কাচা বয়সেই পেকে যাওয়া ঠিক নয়, মানুষ তাকে অকালপক্ক বলে। কথাগুলো আমার নয়; গুরুজনের। আমার পাকামো কারও দৃষ্টি এড়ায় নি। খুব অল্প বয়সেই বড়দের বই পড়তে পড়তে অকালপক্ক হয়ে গিয়েছিলাম। প্রেম নামের অজানা অনুভূতি আমার কাচা মনে বসত গড়তে থাকে। নারী সঙ্গ পেতে মনের মধ্যে উথাল-পাথাল করতে থাকে। আমার সেই ভাবনার মধ্যে যৌনতা ছিল না। কারন সেটা বোঝার মত সামর্থ্য তখনও হয় নি। তবে গল্প উপন্যাসের নায়কের মধ্যে নিজেকে কল্পনা করতাম। আর সেই নায়িকাকে নিজের মত পেতে চাইতাম আর বাস্তব জগতে তাকে খুজতাম। মনের ভেতর অবিরত ঝড় বইত। আর মনের মধ্যে আক্ষেপটুকু দীর্ঘনিঃশ্বাস হয়ে ঝড়ত।
তবে অকালপক্ক হয়ে আমার কোন ক্ষতি হয় নি। বরং জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখা বা অনুভব করার সক্ষমতা সেই কাচা বয়সেই হয়েছিল। পরবর্তীতে আমি হয়ে উঠেছিলাম দক্ষ জীবন যোদ্ধা। প্রথম প্রেমের স্মৃতি যখন একদম টাটকা, ৮ বছরের শর্তহীন সম্পর্ক যখন ভূমিস্মাৎ, আমার টাল-মাতাল হয়ে ধসে পড়াটা যখন এক রকম নিশ্চিত ছিল সে সময়টাতেও যেন আমি প্রেমাতাল হয়ে নিজের শেষ হয়ে যাওয়াকেই নিশ্চিত পরিনতি বলেই মেনে নিয়েছিলাম। জীবনকে খুব সুন্দর আর পরিপাটি করার সংকল্পে বারবার কদর্যতা আমাকে গ্রাস করছিল। প্রতিনিয়ত ভাবনার প্রতিফলনে আবারও প্রেমের প্রতিবিম্বকেই প্রত্যক্ষ করেছি। আমি সত্যিই খুব ভালবাসি; কিন্তু আমার ভালবাসার প্রকাশ ভঙ্গির মধ্যে হয়তো কোনও আকর্ষন থাকে না। আর তাই শক্ত বাঁধন ভাবলেও সম্পর্কটা আলগা হতে সময় লাগে না। আজ কতটা দিন ধরে মনের অতলে পৌছে যেতে আমার নিদারুন ধৈর্য্য আর একাগ্রতা যখন ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে, টেলিফোনে প্রতিনিয়ত মহিলাটা যখন দুঃখ করে বলে যাচ্ছে ফোনটা বন্ধ আছে, আমার অস্তিত্বই যখন মূল্যহীন হয়ে পড়ছে, এমতাবস্থায় নিজের স্থিতিশীলতা দেখে নিজেই অবাক হয়ে ভাবি, অদ্ভুত এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা আর অসীম ধৈর্য্য নিয়ে আছি। ভাবি, আমার ধৈর্য্যের অর্ধেকটাও যদি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে থাকত, তাহলে জাতি হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে লজ্জায় পড়তে হতো না।
আমি জানি না, এই ধৈর্য আর কত দিন থাকবে। জীবনের শেষ ইচ্ছার কাছে পৌছে গেছি। যদি কঠিন কোন অসুখ হত, হাসপাতালের শুভ্র বিছানায় শেষ কটা দিন কাটতো, আমার বিশ্বাস জীবনের শেষ কটা দিন মধুময় হয়ে যেত। আমার প্রিয়জনেরা আমাকে ঘিরেই রাখত। ভূতনীও আমার কাছে থাকত। মানুষের জীবনটা যখন মানুষের কাছে নিশ্চত হয়ে যায়, মানুষের মানবিকতার প্রকাশ ভঙ্গিও অবস্থা বুঝে পরিবর্তন হয়। কেউ তখন কাউকে বাঁধা দেয় না। মানুষ খুবই ভদ্র প্রানী। আন্তরিকতার সাথেই মানুষ মানুষকে বিদায় জানায়। তবে, আমার বিদায় মুহুর্তে আমি প্রান খুলে হাসবো আর তার চোখের জলে ভাসবো।