somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপারেশন থিয়েটার কিংবা শতদ্রু

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের সকালবেলাটা প্রতিদিনের মতই বাজে কেটেছে মুনের। তার গলায় কি একটা বাজে ধরনের গন্ডগোল। গলগন্ড না, চট্টগ্রামের লোকদের আয়োডিনের অভাব থাকে না যে গলগন্ড হবে। বরং ক্ষেত্রবিশেষে আয়োডিনের পরিমাণ একটু বেশীই থাকে।

ডাক্তাররা বলেছে খুবই ছোট সমস্যা, টনসিল অপারেশনের মত। আজকাল নাকি টনসিল অপারেশন আর প্যারাসিটেমল কোঁত্‍ করে গিলে ফেলা একই কথা।
"সবই মেডিক্যাল সায়েন্সের উন্নতি বুঝলে মা?" বুড়োমত ডাক্তার অভয় দেয়ার সুরে বলে।
কিন্তু তাতে একটুও অভয় পায় না মুন। বরং অপারেশনের সময় যত ঘনিয়ে আসে ততই ভয়টা বাড়তে থাকে।

সামনের সপ্তাহেই অপারেশন, রবিবারে। রবিবার হওয়ার কারণ ডাক্তার সাহেব শুধুমাত্র ঐদিনই ঢাকা থেকে এখানে আসেন। দু'রাত থাকেন, এইসময় ডাক্তারের ব্যস্ততাও থাকে প্রচন্ড। তবুও দামী ডাক্তার বলে কথা। মুনের মা বাবা কোন রিস্ক নিতে চান না। অপারেশন যখন হবে তখন অবশ্যই ভালো ডাক্তার আসতে হবে। মুনের দিদিও একজন ডাক্তার, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তাঁর পরিচিত ভালো ডাক্তার আছে তবুও ঢাকার ডাক্তারের কদরই অন্যরকম।

এখন বাজে সকাল সাড়ে আটটা। মুন কখনোই এত সকাল অবধি শুয়ে থাকে না। কিন্তু গত কয়েকদিন তার রুটিনে যথেষ্ট গোলমাল হচ্ছে। সম্ভবত অপারেশনের টেনশানেই এমনটা হচ্ছে।
অপারেশনটা অবশ্য আরো কিছুদিন আগেই হবার কথা ছিল কিন্তু পরীক্ষার কারণে ডেটটা একটু পিছিয়ে নেয়া হয়। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে যেদিন ক্যাম্পাস ছেড়ে এসেছিল সেদিন তার মনে হয়েছিল আর বুঝি কখনোই ফেরা হবেনা প্রিয় এই ক্যাম্পাসটাতে। দেখা হবেনা তার প্রাণপ্রিয় রুমমেট আর ক্লাসের সদাহাস্যোজ্জল বন্ধুদের। একরকম কান্নাই করেছিল সেদিন। যদিও বাইরে বাইরে সবাইকে বলে ক্যাম্পাসটা ভালো লাগে না, হলে এত পেইন নিয়ে থাকা যায় নাকি? অসহ্য গরম পড়ে এখানে, কারেন্ট থাকে না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তার কথাবার্তা, স্বপ্ন সব আবর্তিত হয় ক্যাম্পাসটাকে ঘিরেই। সকালে উঠে রুমমেটদের চা বানিয়ে না খাওয়ালে তার যেন দিনের শুরুটাই ঠিকমত হয় না। স্বভাবসুলভ দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখাটাই যেন ক্যাম্পাসে ওর একমাত্র কাজ। কথা বলা ছাড়া একটা মুহুর্তও থাকতে পারে না। তার মধুর অত্যাচারের কারণেই কিনা কে জানে সবাইকে আপন করে নিতে পেরেছিল খুব সহজেই।

'কিরে কত ঘুমাস তুই? কয়টা বাজে দেখছছ? উঠ তাড়াতাড়ি উঠ।' এভাবেই তাড়া দেয় মুনের মা।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে বসতে হয়।
হলে থাকলে এই সময়টাতে বারান্দায় গিয়ে বসে থাকা যেত। কিন্তু এখানে ওদের বাসায় কোন বারান্দা নেই। বিল্ডিংয়ের নিচতলা বলেই এমন সমস্যা। কেমন জানি গুমোট একটা পরিবেশ। দিনের বেলায়ও লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়।
এইসব ভাবতে ভাবতে তার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়। ভাবে, হলটাই কত ভালো ছিল। গলার কাটাটা না হলে এমন কি হত?
ড্রয়িংরুমে গিয়ে পেপারটা হাতে নেয়। সোজা মাঝখানের পেইজে গিয়ে বেসিক আলী পড়ে একটু হাসার চেষ্টা। কিন্তু আজ কোন এক কারণে বেসিক আলী ছাপা হয় নাই।

