহজ? মানুষের মন বুঝতে না পারলে, মানবিক বিষয় নিয়ে কথা বলাই উচিত না! যেমন আমার ভূতনী অনেক সময় বুঝেও কিছু বোঝে না, অবুঝের মত মন্তব্যও করে না। মোদ্দা কথা পাশ দিয়েও হাটে না।
কারও প্রতি অনুরাগ যখন মনে ক্ষনে ক্ষনে জন্ম নেয়; সেই অনুরাগকে কি ক্ষনে ক্ষনে বেড়ে ওঠা দাড়ির মত কেটে ফেলে দেয়া যায়? এত সহজ? আবেগে হাসি বা আবেগে ভাসি! কোন সমস্যা নেই। খেয়ে থাকি আর না খেয়ে থাকি। ঘুমিয়ে থাকি আর নির্ঘুম থাকি! আমার দাড়ির বেড়ে ওঠাকে আমি কোনদিন থামাতে পারব না। ঠিক তেমনি মনের মধ্যে বেড়ে ওঠা অনুরাগ, দুঃখ, কষ্ট, হতাশাকে বেড়ে ওঠা দাড়ির মত কেটে ফেলেও দিতে পারব না। তাই দাড়ি থাকা বা না থাকার সাথে মানবিক অবস্থানের কোনও যোগসুত্রিতা থাকার কোন সম্ভাবনাই থাকে না। বরাবরের মত এবারও ভূ্তনির নিরস মনকে স্পর্শ করার সম্তাবনা কাকতালীয়।