somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিতোষ কুশারির গল্পের চরিত্ররা মারা পড়ে

১৪ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরিতোষ কুশারির সমস্ত গল্পের চরিত্ররা কোন অজানা কারণে মরে যায়।

যেমন; একবার, তিনি এলাকার একরকম উঠতি নেতাকে নিয়ে খুব মোলায়েম, একটা গল্প লিখলেন। খুব, আশ্চর্যজনকভাবে, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে, পরিতোষ কুশারি গল্পটি লেখার ঠিক দিন তিনেকের মধ্যে মারা পড়লেন নেতা। পরবর্তীতে, তিনি, অর্থাৎ শ্রী পরিতোষ কুশারি, যিনি, হাল আমলে, তরুণদের কাছে ণীল জলের বাইম মাছের মতন আশ্চর্য রকমের জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন, নেতার বিদেহী আত্মার প্রতি গভীরভাবে শোকাভিভূত, বিদগ্ধজনদের মধ্যে যারা শোক সভার আয়োজন করলেন, যেখানে শকুন ও চিলেরা জমায়েত হয়েছিলেন, খবরের কাগজে বিবৃতি ছাপালেন, তাদের নিয়ে গল্প লিখলেন।
ভীষণ রকমের অপ্রত্যাশিতভাবেই, পরিতোষ কুশারির গল্পের সেইসব চরিত্ররাও, একে একে মারা খেলেন। কেউ নিজেদের মধ্যেকার দ্বন্দে, পাছায় রামদা’র কুপে, কেউ আবার পকেটমারের থাবায়, কেউ মলম পার্টির ডলা খেয়ে। সকলেই মারা পড়লেন।

পরিতোষ কুশারির একনিষ্ঠ পাঠক, বিদগ্ধ ভক্তজন, অবিনাশ মহন্ত, খুব অনুনয় করে ভগবানকে নিয়ে একটা গল্প লিখতে অনুরোধ করলেন। এমনিতে অবিনাশ মহন্ত খুব ধাম্মিক যুবক। ভগবানের ভক্ত। পরিতোষ কুশারি সন্ত্রস্ত হয়ে উঠলেন। ভগবানকে নিয়ে গল্প লিখলে যদি অন্যদের মতন, ভগবানও মারা পড়েন, তো জগৎ সংসারে পরিতোষ কুশারির আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। পরিতোষ কুশারির চরম দুর্দিনে, একমাত্র ভগবানই ছিল আশ্রয়। ভগবান পরিতোষ কুশারিকে কী না দিয়েছেন। জলজ্যান্ত, ভোরের ঘাসে লেগে থাকা সতেজ শিশিরের মতন, একখানা জীবন, দিয়েছেন, একটা চাকরি। চাকরি দিয়ে বিয়ে দিলেন। বিয়ে দিয়ে ফুটফুটে একটা সন্তানও দিলেন। আবার চাকরিতে উত্তরোত্তর সাফল্যও দিলেন। পরিতোষ কুশারি জানেন, বিনিময়ে ভগবান কখনোই কিচ্ছু চাননি। বিনিময় দিতে গেলেই ভগবান খুব ব্যথিত হবেন এটা ভেবেছেন বহুবার। ভগবান শুধু পরিতোষ কুশারিকেই নয়, তার দেখা আরো ঢের লোককে, সাধ্যমত আশ্রয় দিয়েছেন। চালের জন্য চুলো দিয়েছেন। ভগবান কখনো বিনিময় প্রত্যাশা করেননি।

সেই ভগবানকে নিয়ে পরিতোষ কুশারি গল্প লিখার সাহস পান না। গল্পে ভগবানকে যথার্থরুপে বর্ণনা করা যায় না। তবুও পরিতোষ কুশারি ভগবানকে নিয়ে গল্প লিখতে শুরু করলেন। একদিন, সোনাঝরা সন্ধ্যায় গল্প লিখার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিলেন। রওজা মোড়ে হেজেসের ধোঁয়ায় আঁধার নামালেন। রাজা উজির মেরে দিলেন। এর মধ্যে পরিতোষ কুশারি, ভগবানকে নিয়ে গল্প লিখার খবর চাউর হয়ে গেলে, ভেতরে ভেতরে সকলে রেগে গেলেন। বিশেষ করে, বিগত নেতার অনুসারীরা, যারা ভগবানের ভক্ত, সকল কাজে, এমন কী মাইনষের গালে চড় বসানোর সময়, বুকে লাত্থি মারার সময়, ভগবানের নামেই সব করেন, তারা তো একেবারে সিদ্ধান্তই নিয়ে নিলেন। ভগবানের ভক্তকুল, ধর্মের কাণ্ডারি, সজ্জন সকলে ভগবানের প্রহসন সইবেন কেন?

সেই গল্প কোন এক চান্নি পসর রাইতের ধল প্রহরে শেষ হলেও, ছাপা হয়নি তখনো।

কু ডাক পাখি তখন তীক্ষ্ণ স্বরে ডেকে উঠল। পরিতোষ কুশারি গল্পটি লেখার পর মুখ থুবড়ে পড়ে রইলেন তার লেখার টেবিলে। মেঝেতে জবজবা রক্ত। দেয়ালে ছিটকে পড়া মগজ লেপ্টে আছে।

গল্পটি অবিনাশ মহন্তের কাছে পৌঁছালে, শনিবারের সাহিত্য সাময়িকীতে ছাপানোর জন্য পাঠালেন। কিন্তু পরিতোষ কুশারির গল্পের এবারের চরিত্রের স্রষ্টা আর থাকলেন না। ভগবান বেঁচে গেলেন কী না, সেটাও ঢের প্রশ্ন সাপেক্ষ। ভগবান মারা পড়েন না, এটাই সকলের অনুমেয়।
পরিতোষ কুশারির গল্পের শেষ অনুচ্ছেদ ছিল ‘এ হচ্ছে সেই ভগবানদা’ আমাদের একমাত্র ভগবান দাশ, যে ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসে, ধেয়ে আসা রোদ ছায়ায় নানান মানুষের মুখচ্ছবি আঁকতেন। তাঁর অঙ্কিত মুখচ্ছবিগুলো বাস্তবে রুপ ধারণ করত। শিক্ষকেরা একদিন তাঁকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেন। আমরা পাঠ চুকিয়ে যখন হোমড়া চোমড়া হয়ে উঠেছি তখন ভগবান আমাদের মতন ছা’পোষাদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিলেন’।

পরদিন সকালে, নিত্যানন্দপুর বাজারের নদীর পাড়ে, উপুড় হয়ে থাকা একটা লাশ দ্যাখে পাড়ার কয়েকটা নেড়িকুত্তা ঘেউ ঘেউ করে উঠলে, অবিনাশ মহন্ত নদীর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×