somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“ইশ” ও বাংলাদেশের ক্রিকেট

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইশ” এই শব্দটি এখন খুব মিস করি। এই আফসোস জনিত “ইশ” শব্দটি একটা সময় বাংলাদেশ দল যখন মোটামুটি খেলতে শুরু করলো বা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবে পা রেখেছে তখন অনেক বেশী করে উচ্চারিত হতো আমাদের মুখে মুখে। ইশ যদি আজকে আশ্রাফুল আর ২০টা রান বেশী করতো? ইশ আজকে যদি পাইলট এমন অস্থির হয়ে আউট না হয়ে যেত তবে আরো ৩০টা রান বেশী হত। ইশ আমরা যদি আজকে টসে জিততাম? ইশ দলীয় রান যদি আর ৫০টা বেশী হত। ইশ শান্ত যদি আর দুইটা ওভার বেশী করতে পারতো। এমন হাজারটা ইস ছিল আমাদের মুখে মুখে। রাগে ক্ষোভে কত কত বার হাত কামড়েছি, টেবিলে চাপড় মারতে গিয়ে টেবিলই ভেঙ্গে ফেলেছি। আমরা দল বেঁধে খেলা দেখতে যেতাম আমাদের পাড়ার সবচেয়ে প্রিয় স্যারের বাসায় উনি খুব ভালো ক্রিকেট বুঝতেন, মজার মজার অভিজ্ঞতা শোনাতেন, গল্প বলতেন। আর স্যারের সহধর্মিণীর হাতে মাখা মুড়ি, চা, টোষ্ট বিস্কুট সব মিলিয়ে একটা মিনি স্টেডিয়ামের আমেজ তৈরি হতো। আর শুরু হতো তর্ক, কেউ কিছু বুঝুক না বুঝুক একটা মন্তব্য করতেই হবে। সেই সময় খেলা দেখার সময় আমাদের মাথা চাপড়ানো, হতাশ হওয়া, আফসোস করা এসবই ছিল নিত্য দিনের ব্যপার।


আজকের এইদিনে এসে বুঝি সেই হাজারটা ইশ ছিল বলেই বাংলাদেশ আজ এক বাঘের ডেরায় পরিনত হয়েছে। এই ইশ শব্দটা ছিল বলেই আজ এই ছেলেগুলো জান প্রাণ উজাড় করে খেলছে। ইশ শব্দটার মর্ম বুঝতে পেরেছে বলেই আজ আমাদের একজন সাকিব আল হাসান আছেন, আছেন মুস্তাফিজ, মিরাজ আর তামিমের মত এক একটা হিংস্র বাঘ। আর গর্ব করে বলতে পারি আমাদের একজন কাপ্তান আছেন যিনি অন্য সবার চেয়ে আলাদা। কি আবগে, কি ভালোবাসায় ১১টা ছেলেকে এক অমোঘ সুতোয় বেঁধে নিয়ে শক্ত লড়াই করে প্রতিনিয়ত ছিড়ে খুড়ে দিচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তিদের। শত যন্ত্রনা নিয়েও যিনি খেলে যাচ্ছেন অবিরাম। বার কয়েক হাটুর অস্রপাচার ছিটকে দিয়েছে যাকে সে ফিরে এসেছে আর এসেছে একেবারে বাঘের শক্তি নিয়ে, ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে। এই কাপ্তান সেই কাপ্তান যে ভুলে যায়না তাঁদের এক একটি বিজয় এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে উৎসর্গ করতে। সে এমনই কাপ্তান যে ১৫কোটি বাঙ্গালীর একমাত্র আশা ভরসার কর্ণধার হয়ে উঠেছেন।

আজকে আপনাকে আমাকে যদি বলা হয় বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান কে? মুহূর্তের মধ্যে আপনাকে বসতে হবে হিসেব কষতে কে কার চেয়ে ভালো, কাকে এগিয়ে রাখা যায় কোন দিক দিয়ে। আর ঐ যে যখন ইশ শব্দটা আওড়াতাম তখন কি এমন কষ্ট হতো? এখন ভালো ক্রিকেটারের তালিকা করতে গেলে সত্যিই দ্বিধায় পরতে হবে ক্রমিক নম্বর সাজাতে গিয়ে। রোজকার খেলায় একজন আরেক জনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।


অনেক আগে একটা সময় ছিল যখন ক্রিকইনফো তে গিয়ে খুঁজতে হতো বাংলাদেশের খেলোয়ারদের রান সংখ্যা কত? কত উইকেট আছে বোলারদের? কিন্তু সেই ক্রিকইনফোতে আজ যত ধরনের তথ্য আছে তার প্রায় প্রত্যেক ধরনের তথ্যের উপড়ের সারিতে চোখে বুলালেই সৌম্য, তামিম, নাসির, আর পুচকে মুস্তাফিজের নামও বড় বড় করে লেখা, আর সাকিব, মুসফিক, মাহমুদুল্লাহ, ম্যাশ আর মমিনুলের ছবিতো ভুড়ে ভুড়ে। এইতো সেদিনকার পুচকে ছেলে মিরাজ খেলতে এসেই দখল করে নিল রেকর্ডের খাতা। আরো আসছে দলে দলে দখল করতে ক্রিকেট বিশ্ব।