বাহ! একটা পরিপূর্ণ বিষন্ন দিনের এরচেয়ে ভালো শুরু আর হতেই পারে না।

ক্যাম্পাসের কথা ভাবতে চেষ্টা করল সে। নয়টার মত বাজে। এতক্ষনে নিশ্চয় ক্লাস শুরু হবার কথা। ক্লাসে কেউ কি মুনের কথা একবারও স্মরণ করেছে, মনে মনে হলেও। আর কেউ না ভাবলেও পিনু নিশ্চয় ওর কথা একবার ভাববে। পিনুকে একটা ফোন দিয়ে কথা বলা যায়।

রিং বেজেই যাচ্ছে। এই নিয়ে তিনবার কল দেয়ার পরেও রিসিভ করল না। দম বন্ধ হওয়া অনুভূতিটা আরো বেড়ে গেল এখন।
এই সময় নাস্তার টেবিলে ডাক পড়লো।
যেই না জোরে চিত্‍কার দিয়ে বলতে যাবে 'খাব না'। ঠিক তখনই মুনের দিদি হাত দিয়ে ইশারা করল আস্তে আস্তে, কুল কুল।
এটা হয়েছে নতুন ঝামেলা, এখন কোনমতেই জোরে কথা বলা যাবে না। গ্ল্যান্ডে চাপ পড়বে। তাহলে আবার অপারেশনের ঝুকি বাড়বে। অপারেশনের এক সপ্তাহ পর পর্যন্তও কথা বলা বারণ। যা কিছু প্রয়োজন ইশারা ইঙ্গিতে সারতে হবে। ডাক্তারের কড়া নির্দেশ।
এইবার তার মনে হল পিনু কেন কলটা রিসিভ করে নাই। গত রাতে চ্যাটে বলেছিল পিনুকে যে তার কথা বলা আপাতত নিষেধ। এইবার পিনুর কথা ভেবে একটু হলেও ভাললাগা ভর করল। আশ্চর্য এখন খিদাও টের পেল একটু একটু। বাধ্য মেয়ের মত গিয়ে নাশতা সেরে নিল।


অপারেশনের দিন সকালবেলা। হসপিটালে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে সবাই। কোথায় একটা বিষন্ন পরিবেশ তৈরী হবে তা না হয়ে হল উল্টো। মুনের দাদা বৌদি দুজনেই সকালে এসে হাজির। আর তাদের পিচ্চি দুইটা সারা বাড়ি চেচিয়ে মাথায় তুলছে।
এরই মধ্যে ওর হলের দুই রুমমেটও এসে হাজির। ওরা এসে ফ্রেশ হয়ে হসপিটালে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে, নাকি বিয়ে বাড়ীর কোন উত্‍সবে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে ঠিক বুঝা গেল না।
এর মধ্যে একজন আবার পিংক ড্রেস পড়েছে কিন্তু নেইল পলিশ ছিল সিলভার কালারের। ঠিক ম্যাচ হচ্ছিল না বলে আবার নেইল পলিশ রিমুভার নিয়ে শুরু করে দিল ঘষামাজা।
'বুজছই তো মুন বিবি একটা জায়গায় যাচ্ছি একটু সাজুগুজুরওতো দরকার আছে' এতটুকু শুনেই শত টেনশানের মাঝেও ফিক করে হেসে দেয় মুন। পরক্ষণেই আবার ভাবে ইশশ অপারেশনের পর কি আর এদের সাথে দেখা হবে?

রাত দশটা। সারাদিন হসপিটালে বসে থেকে প্রায় সবাই খানিকটা ক্লান্ত। এইসময়ই দুইজন নার্স কেবিনে প্রবেশ করে মুনকে ওটিতে নিয়ে যাবার জন্য। ওটিতে ঢুকার আগে মুন কোনমতে একবার চোখ মেলে তাকায় একদল উদ্বিগ্ন মুখের দিকে।

সেকি আবার ফিরে আসতে পারবে তাদের মাঝে? অনিশ্চয়তার আলোকজ্জল এই রহস্যকামরা থেকে?
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯
৫৩টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×