আমার মনে আছে সেই সময়টাতে আমি নিজেও ফেইসবুকে, বিভিন্ন জায়গায় লেখার খোঁচায়, বচনে অঙ্গভঙ্গিতে বাংলাদেশ দলকে অনেকবার জর্জরিত করেছি, খাটো করেছি। অনেকবার মুখ ফুটে গালিও বের হয়েছে, ধিক্কার দিয়েছি শতবার একসময় ধরেই নিয়েছিলাম এদের দিয়ে কিছুই হবেনা। হাজারটা রাগ, ক্ষোভ জমেছিল এদের জন্য। আজ এরজন্য কিন্তু আমার এক বিন্দুও অনুশোচনা নেই, নেই কোন খারাপ লাগা, বা লজ্জা কারন আমার মত হাজার হাজার খোঁচা, হাজারটা গালি, ধিক্কার, রাগ, ক্ষোভ অভিমান ঝড়ে পরেছিল বলেই আজ ওরা জ্বলে উঠতে পেরেছে, পেরেছে সেরাদের সেরা হতে আর হতে পেরেছে এক একটা বাঘ।


এতো কিছুর পর তাঁদেরকে ভুলে যেতে পারবেন? যারা এদের পূর্বসূরি ছিল, আজকের বাঘা বাঘা খেলোয়ারদের হাতেখড়ি হয়েছিল যাদের হাতে, তাঁদের কি ভুলে গেলে চলবে? যাদেরকে আমরা গালি দিতাম, ক্ষোভ ঝারতাম তাঁদেরকে ভুলে গেলে চলবে? আকরাম, নান্নু, রফিক, আতাহার, মনি এক একজন বীর আমার চোখে। আজকের মত এতো সুযোগ সুবিধা ছাড়াই এরা দিনের পর দিন খেলে গেছে। নিজেদের পানি নিজেরা টেনে নিয়ে খেয়েছে। আজকের মত প্রতি খেলায় এতো জার্সি পায়নি, ধুয়ে ধুয়ে বারবার পরতে হয়েছে, এর ওর গ্লাভস,প্যাড, ব্যাট নিয়ে খেলতে হয়েছে। সেই সময়টা ছিল বলেই আজ এই সময়ে আমরা এতো গর্ব করতে পারি আমাদের নতুন বীরদের নিয়ে।

আমাদের দেশে বাবা-মাদের উচিত সন্তানদের আরো বেশি করে ক্রিকেটের প্রতি উৎসাহ দেয়া। সরাকারের উচিত বেশি করে ক্রিকেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ক্রিকেটের অবকাঠামো তৈরি করে দেয়া। স্কুল কলেজগুলোতে বেশি বেশি ক্রিকেটের চর্চা, প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পারে দেশে প্রতিবছর পেসার হান্ট, ব্যাটসম্যান হান্ট, ক্রিকেটার হান্ট আয়োজনে সহায়তা করতে।

গালি দিয়েছিলাম ঠিকই, এখনো যে রাগ করিনা তাও না, অভিমানও হয় তামিম সাকিবরা একদিন খারাপ খেললে। মেনে নিতে পারিনা। আর ওরা খারাপ খেললে আমরা যারা খেলা দেখি বা তাঁদের অন্ধভক্ত আমাদের রাগ বা ক্ষোভ হবেই কারন নয়নের মনি বাচ্চারা খারাপ করলে বাবা মা যেমন কষ্ট পায় আর রাগ হয় তেমনটি ওরাও তো আমাদের নয়ন মনিই। রাগ যেমন হয় ক্ষোভও হয় ঠিকই কিন্তু যখন ওরা জয় নিয়ে আসে আমাদের জন্য তখন আমাদের মনের অজান্তেই অন্তর থেকে এই বাঘদের জন্য আশীর্বাদ ঝরে পড়ে। ভালোবাসায় আচ্ছন্ন করে ফেলি মুহূর্তে, চোখের কোনে এক ফোঁটা জলও জমে হয়ত। তবে তা অবশ্যই আনন্দের সাথে আশীর্বাদ মিশ্রিত। সামনের দিন গুলোতে আমাদের এই ক্ষোভ, ভালোবাসা, আশীর্বাদ আরো বেড়ে যাবে তাই বাঘগুলোকেও সেটা মনে রাখতে হবে, যে কোটি কোটি ভক্ত তাকিয়ে তাঁদের দিকে। তাকিয়ে আছে ঐ গোল একটা বৃত্তে।

চলো বাংলাদেশ, বিশ্ব জয়ে সামনে এগিয়ে চলো।

ছবিঃ সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×